হজ্বের প্রস্তুতি

হজ্বের প্রস্তুতি

হজ্ব-

শাহারিয়ার কবীর তুষার : ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা।’ হজ্ব ইসলাম ধর্মের পঁঞ্চম স্তম্ভ। যার গুরুত্ব ও মাপকাঠি অপরিসীম। গোটা বিশ্বের মতো এবারো হজ্ব গমনেচ্ছু আমাদের দেশের ধর্ম প্রাণ নারী-পুরুষ এই পবিত্র হজ্ব পালনে অতি আনন্দের সঙ্গে অধীর আগ্রহভরে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। অনেকেই ইতিমধ্যে যাত্রাকালের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে ৭ই সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে হজ্বের ফ্লাইট। যারা এখনো যাত্রা করেননি, প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন, তাদের সহযোগিতার মানসেই এ প্রতিবেদন-

 

চাই দৃঢ় মন মানসিকতা

আপনাকে সব সময় স্মরণ রাখতে হবে, আপনি আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনার্থে এবং তারই সন্তষ্টির জন্য হজ্ব পালনে যাচ্ছেন। লোক দেখানোর জন্য নয়। তাই মনকে ধীর-স্থির রেখে মনের মাঝে ব্রত ও ইচ্ছা শক্তির স্বঞ্চয় রেখে বেরিয়ে পরুন। আর আল্লাহর কাছে প্রাথর্ণা করুন, ‘হে আল্লাহ, আমার হজ্বকে সহজ করুন, কবুল করুন।’ দেখবেন অনেক সমস্যাকে সমস্যাই মনে হবে না।

 

প্রস্থানের পূর্বে

হজ্বে যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই স্বাস্থ্য পরীক্ষা, টিকা দান, স্বাস্থ্য সনদ গ্রহণ, হজ্বের প্রয়োজনীয় কাজগপত্র আছে কিনা যাচাই করে নিন। প্রয়োজনে হজ্বের প্রশিক্ষণ নিতে ভুলবেন না। ঢাকার আশকোণা হজ্ব ক্যাম্পে গেলে যাবতীয় তথ্যাদী সংগ্রহ করতে পারবেন। অন্য দিকে পরিচালক, হজ্ব অফিস, আশকোনা, উত্তরা, ঢাকা, ফোন ৮৯৫৮৪৬২ ঠিকানা থেকে বিস্তারিত সহযোগিতা পেয়ে যাবেন। তাছাড়া পূর্ব গমনকৃত হজ্ব যাত্রীদের মাধ্যমে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

 

হজ্বের নিয়ম কানুন

ঢাকার হজ্ব ক্যম্পে হজ্ব প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে। সেখান থেকে হজ্বের নিয়ম-কানুন জেনে নিন। আজকাল অনেক হজ্ব বিষয়ক বই-পত্র কিনতে পাওয়া যায়। সেখান থেকেও জানতে পারেন নিয়ম-কানুন।

হজ্বের ফরজ, সুন্নত, ওয়াজিব সুন্নত, হজ্বের নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ, হজ্ব শুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলী, ইহরাম, ইহরামের ফরজ, মুস্তাহাব সমূহ, ইহরামের সুন্নত তারিকা, ইহরামের কাপড়, ইহরামের কাপড় বাধার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন। ইহরাম অবস্থায় কি কাজ করা যাবে, কি যাবে না এ সর্ম্পকে বিস্তারিত জেনে রাখুন। হজ্বের দোয়া সমূহ কখন কোন দোয়া হবে তা মনে রাখুন।

 

সঙ্গে নিতে হবে

হজ্বের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, পাসর্পোট, ভিসা, টাকা-পয়সা রাখার গলায় ঝুলানো ব্যাগ কিনুন।  ইহরামের কাপড় কিনুন কমপক্ষে দুই সেট।

সেন্ডল, গামছা, তোয়ালা, রুমাল, নিজের জন্য আরামদায়ক পোষাক, সাবান, টুথব্রাশ, টয়েলেট পেপার, মিশওয়াক, নেইলকাটার, সুই সুতা, থালা-বাটি, হজ্বের প্রয়োজনীয় বই, কোরআন শরীফ, কাগজ-কলম, ইহরাম পরার কজে ব্যবহৃত কটিবন্ধনি ইত্যাদি সঙ্গে রাখুন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে ব্যাগ অথবা সুটকেসে ওজন অতিরিক্ত না হয়। কেননা এসব আপনাকেই বহন করতে হবে।

