লালন ফকিরের সমাজবীক্ষা, মানুষতত্ত্ব ও বহির্বিশ্বে লালনচর্চা

লালন ফকিরের সমাজবীক্ষা, মানুষতত্ত্ব ও বহির্বিশ্বে লালনচর্চা

সৈয়দ জাহিদ হাসান: মহাত্মা লালন শাহ ফকির (১৭৭৪ খ্রি., ১৮৯০ খ্রি.) বাউল-সাধক ছিলেন। বাউল মূলত বস্তুবাদী। বস্তুতেই তাঁরা জীবনের মাহাত্ম্য খোঁজে। বাউল বস্তুবাদী বলেই মানুষের প্রতি তাঁদের আকর্ষণ প্রবল। মানুষের সুখ-দুঃখ-জরা-মৃত্যু বাউলকে সবসময় আলোড়িত ও বিচলিত করে। বাউলরা যেহেতু দেহ ও আধ্যাত্মিক সাধনায় রত থাকেন সেহেতু লালন শাহ  ফকিরও দেহবাদী সাধক ছিলেন। তাঁর রচিত গানে দেহবাদী সাধননির্ভর কথা বেশি থাকলেও তাঁর অসংখ্য গান আছে যেসব গানে তিনি কাক্সিক্ষত সমাজব্যবস্থার রেখাচিত্রধর্মী কাঠামো দাঁড় করাবার চেষ্টা করেছেন। পৃথিবীর অন্যান্য শান্তিকামী শিল্পীর মতো একটি নান্দনিক আবেগের জায়গা থেকেই লালন শাহ তাঁর সমাজদর্শন দাঁড় করানোর যে প্রচেষ্টা দেখিয়েছেন তা প্রশংসার যোগ্য।

লালন শাহের সঙ্গীতে তৎকালীন সমাজের অর্থনৈতিক কর্মকা-ের খুব একটা বিবরণ পাওয়া যায় না। অর্থনৈতিক সংকটকে প্রাধান্য না দিয়ে তিনি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছেন জাত-পাত আর সাম্প্রদায়িক সমস্যাকে। ব্রিটিশশাসিত ভারতবর্ষে অনেক রকমের সংকটের মধ্যে ভারতবাসীর জীবনমান আবর্তিত হলেও লালন মূলত ব্যস্ত ছিলেন মানুষের আত্মিক ও মানসিক সংকট সমাধানে। কেন লালন শাহ মানুষের অর্থনৈতিক বা মৌলিক অধিকারের বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়ে কেবল মনোলোকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছিলেন তাঁর প্রধান দুটি কারণ এই হতে পারে, (১) ব্যক্তিগতভাবে তিনি ধর্মদ্বারা নির্যাতিত ও সমাজচ্যুত ছিলেন, (২) ভৌগোলিক কারণে তিনি ছিলেন চৈতন্যপ্রবর্তিত প্রেমধর্মে উদ্বোধিত। এছাড়া উনিশ শতকে আরো যাঁরা বাংলার সমাজসংস্কারক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন, রাজা রামমোহন রায় (১৭৭২-১৮৩৩), মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭-১৯০৫), অক্ষয় কুমার দত্ত (১৮২০-১৮৮৬), ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১), রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব (১৮৩৬-১৮৮৬) প্রমুখের মতো লালন শাহও সামাজিক ও নৈতিক চরিত্র উন্নয়নেই বেশি মনোযোগী ছিলেন।

এ প্রসঙ্গে উনিশ শতকের তৃতীয় দশকে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন সভা, সমিতি, ক্লাব, সোসাইটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যদি আমরা মনোযোগ দিয়ে পাঠ করি, তাহলেও দেখবো লালন শাহ যে-সময়ে সঙ্গীত রচনা করতে শুরু করেছেন সে-সময় কেবল বাঙালির আত্মানুসন্ধানই শুরু হয়েছে। বাঙালি তখন তার শেকড় খুঁজতে ব্যস্ত এবং সেই শেকড় খোঁজা মানে অবশ্যই ধর্ম ও শাস্ত্র নিয়ে গভীর আলোচনা ও সমালোচনা। এখানে বহুল পরিচিত তত্ত্ববোধিনী সভার কিঞ্চিৎ পরিচয় দিলে বোধহয় মন্দ হয় না। বিনয় ঘোষ তাঁর বাংলার বিদ্বৎসমাজগ্রন্থে লিখেছেন, “জ্ঞানোপার্জিকা সভাপ্রতিষ্ঠার বছর দেড়েকের মধ্যে তত্ত্ববোধিনী সভাদ্বারকানাথ ঠাকুরের জোড়াসাঁকোর বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয় (৬ অক্টোবর, ১৮৩৯)। প্রথমে নাম ছিল তত্ত্বরঞ্জিনী সভা’, পরে প-িত রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের পরামর্শে তত্ত্ববোধিনী সভানাম হয়। সভার প্রতিষ্ঠাতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। দেবেন্দ্রনাথের ভাষায়, এই সভার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল : আমাদিগের সমুদায় শাস্ত্রের নিগূঢ় তত্ত্ব ও বেদান্ত প্রতিপাদ্য ব্রহ্মবিদ্যার প্রচার।

