বেকহ্যামের স্মরণীয় দশ

বেকহ্যামের  স্মরণীয় দশ

devid-beckham_

জাহিদুল আলম জয়

 

ক্রীড়াঙ্গনে সাধারণত টেনিসেই গ্ল্যামারটা বেশি প্রত্যক্ষ করা যায়। অন্যান্য ডিসিপ্লি¬নেও বিষয়টি থাকলেও টেনিসের ধারেকাছে তা নয়। তবে গ্ল্যামারনির্ভর শীর্ষ ক্রীড়া তারকাদের তালিকা করলে সেখানে নিশ্চিতকরেই ফুটবলের ডেভিড বেকহ্যামের নামটি সবার আগে চলে আসবে। ইংলিশ এই ফুটবলার শৈল্পিক ছন্দের পাশাপাশি নামডাক হাঁকিয়েছেন নজরকাড়া গ্ল্যামারের জন্য। অনেকের মতে, মাত্রাতিরিক্ত গ্ল্যামারনির্ভর হওয়ার কারণে ক্যারিয়ারের শেষ দিকে স্বর্ণালী সময় হারিয়ে ফেলেন স্টাইলিশ ইংলিশ তারকা। যে কারণে জাতীয় দল, রিয়াল মাদ্রিদ তথা স্পেন এবং ইউরোপের ফুটবলে অপাংক্তেয় হয়ে ২০০৭ সালে দলের জন্য হাহাকার করে অখ্যাত আমেরিকান মেজর লীগ সকারে খেলতে হয়েছে তাঁকে। এরপর দুই দফায় ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানে ধারে খেলেছেন। বর্তমানে খেলছেন ফরাসী ক্লাব প্যারিস সেইন্ট-জার্মেইনে। ধারণা করা হচ্ছে, এখান থেকেই ক্যারিয়ারের চূড়ান্ত ইতি টানবেন বেকহ্যাম।

 

ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে ১১৫টি ম্যাচ খেলা বেকহ্যাম সর্বশেষ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়ে খেলেছেন ২০০৯ সালে। এরপর আর খেলার সুযোগ হয়নি। তৎকালীন কোচ ফ্যাবিও কাপেলো ডেভিডকে প্রীতি ম্যাচের মাধ্যমে অবসরের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু বেকহ্যাম বিষয়টি মেনে নিতে পারেন নি। যে কারণে ইংল্যান্ডের হয়ে আনুষ্ঠাকিভাবে অবসর নেয়া হয়নি তাঁর। এই রচনায় বেকহ্যামের ক্যারিয়ারের ১০টি স্মরণীয় মুহূর্ত তুলে ধরা হলো :

 

 

২৬ জুন ১৯৯৮: সমালোচকদের মুখ বন্ধ ॥ ১৯৯৬ সালে মালদোভার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শূরুর পর ১৯৯৮ সালে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে ফ্রান্স যান ডেভিড বেকহ্যাম। কিন্তু সেবার বিশ্বকাপ দলে তার জায়গা পাওয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। বিশেষ করে তৎকালীন কোচ গ্লেন হডলে চাননি বেকহ্যাম ফ্রান্সে আসুক। পছন্দের ফুটবলার না হওয়ায় তিউনিসিয়া এবং রুমানিয়ার বিরুদ্ধে গ্রুপের প্রথম দু‘টি ম্যাচে তরুণ বেকহ্যামকে মাঠে নামাননি কোচ। কিন্তু শেষ গ্রুপ ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিলনা ইংল্যান্ডের। একারণে বেকহ্যামকে মাঠে বাধ্য হন হডলে। মাঠে নেমেই ফ্রিকিক থেকে দুর্দান্ত গোল করে সমালোচকদের সমুচিত জবাব দিয়েছিলেন তরুণ বেকহ্যাম। ইংল্যান্ডের হয়ে বেকহ্যামের লাইমলাইটে উঠার সেটাই শুরু।

