আর কোন প্লেজার ট্রিপ নয়

আর কোন প্লেজার ট্রিপ নয়

15th Asian Games Doha 2006 - Opening Ceremony

ম্প্রতি লন্ডন অলিম্পিক গেমসের এক বছর পুর্তি উঁৎসব হলো। যে দেশ ও ক্রীড়াবিদরা ঐ গেমসে ভালো  করেছে, পদক জিতেছেন তারা সেখানে সমবেত হয়ে উৎসব করেছে। তাদের জন্য আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে ঐ গেমস।

 

২০১২ সালে বেশ ঘটা করে লন্ডন অলিম্পিক গেমসে অংশ নিয়েছিলো বাংলাদেশও। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য ঐ গেমস ছিলো আরেকটি ব্যর্থতার অধ্যায়। অলিম্পিক গেমসে লন্ডনের ব্যর্থতায় লাল-সবুজের ক্রীড়াঙ্গনে হতাশা আরো দীর্ঘায়িত হয়েছে।

 

তবে সেই গেমস এখন ইতিহাস হলেও এ দেশের জন্য অনেক দৃষ্টান্ত ও অভিজ্ঞতা রেখে গেছে যা কাজে লাগিয়ে বা সেই অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে ক্রীড়াক্ষেত্রে এগিয়ে যাবার সুযোগ আছে বাংলাদেশে। যদি ব্যর্থতা থেকে  নেয়া শিক্ষা কাজে লাগানোর মত মানসিকতা আমাদের থেকে থাকে।

কিন্তু পরিতাপের বিষয়, লন্ডন গেমেসর পর অন্য সকল দেশ ২০১৬’র গেমসের জন্য প্রস্তুতি শুরু করলেও, বাংলাদেশ এক্ষেত্রে এখনো কোন পরিকল্পনাই নেয় নি।

 

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন কখনো কোন দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায়নি। তাই প্রতি পদে শুধু ব্যর্থতাই বয়ে আনছে। তিন বছর পর আরেকটি অলিম্পিকের জন্য যদি এখনই প্রস্তুতি শুরু করা না হয় তাহলে ব্যর্থতার ধারা থেকে বের হয়ে আসা যাবে না কোন ভাবেই।

 

আমাদের প্রত্যাশা  লন্ডন অলিম্পিক গেমস যেন হয় বাংলাদেশের শেষ প্লেজার ট্রিপ। এরপর আর কখনো বাংলাদেশের ক্রীড়াদল ও কর্মকর্তাদের  গেমস পরিদর্শন নিয়ে যেন নেতিবাচক কোন প্রশ্ন না  উঠে। লন্ডন গেমস থেকে যে শিক্ষা আমাদের বিজ্ঞ ক্রীড়া সংগঠকরা অর্জন করেছেন, তা যেন ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের পাথেয় হয়ে থাকে। কেননা ১৯৭২ সাল থেকে পরিদর্শক পাঠানোর মাধ্যমে অলিম্পিক গেমসে বাংলাদেশ অংশ নিলেও, তাদের ঐ সফরগুলো এদেশের ক্রীড়াঙ্গনে বড় কোন ভূমিকা যে রাখেনি, তার প্রমানতো প্রতি পদে পদেই পেয়েছে গরীব এই দেশটি। কারন ঐ কর্মকর্তারা গেমস দর্শন করেই নিজেদের দায়িত্ব শেষে করেছেনে। তাদের ঐ অভিজ্ঞতার কোন ফিডব্যাক জাতী পায়নি।

 

এবার লন্ডন থেকে ফিরে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা কি পদক্ষেপ নিয়েছেন, এক বছর অতিবাহিত হলেও তা এখনো জানা যায়নি। তারা আদৌ কি কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন সেটিই একটি বড় প্রশ্ন? ঐ যে অলিম্পিক আন্দোলনের মূল বার্তা ‘গেমসে অংশ গ্রহণই বড় কথা’ এর মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশের স্বপ্ন ও বাস্তবতা। আমাদের মহান কর্মকর্তারাও ব্যারন পেয়ার ডি কুবার্তিনের অমর সেই বাণীকে বুখে ধারণ করেই এগিয়ে যাচ্ছেন। তাই গেমসে অংশগ্রহণই বড় কথা হয়ে রয়েছে বাংলাদেশের জন্য।

 

আমরা গভীর আগ্রহে প্রতীক্ষায় ছিলাম লন্ডন থেকে ফিরে কি পদক্ষেপ নেন আমাদের বিজ্ঞ কর্মকর্তারা। কিন্তু এখনো শোনা যায়নি বিওএ ২০১২ অলিম্পিকের ব্যর্থতা নিয়ে কোন পর্যালোচনা সভা করেছে। ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করে এগিয়ে না গেলে, ব্যর্থতার মাঝেই ঘুরপাক খেতে হবে। সাফল্যর জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকলে কোন ভাবেই সাফল্য ধরা দেবে না। বিশেষ করে অলিম্পিকের মত আসরে সাফল্য পাওয়া যেখানে খুবই কঠিন এক কাজ।

