ক্রিকেটার এনামুল হক বিজয়

ক্রিকেটার এনামুল হক বিজয়

joy

জা য় গা  ধ রে  রা খা ই  ব ড়  চ্যা লে ঞ্জ

সময়ের কথা’র পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি উপস্থাপন করেছেন  জাহিদুল আলম জয়

জাত চিনিয়েছেন আগেই। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল, খুলনা ও ঢাকা বিভাগের হয়ে জাতীয় লীগ, বিসিবি ক্রিকেট একাডেমি এবং ঢাকা আবাহনীর হয়ে প্রদর্শন করেন ধারাবাহিক নজরকাড়া সাফল্য। ২০১২ সালের আগস্টে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ছিলেন দুর্বার, অপ্রতিরোধ্য। দল শেষ আট থেকে বিদায় নিলেও ব্যাট হাতে বিস্ফোরক পারফরমেন্স করে টুনামেন্টের সর্বেচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। করেছিলেন দু’টি সেঞ্চুরিসহ আসরে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৩৬৫ রান। জাতীয় দলে ঢোকার আগেই তিন মৌসুমে সব ধরনের ক্রিকেটে করেছিলেন ১৩টি সেঞ্চুরি। বলা হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের নয়া সেনসেশন এনামুল হক বিজয়ের কথা। চোখ ধাঁধানো পারফরমেন্সের ফল পেয়েছিলেন গত বছরের মার্চে এশিয়া কাপের দলে ডাক পেয়ে। সেবার খেলার সুযোগ না হলেও আট মাস পর ঘরের মাটিতে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে উন্মোচন হয় ভাগ্যের দোয়ার। সুযোগ পেয়েই করেন বাজিমাত; বুঝিয়ে দেন নিজের জাত। গত ৩০ নবেম্বর ওয়ানডে অভিষেকে ৪১ রান করে হয়েছিলেন পার্শ¦নায়ক। ২ ডিসেম্বর আর পার্শ্বনায়ক থাকেন নি। সফরকারী উইন্ডিজকে কাঁদিয়ে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই তুলে নেন অনবদ্য সেঞ্চুরি (১২০ রান)। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়া ছাত্রকে নিয়েই বিশেষ আয়োজন স্পোর্টস ভিশনের।

স্বাধীন, বিজয়, জয়- তিন ভাই। তিনজনের জন্মই বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে। বড় ভাই নাজমুল হাসান সজিবের (স্বাধীন) জন্ম ১৫ ডিসেম্বর, মেঝো ভাই এনামুল হক বিজয়ের জন্ম ১৬ ডিসেম্বর ও ছোট ভাই মুনতাসির মাহমুদ জয়ের জন্ম ৫ ডিসেম্বর। শুধু তাই নয়, তিন ভাইয়ের বাবা-মায়ের বিবাহবার্ষিকী ২১ ডিসেম্বর। যে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের পরতে পরতে ‘বিজয়ের চিহ্ন’ তাদের তো জয় হবেই! হচ্ছেও তাই। কুষ্টিয়ার ২০ বছরের তরুণ এনামুল হক বিজয় এখন বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের নয়নের মণি। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে তাঁর আলো-ঝলমলে অভিষেকের পর অভিভূত গোটা দেশ, সমগ্র ক্রিকেট বিশ্ব। রঙিন অভিষেকর পর কুষ্টিয়া শহরের বড় বাজারে বিজয়দের বাসায় ভক্ত-সমর্থক, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশীদের আনাগোনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। সবার মুখেই প্রশংসার ডালি। কুষ্টিয়া শহরে বসবাস হলেও বিজয়দের পৈতৃক বাড়ি কুমারখালী উপজেলার আদাবাড়িয়া গ্রামে। সেখানেও সবার মুখে বিজয়ের জয়োধ্বনি। গর্বে ভাসছে ছোট-বড়, আবাল, বৃদ্ধ বনিতা সবাই।

ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের যোগ্য সঙ্গীর অভাব দীর্ঘদিনের। পালাক্রমে ইমরুল কায়েস, জুনায়েদ সিদ্দিকী, শাহরিয়ার নাফীস, নাজিমউদ্দিনরা বাংলাদেশের ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে এসেছেন তামিমের সঙ্গে। কিন্তু কেউই বেশিদিন থিতু হতে পারেননি। অবশেষে তামিমের যোগ্য সঙ্গী খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর উইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজ দিয়ে যাত্রা শুরুর পর এনামুলের পারফরমেন্স সবাইকে আশাবাদী করে তুলেছে। তামিম-বিজয় এ পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই দারুণ সূচনা এনে দিয়েছেন দলকে। অভিষেক ওয়ানডে সিরিজে তামিমের চেয়ে বরং এগিয়ে ছিলেন বিজয়। নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই তুলে নেন চোঁখধাঁধানো শতক। অভিষেকেই কিভাবে এই অসাধ্য সাধন, রহস্যটাই বা কি, কিভাবে উঠে আসা, প্রিয়-অপ্রিয় আরও অজানা নানা বিষয় নিয়ে দেশের ক্রিকেটের নয়া সেনসেশন এনামুল হক বিজয়ের সঙ্গে খোলামেলা কথা হয়। খেলার মাঠে যেমন দাপুটে, চঞ্চল তেমনি কথা বলাতেও দারুণ ছন্দময়, খোলামেলা, আন্তরিক বিজয়।

এনামুর-৭

প্রশ্ন ॥ কখন বড় পর্যায়ে ক্রিকেট খেলার চিন্তা মাথায় আসে?

বিজয় ॥ সত্যি বলতে কি, এরকম কখনও ভাবিনি। তেমন চিন্তা আসেনি যে ক্রিকেট খেলবো। কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় আসবো এটাই ভাবিনি। এটা ভাবা যায়ও না। কারণ কুষ্টিয়া আর ঢাকার পরিবেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ কারণে কুষ্টিয়া থাকার সময় ক্রিকেটার হব এরকম  কখনও মনে হয়নি। কুষ্টিয়ায় খেলতাম কিন্তু তেমন বুঝতাম না। বিকেএসপিতে আসার পর ধীরে ধীরে বুঝতে চেষ্টা করলাম।

প্রশ্ন ॥ বিকেএসপিতে কখন আসলেন?

বিজয় ॥ কুষ্টিয়া জেলা স্টেডিয়ামে ট্যালেন্ট হান্টে সুযোগ পেয়েছিলাম। সেখান থেকে এসে বিকেএসপিতে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হই।

প্রশ্ন ॥ প্রথম কোথায় হাতেখড়ি?

বিজয় ॥ তখন ক্লাস টুতে পড়ি। কুষ্টিয়ার বিহঙ্গন ক্লাবের হয়ে খেলতাম। টেপ টেনিস বলে।

প্রশ্ন ॥ প্রতিযোগিতামূলক প্রথম ম্যাচ কোনটি?

বিজয় ॥ বিকেএসপি অনূর্ধ্ব-১৬ দলের হয়ে।

প্রশ্ন ॥ আপনার গুরু কে?

বিজয় ॥ বিকেএসপির কোচ আখিনুরজামান রুশো। তাঁর হাত ধরেই আমি উঠে এসেছি। আমি যে পারবো বা আমার সামর্থ্য আছে সেটা তিনিই আমাকে বুঝিয়েছেন।

প্রশ্ন ॥ এ পর্যন্ত আসতে কার অনুপ্রেরণা সবচেয়ে বেশি?

বিজয় ॥ আমার বড় ভাই নাজমুল হাসান সজীবের। আমি কখনই বড় কিছু ভাবিনি। মাথাতে আসেনি আমাকে কিছু করতে হবে। কিন্তু ভাইয়া সবসময় বলতেন, তুই চেষ্টা করলে পারবি। আমাকে সবসময় অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন ভাইয়া।

প্রশ্ন ॥ কখন মনে হলো যে আপনি বড় ক্রিকেটার হতে পারবেন?

বিজয় ॥ এটা আসলে বোঝা যায় না। কখনও এমন করে ভাবিনি। দিন দিন বিষয়টা অনুধাবন করা যায়। আর আমি এখনই তেমন বড় কেউ হয়ে যায়নি। এজন্য আমাকে লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে। সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।

প্রশ্ন ॥ জাতীয় দলে প্রথম ডাক পেয়েছেন?

বিজয় ॥ এশিয়া কাপে প্রথম জাতীয় দলে ডাক পাই। কিন্তু খেলা হয়নি। এরপর আনঅফিসিয়াল জিম্বাবুইয়ে সফরের টি২০ দলে সুযোগ পাই। কিন্তু এই প্রথম খেলেছি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজে।

প্রশ্ন ॥ প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েই অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছেন। কেমন লাগছে?

বিজয় ॥ এটা ভাষায় প্রকাশ করার নয়। এককথায় অসাধারণ। ভালো লাগটা এজন্য আরও বেশি যে, এত বড় বড় তারকাদের সঙ্গে খেলেছি যেটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। সবার দোয়ায় ভাল করতে পেরেছি এজন্য ভাল লাগছে। এখন আমি আমার অবস্থান ধরে রাখতে চাই।

প্রশ্ন ॥ অভিষেক ওয়ানডে সিরিজে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান (১৯৫) বাংলাদেশের হয়ে। অনুভূতি কেমন?

