অভিনন্দন লালে লাল কানাডার তরুণ প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো!

অভিনন্দন লালে লাল কানাডার তরুণ প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো!
1

একটি নির্বাচনী সমাবেশে স্বস্ত্রীক জাস্টিন ট্রুডো

লুৎফর রহমান রিটন: কানাডার ফেডারেল নির্বাচনে ক্ষমতাসীন কঞ্জার্ভেটিভ পার্টিকে ভূমিধ্বস পরাজিত করে বিপুল ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছে লিবারেল। লিবারেলের প্রতীক রঙ হচ্ছে রেড অর্থাৎ লাল। গতকাল দুপুরের পর থেকেই সারাদেশে রেকর্ড সংখ্যক আসনে লালের বিজয়ের খবর ভেসে আসছিলো টিভি পর্দায়। আমি আর আমার স্ত্রী শার্লি ভোট দিয়েছি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। ওয়েস্ট অটোয়ার উড্রিজ ক্রিসেন্টের ভোটকেন্দ্রের নির্দিষ্ট বুথে একজন নারী এবং একজন পুরুষ, দু’জন সিনিয়র সিটিজেন আইডেনটিটি পরীক্ষা এবং ব্যালট পেপার সরবরাহের কাজটা করছিলেন। ভদ্রমহিলার হাত থেকে ব্যালট পেপার নিয়ে বুথে ঢুকে মুদ্রিত প্রার্থী তালিকার ঘরে পেন্সিলে ক্রস চিহ্ন এঁকে ওটা ভাঁজ করে ফিরে এসে তাঁর সামনে থাকা ব্যালটবাক্সে সেটা ঢুকিয়ে দিলাম। ক্ষিপ্র গতিতে পুরো কাজটা করতে আমার সময় লাগলো ১৫ সেকেণ্ডেরও কম। আমার কাণ্ড দেখে বয়স্ক মহিলা মহা বিস্ময়ে বলে উঠলেন–‘তুমি হইতেছো একজন সুপারম্যান!’

আমি বললাম–আমার তো সিদ্ধান্ত লওয়াই ছিলো কাহাকে ভোট দিবো সুতরাং দেরি করিবার দরকার কী?
বয়স্ক ভদ্রলোক আমাকে চোখ টিপে সমর্থন যোগালেন। আমার পেছনে মোটামুটি জনাদশেক ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমার স্ত্রী শার্লি ছিলো আমার আগের জন। শার্লির ভোট সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছিলো। সেই ফাঁকে আমি আমার সামনের টেবিলে বসে থাকা দুই সিনিয়র সিটিজেনের সঙ্গে ভোট বিষয়ক আলাপসালাপ সেরে নিচ্ছিলাম। আমার অধিকাংশ প্রশ্নের জবাব ভদ্রমহিলাই দিচ্ছিলেন।
”–কতোক্ষণ ধরিয়া ডিউটি করিতেছো?
–সেই সকাল হইতে।
–নন স্টপ?
–নাহ্‌ মাঝখানে একটু বিরতি পাইয়াছিলাম। কিন্তু আমার পাশের ওই বুথের ওই যে ইয়াং লেডি আমার মতোই কাজ করিতেছে সে কোনো ব্রেকই পায় নাই। আহারে বেচারা!
–কানাডার মানুষজন তো ভোট প্রদান করিতে আসে কম। আজিকে কী পরিমাণ ভোটার আসিয়াছে দিনব্যাপি?
–নাগরিকদের বিশাল অংশ এইবার ভোটে অংশ লইতেছে।
–ভালো লক্ষণ।
–সঠিক।তুমি ঠিক বলিয়াছো। ইহা খুবই ভালো লক্ষণ। ডেমোক্রেসির জন্যে ইহা অতীব দরকারি।
–ভোটার বেশি হইবার কারণ কী?
–এই বৎসরে প্রচুর সংখ্যক নতুন ভোটার হইয়াছে। নতুন ভোটাররা ভোটের ব্যাপারে অতিশয় আগ্রহ প্রদর্শন করিয়াছে।”