অবশ্য কলকাতায় বিভিন্ন বিদ্বৎজন যেসব সভা-সমিতি করেছেন তাঁদের উদ্দেশ্যের অন্যতম ছিল, খ্রিস্টান ধর্মের হাত থেকে সনাতন ধর্মের পবিত্রতা রক্ষা করা, হিন্দু যুবকদের উচ্ছৃঙ্খল জীবন থেকে সনাতনী জীবনে ফিরিয়ে নেওয়া। বিনয় ঘোষের গ্রন্থ থেকে আরো একটি উদ্ধৃতি দিই,“১৯৩০ সাল থেকে বাংলার সামাজিক জীবনে যে পরিবর্তন হতে থাকে, ইংরেজি শিক্ষিত বাঙালির নৈতিক জীবনে যে ভাঙন ধরে, রামমোহন রায় জীবিত থাকলে হয়ত তাঁর অসংযত উদ্দামতা ও উচ্ছৃঙ্খলতার দিকটাকে কিছুটা সংযত করার চেষ্টা করতেন, যে সমস্যা সবচেয়ে ভয়াবহ রূপে প্রকট হয়ে উঠলো, তা হলো কৃষ্ণমোহনের মতো বাংলার প্রতিভাবান যুবকদের খ্রীষ্টধর্মে দীক্ষা গ্রহণের সমস্যা।

১৮৩০ সালে লালন শাহের বয়স তখন আনুমানিক ৫৬ বছর। যদি দুদ্দু শাহের (১৮৪২-১৯১১) রচিত লালন জীবনীকে সত্য বলে মানি তাহলে দেখা যায় লালন শাহের বয়স ছাব্বিশ বছর পূর্ণ হয় ১৮০০ সালে। ছাব্বিশে লালন দীক্ষিত ছিলেন এবং তীর্থযাত্রায় বেরিয়ে পড়েন। ১৮৩০ সালে নিশ্চয়ই তিনি সঙ্গীত রচনার মধ্যগগনে। যেহেতু লালন ফকিরের কোনো গানেই সন-তারিখ উল্লেখ নেই, তাই অনুমান ছাড়া সঠিকভাবে তথ্য পরিবেশন প্রায় অসম্ভব।

একটি বিষয় লক্ষ করলে দেখা যাবে যে, কলকাতার নব্যজমিদার বা ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গ যেসব সভা, সমিতি, ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন সেসব সভা-সমিতিতে ব্রাহ্মধর্ম বা রক্ষণশীল সনাতন ধর্মের বিষয়গুলোতেই গুরুত্ব দেওয়া হতো। সেখানে সর্বধর্ম সমন্বয় ঘটিয়ে একটি অখ- মানবসমাজ প্রতিষ্ঠার কোনো প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায় না। এ ক্ষেত্রে লালন শাহের যাত্রাপথ একেবারেই ভিন্ন মুখে। তিনি ধরলেন ধর্ম-সাম্যের গান। কেন লালন শাহ সর্বধর্ম সমন্বয় করার চেষ্টা করেছেন তারও একটা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আছে। হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ অনেক জাতির বাস এই ভারতবর্ষে। এখানে প্রতিটি ধর্মই অন্য কোনো ধর্ম দ্বারা কমবেশি প্রভাবিত হয়েছে। এই প্রভাব নানা কারণে লক্ষ করা যায়। তাই এখানে একদল প-িত-কবি-ধর্মসংস্কারক যখন রক্ষণশীলতার বাণী প্রচার করেছেন, আরেকদল সঙ্গে সঙ্গে সাম্যের বাণী নিয়ে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সব মানুষের ঘরে পৌঁছে গেছেন। শৈলেশকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দাঙ্গার ইতিহাসগ্রন্থে লিখেছেন, “বেদ উপনিষদভিত্তিক হিন্দু ধর্মের বাইরে রামানুজ, নিম্বার্ক, মাধ্বাচার্য, বল্লভাচার্য, চৈতন্য ও শঙ্করদেব প্রমুখের দ্বারা প্রবর্তিত হিন্দু ধর্মের যে ভক্তিবাদী রূপ, তার পিছনেও মরমীয়া সুফীদের প্রভাব বিদ্যমান, লৌকিক স্তরে সাধারণ মানুষদের ভিতর থেকেও একদল ভক্তিবাদী সন্ত-সাধকদের আবির্ভাব ঘটে। এরা হলেন কবীর, রবিদাস, তুকারাম, ধর্মদাস, নামদেব, নানক, দাদূ, রজ্জব, সুন্দরদাস, তিরুবল্লভ, রামানন্দ ও একনাথ প্রভৃতি। পূর্বোক্ত সন্তদের অনেকেরই হিন্দু-মুসলমান-উভয় সম্প্রদায়ের শিষ্য ছিল।লালন শাহ কবীর, রজ্জব, দাদূর সমগোত্রীয় ছিলেন। লালনের গানেও এসব সন্তদের নাম দেখা যায়।

