গুগল ম্যাপ , ফেলানী রোড….

গুগল ম্যাপ , ফেলানী  রোড….

india-bangladesh-border-

গুগল ম্যাপে “ফেলানী রোড” নামে বিডিনিউজ২৪ এবং আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক নেটওয়ার্কে যে তথ্য দেয়া হয়েছে তাতে পাঠকদের মনে বিভ্রান্তির জন্ম হতে পারে। গুগল ম্যাপে গিয়ে দেখা যায় গুলশান ১ এর ১৪২ নং রোডটির উপর এবং আশেপাশে “ফেলানী সড়ক” লেখা রয়েছে। গণমাধ্যমের রিপোর্ট থেকে বিশ্বাস করে ফেলা যায় যে গুগল কর্তৃপক্ষ ফেসবুকের একটি গ্রুপের দাবি মোতাবেক গুলশান ১ এর ১৪২ নং রোডটির নাম “ফেলানী সড়ক” রেখেছে। গুগলকে ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানাতেও দেরি করেনি কোনও কোনও সংবাদকর্মী। একটু আগে এক অনলাইন পত্রিকার রিপোর্টে দেখলাম লিখেছে, ফেলানী রোড স্থান পেল গুগল ম্যাপে। অন্য এক পত্রিকার খবর, সরকারি স্বীকৃতির আগেই গুগলের স্বীকৃতি, ইত্যাদি।

প্রশ্ন হচ্ছে, গুগল কি কোনও সড়কের নাম দেয়ার অথোরিটি? সড়কের নাম কী হবে না হবে তা নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট দেশ এবং দেশের সরকার। এই সাধারণ তথ্যটি জানেন না এঁরা?

এখন আমাকে জেঁকে ধরবেন অনেকে। তাহলে যে ছাপার অক্ষরে স্পষ্ট করে “ফেলানী সড়ক” লেখা দেখলাম গুগল ম্যাপে? ইন্টারনেটে?

কিছুদিন আগে ফেসবুকের প্রোফাইলে ব্লু চেকমার্ক বিষয়ে লিখেছিলাম। “ফেসবুকের পক্ষ থেকে বিশাল স্বীকৃতি” সংক্রান্ত সেই মূর্খতাপূর্ণ বিশেষ রিপোর্টের পর আবার গুগল ম্যাপ কাণ্ড! তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞান কি আসলেই গণমাধ্যমের নাগালের বাইরে? ডিজিটাল ডিজিটাল বলে জয় ছেলেটা যে এত চেঁচাচ্ছে তার বেলা? এই চেঁচামেচি গণমাধ্যমের কানে পৌঁছে না কেন? এক ডিজিটাল নায়ক ছাড়া বোধ হয় মাসমিডিয়ায় আমাদের আর কোনও অর্জন নেই!

গুগল ম্যাপ হচ্ছে ইউজারদের সাইট। যে কেউ যে কোনও কিছু সংযোজন বা বিয়োজন করতে পারে। এখানে গুগল ম্যাপ কতৃপক্ষের কোনও হাত নেই। ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে গুগল ঘোষণা করে তারা উইকিপিডিয়ার মত একটি টুল (tool) তাদের ম্যাপে যোগ করছে যাতে করে ইউজাররা তাদের চেনাজানা জায়গাগুলোর পরিবর্তন, পরিমার্জন বা সংযোজন করতে পারে। টুলটির নাম “গুগল ম্যাপ মেকার”। এই টুলের সাহায্যে ইউজাররা শুধু রাস্তার নাম সংযোজন নয়, তার আশপাশের সব তথ্যই ইনক্লুড করতে পারে, যেমন, কোথায় ব্রিজ, কোথায় সাইকেলের রাস্তা, বিশ্রামাগার, হোটেল, হাসপাতাল এসব। এঁকে দিতে পারে নতুন কোনও রাস্তা যা ডেফল্ট ম্যাপে নেই। এমনকি বিল্ডিং কিংবা পার্কের আউটলাইনও এঁকে দেয়া যায় অনায়াসে।

গুগল ম্যাপ মেকারই যে এক্ষেত্রে একমাত্র টুল তা কিন্তু নয়। ইন্টারনেট ম্যাপিং সার্ভিস “ম্যাপকয়েস্ট” (MapQuest) ২০১০ সালেই ইন্ট্রডিউস করে OpenStreetMap নামের মডেলটি যেটা দিয়ে ইচ্ছেমত পরিবর্তন আনা যায় মানচিত্রে। এই প্রজেক্ট চালু করার পেছনে যে আইডিয়াটি কাজ করেছে তা হল, যে কোনও ম্যাপিং সফটওয়ারের চেয়ে স্থানীয় মানুষজনই তাদের এলাকাকে বেশি চেনেজানে। যে কোনও নতুন তথ্য তারা দ্রুতই সংযোজন করতে পারবে। এতে করে ম্যাপ থাকবে আপ টু ডেট। গুগল তাদের অফিসিয়াল ব্লগ পোস্টে উল্লেখ করেছে, “You know your neighborhood or hometown best, and with Google Map Maker you can ensure the places you care about are richly represented on the map,”

