বলা হয়ে থাকে ফুটবলে অধিনায়ক কেবল নামেই অধিনায়ক, আসলে তিনি খেটে খাওয়া শ্রমিক! আসল অধিনায়ক যদি কাউকে বলতে হয়, তাহলে সেটা হচ্ছেন কোচ। তার দিক-নির্দেশনায়, পরিচালনায়, পরিকল্পনায় একটা দলের জয়-পরাজয় বা ড্র নির্ধারিত হয়। ফুটবল দলকে যদি একটা জাহাজের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে সেই জাহাজের ক্যাপ্টেন হচ্ছেন কোচ। শিপ ক্যাপ্টেন এবং ফুটবল কোচের মধ্যে আরেকটি মিল আছে। জাহাজডুবি হলে দায়ী করা হয় ক্যাপ্টেনকে, তেমনি দলের ভরাডুবি ঘটলে বা সাফল্য না ফেলে বলির পাঁঠা বানানো হয় এই কোচ মহাশয়কেই! আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে নেপালের কাঠমন্ডুতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ’ খ্যাত জমজমাট ফুটবল আসর ‘সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ।’ এ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার কাঠমন্ডুতে টুর্নামেন্টের ড্র অনুষ্ঠিত হয়। ‘এ’ গ্রুপে পড়েছে লাল-সবুজের দেশ বাংলাদেশ। তাদের সঙ্গে আছে স্বাগতিক নেপাল, ভারত ও পাকিস্তান। একান্ত আলাপচারিতায় বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক এবং ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের বর্তমান কৃতী ‘দ্রোণাচার্য্য’ সাইফুল বারী টিটু জানিয়েছেন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের সামর্থ্য, সম্ভাবনা, শক্তিমত্তা, দুর্বলতা, ইত্যাদি সম্পর্কে নানাবিধ মন্তব্য ও বিশ্লেষণ। সময়ের কথা’র পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন রুমেল খান
অনেকেই বলছে, শক্ত বা ‘ডেথ গ্রুপ’-এ পড়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু শব্দটিতে প্রবল আপত্তি টিটুর, ‘দেখুন, ডেথ গ্রুপ বলে কিছু নেই। চ্যাম্পিয়ন হতে হলে শক্তিশালী, দুর্বল সব দলকেই হারাতে হবে। এমনও তো হতে পারে যেটাকে ডেথ গ্রুপ বলা হচ্ছে সেই গ্রুপ থেকে কোন দলই চ্যাম্পিয়ন হতে পারলো না। ফুটবল গোলের খেলা। মাঠে খেলে জেতাটাই আসল। বাংলাদেশকে ও তাই করতে হবে। কাজেই এসব বলে কোন লাভ নেই। সেই সঙ্গে বলব এসব নিয়ে ভয় পাবারও কিছু নেই। নিজেদের স্বাভাবিক খেলা খেললে বাংলাদেশের না জেতার কোন কারণ দেখছি না।’
গ্রুপের প্রতিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নৈপুণ্য সম্পর্কে টিটুর আলোকপাত, ‘কয়েকমাস আগে আমরা নেপালের মাটিতে নেপালকে হারিয়েছি। ভারত-পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও আমাদের রেজাল্ট মন্দ নয়। আমি তো দৃঢ় আশাবাদী, অন্ততঃ গ্রুপ রানার্সআপ হয়েও বাংলাদেশ ঠিকই সেমিফাইনালে নাম লেখাতে সক্ষম হবে। এই স্টেজে যাওয়ায় বাংলাদেশের সম্ভাবনা অনেক।’
প্রবাদে আছে, ‘বলা সহজ, কিন্তু করা কঠিন।’ সেমিতে যেতে হলে বাংলাদেশকে কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে প্রতিপক্ষ দলগুলোর কাছ থেকে? এক্ষেত্রে বাংলাদেশের রণকৌশল কেমন হওয়া উচিত? এ প্রশ্নের জবাবে টিটুর উত্তর, ‘বর্তমান ফুটবলে প্রতিটি ম্যাচে একই রণকৌশল অবলম্বন করে খেলা যায় না। এক্ষেত্রে এগুতে হবে ম্যাচ বাই ম্যাচ। খেলায় প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তা বা দুর্বলতা বুঝে সে অনুযায়ী খেলতে হবে। তবে ম্যাচ জেতার জন্য একটা বিষয় কখনই চেঞ্জ হয় না, সেটা হলোÑ প্রতিটি বিভাগেই ভাল খেলা। এর সঙ্গে অবশ্য আরেকটি অতিরিক্ত বিষয়ও যোগ করতে হয়, সেটা হলো যতই ভাল খেলুন না কেন, সঙ্গে অবশ্যই থাকতে হবে সৌভাগ্যের পরশও। এমন অনেক নজির আছে, ভাল খেলেও অনেক দল জিততে পারেনি স্রেফ ভাগ্য সহায় ছিল না বলে। কাজেই ‘লাক’ অবশ্যই একটা ফ্যাক্টর!’
বাংলাদেশ দলের ডিফেন্স পজিশন নিয়ে একটু চিন্তিত মনে হলো টিটুকে, ‘টিম ডিফেন্ডিং করাটা সবচেয়ে বেশি জরুরী। এখানেই কিছুটা ঘাটতি আছে বাংলাদেশ দলের। দলের স্ট্র্যাটেজি হওয়া উচিত আগে গোল না হজম করে পরে গোল দেয়ার।‘
জাতীয় দলের ডাচ্ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ প্রায়ই বলে থাকেন, ম্যাচের শেষ ৩০ মিনিট দলের ফুটবলাররা ভালমতো খেলতে পারেন না, দমের ঘাটতি। এ প্রসঙ্গে টিটুর মূল্যায়ন, ‘আবহাওয়া সবসময়ই একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। শীতকালে একজন ফুটবলার যেখানে ১২ কি.মি দৌড়ে খেলতে পারে, গরমের সময় সেখানে ৬ কি.মি.-এর বেশি দৌড়ে খেলা যায় না। আমাদের ফুটবলারদের বর্তমান ফিজিক্যাল ফিটনেস অনুযায়ী পুরো ৯০ মিনিট একই গতিতে খেলা সম্ভব নয়। এটা সাফ অঞ্চলের বাকি দলগুলির জন্যও প্রযোজ্য। তবে নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন এবং খাদ্যাভাস পরিবর্তনের মাধ্যমে এই ঘাটতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব।’
কদিন আগে থাইল্যান্ড সফরে ২৪ ফুটবলার নিয়ে যান কোচ ক্রুইফ। দলগঠন যথার্থ হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করলেন টিটু। তবে শাকিল আহমেদকে দলে নেয়া উচিত ছিল বলে জানান তিনি।
এখন দেখার বিষয়, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ কেমন নৈপুণ্য প্রদর্শন করে।