আপন মনের গুণে সকলই হয়।/পিড়েয় পায় পেড়োর খবর, কে দূরে যায়।/নামটি রামদাস বলে/জাতি সে মুচির ছেলে/গঙ্গাকে আনলো হরে চাম কাঠুরায়॥/ভক্ত সে জোলা কবীর/উড়িষ্যায় তাহার জাহির/ছত্রিশ জাত তাঁরই বাড়ি/তুড়ানী খায়॥লালন যেহেতু এসব সন্তদের অনুসারী ছিলেন তাই তাঁর মনোজগৎও তৈরি হয়েছিলো এঁদের চিন্তা-দর্শন ঘিরে।

পূর্বোক্ত সন্তগণ একটা ভেদাভেদহীন সমাজব্যবস্থা আকাক্সক্ষা করেছিলেন। তাঁরা তাঁদের সৃজনকর্মে দেখাবার চেষ্টা করেছেন যতদিন সমাজে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান থাকবে ততদিন সত্যিকারের মানবসমাজ প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। ভারতবর্ষে এ পর্যন্ত যত দাঙ্গা হয়েছে এবং সেসব দাঙ্গায় যত মানুষ মরেছে তার সবগুলোর পেছনেই ছিল ধর্মীয় বিদ্বেষ। দাঙ্গা সংঘটনের অনেকগুলো কারণ থাকে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কারণের চেয়েও ধর্মীয় কারণটাই তাতে বড় হয়ে দেখা দেয়। ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে উত্তর প্রদেশের আজমগড় জেলার মদনাথ ভঞ্জন বা মউ নামক ছোট শহরে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা হয়। সেই দাঙ্গায় বেশ কজন হতাহত হয়। সেই দাঙ্গার কারণ ছিল গো-হত্যা (কোরবানি)। ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে বারানসীর লাঠ ভৈরবের পার্শ্ববর্তী ইমামবাড়ার সম্প্রসারণ নিয়ে এক গুরুতর দাঙ্গা হয় এবং ২৮০২৯ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় ৭০ জনের মতো। ১৮২০ সালে কলকাতায় যে ছোটখাটো দাঙ্গা ঘটে সমাচার দর্পণের ২রা অক্টোবরের প্রতিবেদনে তার মর্মান্তিক বিবরণ আছে। বর্তমানে নির্বিচারে রোহিঙ্গা নিধনও সাম্প্রদায়িক সমস্যার বিষময় ফল।

লালন তাঁর সমকালে অনেক রকম ভ-ামি দেখেছেন। দেখেছেন সোনার চেয়ে পিতলের কদর হতে। যাঁরা সুবিধাবাদী দুর্জন তাদের চাপে সুজনকে কোণঠাসা হয়ে থাকতে। এসব বিষয়ে তিনি তাঁর সঙ্গীতে দারুণ সোচ্চার ছিলেন। তাই মিথ্যা, ভ-ামি, প্রতারণা ছেড়ে মানুষকে তিনি সত্য-সুপথে আসার আহ্বান জানিয়েছেন, “সত্য বল্ সুপথে চল্  ওরে আমার মন/সত্য সুপথ না চিনিলে পাবে না মানুষের দরশন॥/…/পরের দ্রব্য পরের নারী/হরণ করো না/পারে যেতে পারবে নাযতবার করিবে হরণ/(তোমার) ততবার হবে জনম॥/

