বাংলাদেশের বরেণ্য লেখক, কলামিস্ট মুহাম্মদ জাফর ইকবাল-এর কলামে প্রকাশিত ‘মিথ্যা বলার অধিকার’ লেখাটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সময়ের কথা’র পাঠকদের জন্য নিচে উপস্থাপন করা হলো-
গত কিছুদিনে আমি একটা বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি। একটি দেশের মানুষের যে রকম খাদ্য, বাসস্থান এবং শিক্ষার অধিকার থাকে। আমাদের দেশে তার সঙ্গে একটা নতুন বিষয় যোগ হতে যাচ্ছে। সেটা হচ্ছে মিথ্যা কথা বলার অধিকার। এই দেশের মানুষ যেন চাইলেই মিথ্যা কথা বলতে পারে এবং সেই মিথ্যা কথা বলার জন্য দেশে অন্য কারও যত বড় সর্বনাশই হোক না কেন, যিনি মিথ্যা কথা বলছেন তিনি যেন নিরাপদে মিথ্যা বলতে পারেন। সে জন্য এই দেশের পত্রপত্রিকা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান জ্ঞানী-গুণী মানুষজন সবাই একত্র হয়ে গেছেন। কেউ যেন মনে না করে আমি বাড়িয়ে চাড়িয়ে বলছি, সে জন্য আমি জলজ্যান্ত কয়েকটি উদাহরণ দেই।
ব্যাপারটা শুরু হয়েছে আমার নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ঘটনা থেকে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা নিয়োগ নিয়ে এই দেশের একটা গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকায় একদিন একটা খবর ছাপা হলো। সংবাদটি মিথ্যাÑ এটাকে মিথ্যা বলা হবে, না কী অসত্য বলে হবে, না কী অর্ধ সত্য বলা হবে, সেসব নিয়ে তর্ক করা যেতে পারে।
আমি সেই তর্কে যাচ্ছি না যেখানে সঠিক তথ্য রয়েছে সেখানে সেই তথ্যটাকে আড়ালে রেখে অন্য কিছু ইচ্ছে করে বলা হলে আমি সেটাকে মিথ্যা বলে বিবেচনা করি। যাই হোক সেই মিথ্যা সংবাদটির কারণে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু অধ্যাপকের চরিত্রে মিথ্যা গ্লানি স্পর্শ করল তারা খুব আহত হলেন। ঘটনাক্রমে সেই সাংবাদিক আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে কোন ছাত্র শৃঙ্খলাভঙ্গ করলে তাকে তাৎক্ষণিক শাস্তি দেয়ার নিয়ম আছে, পরে পুরো তদন্ত করে অপরাধ বিষয়ে নিশ্চিত হতে হয়। কাজেই সেই ছাত্রটির মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের প্রাথমিক তদন্ত করে তাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে একটা তদন্ত কমিটি করে দেয়া হলো এবং আমি সেই তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক। আমি বিষয়টি জোর দিয়ে লিখতে পারছি কারণ তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আমি খুঁটিনাটি সবকিছু জানি।
ছাত্রদের শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিজস্ব কিছু অলিখিত নিয়ম আছে, কমবয়সী ছেলেমেয়েরা দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাইলে সব সময়েই তাদের শাস্তি কমিয়ে দেয়া হয়, সব সময়েই চেষ্টা করা হয় তাদের লেখাপড়ার যেন ক্ষতি না হয়। (একেবারে খুন, ধর্ষণ করে পলাতক হয়ে গেলে অন্য কথা– এখন অপরাধটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, দেশের আইনের) আমি তদন্ত করতে গিয়ে অত্যন্ত বিচিত্র একটি বিষয় আবিষ্কার করলাম ছাত্র সাংবাদিকটিকে সেই সংবাদপত্র পুরোপুরিভাবে নিরাপত্তা দিয়ে গেল, সে কারণে তার ঔদ্ধত্য হলো সীমাহীন, শুধু তাই নয়, একদিন আবিষ্কার করলাম হাইকোর্টে রিট করে তিন মাসের একটি স্থগিতাদেশ পর্যন্ত বের করে ফেলল!
