আওয়ামী লীগের লক্ষ্য হোক মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুজিব-আদর্শ প্রতিষ্ঠা

আওয়ামী লীগের লক্ষ্য হোক মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুজিব-আদর্শ প্রতিষ্ঠা

মোনায়েম সরকার: আজ ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক-দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সপরিবারে ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তিনি তাঁর জীবদ্দশায় সেই স্বপ্ন পূরণ করে যেতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু-কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশকে অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সমস্ত প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেই বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত দেশ গড়তে পারলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ হবে।

বাংলাদেশ একটি পরাধীন ভূখ- ছিল। বিভিন্ন সময়ে নানান জাতি-গোষ্ঠীর লোক সোনার বাংলাকে শাসনের নামে শোষণ করেছে। তাদের শাসন-শোষণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল বাংলার নিপীড়িত মানুষ। বাংলার মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখে শেখ মুজিবের মন বেদনায় ভরে ওঠে। তিনি এ দেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম শুরু করেন। তাঁরই অবিচল নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয়, তখন  পৃথিবীব্যাপী ¯œায়ুযুদ্ধ চলছিল। সেই সময়ে শক্তিশালী পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশের বিরোধিতা করলেও বাংলার মুক্তিপাগল মানুষ ঠিকই দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীকে সম্মুখ সমরে পরাজিত করে ত্রিশ লক্ষ শহিদের জীবনের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন করে। বাংলাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ চলছিল তখনই বন্দি শেখ মুজিবকে হত্যা করার জন্য নানামুখি চক্রান্ত করছিল পাকিস্তানি জল্লাদ সরকার। কিন্তু বাঙালির জীবনপণ সংগ্রামের কারণে পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু তাদের ঘৃণ্য চক্রান্ত ঠিকই অব্যাহত থাকে। পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন দেশ গড়ার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে আসেন। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশে এসে বঙ্গবন্ধু আবেগে বিহ্বল হয়ে পড়েন। তিনি যেদিকে তাকান সেদিকেই দেখতে পান লাশের সারি, পোড়া বাড়ি আর গৃহহীন নিরন্ন মানুষের হাহাকার। শ্যামল বাংলার শ্মশানরূপ দেখে বঙ্গবন্ধু অশ্রু সিক্ত হয়ে ওঠেন। ভস্মাধার থেকেই তিনি একটি উন্নত দেশ গড়ার শপথ গ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীনের পরে মাত্র চার বছর বাংলাদেশ গঠনের কাজে বঙ্গবন্ধু সময় পান। এই চার বছরেই বঙ্গবন্ধুর জাদুকরী নেতৃত্ব বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশকে সুনামের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত করেন। আন্তর্জাতিক প্রায় সবগুলো প্রতিষ্ঠানেরই সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গেও বাংলাদেশের হৃদ্যতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাংলাদেশের নন, তিনি বিশ্বনেতৃবৃন্দেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। তিনি একটি উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে অনেক প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হয়েছিল। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা বাংলাদেশের শত্রু ছিল, তারাই পরে বঙ্গবন্ধুর শত্রুতে পরিণত হয়। এক দিকে চীন, পাকিস্তান ও আমেরিকার ষড়যন্ত্র, অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দেশীয় ঘাতকরাও বিদেশের এজেন্ট হয়ে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে। এসব দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র সামাল দেওয়া বঙ্গবন্ধুর জন্য কিছুটা কষ্টসাধ্যই হয়ে ওঠে।

১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের জন্য বঙ্গবন্ধুকে দোষ দেওয়া হয় এবং একজন অযোগ্য শাসক হিসেবেও তাঁকে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা করে বঙ্গবন্ধুর বিরোধীরা। কিন্তু আমরা জানি ১৯৭৪ সালের খাদ্য সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য বঙ্গবন্ধু কি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের ঘোরবিরোধী আমেরিকার সঙ্গেও তিনি সম্পর্ক গড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। আমেরিকা খাদ্যশস্য পাঠিয়েও তা আবার ফিরিয়ে নেয়। কে জানত আমেরিকা বাংলার মানুষের সঙ্গে এ রকম প্রতারণা করবে। আমেরিকা শুরু থেকেই বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুকে মেনে নিতে পারেনি। তাই তারা বঙ্গবন্ধু ও বাংলার নিরীহ মানুষকে শিক্ষা দেবার জন্যই ওই চক্রান্ত করে।