ভালো-মন্দ, সত্য-মিথ্যা, সৎ-অসৎ নিয়েই এই মানবসমাজ। এখানে পুণ্যাত্মা যেমন আছে তেমনি আছে পাপাত্মার দৌরাত্ম্য। হিসাব-নিকাশ করে চলাফেরা না করলে এখানে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা ষোলো আনা। শঠের ছোবল থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য লালন তাই সতর্ক বাণী প্রচার করেছেন এই ভাবে,

কারো কথা কেউ শোনে না/শঠে শঠে সকল কারখানা,/সমঝে ভবে না চলিলে/বোম্বাটের হাতে পড়বা ভাই।

লালন শাহ ছিলেন কলিকালের মানুষ। শাস্ত্রে কলিকাল সম্পর্কে অনেক নেতিবাচক কথা বলা হয়েছে। কলিকালে মানী লোকের মান থাকবে না, দামি জিনিস মূল্যহীন হবে আর মূল্যহীন জিনিস দামি জিনিসের স্থান দখল করবে। তাই তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন, “সোনার মান গেল রে ভাই / বেঙ্গা এক পিতলের কাছে/শাল পটকের ফ্যার/কুষ্ঠার বনাত দেশ জুড়েছে।/বাজিল কলির আরতি/প্যাঁচ পলো ভাই মানীর প্রতি,/ময়ূরের নৃত্য দেখে/পেঁচায় পেখম ধরেছে।/শালগ্রামকে করিয়ে খাড়া/ভূতে করে ঘন্টা নাড়া/কলির তো এমনি দাড়া/স্থূল কাজে সব ভুল পড়েছে।/সবই কেনে পিতল দানা/জহরের মূল্য হলো না,/লালন কয় গেল জানা/চটকে জগৎ মেতেছে।এই গানে যে সমাজচিত্র বর্ণিত সেটা লালনের কাক্সিক্ষত ছিল না। লালন ফকিরের দর্শনকেন্দ্রিক আলোচনায় সমাজবিষয়ক চিন্তাগুলো খুব কমই আলোচিত হয়েছে। লালন বাউলস¤্রাট এ কথা যেমন ঠিক, তেমনি ঠিক তিনি একজন প্রাজ্ঞ সমাজবিশ্লেষক ও সামাজিক-অসঙ্গতি নির্দেশক। শুধু লালন সঙ্গীত শ্রবণ নয়, তাঁর সঙ্গীতের ভাব হৃদয়ে ধারণ করে ভেদাভেদহীন, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক, প্রেমময় সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এমন একটি সুন্দর মানবসমাজ যেদিন তৈরি হবে সেদিনই পূর্ণ হবে লালন ফকিরের অপূর্ণ আশা।

মানব সভ্যতার ইতিহাসে আদিম যুগবলে একটি যুগের কথা আছে। আদিমশব্দের অর্থ হলো প্রথম বা আরম্ভ। শুধু সময়ের পরিমাপ দিয়ে আদিম যুগকে বিশ্লেষণ করা ঠিক হবে না, আদিম যুগই ছিল আধুনিক যুগের উৎসভূমি। আদিম যুগের সমাজব্যবস্থা ও মানুষের জীবনাচার নিয়ে পৃথিবীব্যাপী অনেক গবেষণা হয়েছে ও এখনও হচ্ছে। প-িত-গবেষকগণের প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আদিম মানুষের যে পরিচয় পাওয়া যায় তাতে দেখা যায়, অনেক লড়াই-সংগ্রাম করেই আদিম মানুষের বংশধরগণ বর্তমান সময়ে এসে পৌঁছেছে। আপাতদৃষ্টিতে আধুনিক মানুষের অগ্রগতি চোখে পড়লেও তাদের অন্তঃসার শূন্যতা দেখা যায় না। আধুনিক মানুষের সঙ্গে মিশলে, তাদের ক্রিয়া-কলাপ, আচার-ব্যবহার দেখলে তাহলেই কেবল তাদের মানবিক দৈন্য চোখে পড়ে। মানবিক দৈন্য থাকলে মানুষ কোনোদিনই সত্যিকারের মানুষ হতে পারবে না। মানুষকে মানুষ হতে গেলে আগে মানুষের নিজেকে চেনা-জানা উচিত। নিজেকে না চিনলে, না জানলে মানুষ শুধু দিগি¦দিক ঘুরে বেড়াতেই থাকবে। একের সঙ্গে অন্যের বিচ্ছেদ বা দূরত্ব কেবল বাড়তেই থাকবে। দূরত্বের পথরেখা অতিক্রম করে মানুষকে মানুষের কাছে যেতে হবে। অন্তর দিয়ে, পরিশীলিত আবেগ দিয়ে একজন মানুষকে আরেকজন মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-হতাশা উপলব্ধি করতে হবে। লালন ফকির তাঁর একটি গানে বলেছেন,