পুরো ঘটনার ফলাফল হলো ভয়ানক, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র জানতে পারল কিছু মানুষের চরিত্র হনন করার জন্য সে ইচ্ছা করলেই একটা পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ ছাপাতে পারে এবং সেই পত্রিকা তাকে রক্ষা করবে। আমাদের দেশে একটা পত্রিকা অনেক সময় রাজনৈতিক দল, পুলিশ, র্যাব এমনকি সরকার থেকেও বেশি ক্ষমতাশালী। এই ঘটনাটি আমার চোখ খুলে দিয়েছে, দেশের একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকায় (আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগের পরও) যদি এ রকম একটা ঘটনা ঘটতে পারে তাহলে নিশ্চয়ই অন্যান্য পত্রিকায় অসংখ্যাবার এ ঘটনা ঘটেছে। আমার একটা বড় ক্ষতি হয়েছে খবরের কাগজে কিছু লেখা হলে আমি আজকাল ভুরু কুচকে সেটার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেকে জিজ্ঞেস করি, আসলেই কি এটা ঘটেছে? পত্রিকাটি কি সত্যি কথা বলছে?
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় নিয়ে কিছু ব্লগার তরুণ শাহবাগে একত্র হয়ে এই দেশে একটা অভাবিত আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিল। সেই তরুণদের হেয় করার জন্য ঢালাওভাবে তাদের সবাইকে নাস্তিক ঘোষণা করে একটা প্রচার শুরু করা হলো, সেই প্রচারটি শুরু করল ‘আমার দেশ’ নামের পত্রিকা। আমি লিখে দিতে পারি তারা নিজেরাও বিশ্বাস করে না যারাই ব্লগার কিংবা যারাই যুদ্ধাপরাধীর শাস্তি চেয়ে শাহবাগে গিয়েছে তারা সবাই নাস্তিক। কিন্তু বিষয়টা সেভাবেই উপস্থাপন করা হলো ব্লগার মানেই নাস্তিক, শাহবাগে যুদ্ধপরাধের বিচার চাওয়া তরুণ মানেই নাস্তিক। ‘আমার দেশ’ পত্রিকায় ব্লাগারদের সঙ্গে আমার ছবি ছাপা হলো যেভাবে সেই ছবিটি উপস্থাপন করা হলো তাতে কী আমার নিজের জীবনের নিরাপত্তা বিঘিœত হয়েছে?
এই প্রশ্নের উত্তর পাঠকরা মে মাসের পাঁচ তারিখে ভোরে আমার কাছে লেখা একটা এসএমএস থেকে পেয়ে যাবেন :
‘এই নাস্তিক জাফর ইকবাল, তোদের মৃত্যুর ঘণ্টা
বাজছে। হতে পারে আজ রাতই তোদের শেষ রাত।
কাল হয়ত তোরা আর পৃথিবীতে থাকতে পারবি
না কারণ এই জমানার শ্রেষ্ঠ শায়খুল হাদিস
আল্লামা আহমদ শফীর ডাকে সারা বাংলাদেশের
তৌহিদী জনতা মাঠে নেমে এসেছে। সেই সব
তৌহিদী জনতা প্রধানমন্ত্রীসহ তোদের সব ধরে ধরে
জবাই করে ছাড়বে। আমার আল্লাহকে নিয়ে,
বিশ্বনবীকে নিয়ে কটূক্তি করার ভয়ঙ্কর পরিণাম
কী তা আগামীকালকেই হাড়ে হাড়ে টের পাবি তোরা।’
‘আমার দেশ’ স্বাধীন নিরপেক্ষ মত প্রকাশের একটা পত্রিকা না, এটা স্বাধীনতা বিরোধীদের একটা নির্দিষ্ট বিশ্বাসকে প্ররোচিত করার পত্রিকা তাদের প্ররোচনার কারণে এই দেশে অনেক মানুষের জীবন বিপন্ন হয়েছে। কাজেই এই পত্রিকাটির সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে তার দায়-দায়িত্ব নিতে হবে। তাকে যদি ভয়ঙ্কর মিথ্যা প্ররোচনার জন্য আইনের আওতায় আনা হয় আমাদের মতো মানুষরা তখন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। আমি আমার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারিনি যখন দেখেছি এই দেশের পনেরোটি পত্রিকার সম্পাদক তাঁকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে গিয়েছেন। এর অর্থটি কী দাঁড়াল? এই পত্রিকাটি যা খুশী লিখতে পারবে, দেশের মানুষের প্রাণ বিপন্ন করে এ রকম মিথ্যা প্ররোচনা করতে পারবে, কিন্তু কেউ তাকে স্পর্শ করতে পারবে না।
