শচিনময় ক্রিকেট বিশ্ব

শচিনময় ক্রিকেট বিশ্ব

sac41a[1]

 

শচীনকে নিয়ে এবার আবার নতুন করে মেতে উঠেছে বিশ্ব ক্রিকেট। কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান অস্ট্রেলিয়ার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের সাথে প্রায়শই তুলনায় আসেন শচিন টেন্ডুলকার। খোদ ব্রাডম্যানও তেমনটাই মনে করতেন। একবার ভারতের এই জীবন্ত কিংবদন্তির খেলা দেখতে গিয়ে তেমনটাই জানান দেন ব্র্যাডম্যান। তিনি বলেন, ‘আমি টেলিভিশনে তার (শচিন) খেলা দেখতাম এবং তার কৌশল দেখে এতটাই অভিভূত হতাম যে, আমার স্ত্রীকে ডেকে বলতাম, এসো ওর খেলা দেখ। এখন আমি আমার খেলা দেখি না। কিন্তু আমি মনে করি শচিনের খেলা অনেকটাই আমার মত। আমার স্ত্রী টেলিভিশনে ওর খেলা দেখে বলতেন, হ্যাঁ তোমাদের দু’জনের খেলাই প্রায় একই রকম। তার কৌশল স্ট্রোক খেলা সব কিছু হুবহু একই রকম।’

ব্রাডম্যানের এ মন্তব্যের পরই ক্রিকেট জগতে এ তুলনা আরো জোরালো হয় শচিনকে নিয়ে। তার অবসরে ঘোষণায় নতুন করে কিছু বলার নেই ব্রাডম্যানের। কেননা একযুগ আগে তিনি এই নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে গেছেন। নইলে হয়তো শচিনকে নিয়ে সবচাইতে প্রণিধানযোগ্য মন্তব্যটি করতে পারতেন এই কীর্তিমান অস্ট্রেলিয়। তবে এরপরও তার আসন্ন বিদায়ের মধ্যে যেন মন্তব্যের ধুম পড়েছে। অবশ্য ক্রিকেটের পাশাপাশি খেলাটির বাইরে আরো বহু প্রাত:স্মরণীয় ব্যক্তি আছেন যারা ‘লিটল মাস্টারের’ আগামী মাসে ২০০তম টেস্ট খেলা শেষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার ঘোষণায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলা এই ঘটনায় খোদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ‘আমি ক্রিকেট সম্পর্কে জানি না। কিন্তু শচিনের ব্যাটিং দেখতে আমি ক্রিকেট দেখি। আমি তাকে ভালবাসি এ জন্য তার খেলা দেখি তা নয়। আমার দেখার কারণ হলো- সে যখন ব্যাটিং করে আমার দেশের উত্পাদন তখন পাঁচ শতাংশ কমে যায় কেন, সেটা জানার জন্য।’

ব্রায়ান লারা, যাকে একসময় তার প্রতিদ্বন্দ্বি ভাবা হতো, বলেন, ‘আমি চাই আমার ছেলে শচিন টেন্ডুলকারের মত হোক।’ বোলিংয়ে অবিস্মরণীয় কৃতিত্বের অধিকারী শ্রীলংকান অফস্পিনার মুত্তিয়া মুরলিধরনের কাছে এ ঘোষণা হলো, ‘ক্রিকেটের খারাপ দিন।’

কিংবদন্তি অস্ট্রেলিয়া লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন বলেন, ‘আমার সময়ে টেন্ডুলকার সেরা তাতে কোন সন্দেহ নেই। তারপরই স্থান দিনের আলোর এবং তৃতীয় স্থানে আছে লারা।’

বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খান, ‘আচমকা বুঝতে পারছি, নেশা কথাটার মানে কি। আমার ছিল লিটল মাস্টারের (খেলা দেখার) নেশা।

এখন এই শচিনহীন ক্রিকেট? অসহনীয়।’

ইংলিশ ক্রিকেটের অন্যতম তারকা কেভিন পিটারসেন মনে করেন, ‘শচিন টেন্ডুলকার নির্দ্বিধায় ক্রিকেটের সেরা।’ ইংল্যান্ড কোচ অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের মন্তব্য হলো, ‘পৃথিবীতে দুই ধরনের ব্যাটসম্যান আছে। এক. শচিন টেন্ডুলকার, দুই. অন্য সবাই।’

তার দীর্ঘ দিনের ভারতীয় দল সতীর্থ আরেক লেগ স্পিনার অনিল কুম্বলে বলেন, ‘আমি সৌভাগ্যবান যে, কেবলমাত্র নেটেই তাকে আমার বোলিং করতে হয়েছে।’ আরেক সতীর্থ রাহুল দ্রাবিড় বলেন, ‘ভবিষ্যত্ প্রজন্মের জন্য সে যা রেখে গেছে সম্ভবত অদূর ভবিষ্যতে কেউ তার ধারে কাছেও যেতে পারবে না।’