খ্যাপা তুই না জেনে তোঁর আপন খবর যাবি কোথায়,

আপন ঘর না বুঝে বাইরে খুঁজে পড়বি ধাঁধায়॥

এই কথার সঙ্গে নিশ্চয়ই সক্রেটিসের (৪৬৯ খ্রি.পূ, ৩৯৯ খ্রি.পূ.) সেই বিখ্যাত উক্তি কহড়ি ঃযুংবষভ’-এর কথা মনে পড়ে যাবে। কিন্তু কথা হলো নিজেকে জানলে কী লাভ হয় আর না জানলেইবা কী ক্ষতি হয় সেই বিষয়ে সক্রেটিসের স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। কিন্তু লালন ফকির সেই সম্পর্কে একটি চকিত মন্তব্যও করেছেন। তিনি এই গানের শেষের দিকে বলেছেন,

আপনার আপনি না চিনে

ঘুরবি কত বনে বনে

লালন বলে অন্তিমকালে নাই রে উপায়॥

এই কথাটার মানে হতে পারে এ রকম যে, যত দিন মানুষ নিজেকে জানবে না, চিনবে না তত দিন সে সত্যিকার মুক্তিও পাবে না। সে দিশেহারা হয়ে ঘুরে বেড়াবে। দুঃখ হবে তাঁর প্রতিদিনের সাথি। আধুনিক মানুষ কতটা সভ্য বা অসভ্য সেটা বড় কথা নয়, বড় কথাটা হলো আধুনিক মানুষ কতখানি মানুষহতে পেরেছে সেই বিষয়টি। যন্ত্রযুগের ক্রমাগত উন্নতি আর বিজ্ঞানের আশ্চর্য আবিষ্কার দিয়ে মানুষকে মাপা ঠিক নয়। বরং সেই মাপকাঠি প্রয়োগ করলে দেখা যাবে মানুষ যতখানি এগিয়েছে, পিছিয়েছেও ঠিক ততখানি। মানুষের অনেক ভালো কাজ আছে পৃথিবীর ইতিহাসে, আবার মন্দ কাজের পরিমাণও কোনো অংশে কম নয়। সুতরাং মানবসৃষ্ট শুভ-অশুভ পরিমাপ করলে মানুষকে এখনো পরিপূর্ণ মানুষ বলা যায় না যদিও পরিপূর্ণ মানুষ হওয়াই আমাদের লক্ষ্য।

বাউলেরা ইহজাগতিক চিন্তক। মানুষ তাদের সকল চিন্তার মূলকেন্দ্রে অবস্থিত। মানুষের কল্যাণ কামনা ও বিশুদ্ধ মানুষ গড়াই তাদের প্রধান সাধনা। ইহলৌকিকতার বাইরে তাদের ভাবনা তেমন নেই বলেই বাউলকে বস্তুবাদীবলা হয়। অবশ্য বস্তুবাদীশব্দের আরো একটি গোপন অর্থও আছে বাউলের পরিভাষায়। সেটা একেবারেই তাদের নিজস্ব ব্যাপার।

পৃথিবীর কোনো মানুষ অন্যায় না করুক, পৃথিবীর কোনো মানুষ অন্য মানুষের বা প্রকৃতির এতটুকু ক্ষতি না করুক, এটাই বাউলের প্রত্যাশা। এই জন্য বাউলেরা এমন এক তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছে মানুষের যাবতীয় কার্যাবলিকে নির্দেশ করে যাঁর নাম মানুষতত্ত্বমানুষতত্ত্বমূলত মানুষকে চেনা-জানা ও আত্ম-উপলব্ধির তত্ত্ব। এই তত্ত্বের সূত্র বর্ণিত আছে লালনের একটি কালজয়ী গানের মধ্যে। সেই গানটির নাম এমন মানব জনম আর কি হবে। এই গানটির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে যেই সত্য বা তত্ত্ব বেরিয়ে আসে তা-ই লালনের মানুষতত্ত্ববা বাউলের মানুষতত্ত্ববলে পরিচিত।

