ফিরে আসুন তিন্নি…..

ফিরে আসুন তিন্নি…..
আজকের তিন্নি। ছবিটি নিজে তুলে নিজেই ফেসবুকে আপলোড করেছেন..

আজকের তিন্নি। ছবিটি নিজে তুলে নিজেই ফেসবুকে আপলোড করেছেন..

মাহাবুবুল হাসান নীরু : শ্রাবস্তী তিন্নি। শো-বিজ অঙ্গনের এক সময়ের উজ্জ্বল আলোকময় নক্ষত্রটি আজ গাঢ় অন্ধকারে হারিয়ে যেতে বসেছে! খরাময় বিবর্ণ, ফ্যাকাশে হয়ে গেছে তার জীবন-জমিন। নিষিদ্ধ নেশার ছোবলে অনেকটাই হারিয়ে গেছে তার সেই আকর্ষণীয় রুপ-সৌন্দর্য। আলোর জগতের সেই তিন্নি আজ অন্ধকারে ডানা ভেঙ্গে পতিত এক পাখি। বিপন্ন আজ তার প্রজাপতি চাঞ্চল্য!

এক সময় তিন্নিকে আমি জানতাম একজন সফল মডেল এবং সুঅভিনেত্রী হিসেবেই। নানা মাধ্যমে তার বিজ্ঞাপনচিত্র দেখেছি, নাটক দেখেছি। রূপে-গুণে অপরূপা মেয়েটির উজ্জ্বল ভবিষ্যত সম্পর্কে আশাবাদী থেকেছি। সে সময় বাংলাদেশের শীর্ষ দুটো পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের সুবাদে শো-বিজসহ বিভিন্ন অঙ্গনের গ্রহ-নক্ষত্রদের অনেকের সাথেই ছিলো চমৎকার সম্পর্ক। নিজের অফিসে বসে শো-বিজ সম্পর্কে আলোচনাকালে অনেকের কাছেও আমি তিন্নি সম্পর্কে সে আশাবাদ ব্যক্তও করেছি। আমি জানি, সে সময় আমার মতো অনেকেই এই মেয়েটির ঝলমলে ভবিষ্যত গুণে ফেলেছিলেন। কিন্তু জনপ্রিয়তার মধ্য গগণে এসে যেনো মেয়েটার মাথাটাই বিগড়ে গেলো। কানে আসতে লাগলো তার নানা কাহিনী, যা দিনে দিনে তাকে ম্লাণ করে দিচ্ছিলো। আর এমনই এক সময়ে আমার সাথে তিন্নির পরিচয় ঘটলো; সেও আমারই একটা নাটকের সেটে।

গেষ্টরঙ্গ। আমার লেখা ধারাবাহিক নাটক। নাটকটির পরিচালক ছিলাম আমি ও সবুর খান। এ নাটকের কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র কানতার ভূমিকায় লিটু আনামের বিপরীতে তিন্নি অভিনয় করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন।

সেদিনের সেই তিন্নি

সেদিনের সেই তিন্নি

স্যুটিংয়ের প্রথম দিন। পুরো সেট রেডি। এদিনের স্যুটিংয়ে অংশগ্রহণকারী অন্য শিল্পীরা ছিলেন ডলি জহুর, ফজলুর রহমান বাবু, ইলোরা গওহর, লিটু আনামসহ আরও ক’জন সহশিল্পী। সবাই উপস্থিত, অথচ তিন্নির কোনো খবর নেই। পুরো সেট বসে আছে তিন্নির জন্য।

সিনিয়র আর্টিষ্টরা বেশ বিরক্ত হচ্ছিলেন। সিডিউল সেন্স না থাকার কারণে কেউ কেউ তিন্নির সমালোচনাও করছিলেন। অবশেষে সেই তিন্নি এলেন, তবে ঘন্টা দু’য়েক পরে। তিন্নি সেটে আসার পর থেকেই ধুমপান করাসহ তার আচার-আচরণ, কার্যকলাপ দেখে আমি বরাবরই বিরক্তি প্রকাশ করছিলাম। প্রিন্ট মিডিয়ার বাইরে ইলেকট্রিক মিডিয়াতে তখন সবে আমার পদচারণা শুরু হলেও এই মিডিয়ার সাথে একটা সম্পর্ক দীর্ঘদিন থেকেই বিদ্যমান।

নবীন-প্রবীণ সব স্তরের অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীর শ্রদ্ধা-ভালোবাসা পাওয়া আমি তিন্নির কিছু আচরণে এতোটাই বিরক্ত হলাম যে, মৃদুভাবে কিছু ক’টা কথাও বললাম।