বিজয় ॥ খুব ভালো লাগছে। রানগুলো দলের কাজে লাগায় আমি খুশি। এটা সম্ভব হয়েছে দলের সিনিয়র ক্রিকেটাররা সহযোগিতা করায়। সবাই আমাকে সাপোর্ট করেছে, উৎসাহ দিয়েছে, অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। এজন্য রান করা আমার জন্য সহজ হয়েছে।

প্রশ্ন ॥ ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকেই কেউ থিতু হতে পারছেনা। আপনাকে নিয়ে সবাই আশাবাদী। আপনার কি মনে হয় আপনি পারবেন?

বিজয় ॥ তামিম ভাইয়ের সঙ্গে ব্যাট করছি এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো। তিনি অনেক বড় ক্রিকেটার। তাঁর সঙ্গে খেলাটা সৌভাগ্যের। আমি চেষ্টা করবো সবার আস্থার প্রতিদান দিতে। এমন সুযোগ কে ছাড়ে বলুন?

প্রশ্ন ॥ সর্বশেষ ম্যাচগুলোতে অনেক সেঞ্চুরি করেছেন। ধারাবাহিক এ সাফল্যের রহস্য কি?

বিজয় ॥ সাফল্যের মূলমন্ত্র হচ্ছে পরিশ্রম। কঠোর পরিশ্রম আমাকে এ সাফল্য এনে দিয়েছে।

প্রশ্ন ॥ দেশে-বিদেশে আপনার প্রিয় ক্রিকেটার কে?

বিজয় ॥ দেশে তামিম ইকবাল, শাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম। বিদেশে এবিডি ভিলিয়ার্স, মাহেলা জয়াবর্ধনে, বিরাট কোহলি।

প্রশ্ন ॥ ওপেনিং কেন বেছে নিলেন?

বিজয় ॥ ওপেনিংয়ে খেলা সবসময় চ্যালেঞ্জের। আর আমি চ্যালেঞ্জ বা ঝুঁকি নিতে পছন্দ করি।

প্রশ্ন ॥ দলে জায়গা ধরে রাখা চ্যালেঞ্জের। আপনি কতটা প্রস্তুত?

বিজয় ॥ জায়গা ধরে রাখতে পারফরমেন্সের বিকল্প নেই। এজন্য ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেলতে হবে।

প্রশ্ন ॥ আপনার ভবিষ্যত লক্ষ্য কি?

বিজয় ॥ আমি আসলে এতকিছু ভাবছি না। প্রাপ্ত সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।

প্রশ্ন ॥ আপনার আত্মবিশ্বাসের জায়গা কোনটি?

বিজয় ॥ সবচেয়ে বড় কথা রান করা। আমি জানি আমাকে রান করতে হবে। তা না হলে আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরবে, সুযোগও আসবে না।

প্রশ্ন ॥ আপনার সাফল্যে বাবা-মা, পরিবারের অনুভূতি কি?

বিজয় ॥ সবাই আনন্দে আত্মহারা। বাবা অঝোরে কেঁদেছেন। খেলার সময় মা আমার জন্য দোয়া-মোনাজাতে ব্যস্ত থাকেন। বড় ভাইয়া তো বাকরুদ্ধ, কথাই বলতে পারছিলেন না।

প্রশ্ন ॥ বন্ধুদের প্রতিক্রিয়া কেমন?

বিজয় ॥ বিকেএসপির বন্ধুরা খুব খুশি। ওরা আমাকে উৎসাহ যোগাচ্ছে। আর কুষ্টিয়ার বন্ধুরা বলছে, ‘দোস্ত, কি দেখাইলি’!

প্রশ্ন ॥ মাঠের বাইরের এনামুল হক বিজয় কেমন?

বিজয় ॥ (অমায়িক হেসে) এই যেমন দেখছেন। কথা বলে কেমন মনে হলো? (জবাবে এই প্রতিবেদক বলতে বাধ্য হয়েছেÑটগবগে এই যুবা অনেক খোলামনের, প্রাণোচ্ছ্বল, সাফল্যের জন্য ক্ষুধার্ত)।

প্রশ্ন ॥ আপনার নাম এনামুল থেকে আনামুল হওয়ার রহস্য কি?

বিজয় ॥ ইংরেজিতে আমার নাম অ দিয়ে শুরু হওয়ায় সবাই আনামুল লিখতে থাকে। কিন্তু এখন আপনারাই ঠিক করে দিয়েছেন। এনামুল লিখছেন। এটাই আমার আসল নাম।

 

 

 

 

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.