স্বর্গে যেতে চাইলে বাংলাদেশ ঘুরে আসুন

স্বর্গে যেতে চাইলে বাংলাদেশ ঘুরে আসুন

muhammad-ali

মু ষ্ঠিযুদ্ধের জীবন্ত কিংবদন্তী, সর্বকালের সেরা মুষ্ঠিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী’র সেই পুরনো মন্তব্য নতুন করে আবার বিশ্বব্যাপী আরোচিত হচ্ছে।  তিনি বলেছিলেন,  ‘স্বর্গে যেতে চাইলে বাংলাদেশ ঘুরে আসুন’, কিংবা ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাকে তাড়িয়ে দিলে কি হয়েছে, বাংলাদেশ তো আছে’।

৩৫ বছর আগে বাংলাদেশে ভ্রমণে এসে মুগ্ধ হয়ে এ কথা বলেছিলেন বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের এই কিংবদন্তি।  উল্লেখ করা যেতে পারে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নিমন্ত্রণে স্ত্রী ভেরোনিকাকে নিয়ে সপ্তাহব্যাপী বাংলাদেশ সফর করেছিলেন  মোহাম্মদ আলী।

বিশ্বের অন্যতম সেরা এই মানুষটির বাংলাদেশ সফর সে সময় যেমন মোহাম্মদ আলীর জীবনে, তেমনি তাবৎ বাঙ্গালী হৃদয়ে একটা অন্যরকম ভালোলাগার ঝড় বইয়ে দিয়েছিলো। এমনিতে এই জীবন্ত কিংবদন্তীর প্রতি বাঙ্গালীর শ্রদ্ধা-ভালোবাসা ছিলো অফুরন্ত, তার ওপর তাঁকে কাছে পেয়ে সেদিন সমগ্র জাতি আনন্দে ভেসেছিলো। সে সময় তাকে সম্মাননা হিসেবে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেছিলেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।

সম্প্রতি পুনঃপ্রকাশিত ১৯৭৮ সালের এক দুর্লভ ডকুমেন্টারি থেকে এসব তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। ‘Muhammad Ali Goes East: Bangladesh’ I Love You’ (মোহম্মদ আলীর পূর্ব সফর: বাংলাদেশ, তোমায় ভালোবাসি) নামে ডকুমেন্টারিটি তৈরি করেছিলেন রেগিন্যাল্ড ম্যাসে।

মোহাম্মদ আলী যে সময় বাংলাদেশ সফর করেন, সেসময় সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশের বয়স মাত্র ৭ বছর। অপরদিকে এই বিশ্ব বরেন্য তারকা তখন খ্যাতির শীর্ষে। ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে লিওন স্পিঙ্কসের সঙ্গের বিখ্যাত ম্যাচে হারের পর হেভিওয়েট শিরোপা হাতছাড়া হয়ে যায় মোহম্মদ আলীর। এরপরই ছুটি কাটাতে আসেন বাংলাদেশে।

ঢাকার বিমানবন্দরে মুহম্মদ আলীকে বরণ করতে হাজির হয়েছিলেন ২০ লাখেরও বেশি ভক্ত। অবস্থানকালে বাংলাদেশের বিখ্যাত স্থানগুলো স্ত্রীকে নিয়ে চষে বেড়ান তিনি। সুন্দরবন, সিলেটের চা বাগান, রাঙামাটির কাপ্তাই লেক, কক্সবাজার– কিছুই বাদ দেননি। তাকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্মাননা হিসেবে নাগরিকত্ব ও বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেওয়া হয়। যার ফলে দেশত্যাগের আগে তিনি স্বগোতক্তি করেছিলেন- যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হয়, আমার আরেক ঘর আছে।

মোহাম্মদ আলী

মোহাম্মদ আলী

তখন কক্সবাজারে একখণ্ড জমিও উপহার দেওয়া হয় মোহম্মদ আলীকে। একটি স্টেডিয়াম তার নামে নামকরণ করা হয়। ডকুমেন্টারিতে বাংলাদেশে ফিরে এসে একটি বাড়ি বানানোর ইচ্ছা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘স্বর্গে যেতে চাইলে বাংলাদেশে আসুন।’

ঢাকা স্টেডিয়ামে ১২ বছর বয়সী এক বালকের সঙ্গে তিনি প্রীতি বক্সিং ম্যাচে অংশ নিয়েছিলেন। ছেলেটি অবশ্য তাকে নকআউটে হারিয়ে দিয়েছিল! বেশ উপভোগ করেছিলো সেদিন দর্শকরা এ অসম প্রীতি লড়াই।

শুধু বক্সিং রিংয়ে নয়, এর বাইরেও তার মানবিক গুণাবলীর কারনে তিনি ছিলেন আলোচনার শীর্ষে। তাকে বৈশ্বিক আইকন বলা হতো। তিনি ছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত এবং সুপরিচিত মুখ। বিশেষ করে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিপক্ষে স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে তিনি তুমুল আলোড়ন তোলেন। কঙ্গো, ফিলিপাইনসহ সেসময়ের বিভিন্ন অনুন্নত দেশে তিনি বেশ কিছু বিখ্যাত ম্যাচ খেলেছিলেন।

নিজ দেশ যুক্তরাষ্ট্র তাকে নিয়ে সমালোচনা করলেও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার কারণে মুসলিম বিশ্বে এবং নিজের কৃষ্ণবর্ণ নিয়ে গর্বের কারণে আফ্রিকায় তিনি অকুণ্ঠ জনপ্রিয়তা লাভ করেন। অবশ্য এক দশকের মধ্যেই এ চিত্র অনেকটা পালটে যায়, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের ঘনিষ্ঠজনে পরিণত হন।

৭১ বছর বয়সী অসুস্থ মোহম্মদ আলী বর্তমানে  একজন আন্তর্জাতিক কূটনীতিক হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে থাকেন। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি তাকে শতাব্দীর সেরা ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছে।

 

তবে সেসময় মোহম্মদ আলীর বিভিন্ন দেশ সফর নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়েছিল। কেননা, উগান্ডার ইদি আমিন, ইরাকের সাদ্দাম হুসেইনের মতো সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে উঠে শাসকদের সঙ্গে তার সখ্যতা ছিল চোখে পড়ার মতো। জিয়াউর রহমানের আমন্ত্রণেও তিনি একই কারণে সাড়া দিয়েছিলেন বলে অনেকে মনে করেন।

 

১৯৪২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকিতে ক্যাসিয়াস ক্লে জুনিয়রের জন্ম হয়। ২২ বছর বয়সে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর নাম পরিবর্তন করে মুহম্মদ আলী রাখেন। তার কন্যা লায়লা আলীও বর্তমানে একজন পেশাদার নারী বক্সার। বাবার মতো শীর্ষে পৌঁছাতে না পারলেও রিংয়ে তার সাফল্যও কম নয়।

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.