2

জাস্টিন ট্রুডোঃ স্ত্রী ও পুত্রদের সঙ্গে

সকাল নয়টা থেকে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ কার্যক্রম চালু ছিলো। এর আগে চারদিনব্যাপি গত ০৯-১০-১১-১২ অক্টোবর আগাম ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। আমি সাধারণত আগাম ভোটই দিই। কিন্তু এবার সেটা পারিনি নানান ব্যস্ততায়। গতকাল ১৯ অক্টোবর দুপুরে আমি অটোয়া ফিরেছি। আগের দুদিন আমি টরন্টোতে ছিলাম। মুক্তিযোদ্ধা-লেখক ডক্টর নূরুন নবীর ‘আমেরিকায় জাহানারা ইমামের শেষ দিনগুলি’ বইয়ের ওপর আলোচনা এবং মুক্তিযোদ্ধা-লেখক মোল্লা বাহাউদ্দিনের স্মরণসভায় অংশ নিতে আমাকে টরন্টো যেতে হয়েছিলো।

সন্ধ্যায় ভোট কেন্দ্রে যতোটা ভিড় আমার প্রত্যাশিত ছিলো তারচে অনেক কম ছিলো ভোটার উপস্থিতি। এর কারণ আগাম ভোট। রেকর্ড সংখ্যক ভোটার এবার আগাম ভোট দিয়েছেন। ব্যবস্থাটা খুবই চমৎকার। নাগরিকদের জন্যে সুবিধেজনক।

কানাডায় ভোটের আগে বা ভোটের দিনে কোনো মিছিল হয়নি। কোনো শ্লোগানও শোনা যায়নি। একটা বোমাও ফাটেনি কোথাও। একটা ককটেলের শব্দও পাওয়া যায়নি। ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীদের সন্ত্রাসী বাহিনি কোনো তাণ্ডব চালানোর চেষ্টাও করেনি। ছিনতাই হয়নি একটা ব্যালটবাকশোও। জাল ভোট দিতে আসেনি একজন নাগরিকও। এমনকি ফলাফল ঘোষণার পর একটা বিজয় মিছিলও হয়নি কোথাও।

3

প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডোর কোলে পিচ্চিকালের জাস্টিন ট্রুডো

বিজয়ী লিবারেল নামের রাজনৈতিক দলটি ইমিগ্রান্টবান্ধব। সে কারণে নতুন ভোটারদের সমর্থন এই দলটির পক্ষে থাকাটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের জামাতবান্ধব ইমিগ্রান্টরা স্বদেশে কঞ্জার্ভেটিভ হলেও কানাডায় এসে লিবারেলকে পছন্দ করে!

জাস্টিন ট্রুডোর বাবা পিয়েরে ট্রুডো ছিলেন কানাডার ১৫তম প্রধানমন্ত্রী। এপ্রিল ১৯৬৮ থেকে জুন ১৯৮৪ পর্যন্ত চার টার্মে তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। মিঃ পিয়েরে ট্রুডো ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। তাঁর পুত্র জাস্টিন ট্রুডো লিবারেল পার্টির প্রধানের আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে এলে কঞ্জার্ভেটিভ পার্টি টিভি বিজ্ঞাপনে তরুণ রাজনীতিক জাস্টিনকে ‘নট রেডি’ বলে উপহাস করেছিলো। সেই নট রেডি জাস্টিনের নেতৃত্বে লিবারেল পার্টি কঞ্জার্ভেটিভকে এমন ওয়াস করেছে যে ওরা একশো আসনও পায়নি। অপরদিকে লিবারেল পেয়েছে ১৮৪টি আসন। পরাজয়ের পর কঞ্জার্ভেটিভ পার্টি প্রধানের পদ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করা ৪৩ বছর বয়েসী জাস্টিন ট্রুডো, কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিশেবে শপথ নেবেন শিগগিরই! কানাডার তরুণ এই ভাবী প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন।

4

কানাডার রঙিন জিলিপি

লিবারেলের ঐতিহাসিক বিজয়কে সেলিব্রেট করতে ভার্চুয়াল মিষ্টি বিতরণ পর্বে কানাডার বন্ধুদের সাদর আমন্ত্রণ! আসুন মিষ্টিমুখ করি।
অটোয়া ২০ অক্টোবর ২০১৫

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.