শৈলী-ব্রাইট মেধাবৃত্তি পাওয়া অরুন-এর গল্প

শৈলী-ব্রাইট মেধাবৃত্তি পাওয়া অরুন-এর গল্প

অরুন এর হাতে পুরষ্কার প্রদান করছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বাবিদ্যালয়ে পাবলিক এডমিনিস্ট্রেসন এর বিভাগীয় প্রধান। সাথে আছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বাবিদ্যালয়ে এন্থ্রপলজী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব সঞ্জয় কৃষ্ণ বিশ্বাস এবং ডা: পরিমল দেবনাথ।

“একটা টি-স্টলে কাজ করে পরিবারের খরচ বহন করতাম, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি। খরচ বেড়ে যাওয়ায় এখন আর সামাল দিতে পারছি না। প্রায়ই না খেয়ে ইউনিভার্সিটিতে যেতে হয়।”

-কথাগুলো এবছর শৈলী-ব্রাইট মেধাবৃত্তির জন্য নির্বাচিত হওয়া অরুন চন্দ্র দে-এর।  

অরুন চন্দ্র দে ২০১৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে বড়লেখা সরকারী কলেজ থেকে। এখন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বাবিদ্যালয়ে পাবলিক এডমিনিস্ট্রেসন এ স্নাতক বিভাগে পড়াশোনা করছে। অরুণের জন্ম এমন এক পরিবারে যেখানে পরিবারের সকল ভাই-বোনদের পড়াশোনা করতে নেই। কোন সন্তান পড়ে, কোন সন্তান কাজ করে সংসার চালায়। অরুনদেরও তাই। বাবা মা এবং আরও এক ভাই আর দুই বোন নিয়ে অরুনদের ছয় সদস্যের পরিবার। পরিবারের বাকি সবাই গ্রামের বাড়িতে থাকে। মুদির দোকানে কাজ করা বাবার টাকায় সংসার এখন আর চলে না! আগে অরুণ নিজেই টি-স্টলে কাজ করে সংসারের খরচ বহন করার পাশাপাশি নিজের লেখাপড়ার খরচ বহন করত। এখন সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বাবিদ্যালয়ে পড়তে চলে আসার কারনে সেটা আর হয়ে উঠে না।  টাকার অভাবে অনেক দিন না খেয়েই ইউনিভার্সিটিতে যেতে হয় অরুণের। বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রয়োজনীয় বইগুলোও কিনে আনার সামর্থ্য নেই। তারপরও কোন আক্ষেপ নেই জীবনের প্রতি, বরং অসাধারণ সব স্বপ্ন ঘুরপাক খায় তার মনে। কেউ কেউ তাকে প্রায়ই বলত পড়াশোনা ছেড়ে সংসারের হাল ধরার জন্য, অরুণ তা করেনি, অদম্য মনোবল নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে নিচ্ছে এখনও অবধি।

(ছবিতে আছেন অরুন চন্দ্র দে (বামে) এবং তার শিক্ষাবৃত্তির দায়িত্ব নেওয়া মুনিরা ফেরদৌস নাহিন (ডানে))

এখানেই শেষ নয়, বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি হলেই অরুন  চলে যায় গ্রামের বাড়িতে। সেখানে গরীব ছাত্রছাত্রীদেরকে বিনামূল্যে পড়ায় অরুণ। অনেক গরীব ছাত্রছাত্রীদের টাকার অভাবে প্রাইভেট টিউটরের কাছে গিয়ে পড়ার সামর্থ্য নাই বলে তারাও অরুণের কাছে এসে বিনামূল্যে পড়াশোনা করতে চলে আসে। এতে অরুণ অন্যরকম এক মানসিক আনন্দ পায়, সাথে পায় আরও ভাল কাজ করার অনুপ্রেরণা । বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে অরুণ ‘প্রশাসনিক কর্মকর্তা’ হতে চায় -এটাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন এখন। প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়ে গরীবদের সাহায্য-সহায়তা করে যেতে চায় সারাজীবন। দারিদ্রতার কষ্ট নিজের জীবন দিয়ে অনুধাবন করতে পারে বলেই, তাদের জন্য আজীবন কাজ করতে চায় অরুণ।