যেকোনো বিপ্লবের পরেই সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রে নানামুখি সংকট দেখা যায়। আমরা যদি চীনের বিপ্লবের কথা বলি, তাহলে দেখবো সেখানে সাড়ে তিন কোটি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। রাশিয়াতে অক্টোবর বিপ্লবের পরে দুই থেকে আড়াই কোটি মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে মৃত্যুবরণ করে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও প্রায় এ রকমই পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। কিন্তু ওসব নিয়ে কেউ কোনো কথা বলে না। অথচ বাংলাদেশে চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ নিয়ে অপপ্রচারের শেষ নেই। বঙ্গবন্ধুর ‘শোষিতের গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠাকে অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। বঙ্গবন্ধুর বাকশাল নিয়ে আজও একটি মহল কুৎসা রটনা করছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ‘কৃষক-শ্রমিক’ শব্দ দুটি যুক্ত করে বঙ্গবন্ধু আরো বেশি গণমানুষের কাছে যেতে চেয়েছিলেন। বাকশাল গঠন করে বঙ্গবন্ধু মূলত শোষিতের গণতন্ত্রই প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন; নিরন্ন মানুষের অন্ন-বস্ত্রের নিশ্চিয়তা বিধান করতে চেয়েছিলেন অথচ বাকশালের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে, ‘ওয়ান পার্টি’র দোষ দিয়ে তাঁকে স্বৈরাচার হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়। বঙ্গবন্ধু চিরদিনই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি পছন্দ করতেন, এমন কি বঙ্গমাতার এক প্রশ্নের জবাবেও তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বাকশাল করেছি আপাতত দেশকে রক্ষা করার জন্য, পরে আমি গণতান্ত্রিক ধারাতেই ফিরে আসব।’ কিন্তু ঘাতকেরা তাঁকে আর সে সুযোগ দেয়নি।

অনেক আগে থেকেই বঙ্গবন্ধু-তাজউদ্দীন প্রসঙ্গ এদেশের মানুষের মনে একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে জেগে আছে। এ বিষয়েও কম জল ঘোলা হয়নি। অনেকেই তাজউদ্দীন আহমদকে বঙ্গবন্ধুর চেয়ে বড় নেতা মনে করেন। অনেকে মনে করেন মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তাজউদ্দীন যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন কেন তাঁকে বঙ্গবন্ধু দূরে সরিয়ে রাখলেন? এ প্রসঙ্গে বরেণ্য সাংবাদিক-কলাম লেখক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী অনেক কথাই বলেছেন, লিখেছেন। আমি আর এ বিষয়ে তেমন কিছু বলব না, শুধু বলব, অপপ্রচারকারীরা যা ইচ্ছে বলুক, তাজউদ্দীন কিন্তু কখনোই এসব নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেননি। এমনকি বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে দূরে সরে যাননি। তাই যদি হতো তাহলে বঙ্গবন্ধু যখন বাকশাল গঠন করেন, সেই সময় তিনি তাজউদ্দীন আহমদকে বাকশালের সাধারণ সম্পাদকের পদ দিতে চাইতেন না। সাবেক আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধরের কাছে আমি নিজে বহুবার এ কথা শুনেছি। তাহলে আজকেও কেন সে-প্রসঙ্গ বার বার ফিরে আসছে? আসছে এই কারণে যে, বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। এগুলোকে কঠিন হস্তে দমন করেই এগিয়ে যেতে হবে।   

একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু যখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কারণে ধানমণ্ডিতে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর নিজ বাসভবনে তিনি সপরিবারে (১৬ জন সদস্যসহ) ঘাতকদের বুলেটে নির্মমভাবে জীবনদান করেন। শুধু বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারই প্রাণ দেন এমন নয়। ঘাতকদের দল বুঝতে পারে শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেই বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করা যাবে না, তাই তারা রাতের অন্ধকারে কারা প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করে নির্মমভাবে হত্যা করে বন্দি চার জাতীয় নেতাকে। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর চার বিশ্বস্ত সহচর, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী, এএইচএম কামারুজ্জামানকে হত্যার মধ্য দিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল-মৌলবাদী গোষ্ঠী বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যায়। তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। কারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চেয়েছে এবং এখনও চায় এদেশের মানুষ তা জানেÑ তাই আর এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না। তবে শুধু এটুকু বলব, পৃথিবীর কোনো স্বাধীন দেশেই মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা রাজনীতি করার সাহস দেখায় না, কিন্তু বাংলাদেশ সেই দুর্ভাগা দেশ, যেদেশে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা ও ঘাতকেরা শুধু রাজনীতি নয়, এদেশের মন্ত্রীর পদ অলংকৃত করে জাতীয় পতাকার সম্মান ধূলিসাৎ করেছে। শহিদ মিনার ও জাতীয় স্মৃতিসৌধের পবিত্রতাও নষ্ট করেছে। ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড করে যারা এদেশকে পাকিস্তানিদের গোলাম করে রাখতে চেয়েছিল তাদের ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি। এই ষড়যন্ত্রকারীরা এখন নানা রকম ছদ্মবেশ ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া দলে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে আওয়ামী লীগের দলীয় শৃঙ্খলায় সর্বনাশ করার চেষ্টা করছে। সেই সঙ্গে দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার সবকিছুই অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় করে যাচ্ছে। এগুলো রোধ করা সম্ভব না হলে অচিরে দেশে অন্ধকার নেমে আসবে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরে একুশ বছর আওয়ামী লীগকে পথে পথে ঘুরতে হয়েছে, শেখ হাসিনার জীবনে অস্বাভাবিক কিছু ঘটে গেলে এদেশের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আরো কত বছর অসহায় জীবনযাপন করবেন, তা অনুমান করে বলা কঠিন। এ প্রসঙ্গে ওয়ান-ইলেভেনের সেনা-সমর্থিত-বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠীর চক্রান্তের কথাও মনে রাখতে হবে।

আমার রাজনৈতিক জীবন দীর্ঘ না হলেও ক্ষুদ্র নয়। জীবনে রাজনীতি ছাড়া অন্য কোনো পেশা অবলম্বন করিনি। ছাত্রজীবন থেকেই আমি বামপ্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ষাটের দশক থেকে শুরু করে পরবর্তী সবগুলো আন্দোলন-সংগ্রামেই প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থেকেছি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ডের পরে তিন বছর ভারতে স্বেচ্ছা-নির্বাসনে থেকে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে দেশে-বিদেশে যে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি তাও এদেশের অনেকেই জানেন। পঁচাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশ কী ভয়ঙ্কর আর অমানবিক ছিল তা আর নতুন করে এদেশের মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়ার দরকার আছে বলে মনে করি না। এদেশের মানুষ তা ভালো করেই জানেন।

আমি শুধু বলতে চাই, বিশ্ব এখন নানারকম সমস্যার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। একদিকে করোনা ভাইরাসের থাবায় অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে, অন্যদিকে বাড়ছে বেকারত্ব, হতাশা ও নাগরিক জীবনের ভোগান্তি। অনেক রাষ্ট্রই এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে প্রাণপণ চেষ্টা করছে। কয়েকদিন আগে লেবাননে যে বিষ্ফোরণ হয়েছে তাতে লেবাননের রাজধানী বৈরুত শহরের অনেকাংশে মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। সেদেশের সরকার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। আজ বাংলাদেশের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি চরম আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালে করোনো টেস্ট না করেই মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে রোগীর কাছ থেকে। পুলিশের দুর্নীতির তথা প্রকাশ পেলেই সাজানো ক্রশফায়ারে তথ্যপ্রকাশকারীকে হত্যা করা হচ্ছে, দলের নাম ভাঙিয়ে অনুপ্রবেশকারীরা নানারকম দুর্নীতি করে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করছে, গড়ে তুলছে যার যার মতো সিন্ডিকেট। আওয়ামী লীগ সেই দিল যে দল তার মহান আদর্শ ও সংগ্রামী চেতনার জন্য শুধু বাংলাদেশে নয়, সমগ্র বিশ্বেই প্রশংসিত। আজ সেই দলের নেতাকর্মীরা যখন, ক্যাসিনো, দুর্নীতি, সিন্ডিকেট, টাকা পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়, তখন দেখে খুব লজ্জা পাই।