অর্থাৎ গুগল ম্যাপ হচ্ছে উইকিপিডিয়ার মতই একটি ইউজার জেনারেটেড সাইট। সংযোজন সম্পাদনার কাজটি সম্পন্ন হয় ব্যবহারকারীদের মর্জি মতো। এটা অনেকটা বিনা পারিশ্রমিকে গুগলের জন্য শ্রম দেয়া। আপনি নিজেই একবার পরীক্ষা করে দেখুন না! কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানীর ছবিটা ভারতীয় হাইকমিশনের হোল্ডিং নাম্বার এ সেঁটে দিতে পারবেন অনায়াসেই। দরকার শুধু গুগল অ্যাকাউন্ট। আপনাকে লগ ইন করতে হবে অ্যাকাউন্ট এ। ম্যাপ মেকারে গিয়ে দেখবেন আপনার মতই আরও কয়েকটি অ্যাকাউন্ট, এরাই ১৪২ নাম্বারের উপর ট্যাগ করে ফেলানী সড়ক লিখেছে।

ফেলানী আমার বোন। আমার ঝুলে থাকা বিবেক। ডিজিটাল চিৎকারের তাণ্ডবে ম্লান এক এনালগ বালিকা। পাকি হায়েনাদের মতো ইন্দি কুকুরেরা কামড়ে ধরেছে আজ আমার বোনকে, ভাইকে, আমার সীমান্তকে। ফেলানীর রক্তমাখা শেমিজ আমাদের চেতনার নতুন পতাকা। এই পতাকার চেতনাধারী ফেসবুকের গ্রুপটিকে আমার আভিবাদন আর সমর্থন। ফেলানীর নামে গুলশান ১ এর ১৪২ নাম্বার রোডটির নাম হোক। এ ব্যাপারে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে মোটিভেট করাতে হবে। অবস্থান নিতে হবে ১৪২ নাম্বারে। সংবাদমাধ্যমের অর্বাচীন তথ্য আর গুগল ম্যাপের স্ক্রীন শট দেখে যেন কেউ বিভ্রান্ত না হোন যে ফেলানীর নামে সড়ক হয়ে গেছে।

ফেলানীর নামে সড়কটি হয়ে গেলে যে মজাটি হবে তা হল ভারতীয় হাইকমিশন যতদিন ওই সড়কে তাদের অফিসটি রাখবে ততদিন “ফেলানী সড়ক” কথাটি লিখতে হবে এড্রেস লিখতে গিয়ে। যেন তারা ঠিকানা লিখবে না, লিখবে তাদেরই নৃশংসতার কাহিনী। প্রতিদিন শতবার ফেলানী তাদের মনে করিয়ে দিক আমরা মানুষ, পশু নই।

একটা গল্প বলে শেষ করবো। সংবাদপত্র আর সাংবাদিক নিয়ে। নতুন এক সংবাদকর্মী। নেটে উঁকি ঝুঁকি দেয়। ডিজিটাল ডিজিটাল ভাব। মনের অবস্থা বুঝাতে সংকেতের আশ্রয় নেয়। কোলন, ব্রাকেট এসব আর কি! তো সম্পাদক মহাশয় ওই সংবাদকর্মীকে পাঠালেন এসাইনমেন্টে। সাংবাদিকটি রিপোর্ট জমা দিলো;  “সড়ক দুর্ঘটনায় মিসেস খান আজ মারাত্মক আহত হয়েছেন। স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত ডাক্তার জানান শরীরের উপরের অংশ গুরুতর জখম হয়েছে। রোগীকে বাঁচানো গেলেও কেটে ফেলে দিতে হবে স্তন দুটো।……..”

সম্পাদক ছেলেটিকে ডেকে বললেন, দ্যাখো, এটি একটি পারিবারিক পত্রিকা। আমরা স্তন বা এ জাতীয় শব্দ ব্যবহার করি না। যাও, অ্যাপ্রপ্রিয়েট অন্য কিছু লিখে আনো। সংবাদকর্মীটি অনেক চিন্তা ভাবনা করে অবশেষে তার রিপোর্ট জমা দিলো,  “সড়ক দুর্ঘটনায় মিসেস খান আজ মারাত্মক আহত হয়েছেন। স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত ডাক্তার জানান শরীরের উপরের অংশ গুরুতর জখম হয়েছে। রোগীকে বাঁচানো গেলেও কেটে ফেলে দিতে হবে (.) (.) ……”

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.