বাউলের মূল বৈশিষ্ট্য হলো কোনো কিছু কল্পনা, অনুমান বা আরোপ করে নয়, যা বর্তমান (বিদ্যমান) তা দিয়েই বর্তমানকে বিচার করা। এ জন্যই দেখা যায় বাউলেরা শাস্ত্র দিয়ে শাস্ত্র বিচার করেন, মানুষ দিয়ে করেন মানুষের তুলনা। বাউল কুতার্কিক নন, সুচিন্তক। বাউল সমাজবিরোধী নন, প্রচ-ভাবে সমাজবান্ধব।

প্রচলিত সমস্ত ধর্মশাস্ত্রেই বলা হয় ¯্রষ্টা তাঁর নিজের ইচ্ছায় মানুষ সৃষ্টি করেছেন। মানুষ সৃষ্টি না করলেও যে ¯্রষ্টার খুব ক্ষতি হতো তা নয়। তবু তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, এমনকি নূরীতনের (ফেরেশতাদের) অমত থাকা সত্ত্বেও তিনি মানুষ সৃষ্টির সংকল্প থেকে বিরত হননি। কেন পরম¯্রষ্টা মানুষ সৃষ্টি করলেন? করলেন এই কারণে যে এই মানুষ দিয়ে তিনি মধুর লীলা (মাধুর্য ভজন)করতে চেয়েছেন। যাদের বৈষ্ণবশাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান আছে তারা জানেন মধুর প্রেমহলো উৎকৃষ্ট প্রেম। পঞ্চপ্রেমের মধ্যে মধুর প্রেম তুলনাহীন। এই প্রেম যদি বিশ্বময় প্রচারিত হতো, অর্থাৎ পৃথিবীর মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিশুদ্ধ প্রেমচর্চা করত, তাহলে পৃথিবী স্বর্গে রূপান্তরিত হতো। মানুষ একদিন স্বর্গে ছিল, আবার মানুষ স্বর্গেই ফিরে যাবে। কিন্তু পৃথিবীকে মানুষ কেন স্বর্গ হিসেবে গড়ে তুলছে না, সেটাই বাউলকে ব্যথিত করে তুলছে। বাউল চায় পৃথিবীটাই স্বর্গ হয়ে উঠুক।

আজ মানুষ প্রেমের পথ পরিহার করে হিংসার পথ বেছে নিয়েছে, মালার বদলে মানুষ তৈরি করেছে মারণাস্ত্র। এসব ত্যাগ করে মানুষকে শুদ্ধতার কাছে সমর্পিত হওয়া দরকার। চিত্ত শুদ্ধ হলে, অমল হলে, মানুষের সমাজে বিরাজ করে অপার্থিব সুখ। সেই সুখ আস্বাদন করার জন্যই অনেক যতেœ মানুষ গড়েছেন পরম¯্রষ্টা। লালন বলেছেন,

কত ভাগ্যের ফলে না জানি

মন রে পেয়েছো এই মানব তরণী,

বেয়ে যাও ত্বরায় তরী সুধারায়

যেন ভরা না ডোবে॥

মহাবিশ্বে মানবজীবন এক দুর্লভ প্রাপ্তি। জন্মমুহূর্তে অসংখ্য শুক্রাণুর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে মাতৃজঠর থেকে মানবদেহ ধারণ করে মানুষ পৃথিবীতে আসে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মানুষকে সুশৃঙ্খল, কর্মময় ও প্রেমময় জীবনযাপন করা উচিত। কেউ যদি ভ্রান্তির ছলে বা মিথ্যা মোহে বদ্ধ থেকে নিজেকে কুপথে পরিচালিত করে তাহলে তাঁর জীবন ব্যর্থ হয়ে যায়। জীবনকে ব্যর্থ হতে দেয়া ঠিক নয়।

পৃথিবীতে নানা মত ও পথ আছে। অসংখ্য পথের ধাঁধায় ঘুরে ঘুরে হয়রান না হয়ে সহজ-শুদ্ধ পথে গমন করাই মানুষের প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিত বলে বাংলার বাউলমত মনে করে। আজ পৃথিবীতে একটি কথা বেশ জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে, যার নাম মানবতামানবতামূলত মানুষতত্ত্বেরইআধুনিকীকরণ। বিরূপ বিশ্বে মানুষকে সার্থকভাবে বাঁচতে হলে মানুষতত্ত্বচর্চার বিকল্প কিছু নেই। মানুষতত্ত্ব মূলত মানবসেবা ও মানুষকে সর্বান্তঃকরণে ভালোবাসার তত্ত্ব। তাই সুসময় থাকতেই মানুষতত্ত্বের সাধনা করা দরকার। কেননা সময় গেলে সাধন হবে না। তাই পরকালে পস্তানোর বদলে ইহকালেই মানুষকে সংশোধন হওয়া বাঞ্ছনীয়।