সুনিল গাভাস্কার মনে করেন, ‘ভারতীয় টেস্ট ব্যাটিং লাইনআপ বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। তার বদলি হিসাবে কাউকে পাওয়াটা খুব সহজ হবে না। লক্ষণ, গাঙ্গুলি এবং দ্রাবিড়ের অবসর নেয়ার পর কি ঘটেছে দেখুন। মিডল-অর্ডারে শূন্যতা পূর্ণ হতে অনেক সময় লাগবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ক্রিকেট ইতিহাসে এমন আর কোন খেলোয়াড়ের কথা কল্পনা করা কঠিন, যে ধ্রুপদী টেকনিকের সঙ্গে নির্মম আগ্রাসনকে এ ভাবে মেশাতে পারে।’

সৌরভ গাঙ্গুলির মতে এটি ‘সঠিক সিদ্ধান্ত এবং সঠিক সময়েই নিয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের আগেই সে এমন ঘোষণা দেয়ায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত। কলকাতা অথবা মুম্বাই যেখানেই অনুষ্ঠিত হোক কেবলমাত্র এ গ্রেট খেলোয়াড়কে সম্মান দেখানোর জন্য এ দু’টি টেস্ট দেখতে আসার জন্য আমি দেশবাসীকে অনুরোধ জানাই।’ তার আরো মত-‘শচিনের জন্মগত প্রতিভা অবশ্যই ওর সাফল্যের বড় কারণ। কিন্তু ওই প্রতিভাকে ও যেভাবে কাজে লাগিয়েছে, সেটা আরো বড় ব্যাপার।’

সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন বলেন, ‘এমন ঘোষণা আসবে এটা নিশ্চিতই ছিল। কিন্তু সেটা কখন আসবে তার কোন ক্লু পাচ্ছিলাম না। কিন্তু এটা তার সিদ্ধান্ত এবং অবশ্যই আমরা একে সম্মান জানাই। আমাদের আনন্দ দেয়া এবং গর্বিত করার জন্য বিশেষভাবে তার খেলোয়াড়ী জীবন আমাদের স্মরণ রাখতে হবে।’

দিলিপ ভেংসরকার বলেন, ‘প্রকৃত অর্থেই আমি চাইনি সে অবসর নিক। আমার ধারণা ছিল সে আরো কয়েক বছর খেলবে। ২০০তম টেস্ট খেলে মাথা উঁচু করেই সে বিদায় নিচ্ছে।’

চান্দু বোর্ডে- ‘১৯৮৯ সালে পাকিস্তান সফরে আমি তাকে প্রথম দেখেছি। ক্রিকেটকে এত সিরিয়াসলি নিতে আমি কোন ক্রিকেটারকে দেখিনি। তার প্রথম সফরেই দেখেছি- গ্রাউন্ডসম্যানরা সময় শেষ বলা পর্যন্ত সে অনুশীলন চালিয়ে গেছে।’

শচিন যার নেতৃত্বে অভিষেক নেন সেই কৃষ্ণামাচারী শ্রীকান্ত বলেন, ‘আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান যে, তার অভিষেক ট্যুরে দলের অধিনায়ক ছিলাম। ১৬ বছর বয়সের একজন যুবক হিসাবে সে যেভাবে সব সামলেছে তা ছিল অসাধারণ।’ অজিত ওয়াদেকার- ‘এ যাবতকালে পৃথিবীর সেরা ক্রিকেটার শচিন টেন্ডুলকার। তার রেকর্ড এবং যে পরিমাণ রান সে করেছে কোন দিন কেউ তা ভাঙ্গতে পারবে বলে আমি মনে করি না।’

পাকিস্তানের শহিদ আফ্রিদির মত হলো, ‘সব সময় টেন্ডুলকারের নিজের নামেই একটা লিগ সৃষ্টি হয়েছে। অন্য কারো সঙ্গে আমি তাকে তুলনা করতে পারি না।’ আরেক কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান জাভেদ মিয়াদাঁদ বলেন, ‘আমি মনে করি ভারতীয় ক্রিকেটের একজন আদর্শ রোল মডেল টেন্ডুলকার এবং যার কারণে ভারত এখন নতুন প্রজন্মের ভাল ব্যাটসম্যান পাচ্ছে।’

মহসিন খান- ‘তিনি একজন ভদ্র ক্রিকেটার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যখন দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে তখন তিনি অন্যের জন্য একটা উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।’

গ্রায়েম স্মিথ- ‘এতটা চাপ নিয়ে শচিন কিভাবে বেঁচে আছেন সেটা কল্পনা করাই কঠিন।’

 

 

 

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.