কুঁড়েঘরও কখনো কখনো তীর্থস্থান হয়ে ওঠে
যদি সেখানে মহামানবের আবির্ভাব হয়।
বেথেলহেমের গোয়ালঘরের কি এমন মূল্য হতো
যদি সেখানে নেমে না আসতেন
ঈশ্বরের সম্মানিত সন্তান?
টুঙ্গিপাড়ার আঁধার ঘরে
শেখ মুজিব আলো হয়ে জন্মেছিলেন বলেই
আজ তা হয়ে উঠেছে বাঙালির তীর্থস্থান ।
একজন মহান মানুষের জন্মভূমি বলেই
একটি সামান্য গ্রাম
হাজার গ্রামের ভালোবাসা পেয়ে ধন্য।
টুঙ্গিপাড়ার বিশুদ্ধ বাতাস আজ
নিঃশ্বাস হয়ে দুলে ওঠে বাঙালির বুকে।
যে মধুমতি নদীর জল
শেখ মুজিবের দেবতুল্য শরীর ছুঁয়ে
মিশে যেতো সমুদ্রের বুকে,
সেই মধুমতি নদীই এখন গঙ্গার মহিমা নিয়ে
নিষ্পাপ করে বাঙালির মলিন দেহ।
কলকাতা কিংবা করাচি নয়,
পৃথিবীর কত দেশ-মহাদেশেই তো পা রেখেছেন তিনি;
ক্লান্তিহীন যুগল চরণে
ঝড়ের বেগে ছুটে চলেছেন বাংলার পথে পথে,
অথচ, টুঙ্গিপাড়াই হলো তাঁর শেষ ঠিকানা।
যে মাটিতে জন্মেছিলেন বাংলার ভূমিপুত্র
সেই মাটিই কোল পেতে গ্রহণ করল তাঁকে।
পাকিস্তানের পাপিষ্ঠ বর্বরেরা
ফাঁসিতে ঝুলাতে চেয়েছিল,
কবরও খুঁড়ে ছিল কারাগারের পরিত্যক্ত ভূমিতে।
টুঙ্গিপাড়ার সিংহপুরুষ সেদিন
হুংকার দিয়ে বলেছিলেন –
তোমরা আমাকে হত্যা করো দুঃখ নেই
কিন্তু আমার নিথর দেহ
স্বর্গতুল্য জন্মভূমিতে পৌঁছে দিও।
পাকিস্তানি বন্যপশুরা শৃঙ্খলিত শেখ মুজিবকে
দংশন করলেও বিষ ঢেলে হত্যা করতে পারেনি।
যিশুর মতো যিনি গ্রহণ করবেন
রক্তাক্ত, মহিমান্বিত মৃত্যু,
যাঁর অকালপ্রয়াণে কেঁদে উঠবে
ঘাস,ফুল, নদী আর পোষা পায়রা
সে কি বধ হবে বেরসিক রশির বন্ধনে?
যড়যন্ত্রের জটিল জাল ছিন্ন করে
যুদ্ধজয়ী বীরের বেশে ফিরে এলেন তিনি।
বঙ্গমাতার হাতেগড়া সুখের নীড়েই
আপাতত ঠাঁই হলো তাঁর।
ওদিকে প্রাণপ্রিয় জুডাসেরা
শত্রুর প্রলোভনে বিক্রি হয়ে গেল।
উর্দিপরা ঘাতকেরা চুপিসারে
বেরিয়ে এলো সেনাছাউনি থেকে।
রাতের প্রগাঢ় প্রশান্তিতে
বিহঙ্গ যেমন করে নিদ্রামগ্ন থাকে
সেভাবেই প্রেয়সীর বাহুডোরে বাঁধা ছিলেন তিনি।
দমকা হাওয়ার মতো
হঠাৎ করে উড়ে এলো বুলেটবৃষ্টি,
আকাশের মতো বিশাল বক্ষ
ঘাতকবুলেটে ক্ষত-বিক্ষত হলো,
মুক্তিকামী তর্জনী ছিঁড়ে গেল আলোকলতার মতো।
শূন্য প্রান্তরে যেমন করে পড়েছিলেন ক্রশবিদ্ধ যিশু
পিতাও তেমন করে লুটিয়ে পড়লেন
রক্তসিক্ত সিঁড়িঘরে।
বনফুলে ছাওয়া বনানীর বর্ণিল মাটিতে
স্বজনেরা ঘুমিয়ে থাকলেও
পিতার প্রাণহীন দেহ উড়ে গেল টুঙ্গিপাড়ায়।
তিনি জানতেন পিতৃভূমিই সন্তানের তীর্থ।
একদিন তাঁর এতিম সন্তানেরা
তীর্থস্থানের ধূলি মেখেই শুদ্ধ আর সবল হবে।
রত্নগর্ভা টুঙ্গিপাড়াই আজ বাঙালির পবিত্র তীর্থস্থান।
– মোনায়েম সরকার