বাউলস¤্রাট ফকির লালন শাহ কিংবদন্তি সাধকপুরুষ। শ্রেষ্ঠ বাঙালি সন্তানদের মধ্যে তাঁর স্থান অগ্রগণ্য। জীবদ্দশায় তিনি লোকপ্রিয় হলেও গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হননি। তখন তাঁর খ্যাতি কেবল তাঁর শিষ্য ও কতিপয় চিন্তাশীল অনুসারীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর হিতকরীনামক পাক্ষিক পত্রিকায় মহাত্মা লালন ফকিরনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এই নিবন্ধ লালন ফকির সম্পর্কে কিছু তথ্য জনসমক্ষে প্রচার করলে এবং নিবন্ধের শিরোনাম দিয়ে শ্রী বসন্তকুমার পাল তাঁর মহাত্মা লালন ফকীর (১৩৬১)নামক জীবনীগ্রন্থ প্রকাশ করলে লালন ফকির সম্পর্কে শিক্ষিত ও গবেষকদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। বলা যেতে পারে এই দুটি লিখিত কাজই লালন ফকির সম্বন্ধে মানুষকে আকৃষ্ট করার প্রথম প্রয়াস।

লালন ফকিরকে নিয়ে বাংলাদেশে এবং পার্শ্ববর্তী ভারতে উল্লেখ সংখ্যক কাজ হয়েছে। দুই দেশের সন্ধানী গবেষকগণ শুধু লালন ফকির রচিত গানই সংগ্রহ করেননি, সংগৃহীত সেসব গানের টীকা-ভাষ্যও রচনা করেছেন। বিশেষ করে মুহম্মদ মনসুর উদ্দীনের হারামণিও উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের বাংলার বাউল ও বাউল গানলালন গীতির অমূল্য ভা-ার বলে সুধী মহলে বিবেচিত। এই দুজনের বাইরে আরো যাঁরা লালন ফকিরের গান ও তথ্য তালাশ করেছেন তাঁদের মধ্যে, আবুল আহসান চৌধুরী, আনোয়ারুল করীম, এস.এম. লুৎফর রহমান, খোন্দকার রিয়াজুল হক, খোন্দকার রফিউদ্দিন, মুহম্মদ আবূ তালিব, মতিলাল দাশ, পীযূষ কান্তি মহাপাত্র, শক্তিনাথ ঝা, সনৎকুমার মিত্র, সুধীর চক্রবর্তী, অমিত গুপ্তের নাম বলতেই হয়।

বাংলাদেশ এবং ভারত ছাড়াও বিশ্বের আরো অসংখ্য দেশের জ্ঞানী-গুণী-গবেষক লালন ফকির সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হচ্ছেন এবং লালন ফকির ও বাউলবিষয়ক গ্রন্থ রচনা করছেন। যেসব বিদেশি গবেষক লালন ফকিরের তথ্য ও তত্ত্ব তালাশে মগ্ন হয়েছেন তাঁরা প্রায় সকলেই বাংলা ভাষার প্রতি অনুরাগী ও মনোযোগী। কেননা  এঁদের বেশির ভাগই বাংলা ভাষা জানেন এবং বাংলা বোলচালে বেশ অভ্যস্ত বলেই মনে হয়। বিশেষ করে প্রখ্যাত গবেষক ক্যারল সলোমনের কথা না বললেই নয়। আমেরিকান এই গবেষক দীর্ঘ দুই দশক ধরে লালন ফকির ও বাংলাদেশের বাউল-সাধকদের নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁর গবেষণা-পেপারবিশ্বের আরো বহু গবেষককেই উদ্বুদ্ধ করেছে লালন ফকির ও বাংলার বাউল-সাধকদের সম্পর্কে জানতে-বুঝতে। বিশেষ করে আমেরিকার তরুণ-গবেষক কিথ ই কান্তু ক্যারল সলোমনের কথা অকপটে স্বীকার করেছেন। কিথ ই কান্তুকে আমি নারায়ণগঞ্জে একবার দেখেছিও। যদিও তখন তাঁর সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত আলাপ-পরিচয় ছিল না। কিন্তু তিনি যাঁর কাছে বাউলতত্ত্বের দীক্ষা নিয়েছেন, তাঁর গুরু সাধু হুমায়ুন ফকিরকে আমি চিনি ও জানি। সাধু হুমায়ুন ফকিরের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের বারামখানায়বহুদিন সঙ্গ করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। কিথ ই. কান্তু একজন পরিশ্রমী গবেষক, তাঁর লেখা পড়ে দেখেছি তিনি লালন ফকির ও বাউল সাধকদের নিয়ে ব্যাপক ফিল্ড ওয়ার্ককরেছেন।

