শুভ জন্মদিন মান্যবর শেখ হাসিনা

শুভ জন্মদিন মান্যবর শেখ হাসিনা

সৈয়দ জাহিদ হাসান: ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে অনেক বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে ’৪৭-এর দেশ বিভাগ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে যে ক্ষত সৃষ্টি করেছে সেই অবিনাশী কলঙ্কতিলক কোনোদিন মোচন হবার নয়। সেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার দাবানল আর নিরপরাধ মানুষের রক্ত স্রোতের মুহূর্তে, ২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭- পূর্ব বাংলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে হেসে ওঠেন এক সূর্যকন্যা- যাঁর নাম ‘শেখ হাসিনা’। পরিবারের আদরের ‘হাচু’। জন্মমুহূর্তেই তিনি সাথি হন উদ্বাস্তু, ছিন্নমূল মানুষের দুঃখের সঙ্গে। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনও দুঃখের চন্দনে চর্চিত। তবু সমস্ত বিষ হাসি মুখে পান করে তিনি মানুষের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতারণার বিরুদ্ধে বিলিয়ে যাচ্ছেন প্রেম, ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে গেঁথে যাচ্ছেন সান্ত¦নার মালা, ঘৃণিত ঘাতকের বিরুদ্ধেও উচ্চারণ করছেন ক্ষমার মন্ত্র।

শেখ হাসিনার দু’চোখে অবাধ্য অশ্রুর ফোয়ারা। তবু সে-চোখে খেলা করে স্বদেশকে ঘিরে সুন্দর স্বপ্ন। তাঁর হৃদয়ের গোপন প্রদেশ সব সময় প্লাবিত থাকে স্বজন হারানোর রক্তক্ষরণে, তবু সেই হৃদয়েই প্রোথিত আছে বাঙালি ও বাংলাদেশের জন্য সবটুকু ভালোবাসা, অকপট মঙ্গলকামনা। ষোলো কোটি বাঙালি তাঁর মতো বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত রাষ্ট্রনায়কের হাতে সর্বস্ব সঁপে দিয়ে নিঃশঙ্ক, নির্ভার। তাঁর হাতে ধূলিকণা সোনা হয়ে যায়, শূন্য পাত্র ভরে ওঠে কানায় কানায়। তাঁর স্পর্শে শত্রু বন্ধুতে পরিণত হয় তাঁর অমায়িক অন্তরঙ্গতায় উদ্ধত কালনাগও নতমুখী হয়ে মধুর অভিবাদন জানায়।

কোনো কোনো মানুষ থাকে জীবনে যে কখনো সুখের দেখা পায় না। কোনো কোনো জাতিও সেরূপ হতভাগা হয়। সারা জীবন কাটায় তারা লড়াই-সংগ্রামের মাঠে আর ষড়যন্ত্রের জালে। জাতি হিসেবে বাঙালি হতভাগাই বটে। তবে এর ভাগ্যরেখা সম্পূর্ণ বিষাদরঞ্জিত নয়। বাঙালির ভাগ্যরেখায় সুখের যোগও আছে। ১৯৭১-এ বাঙালির ভাগ্যে অসামান্য ত্যাগের ভেতর দিয়ে সুখ এসেছিল, পঁচাত্তরে সেই সুখপাখি হৃদয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। তারপর ২১ বছর নিকষকালো অন্ধকারে ঢেকে যায় বাংলার মাঠ-ঘাট-অরণ্য-আকাশ। উল্কার বক্ষ ভেদ করে বাঙালির দিকে ছুটে আসতে থাকে বঞ্চনা ও অট্টহাসি। বঙ্গোপসাগরের নীলজল থেকে ধেয়ে আসতে থাকে নীলাভ নিষাদ। সূর্য যেন আলো দিতেও কার্পণ্য করে বাঙালি ও বাংলাদেশের ওপর। সমগ্র বাংলাদেশকে গ্রাস করে অন্যায় ও অমানবিকতার রাহু। বস্তুত বাংলাদেশ তখন হয়ে পড়ে ‘বন্দি প্রমিথিউস’। তার হৃৎপিণ্ড তখন কুরে কুরে খাচ্ছিল সন্ত্রাস, মৌলবাদ আর দুর্নীতির কালো ঈগল। মৃত্যু যন্ত্রণায় বাংলাদেশ যখন কাতরাচ্ছিল সেই মুমূর্ষু বাংলাদেশকে তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্য দান করেন লড়াকু, দেশপ্রেমিক, পরিণামদর্শী, স্বাপ্নিক, অকুতোভয়, হার-না-মানা- শেখ হাসিনা।

