পৃথিবীর সুখী দেশগুলো

পৃথিবীর সুখী দেশগুলো

canada-day[1]

জীবনে আরও বেশি সুখ-শান্তি প্রত্যাশা করেন এমন যারা আছেন, তারা উত্তর ইউরোপের দিকে চলে যাওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন। তবে মিশর এবং অর্থনৈতিক মন্দায় আক্রান্ত ইউরোপের দেশগুলো থেকে দূরে থাকাই উত্তম। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির আর্থ ইনস্টিটিউট কর্তৃক প্রকাশিত ২০১৩ সালের ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্টে’ এমনটাই বলা হয়েছে। জরিপকৃত ১৫৬টি দেশের মধ্যে বিশ্বের সব থেকে সুখীতম রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে, ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, নেডারল্যান্ড এবং সুইডেন। তালিকার সব থেকে শেষে অবস্থান দেশগুলো হচ্ছে রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, বেনিন, টোগো এবং সাব-সাহারান আফ্রিকার সকল দেশ।

এ দেশগুলোর বাসিন্দারা তাদের জীবন নিয়ে সব থেকে অসন্তুষ্ট। সার্বিক সুখ-শান্তির বিচারে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ১৭তম। এবারও যুক্তরাষ্ট্রের আগে রয়েছে কানাডা (৬), অস্ট্রেলিয়া (১০), ইসরায়েল (১১), আরব আমিরাত (১৪) এবং মেক্সিকো (১৬)। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের অবস্থান ২২, জার্মানি (২৬), জাপান (৪৩), রাশিয়া (৬৮), এবং চীন (৯৩)।

আর্থ ইনস্টিটিউট ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী জরিপ চালানোর পর গত বছর প্রথমবারের মতো সুখ-শান্তির বিচারে বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর তালিকা প্রকাশ করে। এ বছরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৫ বছরে সারা বিশ্বে তুলনামূলকভাবে কিছুটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তবে অর্থনৈতিক মন্দা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কিছু কিছু দেশে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে গ্রিস, ইতালি, পর্তুগাল এবং স্পেন র‌্যাংকিংয়ে অনেক পিছিয়ে পড়েছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং গৃহযুদ্ধের কারনে মিশর, মায়ানমার এবং সৌদি আরবের অবস্থানের অবনতি ঘটেছে।

সুখ-শান্তির মাত্রার বিচারে মিশরের পতন সবথেকে বেশি। দেশটিতে ১-১০ পরিমাপ স্কেলে ২০০৭ এর ৫.৪ থেকে ২০১২-তে ৪.৩ এ এসে দাঁড়িয়েছে। জরিপকৃত সব দেশের মধ্যে সব থেকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় উন্নতি ঘটেছে অ্যাঙ্গোলা, জিম্বাবুয়ে এবং অ্যালবানিয়ার অবস্থানে। জরিপ প্রতিবেদনের বিশেষজ্ঞদের মতে, যে দেশের সরকার দেশবাসির জন্য সুখ-শান্তিময় পরিবেশ নিশ্চিত করতে আগ্রহী তাদের উচিৎ সাস্থ্যখাতে মানসিক অসুস্থতার জন্য বেশি বাজেট নির্ধারণ করা।

কেননা জরিপকৃত দেশগুলোতে তারা দেখতে পেয়েছে, মানসিক অসুস্থতাই সবথেকে বড় দু:খ-দূর্দশা নির্ণায়ক। প্রতিবেদনে বলা হয়, মানুষ বিভিন্ন কারনে অসুখি হতে পারে। দরিদ্রতা থেকে শুরু করে বেকারত্ব, পারিবারিক অশান্তি থেকে শুরু করে শারীরিক অসুস্থতা এসবকিছুই দুর্দশার কারণ হতে পারে। তবে যেকোনো সমাজে দুঃখ-দুর্দশার পেছনে সব থেকে প্রভাববিস্তার করে গুরুতর মানসিক অসুস্থতা। বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেন, আমরা যদি আরও শান্তিপূর্ণ একটি পৃথিবী চাই তাহলে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে নতুন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

অর্থনৈতিক সাফল্যকে গুরুত্ব দিয়ে নয় বরং মানুষের জন্য সার্বিকভাবে মঙ্গলজনক এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বিশ্বব্যাপী সরকার ও নিতীনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন মানবতা কর্মীরা। ১৯৭২ সালে সর্বপ্রথম এ ধারণাটি প্রবর্তন করেন ভুটানের তৎকালীন রাজা জিগমে সিঙ্গে ওয়াংচুক। ‘হ্যাপিনেস ইকোনোমিক্স’ খ্যাতি পাওয়া এ ধারণাটি যুক্তরাজ্য, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়াসহ এখন অনেক দেশে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ২০১১ সালের জুলাইতে জাতিসংঘ সর্বপ্রথম জনগণের খুশিকে মাথায় রেখে সরকারি প্রকল্প হাতে নেয়ার জন্য এর সদস্যভুক্ত দেশগুলোকে উৎসাহিত করে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সমাজের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও মানসিকভাবে ভাল থাকার বিষয়টিও নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

 

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.