সৈয়দ জাহিদ হাসান: চারদিকে আজ অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। একদিন যারা আলো হাতে বেরিয়ে ছিল বাংলার মানুষকে শান্তি ও সমৃদ্ধির পতাকাতলে জড়ো করতে আজ তারা অনেকেই অসুর হয়ে গিলে খাচ্ছে স্বদেশের মানচিত্র। সেদিনের দুঃসাহসী যোদ্ধাদের অনেকেই আজ নতুন যুদ্ধ শুরু করেছে দেশ ও জনতার বিপক্ষে। এদের বিপথগামিতা বাংলা ভূখণ্ডে আঁধার ডেকে আনবে। তছনছ করে দিবে সাজানো বাগান, ঘরদোর, পরিপাটি জনপদ। মত্ত হস্তি যেমন করে ধ্বংস করে বর্ণময় কুসুম কানন, এরাও তেমনিভাবে ধ্বংস করতে উদ্যত হয়েছে চিরায়ত বাংলার বৈচিত্র্যময় ভূমি। একদিন যাদের অতীত ছিল স্বর্ণখোচিত, আজ তারা কয়লার কালিতে কলঙ্কিত করছে বর্তমান। অতীতের সূর্যসন্তানেরা আজ রূপান্তরিত হচ্ছে রাহুপুত্রে। একদিন যারা মুক্তিপথের পথিকৃৎ ছিল, তারাই আজ তৈরি করছে লৌহশৃঙ্খল। মানব আজ দানবে রূপ নিচ্ছে। কা-ারি নিজেই এখন কুঠার হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে উত্তাল সমুদ্রে স্বপ্নতরী ডুবিয়ে দিতে। অধঃপতন বুঝি একেই বলে! এর নাম বোধ হয় আত্মবিস্মৃতি।
একজন বোধহীন মানুষ লোভী হলে, দুর্নীতিবাজ হলে আক্ষেপ করার কিছু থাকে না, কিন্তু একজন বিপ্লবী যখন লোভের কাছে আত্মসমর্পণ করেন, একজন আইন-প্রণেতা, সংবিধান-রচয়িতা যখন নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠেন- তখন ধিক্কার জানানো ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।
রূপসী বাংলাদেশকে আজ বাংলাদেশের রূপবান পুরুষেরাই ধর্ষণ করতে জোটবদ্ধ হয়েছে। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য উন্মাদের দল বিষদাঁত বের করে, হাত পায়ের নখর দিয়ে রক্তাক্ত করতে চাচ্ছে বাংলাদেশের সুকোমল শরীর। এরা ভুলে গেছে, এখনো কিছু লড়াকু মানুষ জেগে জেগে পাহারা দিচ্ছে স্বাধীন বাংলার সীমান্ত। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও জেগে থাকা এই সাহসী সৈনিকেরা বাংলা মায়ের সম্ভ্রম রক্ষা করবে। কিছুতেই দুর্বিনীত ঘাতকের হাতে, পৈশাচিক ধর্ষকের হাতে বাংলা মায়ের রূপৈশ্বর্য লুট হতে দেবে না।
রতœাগর্ভা বাংলাদেশের অনেক রতœই এখন নকল বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। অনেক রতœই এখন হাটে-বাজারে আস্ফালন করছে নিজেকে আসল বলে। এদের বিকট চিৎকার চারদিকে শব্দদূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে, শান্ত বাংলাদেশে সৃষ্টি করেছে অরাজক পরিস্থিতি। তথাকথিত ‘বঙ্গবীর’ আজ আবির্ভূত হয়েছেন ‘বঙ্গভিলেনে’র চেহারায়। স্বাধীন দেশের পতাকা উত্তোলনকারী আজ প্রান্তরে প্রান্তরে দৌঁড়াচ্ছেন শয়তানের দেওয়া নিশান হাতে। এক সময় যারা প্রচ- প্রগতিশীল ছিলেন, তারাই আজ নির্মম প্রতিক্রিয়াশীল। হায় বাংলাদেশ, তোমার প্রমিথিউসই এখন তোমার প্রাণসংহারকারী। তোমার মুক্তিপাগল সন্তানেরাই তোমার বিরুদ্ধে তৈরি করছে শত্রুবলয়।
আজ বাংলাদেশের বুক জুড়ে দেখছি নষ্টদের পাশবিক উল্লাস। অতীতে যারা অমৃত নিয়ে দ্বারে দ্বারে ছুটেছে আজ তারা সরবরাহ করছে তীব্র হলাহল। শোষিতের পক্ষে স্লোগান রচনাকারীরা এখন শোষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। অতীত গৌরব বিসর্জন দিয়ে, ভুলে গিয়ে রাজকীয় আভিজাত্য রাজাসনে অধিষ্ঠিতরা হয়েছেন চামার চ-াল। তাহলে কি তাদের পূর্বেকার মুখচ্ছবি। মুখোশপরা ছিল? তারা কি ছিল ছদ্মবেশী ধূর্ত? আজ আমি কোনো উত্তর খুঁজতে চাই না। আঘাত করতে চাই ওই সব পাষ-কে, যারা দেশহিতৈষীর পরিবর্তে দেশদ্রোহী হয়েছে, জীবনদাতার পরিবর্তে হয়েছে জল্লাদ। যারা মনে করছে বাংলাদেশকে বিভ্রান্ত করা যাবে, ভুল পথে নিয়ে গিয়ে চোরাবালিতে আটকে ফেলা যাবে, তাদের সতর্ক হওয়া দরকার। বিজয়ী বাংলাদেশকে যারা বন্দি করতে চায়, তারাই বরং বন্দি হবে বন্ধনহীন বাঙালির হাতে।
লেখক : কবি ও কথাশিল্পী