গুলি করে মারলে সওয়াব কম, চাপাতি দিয়ে মারলে সওয়াব বেশি

গুলি করে মারলে সওয়াব কম, চাপাতি দিয়ে মারলে সওয়াব বেশি

2988ডেস্ক রিপোর্ট:

মুরতাদ, নাস্তিক ও ইসলাম অবমাননাকারীদের হত্যা করতে হবে। গুলি করে হত্যা করলে সওয়াব কম। তাই তরবারি বা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করতে হবে। সামনের চেয়ে পেছন দিক দিয়ে হত্যা করলে সওয়াব আরো বেশি। আর যদি এক কোপে ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করা যায় তাহলে সওয়াব সবচেয়ে বেশি। তাই তারা ঘাড় টার্গেট করে সব সময় কোপ দেয়- জিজ্ঞাসাবাদে এমনই তথ্য জানিয়েছে ওয়াশিকুর বাবুর খুনি জিকরুল্লাহ ও আরিফুল ইসলাম।

হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় স্লিপার সেল। ১৫ দিন আগে এই সেলে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির নাম আসে এবং সে অনুযায়ি পরিকল্পনা করা হয়। এর আগে স্লিপার সেলের সদস্যদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর একটি এলাকায় তারা প্রশিক্ষণ নেয়।

গোয়েন্দারা ধারণা করছেন ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট আশিকুর রহমান বাবু’র হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। এর আগে লেখক, গবেষক, ব্লগার ড. অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের পর তারা টুইটারে সে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছিল।

তাদের ধারণা, আনসারুল্লাহর তালিকায় শুধু ব্লগার নয়, প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ, নামকরা লেখক, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার বামপন্থি নেতারাও আছেন।

আনসারুল্লাহ’র বাংলা টিমের কোন সদস্য ধরা পড়লেও তারা খুব বেশি তথ্য দিতে পারেনা। কারণ কিলিং মিশনে যারা অংশ নেয় তাদের কাজ কেবল খুন করে পালিয়ে যাওয়া। এর আগে-পরের কোন কিছুই তারা আদতে জানে না। সাংগঠনিকভাবে এমনভাবে স্তরবিন্যাস করা হয়েছে যাতে করে এক স্তরের কোন অন্য স্তর সম্পর্কে কোন ধারণাই রাখে না।

জিকরুল্লাহ ও আরিফুলকে জিজ্ঞাসাবাদকারী ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এই সংগঠনটির স্লিপার সেল কাজ করায় খুনিদের দুই জন ধরা পড়লেও অন্যদের সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য দিতে পারে না বা তাদের কার্যক্রমও বন্ধ থাকে না।

এই সংগঠনের প্রধান মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানী গ্রেফতার হওয়ার পর বর্তমানে নেতৃত্বে আছেন তামিম আল আদনানী। তাকেও গোয়েন্দারা খুঁজছেন। বাংলাদেশে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন থাকলেও এরাই একমাত্র আল কায়েদার আদলে কাজ করে।

গোয়েন্দারা অন্যদের দিকে বেশি নজর দেয়ায় এরা দিন দিন নিজেদের সংগঠিত করেছে। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও বরিশালে এদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। দেশের অন্য জায়গায়ও নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ চলছে।

হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় স্লিপার সেল। ১৫ দিন আগে এই সেলে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির নাম আসে এবং সে অনুযায়ি পরিকল্পনা করা হয়। এর আগে স্লিপার সেলের সদস্যদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর একটি এলাকায় তারা প্রশিক্ষণ নেয়।

ওয়াশিকুর রহমান বাবুর মতো আনসারুল্লাহ বাংলা টিম শতাধিক প্রগতিশীল মানুষকে হত্যার টার্গেট করেছে। এ পর্যন্ত যে কজন খুন হয়েছেন তারা ওই তালিকায় ছিলেন। শুধু ব্লগার নয়, ধর্মীয় মতাদর্শগত বিরোধের কারণেও খুন করে ওরা। আনসারুল্লাহর স্লিপার সেল সক্রিয় থাকায় কাউকে টার্গেট করলে দ্রুতই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে তারা।

এ পর্যন্ত প্রগতিশীল ১০/১২ জনকে হত্যা করেছে আনসারুল্লাহ। এর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু তাহের, ড. মোহাম্মদ ইউনুস ও ড. এ.কে.এম শফিউল ইসলাম লিলন রয়েছেন। সর্বশেষ ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যা করে তারা। এর আগে ড. অভিজিৎ রায়, আহমেদ রাজীব হায়দার, শান্তা মারিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ব্লগার নেয়াজ মোর্শেদ বাবু ও ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আশরাফুল ইসলাম, বুয়েটের ছাত্র আরিফ রায়হান দ্বীপকে হত্যা করে তারা। এর বাইরে আসিফ মহিউদ্দিন ও রাকিবকে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় তারা।

ধর্মীয় মতাদর্শগত বিরোধের কারণেও খুন করে ওরা। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ধর্মীয় বিষয়ে টিভি উপস্থাপক নূরুল ইসলাম ফারুকী এবং গোপীবাগে ইমাম মাহাদীর প্রধান সেনাপতি দাবিবার লুত্ফর রহমানসহ ৬ জনকে জবাই করে হত্যা করে তারা। ফারুকী ও লুত্ফরকে তারা ইসলাম বিরোধী বলে মনে করতো। ফলে তাদের এই আনসারুল্লাহরই একটি স্লিপার সেল হত্যা করে। এক একটি ঘটনায় নেতৃত্ব দেন একেক জন।

গ্রেফতারকৃত আরিফুল নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলায় ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে জেএমবির ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় গ্রেফতার হন। ওই সময় তার সঙ্গে আরো ২৩ জন গ্রেফতার হন। ওই সময় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলার তিনি চার্জশিটভুক্ত আসামি ছিলেন। তিনি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসিম উদ্দীন রাহমানীর আদর্শে অনুপ্রাণিত ও তার অনুসারী হন।

উল্লেখ্য, সোমবার (৩০ মার্চ) বাসা থেকে অফিস যাওয়ার পথে জঙ্গি সন্ত্রাসীদের চাপাতির আঘাতে খুন হন ব্লগার ওয়াশিকুর বাবু। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয় খুনি দুই মাদ্রাসা ছাত্র জিকরুল্লাহ ও আরিফুল ইসলাম।  সৌজনে: সিলেটটুডে।

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.