 

৩০ জুন ১৯৯৮: তারকাপতন ॥ অনেক সংগ্রামের পর মাঠে ফিরে নিজের অপরিহার্যতা প্রমাণের মাত্র তিনদিন পরেই খলনায়ক বনে যান বেকহ্যাম। এককথায় বলা যায় তারকাপতন। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড। কিন্তু ম্যাচে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির ডিয়েগো সিমিওনকে মারাত্মকভাবে ফাউল করে বসেন বেকহ্যাম। সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে ফাউল করার পর সিমিওনকে লাথি মারায়। এর পর আর্জেন্টাইন তারকার অভিনয় দেখে রেফারি লালকার্ড দেখান ইংলিশ সুপারস্টারকে।

 

১২ জুন ২০০০: আবারও বিতর্কে ॥ ফ্রান্স বিশ্বকাপে ক্ষমাহীন ব্যর্থতা দেশবাসী ভুলতেই বসেছিল। কিন্তু সে ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই আরেকটি ক্ষতের সৃষ্টি করেন বেকহ্যাম। ২০০০ সালে ইউরো কাপে পর্তুগালের বিরুদ্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে থাকার পরও তার অমার্জনীয় ব্যর্থতায় ৩-২ গোলে হেরে যায় ইংল্যান্ড। ম্যাচের একপর্যায়ে দর্শক গ্যালারি থেকে বেকহ্যামের উদ্দেশ্যে দুয়োধ্বনি উঠে। এটা সইতে না পেরে তিনিও দর্শকদের উদ্দেশ্যে পাল্টা আক্রমণ হিসেবে অশ্লিল অঙ্গভঙ্গি করেন। তার এমন বাজে আচরণ ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল।

 

১৫ নভেম্বর ২০০০: অধিনায়কত্বে অভিষেক ॥ দীর্ঘ সময়ের ব্যর্থতা ঘুচিয়ে আবারও ইংল্যান্ডের হয়ে মাঠ মাতাতে থাকেন বেকহ্যাম। ২০০০ সালে ইংল্যান্ড দলের কোচের দায়িত্বে আসনে পিটার টেইলর। এসময় প্রথমবারের মতো বেকহ্যাম ইতালির বিরুদ্ধে একটি প্রীতি ম্যাচে ইংল্যান্ডকে নেতৃত্ব দেন। অভিষেক অধিনায়কত্ব প্রত্যাশিত হওয়ায় নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে তাকে বহাল রাখা হয়। এর ফলশ্রুতিতে তিনি ২০০৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের কা-ারির ভূমিকায় ছিলেন। তিনি ইংল্যান্ডের হয়ে ৫৯টি ম্যাচে নেতৃত্ব দেন।

 

৬ অক্টোবর ২০০১: জাদুকরী ফ্রিকিক ॥ ২০০২ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে দারুণ বেসামাল অবস্থায় পড়েছিল ইংল্যান্ড। অবস্থা এমন বেগতিক ছিল যে শেষ ম্যাচে গ্রীসের সঙ্গে কমপক্ষে ড্র করতে হবে। জার্মানির বিপক্ষে ৫-১ গোলে হারার পর এ ম্যাচটি তাই বাঁচা-মড়ার লড়াইয়ে পরিণত হয়। ম্যাচে একপর্যায়ে ১-২ গোলে পিছিয়ে পড়ে ইংল্যান্ড। চূড়ান্ত পর্বে ওঠা নিয়ে ঘোর সংশয়। সে টালমাটাল অবস্থায় ৩০ গজ দূর থেকে দুর্ধর্ষ ফ্রিকিকে গোল করে খেলায় সমতা ফেরান বেকহ্যাম। জাদুকরী সে ফ্রিকিক এখনও সবার চোখে ভাসে।

 