আমার মনে আছে সামরিক আর বেসামরিক মিলিয়ে ২০০৬ সালের হাইব্রিড তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল। আমরা- বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তখন অস্থির হয়ে নানাভাবে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করার চেষ্টা করেছিলাম, কোন পত্রপত্রিকা তখন সেই লেখালেখি ছাপানোর সাহস করেনি। রিমান্ডে নেয়া সেই শিক্ষকরা কোনদিন জানতেও পারেননি এই দেশের কত মানুষ তাদের জন্য আকুল হয়েছিলেন। অনেক কষ্টে আমার দুই একটি লেখা শুধু কোন পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছিল সে জন্য সেই শিক্ষকদের পরিবারের সদস্যদের আমার প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ ছিল না।
দুঃসময়ে টিকে থাকাটাই হচ্ছে বিজয়, টিকে থাকতে হলে মনের বল থাকতে হয় আর সেই মনের বলটি আসে যখন সবাই জানতে পারে তারা একা নয়, তাদের পাশে অনেকে আছে। আমাদের দুর্ভাগ্য সামরিক-বেসামরিক হাইব্রিড সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই দেশের অনেক পত্রপত্রিকা সেই সাহসটুকু দেখাতে পারেনি। তাই যখন দেখি সেই পত্রিকার সম্পাকদের অনেকেই এখন আমার দেশ নামক একটি ধর্মান্ধতা প্রচার যন্ত্রের সম্পাদকের পাশে এসে দাঁড়িয়ে গেছেন তখন আমি মনে কষ্ট পাই, শুভবুদ্ধির ওপর বিশ্বাস হারানোর আশঙ্কা হয়। সত্য এবং মিথ্যার মাঝখানে নিরপেক্ষ থাকা যায় না। এই অত্যন্ত সহজ কথাটি কি বোঝার জন্য খুব কঠিন?
বিগত বিএনপি-জামায়াত আমলে যখন সারাদেশে একটা রুদ্ধশ্বাস অবস্থা তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিবেশ ছিল সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। দলীয় শিক্ষকরা নানা ধরনের তা-ব করে বেড়াচ্ছেন, প্রায় ডিএনএ টেস্ট করে দেখা হচ্ছে রক্তের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রয়েছে কি না, যদি বিন্দুমাত্র চেতনা খুঁজে পাওয়া যায় তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। আমরা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সুতা পর্যন্ত নাড়াতে পারি না, কিছু করতে দেয়া হয় না কোথাও যেতে দেয়া হয় না। পাঁচ মহাদেশ থেকে পাঁচ শিক্ষাবিদকে জার্মানির একটা অনুষ্ঠানে ডাকা হয়েছে আমি তাদের একজন, আমাকে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হলো না। আমি আবিষ্কার করলাম শিক্ষকরা যখনই একত্র হচ্ছে তখনই কথাবার্তা আলোচনায় শুধু মনে ক্ষোভ আর হতাশা। ক্রোধ এবং যন্ত্রণা।
একাত্তরে আমি একটা জিনিস শিখেছিলাম সেটা হচ্ছে যুদ্ধের আসল অস্ত্র রাইফেল নয়, যুদ্ধের আসল অস্ত্র হচ্ছে মনোবল তাই কখনও মনোবল হারাতে হয় না। সহকর্মীদের মনোবল ধরে রাখার জন্য আমরা তখন অনেক কিছু করেছি তার মাঝে সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল আমাদের সান্ধ্যকালীন আড্ডা। কয়েক শিক্ষককে নিয়ে আমরা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-দর্শন এ রকম বিষয় নিয়ে আলোচনা করতাম। শ্বাসরুদ্ধকর একটা পরিস্থিতিতে যখন স্বাধীনতাবিরোধীদের এ রকম রমরমা অবস্থা তখন আমাদের এই পুরোপুরি বুদ্ধিভিত্তিক আলোচনাগুলো ছিল খুব আনন্দের, মনোবল ধরে রাখার জন্য অসাধারণ।
সন্ধ্যেবেলা বসে তরুণ শিক্ষকদের সঙ্গে বুদ্ধিভিত্তিক আলোচনার বিষয়টি আমি পরেও চালু রেখেছি, তাই নিয়মিতভাবে আমি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষ করে তরুণ শিক্ষকদের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির বাইরে যে বিশাল একটা জগৎ আছে তারা আমাকে অনেক সময়েই তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। কোন একটা ছুটির পর শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলছি তখন হঠাৎ করে তাদের কাছ থেকে একটা বিচিত্র বিষয় জানতে পারলাম, তারা সবাই তাদের নিজেদের এলাকা থেকে ঘুরে এসেছে এবং সবাই বলছে যে, তাদের