– এটাই আমাদের ‘অরুণের’ গল্প। এটাই ‘অরুণদের’ গল্প। অরুন চন্দ্রকে নিয়ে আমাদের এরকম আরও অনেক গল্প আছে। এমনসব দরিদ্র আর মেধাবী মানুষদের পাশে দাঁড়াতে চায় শৈলী ফাউন্ডেশন। সত্যিকার অর্থে, এইসব ছেলেমেয়ের পাশে এসে দাঁড়ানোর পর আমাদেরই দৃষ্টিভঙ্গিই পাল্টে গেছে। আমরা না, এই অসম্ভব উদ্যমী ছেলেমেয়েগুলোই যেন আমাদের প্রতিনিয়ত আঙ্গুল তুলে দেখাচ্ছে জীবনের নিগৃড় অর্থ।

অরুনের ২০১৭-২০১৮ সালের বৃত্তির খরচ বহন করেছেন মুনিরা ফেরদৌস নাহিন, যিনি কানাডার কার্লটন ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে, এখন কানাডার একটি স্বনামধন্য কোম্পানীতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কর্মরত আছেন। নাহিন-এর প্রতি আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা। এবছর যখন শৈলী-ব্রাইট শিক্ষাবৃত্তি র জন্য স্পন্সর খোঁজা হচ্ছিল, নাহিন তখন এগিয়ে আসলেন একজন মেধাবীর দায়িত্ব নেওয়ার জন্য। অরুনের একবছরের বৃত্তির সমস্ত খরচ বহন করবেন তিনি। শৈলী ফাউন্ডেশন পরিবারের পক্ষ থেকে নাহিনকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। শিক্ষাবৃত্তির পাশাপাশি সকল স্কলারকে দেওয়া হবে মানবিক এবং উচ্চশিক্ষার সহায়তা। স্কলার-এর সুনিদিষ্ট স্বপ্ন বাস্তবায়নে শৈলী ফাউন্ডেশন টিম সবসময় পাশে থাকবে। অল্প কিছু কন্ট্রিবিউশন আমাদের এই মেধাবীদের জন্য কী অসাধারণ ভূমিকা রাখবে, এটা ভাবতেই আমাদের ভাল লাগে। কৃতজ্ঞতা এবছর সকল স্কলারের ‘দায়িত্ব নেওয়া’, অথবা ‘নিতে চাওয়া’ আমাদের প্রত্যেক স্পন্সরকে।

এই মানবিক কাজে আমাদেরকে যে শৈলী প্রতিনিধি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, তিনি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এর মেডিকেল অফিসার ডা: পরিমল দেবনাথ। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বাবিদ্যালয়ে এন্থ্রপলজী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব সঞ্জয় কৃষ্ণ বিশ্বাস এর আন্তরিক সহায়তা শৈলী ফাউন্ডেশন কৃতজ্ঞচিত্তে স্বরণ করে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বাবিদ্যালয়ে পাবলিক এডমিনিস্ট্রেসন এর বিভাগীয় প্রধানকে আমরা আন্তিরক ধন্যবাদ জানাই পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করার জন্য।

পাদটীকা: ছবিতে অরুন চন্দ্র দে এবং তার শিক্ষাবৃত্তির দায়িত্ব নেওয়া মুনিরা ফেরদৌস নাহিন এর সম্মতি নিয়ে এই ছবি এবং বিষয়বস্তু প্রকাশ করা হয়েছে।

বিস্তারিত:  http://shoilyfoundation.org/shoily-bright-scholarship-program/

-রিপন দে, শৈলী ফাউন্ডেশন প্রতিনিধি।

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.