হায়রে সাংবাদিকতা! এখনো সেই অন্ধকুপেই কলম ঘষছে! বাইরের আলো এখনো পৌঁছালো না সেখানে! কিভাবে পৌঁছাবে? গণ্ড অজ্ঞরা এখনো নামী দামী পত্রিকার বিগ শট! বাই চান্স সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণে আর কর্তৃত্বে থাকা পত্রিকাগুলো নিয়মিতই হাস্যকর ও লজ্জাজনক আইটেম খাওয়াচ্ছে পাবলিককে৷ পাবলিকও অত বোকা না৷ পয়সা দিয়ে কাগজ কেনে৷ বিনোদন মিস করবে ক্যা?
মনে পরে ক্লাসে পড়াত, সংবাদপত্রের তিনটা উদ্দেশ্য: টু ইনফর্ম, টু এডুকেট, টু এন্টারটেইন৷ সবকিছু এখন তৃতীয়তে বিলীন৷ ( আমার নিজেরও বাই চান্স সম্পাদক তথা “স্যার” এর অধীনে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে৷ জীবন কম বিনোদিত ছিল না৷ )
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীপুত্র জয়ের উপর এক আইটেম পরলাম৷ বিশেষ নিউজ মর্যাদায় ছেপেছে বেশকিছু স্টার পত্রিকা৷ বাংলাদেশে এই প্রথম, প্রথম বাঙালি, স্বীকৃতি, বিশাল অর্জন, সৌভাগ্য – পত্রিকার পাতায় এসব তকমা আর বিশেষণ পাঠের পাশাপাশি আরেকটি শব্দ মানুষ তার অজান্তেই পাঠ করে – মূর্খতা৷
নিউজ ভ্যালু বোঝার যোগ্যতাও যাদের নেই, নেই দিনদুনিয়ার খোঁজ, তাদের হাতের চটন খেয়ে নিউজ তো বিনোদনে রূপ নিবেই!
জয়ের ফেইসবুক প্রফাইলে যে হালকা নীল রঙের চেকমার্ক তা কোনক্রমেই স্বীকৃতি, অর্জন বা এমনধারার কিছু না৷ কোনো নোবেল বিজয় না৷ কোনো ডিজিটাল সাফল্য না৷ টুইটার আর গুগল প্লাস এ যা অনেক আগে থেকে চালু আছে, ফেইসবুক সেই ধারায় সংযুক্ত হলো শুধু, গেল বছর৷ যেসব একাউন্ট হোল্ডারের ফলওয়ার বেশি, যারা সেলিব্রিটি তাদের নামে অনেক ফেইক একাউন্ট তৈরী হয়৷ আসল লোকটিকে যাচাই করার জন্য ফেইসবুকের এই নতুন ম্যুভ৷ ওয়েব সাইটটির স্বয়ংক্রিয় প্রোগ্রাম যোগাযোগ করে ওই ব্যক্তির সঙ্গে যার ফলোয়ার চোখে পরার মত বেশি এবং যার একই নামে বেশ কিছু একাউন্ট৷ ফেইসবুকের নিয়ম মত জয়কে যা করতে হয়েছে তা হলো, তাঁকে তাঁর বার্থ সার্টিফিকেট, আইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট বা এ ধরনের কোনো ডকুমেন্টের রঙিন কপি বা স্ক্যান্ড ফাইল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে হয়েছে৷ এটাই প্রক্রিয়া৷ নকলগুলো থেকে যাচাই করে আসল সনাক্ত করে টিক চিহ্ন লাগিয়ে দিয়েছে যাতে আমরা আমজনতা তাঁকে খুঁজে পেতে বিভ্রান্ত না হই৷ এটা একটা ভেরিফিকেসন, সত্যায়নপত্র৷ এই টিক চিহ্নটি যেমন শাহরুখ খানের আছে, ডেভিড বেকহ্যামের আছে তেমনি আছে কোরান পোড়ানো যাজকের কিংবা পর্নো ছবির নায়িকার প্রফাইলে৷ এটা ফেইসবুকের পক্ষ থেকে কোনো বিশাল স্বীকৃতি বা অ্যাওয়ার্ড নয়৷ এই সামান্য তথ্যটা আমাদের জিনিয়াসরা পেতে পারতেন ফেইসবুকের নিউজরুমে উঁকি দিয়ে৷ তা না করে “ফেইসবুকের পক্ষ থেকে বিরল সন্মান পাওয়া” সংক্রান্ত যে নিউজ ডেলিভারি করা হলো এবং প্রতিবছর এই বিরল সম্মান পাওয়ার দিনটি ঘটা করে পালন করার যে আস্কারা দেয়া হলো তার দায়ভার কে বহন করবে?
জয় নিজে আইটি বিশেষজ্ঞ৷ তিনি নিশ্চয় হেসেছেন এই নিউজগুলো পড়ে৷ সত্যি হেসেছেন তো! নাকি গতানুগতিক জং ধরা রাজনীতিবিদদের মত আহ্লাদে গদগদ হয়েছেন? জানি না৷
আশাহত জনতা নতুন প্রজন্মের জয়দের ঘিরে যখন সপ্ন দেখছে, যখন তাঁদের হাতে ভবিষ্যত বাংলাদেশের ভার তুলে দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন জয়কে পুরনো জংধরা, ফাঙ্গাসপরাদের ভিরে ঠেলে দেবার এই তাবেদারী প্রচেষ্টা কেন?