একটি দল দীর্ঘদিন ক্ষমতহায় থাকলে সেই দলের গায়ে কিছুটা হলেও দুর্নীতির কালিমা লেগে যায়। উদাহরণ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকার, বর্তমান ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার, এমন কি এক সময়ের সমাজতান্ত্রিক রাশিয়া ও চীনের দৃষ্টান্তও এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। কিন্তু আমি মনে করি আওয়ামী লীগকে সকল প্রকার দুর্নীতির ঊর্ধ্বে উঠে শুধু দেশশাসন নয, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যই পূরণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, চাটার দলের কথা। এই চাটার দল আগেও আওয়ামী লীগে ছিল এবং এখনও আছে। ওদের বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই কঠোর হতে হবে।

আওয়ামী লীগের সম্মানিত সদস্যদের মনে  রাখা দরকার, আওয়ামী লীগ কোনো আমলা, মন্ত্রী বা সুযোগসন্ধানীদের দল নয়। এটি বাংলাদেশের গণমানুষের সর্ববৃহৎ সংগঠন। এই সর্বত্যাগী লড়াকু দলের কাছে এদেশের মানুষ অনেক কিছুই প্রত্যাশা করে। মানুষের আশা-আকাক্সক্ষাকে পায়ে দলে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে এদেশের মানুষ তা কোনোদিনই মেনে নিবে না। কোনো গোষ্ঠীর বা ব্যক্তির লাভ-ক্ষতির পরোয়া না করে এই দলকে মানুষের কাতারেই চিরকাল অবস্থান করতে হবে।

শত বাধার মুখেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এই গতি যেন আরো দ্রুত হয় সে-বিষয়েই নিরলস কাজ করে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধু চেষ্টা করেছিলেন একটি দুর্নীতিমুক্ত সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গঠন করতে। জননেত্রী শেখ হাসিনাকেও সেই পথেই অগ্রসর হতে হবে। আজকের পত্র-পত্রিকায় দলের উচ্চাভিলাষী ও সম্পদলোভী নেতাকর্মীদের ঘিরে যেসব খবরাখবর প্রকাশিত হচ্ছে তা জনমনে বিরক্তি উৎপাদন করছে বলেই মনে হয়। শেখ হাসিনা যেহেতু দুর্নীতির সঙ্গে কোনো ভাবেই যুক্ত নন এবং এদেশের মানুষ তা বিশ্বাসও করেন, তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি যেভাবেই হোক বাস্তবায়ন করতেই হবে। এ ব্যাপারে কোনো রকম শৈথিল্য কাম্য নয়।

এই শোকের মাসে শুধু শোক নয়, বিলাপ নয়, দেশকে দুর্নীতি ও ঘাতকমুক্ত করে সুপথে পরিচালিত করতে হবে। শত্রুরা চায় না বাংলাদেশ উন্নত হোক। কিন্তু আমরা যারা বাংলাদেশকে ভালোবাসি, এদেশের উন্নয়নে আমরা যারা উৎফুল্ল হই, তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়েও এগিয়ে যেতে হবে। সকল বাধা অপসারিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতিষ্ঠাই হোক এ বারের শোক দিবসের অঙ্গীকার। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের এই শুভ মুহূর্তে দেশ থেকে সব অপশক্তি দূর হোক, এমনটাই প্রত্যাশা এ দেশের মানুষ।

মোনায়েম সরকার : রাজনীতিবিদ, কলামিস্ট ও মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ।

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.