জাপানি গবেষক মাসাহিকো তোগাওয়া পেশাগত জীবনে একজন অধ্যাপক। জাপানের হিরোশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি নৃবিজ্ঞান ও উন্নয়ন বিভাগে কর্মরত আছেন। মাসাহিকো তোগাওয়া জাপানি ভাষায় লালন ফকির সম্পর্কে এক যুগান্তকারী গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন ২০০৯ সালে। যেই গ্রন্থের বাংলা শিরোনাম আধুনিক যুগের ধর্ম এবং একজন সাধকের দর্শন’ (শুক্যোনি কৌসুর সেইজা: হিন্দু-কিও তো ইসলাম ওয়া মিগুরু শাই উ কিওউ গ্যাইনিন নো সাইকোউছিকু)। এই গ্রন্থে জাপানি গবেষকের দৃষ্টি যেসব বিষয়ে আকৃষ্ট হয়েছে সেগুলোতে নতুনত্ব আছে। তাঁর বিশ্লেষণ ক্ষমতা অসাধারণ।

মাসাইয়ুকি ওনিশি জাপানের আরেক লালন ও বাউলগবেষক। তিনি টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। বহু বছর তিনি ভারত ও বাংলাদেশে অতিবাহিত করেন বাউলগবেষণার কাজে। বিশেষ করে লালন সাঁইজি সম্পর্কে তাঁর আগ্রহ ছিল অপরিমিত। লালন-শিষ্য খোদা বকশ্কে বাংলায় লেখা মাসাইয়ুকি ওনিশির চিঠিগুলো যাঁরা পড়েছেন তাঁরা নিশ্চয়ই অবগত আছেন ওনিশির লালনপ্রেম ও বাউলপ্রীতি কী সীমাহীন।

ফকির লালন শাহকে নিয়ে উন্নত বিশ্ব ভাবছে এবং সেই ভাবনা থেকে তারা বাংলাদেশে আসছে, এসে বাংলা ভাষা শিখছে ও গবেষণা করছে, এটা আমাদের জন্য একটা অনেক বড় খবর।  মাঝে মাঝে পত্র-পত্রিকায় দেখা যায় বাউল-ফকিরদের ওপর অকথ্য নির্যাতনের চিত্র। তাদের চুল-দাড়ি কেটে, ঢোল-খোল, একতারা-দোতরা ভেঙে অপমান-অপদস্ত করা হচ্ছে। বাউলদের ওপর এসব অমানবিক নির্যাতন বহির্বিশ্বের কাছে আমাদের ছোট করে ফেলে। পৃথিবী এখন ছোট হয়ে গেছে। এক প্রান্তের খবর মুহূর্তের মধ্যেই আরেক প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। লালন ফকিরের চিন্তা ও দর্শন তথা বাউলের দর্শন ক্রমে ক্রমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। এই ¯্রােত অব্যাহত রাখতে আমাদের সবাইকে সচেষ্ট থাকা দরকার। ফকির লালন শাহ আমাদের অমূল্য সম্পদ এ কথা ভুলে গেলে চলবে না। আজ ফ্রান্স, কানাডা, ইংল্যান্ড থেকে দলে দলে মানুষ এসে লালন সম্পর্কে জানছেন, গবেষণা করছেনÑ এ খবর অবশ্যই আমাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক। আমাদের দেশে এখনো বাউল-ফকিরদের খুব একটা ভালো নজরে দেখা হয় না। যদি আমরা বাউল-ফকিরদের প্রতি একটু উদার হতাম, শ্রদ্ধাশীল হতাম, তাহলে এদিকটিতে আরো বেশি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারতাম। ফকির লালন শাহ বাংলার গর্ব, বাংলা ভাষার গর্ব, এ কথা আমরা যত দ্রুত স্বীকার করব ততই আমাদের মঙ্গল। জাতি হিসেবে আমাদের একটি দুর্নাম আছে, ‘বাঙালি গুণের ও গুণীর কদর জানে না।এই দুর্নাম থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার নিয়ে এখন আর পড়ে থাকার সুযোগ নেই। সকল প্রকার সংকীর্ণতা পরিহার করে উদার মন নিয়ে সুন্দর ও সত্যকে বরণ করে নিতে হবে। বাউল মূলত সত্য আর সুন্দরের শিক্ষাই দেয়।

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.