এলাকার সাধারণ মানুষরা জানে এবং বিশ্বাস করে মে মাসের পাঁচ তারিখ মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। একটা অনেক বড় মিথ্যা কথাকে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বিষয়টা এমনি এমনি ঘটেনি এর জন্য কাজ করতে হয়েছে, পরিশ্রম করতে হয়েছে, অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে সেই তথ্য প্রচার করা হলেও সেদিন যে অসংখ্য কোরান শরীফ পোড়ানো হয়েছিল সেই তথ্যটি কিন্তু প্রচার করা হয়নি। রাতের আকাশে ইউএফও দেখা গেছে কিংবা একটা ছাগল মানুষের গলায় কথা বলে এ রকম মিথ্যা প্রচারিত হলে ক্ষতি হয় না কিন্তু রাতের অন্ধকারে গোপনে কয়েক হাজার মুসল্লিকে হত্যা করা হয়েছে এ রকম একটি ভয়ঙ্কর মিথ্যা প্রচার করা হলে সবদিক দিয়ে ক্ষতি হয়।
কয়েক হাজার মুসল্লিকে হত্যা করা হয়েছে সেটি প্রচারিত হয়েছে গোপনে। প্রকাশ্যে সর্বশেষ যে প্রচারটি ছিল সেটি হচ্ছে ৬১ জনের, ‘অধিকার’ নামে একটি সংগঠন সেটি দেশে-বিদেশে প্রচার করেছে। কয়েক হাজার থেকে সংখ্যাটি ৬১তে নেমে এসেছে তাই সরকারের খুশি হওয়ার কথা ছিল কিন্তু সরকার খুশি হয়নি, তারা ৬১ জনের নাম জানতে চেয়েছে, আমিও জানতে চাইতাম। পৃথিবীর যে কোন জায়গায় অভিযোগ করলে তার প্রমাণ থাকতে হয়। অধিকার নামক সংগঠনটি নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, কারণটি আমরা বুঝতে পারি, কারণ পুরো ঘটনাটি টেলিভিশন দেখিয়েছে, সাংবাদিকরা রিপোর্ট করেছে এবং কোথাও এত বড় একটি সংখ্যা কেউ দেখিনি। সরকার তখন মিথ্যা একটি তথ্য প্রচারের জন্য অধিকার নামক সংগঠনের সম্পাদক আদিলুর রহমান খানতে গ্রেফতার করেছে।
‘আমার দেশ’-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের পক্ষে যে রকম পনেরো সম্পাদক দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন আদিলুর রহমান খানের পক্ষে এখন আরও বেশি মানুষ দাঁড়িয়ে গিয়েছেন। শুধু পত্রপত্রিকা নয়, বড় বড় মানবাধিকার সংগঠন, রাজনৈতিক দল, দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠান এমনকি আমাদের দেশের বড় বড় জ্ঞানী-গুণী মানুষ। অধিকার সংগঠনটি যদি বলত অনেক মানুষ মারা গেছে এবং তখন তাকে যদি গ্রেফতার করা হতো সেটা বাক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বলা যেত। কিন্তু যখন সংখ্যাটি অত্যন্ত নিখুঁত ৬১ তখন তাদের এর ব্যাখ্যা দিতে হবে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির কাছে দেয়া হবে সেটি মোটেও বিশ্বাসযোগ্য কিছু নয়, ২১ আগস্ট ঘটনার পর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির রিপোর্টের কথা কেউ কি ভুলে গেছে?
এই দেশের যে সকল সুধীজন মে মাসের ৫ তারিখে মতিঝিলের ‘গণহত্যার’ একজন প্রবক্তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তাদের কাছে আমার শুধু ছোট একটি প্রশ্ন, তথ্যটি যদি মিথ্যা হয় তাহলেও কী আপনি তার পাশে এসে দাঁড়াবেন? বাক স্বাধীনতা চমৎকার বিষয়, আমি কয়েক সম্পাদকের বিরুদ্ধে কথা বলেছি তারপরও যদি এই লেখাটি সেই পত্রিকায় ছাপা হয় সেটি বাক স্বাধীনতা। কিন্তু একটা মিথ্যা তথ্য যদি একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রচার করা হয় তখন সেই তথ্য প্রচার করার অধিকার বাক স্বাধীনতা নয়, তখন সেই অধিকার হচ্ছে মিথ্যা কথা বলার অধিকার।
এই দেশে এমনিতেই অনেক মিথ্যা কথা বলা হয়েছে এখন কি আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সেটাকে অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দিতে হবে?
মুহম্মদ জাফর ইকবাল: অধ্যাপক, শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।