দশটি আইজিডব্লিউর কল ব্লক

দশটি আইজিডব্লিউর কল ব্লক

BTRC-logo_14[1]

প্রায় ১২০০ কোটি টাকা বকেয়া এবং বারবার টাকা পরিশোধের নোটিশ দেওয়ার পরেও কথা রাখেনি ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন গেটওয়ে অপারেটরস (আইজিডব্লিউ)। ফলে বাধ্য হয়েই গত বৃহস্পতিবার ১০টি আইজিডব্লিউর কল সাময়িক ব্লক করে দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি। একই অভিযোগে গত আগস্টে টেলেক্স লিমিটেডের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়া লাইসেন্সপ্রাপ্ত বাকি অন্তত বিশটি কোম্পানির কল এক মিলিয়নে সীমিত করে দেয়া হয়। ব্লক করে দেওয়া অপারেটরগুলোর মধ্যে রয়েছে- ভিসন টেল, মোস ফাইভটেল লিমিটেড, এসএম কমিউনিকেশন, ভেনাস টেলিকম, অ্যাপল নেটওয়ার্ক লিমিটেড, র‌্যাংকস টেল, রাতুল টেলিকম, সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড, ফাস্ট কমিউনিকেশন লিমিটেড ও ওয়ান এশিয়া অ্যালায়েন্স।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন আহমদ বলেন, নির্ধারিত সময়ের পরও সরকারের পাওনা টাকা জমা না দেয়ায় ওই ১০টি প্রতিষ্ঠানের কল টারমিনেশন সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাওনা বুঝে পেলে তারা পুনরায় কল টারমিনেট করার সুযোগ পাবে। বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমান ২৯টি আইজিডব্লিউ রয়েছে। এরমধ্যে ভিশন, ওয়ান এশিয়া অ্যালিয়েন্স, ডিবিএল, সেল টেল, বাংলা টেল, বিজি টেল, নোভটেল, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে, ডিজিকন, প্লাটিনাম,ফাস্টকম, মস ফাইভ গ্লোবাল ভয়েস, রুটস, সিগমা ইঞ্জিনিয়ারস, এইচআরসি টেকনোলোজিস ও রাতুলসহ প্রায় ২০ আইজিডাব্লিউ এর কাছে সরকারের বকেয়া পড়ে আছে কয়েকশ কোটি টাকা।

এস প্রতিষ্ঠানকে গত ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে সব প্রতিষ্ঠানের জুন পর্যন্ত পাওনা পরিশোধ করার সময় বেধে দেয়। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানই জুন পর্যন্ত পাওনা পরিশোধ করেনি। এরপর কয়েকবার সময় বৃদ্ধি করে বিটআরসি। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্ণপাত করেনি। অবশেষে ১০টি কোম্পানির আইজিডাব্লিউ এর কল ব্লক করে দেওয়া সিন্ধান্ত নেয় বিটিআরসি। বিটিআরসি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে কল করার চার্জ মিনিট প্রতি দশমিক শূন্য ৩ ডলার বা আড়াই টাকা।

আইজিডব্লিউয়ের মাধ্যমেই এ আন্তর্জাতিক কলগুলো করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা বিটিআরসিকে এর ৫১ দশমিক ৭৫ শতাংশ অর্থ প্রদানের শর্ত থাকলেও, তা একেবারেই মানা হচ্ছে না। কারণ হিসেবে জানা গেছে, ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন গেটওয়ে অপারেটরসের (আইজিডব্লিউ) লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের বেশির ভাগেরই উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সংযোগ রয়েছে। আর তার বলি হচ্ছে দেশের টেলিকম খাত।