আরেকটা কথা না বললেই নয় যে, হজ্বের সঙ্গী অবশ্যই ভাল হওয়া বাঞ্চনীয়। অহেতুক তর্ক-বিতর্ক বা অপ্রয়োজনীয় কাজ-কর্ম থেকে বিরত থাকা সর্বপরি হজ্বের হুকুম-আহকাম শুদ্ধরূপে পালনে সাহায্য করতে পারে এরূপ সঙ্গীকেই চেষ্টা করবেন বেছে নিতে। পরহেজগার, মুক্তাকীন, শরীয়তের জ্ঞান সম্পন্ন আলেম ব্যক্তিকে সফর সঙ্গী পাওয়া গেলে ভাল হয়। তবে এটাও ঠিক; নিজেকেও তেমন আন্তরিক হতে হবে অন্যের বেলাতেও।

বয়স্ক বা দুর্বল ব্যক্তির প্রতি সহায়তার হাত বাড়াতে ভুলবেন না। মনে রাখবেন আপনি আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনার্থে ও তারই সন্তষ্টির জন্য হজ্বে যাচ্ছেন। তাই চাল-চলন, পোশাক, ভাবভঙ্গী অথবা কথাবর্তায় অহংকার থেকে দুরে থাকুন।

 

জরুরী কাগজপত্র

হজ্বের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে নিজের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন-পাসপোট/স্ট্যাম্প সাইজের ৫কপি ছবি, পাসপোর্টের প্রথম ৫ পাতার সত্যায়িত ফটোকপি, স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ, টিকা কার্ড, ব্যংকে টাকা জমা দেয়ার রশিদ ইত্যাদি প্রয়োজনে একাধিকবার চেক করে নেবেন। অন্যদিকে হজ্ব যাত্রীরা নিজেদের লাগেজে নিজের নাম, পাসপোর্ট নম্বর, হজ্ব এজেন্সির নাম, সৌদি আরবে সংশ্লিষ্ট এজেন্সির মোবাইল নম্বর ও ঠিকানা লিখে নিবেন। মনে রাখবেন, প্রত্যেক হজ্ব যাত্রীর ৭ সংখ্যার একটি পিরিচিতি নম্বর থাকে। এর প্রথম চার সংখ্যা এজিন্সির নম্বর আর শেষ ৩ সংখ্যা হজ্ব যাত্রীর ।

জেদ্দায় পৌছে বিচলিত না হয়ে ধীর স্থীর ভাবে সবকিছুর মোকাবেলা করুন। সেখানে আপনার এজেন্সি অথবা মোয়াল্লেমের গাড়ী যেখানে থাকবেন সে বাসাতে পৌছে দিবে। যাত্রা পথে সুরা, দোয়া বা তালবিয়া পড়ুন। সর্বোপরি সর্বদা নিজের প্রতি খেয়াল রাখবেন। আল্লাহকে স্মরণ করবেন। দৃঢ় চিত্তে তাঁকে ডাকবেন। ক্ষমা চাইবেন। দোয়া করবেন সবার জন্য। আর বলবেন ‘হে আল্লাহ তোমার এ পবিত্র গৃহের দর্শন আমার জন্য যেন শেষ বারের মতো না হয়।

 

হজ্ব যাত্রীদের জন্য কিছু পরামর্শ

  • নির্দিষ্ট      সময়ের পূর্বেই বিমানবন্দরে পৌছান।
  • লাগেজে      কোন পচনশীল বা দূর্গন্ধযুক্ত খাবার রাখবেন না। লাগেজ তালা বা লক         করে মালপত্র বিমান কাউন্টরে জমা দিন      ও টোকেন সংগ্রহ করুন।
  • অন্যের      দেওয়া খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • প্রয়োজনীয়      কাগজ পত্র নিজের গলার ব্যাগে রেখে দিন। চেষ্টা করবেন দলের সঙ্গে থাকতে । কোন      রকম সমস্যা হলে বা অসুস্থতা বোধ করলে তাদের জানান।
  • মিনায়      যে তাবুতে অবস্থান করবেন সে তাবু চিহ্নত করে রাখুন।
  • আরাফত      ময়দান থেকে যদি হেটে মুজদালিফায় আসেন তবে পথে টয়লেট সেরে নিবেন। কেননা      মুজদালিফায় টয়লেটে অনেক ভীর লেগে যায়।
  • কোন      ধরনের অসুস্থতায় নিকটস্থ বাংলাদেশের হজ্ব মিশনের মেডিকেল সদস্যদের সঙ্গে      যোগাযোগ করুন।
  • ট্রাফিক      আইন মেনে চলুন।
  • কেউ      হারিয়ে গেলে তাৎক্ষনাৎ হজ্ব মিশনে জানান।
  • ধাক্কা-ধাক্কি      এড়াতে বিনা মূল্যে খাবার খাওয়া ও নেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • প্রয়োজনে      সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীর সহযোগীতা নিন।

 

হজ্ব বিষয়ক আরো তথ্য জানতে যোগাযোগ করুন-

পরিচালক, হজ্ব অফিস, আশকোনা, উত্তরা, ঢাকা, ফোন-৮৯৫৮৪৬২, ৭৯১২২৩৯১

 

 

 

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.