এদিনের বেশ ক’টি সিকোয়েন্সে তিন্নি কাজ করলেন। কাজের শেষে অবশ্য বিদায়ের পর্বটা বেশ চমৎকারই ছিলো। কিন্তু বে-পড়োয়া মেয়েটি গোল বাঁধালো পরের দিন। স্যুটিংয়ে না এসে জানিয়ে দিলো, এ নাটকে সে আর অভিনয় করবেন না।

আমি বা সবুর খান তিন্নির এমন সিদ্ধান্তে আহত হলেও ভাঙ্গলাম না। এদিনই তিন্নির জায়গায় ফারাহ রুমাকে এনে কানতার ভূমিকায় অভিনয় করালাম। শেষমেষ কানতা চরিত্রটি করলেন আর এক সু-অভিনেত্রী ফারাহ রুমা। অপরদিকে, প্রথম দিনের পুরো স্যুটিংই জলে গেলো! তিন্নির কারণে আমাদের বেশ কিছু আর্থিক ক্ষতি গুণতে হলো। পাশাপাশি অবশ্য সেদিন এটাও গুণে ফেলেছিলাম, এই মেয়ের ভবিষ্যত অন্ধকার। সত্যি হতে থাকলো সে ধারণা। দিনে দিনে আমাদের উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় তারকাটি হারিয়ে যেতে থাকলেন অন্ধকার গহবরে।

তবে সেদিনের সেই তিন্নির পাশে আজকের তিন্নিকে ভাবতে এবং দেখতে সত্যিই বড় কষ্ট হচ্ছে। ফেসবুকে সদ্য নিজেরই আপলোট করা তার ছবি দেখে বেশ আহত হয়েছি। বে-পড়োয়া জীবন যাপন আজ তিন্নিকে কোথায় নিয়ে এসেছে!

পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জেনেছি, ‘বছর তিনেক হলো তিন্নি পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন নেশাকেন্দ্রিক অন্ধকার জগতে। তার এসব ননস্টপ অপ্রকৃতিস্থ কার্যকলাপে যারপরনাই বিরক্ত নির্মাতা-কুশলী-সতীর্থ-স্বজনরা।

শ্রাবস্তী তিন্নি। বছর দশেক আগে যিনি শো-বিজ অঙ্গনে পা রাখার পর থেকেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। মডেলিং, টিভি নাটক এমনকি চলচ্চিত্রেও তিনি ছড়িয়েছিলেন নিজের আলোকমালা। জানা যায, মিডিয়ায় অভিষেকের পর বছর পাঁচেক ঠিকই চলছিল শ্রাবস্তীর জয়যাত্রা।

এর পরই শুরু হয় তার ভাঙা-গড়া কেন্দ্রিক গল্প। প্রেমে পড়া এবং সেখান থেকে উঠে আসা। সংসার গড়া এবং সেটা এক লহমায় ভেঙে ফেলা। শুটিং শিডিউল দিয়ে সুন্দর করে ফাঁসিয়ে দেয়া। এর সবই একজন তিন্নি’র স্বভাবগত ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এক সময় তিনি এতোটাই বখে যান যে, তারই প্রেক্ষিতে বছর খানেক তাকে কাটাতে হয়েছে দেশ-বিদেশের মাদক নিরাময় কেন্দ্রে।  বস্তুত হিল্লোলের সঙ্গে বছর দুই আগে আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদের পর থেকে বেশির ভাগ সময়ই নাকি তিন্নির কেটেছে রিহ্যাব সেন্টারে (মাদক নিরাময় চিকিৎসালয়)। অপরদিকে, রিহ্যাব থেকে খানিক সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেও, দু’দিন বাদেই উচ্ছৃঙ্খলতা এবং অনিয়মতান্ত্রিক চলাফেরার কারণে তাকে আবার যেতে হয়েছে রিহ্যাবে। আজ তিন্নি নিজ গৃহেই বাবা মায়ের নজরবন্দী।

তিন্নির আজকে জীবন ধারা বড়ই কষ্টের। বড়ই বেদনার। অতীতের অভিঙ্গতায় মেয়েটার ওপর একটা রাগ থাকলেও, আজ বড্ড মায়া হয় মেয়েটার জন্য। তার সেই বেপড়োয়া জীবন যাপনের কঠিন মূল্য আজ যেমন তাকে ও তার পরিবারকে দিতে হচ্ছে তেমনি আমরাও হারাতে বসেছি এমন একটি মূল্যবান রত্নকে।

আর নয় তিন্নি। সময় ফুরিয়ে যায়নি। এখনও সময় আছে। এবার ফিরে আসুন। আমরা আপনাকে হারাতে চাই না। চেষ্টা করলে মানুষ পারে না এমন কাজ দুনিয়াতে নেই। আপনিও পারবেন। চেষ্টা করুন নিজেকে মাদকের থাবা থেকে বের করে আনতে।  আপনি তা পারবেন, সে বিশ্বাস অন্তত আমার আছে।

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.