BTRC-logo_14[1]সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগে যখন ৪টি লাইসেন্স ছিল তখন যে কল এসেছিল এখন ২৯টি লাইসেন্স দেয়ার পরও কল বাড়েনি। ফলে বাড়েনি সরকারের কোন রাজস্বও। এক হিসেবে দেখা গেছে, ২০১১ সালের জানুয়ারিতে যখন ৪টি লাইসেন্স ছিল তখন কল এসেছে ১৩৫ কোটি মিনিট। ২০১২ সালে এই সময় এর পরিমাণ ছিল ১৪৩ কোটি মিনিট। তখনও লাইসেন্স ছিল ৪টি। আর ২৯টি লাইসেন্স দেয়ার পর এবার জানুয়ারিতে কল এসেছে ১৩২ কোটি মিনিট। একইভাবে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে কল এসেছে ১২২ কোটি মিনিট। ২০১২ সালের জুলাই মাসে ১২৪ কোটি মিনিট। আর ২৯টি লাইসেন্স দেয়ার পর ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ১২৫ কোটি মিনিট। গত মার্চে কল এসেছে ১৩১ কোটি মিনিট। আর ৪টি লাইসেন্সের সময় গত বছরের মার্চে এসেছিল ১২৪ কোটি মিনিট। আর ২০১১ সালের মার্চে এসেছিল ১৩২ কোটি মিনিট। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে আইজিডব্লিউ অপারেটরের মধ্যে সর্বোচ্চ বকেয়া বিটিসিএলের (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেড)। এর পরিমাণ ৩৬৬ কোটি টাকা। এছাড়াও সর্বোচ্চ বকেয়ার তালিকায় রয়েছে মীর টেলিকম (৫৮ কোটি), বাংলা ট্র্যাক (৬০ কোটি), টেলেক্স লিমিটেড (৮৬ কোটি), রাতুল টেলিকম (প্রায় ৭০ কোটি), ডিজিকন (৫২ কোটি), ভিশন টেল (৮৮ কোটি), ফার্স্ট কমিউনিকেশন লিমিটেড (৩৯ কোটি) এবং বেসটেক টেলিকম লিমিটেড (৪৩ কোটি টাকা)। ভিশন টেল লিমিটেড নামের একটি আইজিডব্লিউ প্রতিষ্ঠান বিটিআরসি’র ৮৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেনি। ক্লাউড টেল লিমিটেডের এক সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে ভিশন টেল।

অন্যদিকে রাতুল টেলিকম লিমিটেডের কাছে বিটিআরসি’র পাওনা ৭০ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির পাওনা ছিল মাত্র ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু গত ৬ মাসে প্রতিষ্ঠানটি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোন অর্থ পরিশোধ করেনি। বিটিআরসি’র সূত্র জানিয়েছে, ফার্স্ট কমিউনিকেশনস লিমিটেড কোম্পানির কাছে বিটিআরসি’র পাওনা ছিল প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অবশ্য কিছু টাকা তারা পরিশোধ করেছেন।

BTRC-logo_14[1]

টেলেক্স লিমিটেডের কাছেও বিটিআরসি’র পাওনা ৮৬ কোটি টাকা। এখন কোম্পানিটি অনেকটা উধাও হয়ে গেছে। ওয়ান এশিয়া অ্যালায়েন্স গেটওয়ে লিমিটেডের কাছে বিরাট একটি অঙ্কের অর্থ পাওনা বিটিআরসি’র।

এরই মধ্যে তারা কিছু টাকা পরিশোধ করেছে। ডিজিকন টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড ৫২ কোটি টাকা পরিশোধ করেনি। আইজিডব্লিউ ব্যবসার আরেকটি প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান বাংলা টেল লিমিটেড। সরকারের শেষ সময়ে এসে রাজনৈতিক বিবেচনায় পাওয়া এসব লাইসেন্সের মালিকরা বিটিআরসিকে টাকা দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ৩ সেন্টে কল আনার কথা থাকলেও শুধু প্রতিযোগিতার কারণে দেড় সেন্টে বা তার চেয়েও কমে কল আনছে কোন কোন কোম্পানি। আর কল এনে এর পুরো টাকাই রেখে দিচ্ছে নিজের পকেটে। এখন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বার্ষিক লাইসেন্স ফি’র সাড়ে ৭ কোটি টাকাও দিতে অপারগতা জানাচ্ছে।

টেলিকমিউনিকেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার অপারেটরস অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মীর নাসির হোসেন বলেছেন, বহু প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়ায় কোন শৃঙ্খলা নেই। আমার ধারণা, অদূর ভবিষ্যতে কোন কোন আইজিডব্লিউ প্রতিষ্ঠান টিকতে পারবে না। তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নজরদারি বাড়াতে হবে। প্রসঙ্গত, আইজিডব্লিউ প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন।

২০০৮ সালে বাংলাদেশে আইজিডব্লিউ প্রথম যাত্রা শুরু করে। সে সময় নিলাম আহ্বানের মাধ্যমে মাত্র ৪টি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আরও ২৫টি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়। আর এ প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগ মালিকানায় রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিত্বরা।

 

 

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.