চলে গেছেন ডেভিড ফ্রস্ট

চলে গেছেন ডেভিড ফ্রস্ট

ডেভিড ফ্রস্ট

পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন খ্যাতিমান ব্রিটিশ টেলিভিশন সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট।  মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। শনিবার রাতে প্রমোদতরী কুইন এলিজাবেথে এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেয়ার সময় তার হার্ট অ্যাটাক হয়।

ওয়াটারগেট কেলেংকারির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সাক্ষাৎকারের সুবাদে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে ফ্রস্টের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে ফেরার পর ফ্রস্ট তারও বিশেষ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন তিনি। সাংবাদিকতায় বিশ্বজুড়ে যার সুনাম, সেই ডেভিড ফ্রস্টের কেরিয়ারের শুরু টেলিভিশনে ব্যাঙ্গাত্মক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। পরে তার নেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারগুলোর মাধ্যমে তার খ্যাতি পৌঁছে যায় পশ্চিমা দুনিয়ার ঘরে ঘরে। ডেভিড ফ্রস্টের জন্ম ইংল্যান্ডের কাউন্টি কেন্টের এক শহর টেন্টারডেনে ১৯৩৯ সালের ৭ই এপ্রিল। তাঁর বাবা ছিলেন একজন মেথডিস্ট ধর্মযাজক। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে পড়াশুনা শেষ করে তিনি যোগদান করেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের একটি প্রতিষ্ঠানে। ১৯৬২ সালে তিনি বিবিসিতে শুরু করেন একটি নতুন ব্যাঙ্গাত্মক শো, যার নাম ‘দ্যাট ওয়াজ দ্য উইক দ্যাট ওয়াজ’। যে সময়ে রাজনীতিকদের ব্যাপারে ভক্তিশ্রদ্ধায় কোন ধরনের ব্যত্যয় প্রত্যাশা করা হতো না, সে সময় এই অনুষ্ঠানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জণ করে। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, ধর্মযাজক, কেউই রেহাই পাননি ফ্রস্টের পরিহাসের অস্ত্র থেকে। সেই জনপ্রিয়তার পথ ধরে তিনি শুরু করেন নতুন ধরনের টিভি অনুষ্ঠান-বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিদের সাথে বিশেষ সাক্ষাৎকার।

গানের দল বিটেলস, মিক জ্যাগারের মত সংগীত ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেক রাষ্ট্রনায়কের তিনি সাক্ষাৎকার নেন। যা একেকটি মূল্যবান দলীল হিসেবেই পরিগণিত হবে।

ডেভিড ফ্রস্ট সম্ভবত: একমাত্র সাংবাদিক যিনি ১৯৬৪ সালে থেকে ২০১০ পর্যন্ত সব কয়জন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, এবং ১৯৬৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সব মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সাংবাদিকতার দীর্ঘ জীবনে বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন, পেয়েছেন বহু আন্তর্জাতিক পুরষ্কার।

ব্রিটেনের রানী তাকে দিয়েছেন সম্মানসূচক খেতাব।

তার সাংবাদিকতায় কায়দা সম্পর্কে ব্রিটিশ রাজনীতিক জন স্মিথ একবার তাকে বলেছিলেন, ডেভিড, তোমার প্রশ্নগুলো আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ, কিন্তু তার ফলাফল ভয়াবহ। জবাবে ডেভিড ফ্রস্ট মন্তব্য করেছিলেন, আমি চাই আমার স্মৃতিফলকে শুধু এই কথাটিই লেখা থাকবে। খ্যাতনামা এই ব্রিটিশ ব্রডকাস্টার বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি ডকুমেন্টারি তৈরির জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেন। এ লক্ষ্যে তিনি গণভবন, বঙ্গবন্ধু ভবন ও টুঙ্গিপাড়ায় যান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারও গ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুতে তার ভূমিকা, পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে ফেরার পর বঙ্গবন্ধুর নেয়া সেই বিখ্যাত সাক্ষাৎকারই মূলত বাংলাদেশের মানুষের অনেক কাছকাছি এনে দিয়েছেন ডেভিডকে। আর তাই বুঝি এই সাংবাদিকের মৃত্যু একজন স্বজন হারানোর মতোই বেদনাদায়ক।

-আলিমুজ্জামান

 

 

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.