৭ জুন ২০০২: ভুলের প্রায়শ্চিত্ত ॥ ১৯৯৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সঙ্গে হারার জন্য দায়ী ছিলেন বেকহ্যাম। চার বছর পর ২০০২ কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপে সেই হারের প্রায়শ্চিত্ত করেন ইংলিশ তারকা। দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে এই আসরে আরেকবার মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ডÑআর্জেন্টিনা। ম্যাচে বেকহ্যামের করা একমাত্র পেনাল্টি গোল থেকে জয় পায় ইংলিশরা। এর ফলে চার বছর পূর্বের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেন বেকহ্যাম। অবশ্য কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হেরে বিদায় নেন বেকহ্যামরা।

 

১৩ জুন ২০০৪: স্পটকিক হতাশা ॥ পেনাল্টি কিকের জন্য বেকহ্যামের সুনাম সর্বজনবিদিত। এজন্য জাতীয় দল কিংবা ক্লাব ফুটবল যেখানেই দল পেনাল্টি পায় সেগুলোর অধিকাংশই কিক করেন বেকহ্যাম। ২০০৪ সালের ইউরো কাপের ম্যাচে পর্তুগালের সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের খেলা ২-২ গোলে ড্র হয়। এরপর খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। শেষ স্পট কিকটি মারার সময় অপ্রত্যাশিতভাবে শরীরের ভারসাম্য রাখতে ব্যর্থ হন বেকহ্যাম। যেকারণে বলটি গোলবার উচিয়ে চলে যায়। ম্যাচও হারে ইংল্যান্ড।

 

২৫ জুন ২০০৬: তিনটি বিশ্বকাপে গোল করার অনন্য নজির ॥ অধিনায়কত্ব অনেক আগে পেলেও ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব করেন। ওই বিশ্বকাপে ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগোর বিরুদ্ধে গোল করে প্রথম ইংলিশ ফুটবলার হিসেবে পরপর তিন বিশ্বকাপে গোল করার অনন্য নজিড় গড়েন। অবশ্য পর্তুগালের কাছে হেরে কোয়ার্টারেই মিশন শেষ হয়ে যায় ইংলিশদের। এই ব্যর্থতার দরুণ সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দেন বেকহ্যাম।

 

১ জুন ২০০৭: পুনরায় অধিনায়কত্বে প্রত্যাবর্তন ॥ ২০০৬ বিশ্বকাপে ব্যর্থতার জন্য দল থেকে বাদ পড়েন বেকহ্যাম। সেসময়ের ইংলিশ কোচ স্টিভ ম্যাকলারেন তাকে অনেকটাই আপাংক্তেয় করেন। দল থেকে  বাদ পড়ার পর বেকহ্যাম পাড়ি জমান বিশ্বের সেরা ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে। সেখানে মোটামুটি প্রত্যাশিত নৈপূণ্য দেখিয়ে তিনি নতুন কোচ ফ্যাবিও কাপেলোর দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হন। ফলস্বরূপ জাতীয় দলেও ডাক পান। দলে এসে কাপেলোকে তিনি আরও মন্ত্রমুগ্ধ করেন। যার ফলে আবারও তার হাতে অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড তুলে দেয়া হয়।

 

২৮ মার্চ ২০০৯: ছাড়িয়ে গেলেন ববিকে ॥ ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার রেকর্ড পিটার শিলটনের। তিনি ১২৫ টি ম্যাচ খেলেন। ১০৯টি ম্যাচ খেলে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন গোলরক্ষক ববি মোর। কিন্তু ২৮ মার্চ ২০০৯ সালে একটি প্রীতি ম্যাচে ববিকে ছাড়িয়ে দেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার অনন্য নজিড় গড়েন বেকহ্যাম। ম্যাচটিতে তিনি দুর্দান্ত নৈপূর্ণ প্রদর্শন করেছিলেন। অবশ্য ৩৮ বছর বয়সী বেকহ্যাম দেশের হয়ে খেলেছেন ১১৫ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ।

 

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.