তথাকথিত কুলীনরা একসময় আমাদের এই প্রিয় ভূখণ্ডের নাম রেখেছিল ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’। আমরা তখন তাঁদের দৃষ্টিতে মানুষ ছিলাম না, ছিলাম ‘মিসকিন’। আজকের বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পেতে বদ্ধ পরিকর, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বাঙালিদের সাফল্যও চোখ ধাঁধানোর মতো। যতই দিন যাচ্ছে ততই বাংলাদেশের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হচ্ছে। কেবল স্বপ্ন ও মনোবল পুঁজি করে শত শত বাধার পাহাড় পেরিয়ে বাঙালি ও বাংলাদেশ আজ যাত্রা শুরু করেছে সাফল্যের সমতলে। শেখ হাসিনার হাতে বাংলাদেশের হাল থাকলে অচিরেই এদেশ কাক্সিক্ষত গন্তব্যে পৌঁছাবে বলে ষোলো কোটি মানুষ মনে করে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আজ আপনার জন্মদিনে আমি কোনো দুঃসংবাদ শোনাতে চাই না। বাংলাদেশের মানুষ জানে আপনি প্রতিটি ঘটনাই অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ এবং বাস্তবায়ন করছেন। ইদানীং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের যেসব দুনীর্তির চিত্র প্রকাশিত হচ্ছেÑ তাতে দেশের মানুষ কিছুটা বিব্রতবোধ করছে। একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী যদি দুর্নীতি করে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হন, তাহলে সেই চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তাকে নিয়ন্ত্রণ করেন প্রথমশ্রেণির ক্ষমতাবান যে কর্মকর্তা তার সম্পদের পরিমাণ কী সাধারণ ক্যালকুলেটর দিয়ে গণনা করা সম্ভব? টাকার অঙ্কে হিসাব করা হলে বিগত এক দশকের দুর্নীতি অতীতের সব দুর্নীতির রেকর্ড ভেঙে খান খান করে দেবে। আপনার ৭৪তম জন্মদিনে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এই আশায় বুক বাঁধতে চায় যেÑ আপনার পঁচাত্তরতম জন্মদিন উদ্যাপন হবে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশে। আপনি কি এই অঙ্গীকার দিয়ে আশ্বস্ত করবেন।

আপনি জন্মেছিলেন শরৎকালে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) শরতের মধ্যে দেখেছিলেন ‘মধুর মূরতি’। দুঃখবাদী কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত (১৮৮৭-১৯৫৪) অবলোকন করেছিলেন শরতের ‘বিধুর চিত্র’। আমরা দুঃখবাদী নই, আশাবাদী চরিত্রের লড়াকু জাতি। আমরা শারদনিসর্গের অপূর্ব রূপের মধ্যে আস্বাদন করতে চাই- পূর্ণশশীর  অলোকসামান্য মাধুরী। হিংসা-হত্যা-হঠকারিতা নয়, আমরা এগিয়ে যেতে চাই সাম্য-মৈত্রী ও সুন্দর জীবনের হাত ধরে। আমরা সাধারণ জনতা মনে করি বাঙালি ও বাংলাদেশের সাফল্যযজ্ঞে শেখ হাসিনাই আমাদের পরম পুরোহিত। শেখ হাসিনা আপনি এগিয়ে চলুন তিমিরবিদারী অগ্নিমশাল বহন করে। আমরা ষোলো কোটি বুক দিয়ে সেই স্বপ্নের মশাল অনির্বাণ রাখব। বত্রিশ কোটি হাত দিয়ে তাকে রক্ষা করব দানবথাবা থেকে। আপনি একজন চিরায়ত বঙ্গনারী হয়েও দেশপ্রেম ও নেতৃত্বগুণের কারণে বিশ্বসভায় সম্মানিত হচ্ছেন। সব হারানো বাংলাদেশকে করছেন সমৃদ্ধ, জাতি হিসেবে আমাদের দিচ্ছেন জাত্যাভিমান। বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে আপনাকে অভিবাদন ও জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই। পুণ্যের আলোয় উদ্ভাসিত হোক আপনার জীবনব্রত। অসীম, অগণ্য হোক আপনার সংক্ষিপ্ত পরমায়ু। শুভ জন্মদিন।

লেখক : কবি ও কথাশিল্পী

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.