নতুন উপাচার্যের অপেক্ষায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

নতুন উপাচার্যের অপেক্ষায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

১৯৬৬ সালে বাংলাদেশের বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সৃষ্টিলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত উপাচার্য হয়েছেন মোট ১৭ জন। ২১০০ একরের সুবিশাল ক্যাম্পাস আর প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নেওয়া অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ নীতি আদর্শ বলি দিয়ে ব্যর্থতার তকমা মাথায় নিয়ে বিদায় নিয়েছেন। দূর্নীতি,শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে হয়রানি, ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি অর্থের যাচ্ছেতাই বরাদ্ধ, স্বজনপ্রীতি কিংবা একচেটিয়া দলীয়করণসহ নানা অভিযোগের  কালিমা রয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে। উল্লেখ্য ১৯৮৯ সালের পর থেকে দীর্ঘ ৩০ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পর্ষদ সিনেটে উপাচার্য প্যানেলে কোনো নির্বাচন হয়নি।


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের শাসনামলে করা ১৯৭৩ সালের  অধ্যাদেশ অনুযায়ী সিনেট সদস্যরা উপাচার্য প্যানেলের জন্য ৩ জনকে নির্বাচিত করে তাদের মধ্য থেকে উপাচার্য পদে ৪ বছরের জন্য নিয়োগের জন্য আচার্য অর্থাৎ রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবেন। কিন্তু প্রায় ৩ দশক ধরে অনির্বাচিত শিক্ষকরাই উপাচার্যের পদে থেকেছেন।১৯৮৯ সালে অধ্যাপক আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজউদ্দীন সিনেটের সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত হয়ে চ্যান্সেলরের আদেশক্রমে ভিসি হয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার তাকে জোর করে সরিয়ে দেয়। সেই থেকে অনির্বাচিতদের উপাচার্য হওয়া বা নিয়োগ পাওয়ার প্রবণতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। 


২০১৫ সালের ১৫ই জুন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন তৎকালীন উপ-উপাচার্য ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। দায়িত্ব নেবার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও শেষ সময়ে এসে সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মসহ নানা অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়টি আলোচনায় আসে চলতি বছরের মার্চে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ারের’ দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে। সিন্ডিকেটের জোর আপত্তি আর নীতিমালার তোয়াক্কা না করে বঙ্গবন্ধু চেয়ারের দায়িত্ব নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন প্রগতিশীল শিক্ষক তার প্রতি অনাস্থা জানান, যদিও এসব অভিযোগ বরাবর অস্বীকার করেছেন চবি উপাচার্য।


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আসনে পরবর্তীতে কে বসতে যাচ্ছেন তা নিয়ে ইতিমধ্যে বেশ জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে।পদটিতে আসীন হতে প্রতিযোগিতার দৌড়ে আছেন স্বনামধন্য পাঁচ শিক্ষক। একই সঙ্গে বর্তমান উপাচার্যও এ পদে থেকে যেতে চেষ্টা করছেন বলে জানা যায়।জানা যায়, আগ্রহীরা সরকারের বিভিন্ন মহলে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।সম্ভাব্য উপাচার্য হিসেবে যাঁদের নাম আলোচিত হচ্ছে তাঁরা হলেন, বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহামেদ, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সেকান্দর চৌধুরী ও অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক ড. সুলতান আহমেদ।
প্রচলিত নিয়ম মোতাবেক পরবর্তী উপাচার্য হওয়ার কথা রয়েছে বর্তমান উপ-উপাচার্য এবং বাংলা সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. শিরীন আখতারের। পারিবারিক সুপরিচিতি, মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রগতিশীল মনোভাবসহ বিভিন্ন কারণে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছেন তিনি। তা ছাড়া তাকে যদি চবির ভিসি পদে নিয়োগ দেয়া হয় তাহলে তিনিই হবেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত উপাচার্য কোনো নারী দায়িত্ব পালন করেননি। তাই সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদে নারীর ক্ষমতায়নের ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠানটিতে এবার নারী উপাচার্য আসতে পারেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।


উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে থাকা সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ দেশে-বিদেশে পরিচিত গবেষক। তার গবেষণা প্রবন্ধ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি জার্নালে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে।


অধ্যাপক সেকান্দর চৌধুরী চবি শিক্ষক সমিতির দুবারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এবং বর্তমানে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের  ডিনের দায়িত্বে আছেন দীর্ঘদিন ধরে। ক্যাম্পাসের সজ্জন ব্যক্তি  এবং মিষ্টভাষী হিসেবে পরিচিত তিনি।অপরদিকে অধ্যাপক ড. সুলতান আহমেদ টানা ১৭ বছর ছিলেন সিন্ডিকেট সদস্য। ছিলেন শাহজালাল হলের প্রভোস্ট। তিনি বর্তমানে ব্যাংকিং বিভাগের চেয়ারম্যান।প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দলের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন বহুদিন।


বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর মেয়াদ শেষ হওয়ায় রুটিন দায়িত্ব হিসেবে ইতিমধ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরিন আখতার কে।নতুন উপাচার্য কে হচ্ছেন এ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে চবি সংশ্লিষ্ট সবাইকে। তবে শিক্ষার্থীদের আশা- বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সর্বোচ্চ এ পদে মেধা, দক্ষতা ও সততার ভিত্তিতে যোগ্য কাউকে নিয়োগ দিবে সরকার, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করবেন।

-সাফাত জামিল শুভ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Comments are closed.