 

বিওএ চাইলে এখনো একটি সভা আয়োজন করে গেমসে অংশ নেয়া কর্মকর্তা, ক্রীড়াবিদ ও সাংবাদিকদের মতামত জেনে নিতে পারে। বিওএ’র বর্তমান কমিটি যদি এই কাজটি আন্তরিকভাবে করেন, তাহলে ভবিষ্যতে তাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করা সহজ হবে এবং অনেক দক্ষতার সাথেই সেই পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন সহজ হবে।

 

একই সাথে ২০১৬ অলিম্পিক গেমসে প্রস্তুতি শুরু হবার পরকিল্পনা এখনই করতে হবে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনকে। সময় খুব দ্রুত চলে যায়। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত দেশের জন্য কথাটা খুবই বাস্তব। এখানে মিটিং-সিটিং করে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও, অর্থমন্ত্রণালয় থেকে বাজেট বরাদ্ধ পেতে দেরী হওয়ায়- সকল পরিকল্পনার বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়। তবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সভাপতি ও ক্রীড়াঙ্গনের অভিবাবক হিসেবে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এই বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন। তিনি নিজেই একটি সভা আহবান করে এক্সপার্টদের মতামত নিতে পারেন। তাহলে সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী গেমসের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা সহজ হবে।

 

শধু ২০১৬ রিও ডি জেনিরো অলিম্পিক গেমসই নয়, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার ইচোনে অনুষ্ঠিত হবে এশিয়ান গেমস। তার আগে ভারতে এসএ  গেমস অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। এসএ গেমস দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য খুবই মযাদাপূর্ণ আসর। আর এশিয়ান গেমস অলিম্পিক ক্রীড়ায় এশিয়ার সেরা আসর। তাই এস এ গেমস ও এশিয়ান গেমসে জন্য প্রস্তুতি শুরু করা প্রয়োজন এখনই।

 

অবশ্য গত বছর এসএ গেমেসের প্রস্তুতি শুরু হয়েছিলো। তখন ২০১৩র ফেব্রুয়ারীতে এস এ গেমস অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিলো। কিন্তু গেমস পিছিয়ে যাওয়ায় প্রস্তুতিও বন্ধ হয়ে গেছে। এস এ গেমস হোক ব না হোক, এশিয়াডের জন্য প্রস্তুতি এখনই শুরু হওয়া প্রয়োজন। অবশ্য যদি গেমসে ভালো করার লক্ষ্য থেকে থাকে?

 

এশিয়াডের জন্য চাই বিশেষ প্রস্তুতি। অবশ্যই সেই প্রস্তুতি হতে হবে ক্লাসিফায়েড। তবে তার আগে এশিয়াডে কোন কোন ইভেন্টে ক্রীড়াবিদ পাঠাবে বাংলাদেশ, তা বিশেষজ্ঞদের দ্ধারা নিরূপণ হওয়া উচিত। মোট কথা কোন কোন ডিসিপ্লিনের কোন কোন ইভেন্টে ফল ভালো করার সম্ভবনা রয়েছে বাংলাদেশের, তা চিহ্নিত করেই এশিয়াডের জন্য বিশেষায়িত প্রস্তুতি শুরু করা উচিত। এভাবে প্রস্তুতি নিলে নিঃসন্দেহে রেজাল্ট ভালো হবার সম্ভবনা উজ্জ্বল হবে। নিদেনপক্ষে হিটে সবার পেছনে থেকে দেশের মুখে চুনকালী  মেখে ক্রীড়াবিদরা ফিরে আসবে না।

 

লন্ডন অলিম্পিক গেমেসে অনেক দেশ প্রত্যাশার চাইতেও ভালো করেছে। কাজাকাস্তানের মত দেশ ৭টি স্বর্ণসহ ১৭টি পদক জিতেছে। ইউক্রেন ৬টি স্বর্ণসহ পেয়েছে ২০টি পদক। ইরান ৪টি স্বর্ণ পদকসহ ১২টি, বেলারুশের মত ছোট একটি দেশ দুটি স্বর্ণসহ ১২টি পদক জিতেছে। ভেনিজুয়েলা, পর্তুরিকো, বতসোয়ানা, গুয়েতেমালা, ডমিনিকান রিপাবলিক, মালদোভা’র মত দেশও লন্ডন অলিম্পিকে পদক জিতে বিশ্বে নিজেদেরকে নতুনভাবে পরিচিত করিয়েছে। ভারত কোন স্বর্ণ পদক জিততে না পারলেও, দুটি রৌপ্য ও চারটি ব্রোঞ্জ পদক জিতে অলিম্পিকে এযাবত কালের মধ্যে সেরা সাফল্য পেয়েছে।

 

উপরের উদাহরণগুলো এজন্য তুলে ধরলাম,  ভারতের ক্রীড়াঙ্গন যে একটা নিয়মতান্ত্রিক ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তার প্রমাণ হচ্ছে লন্ডন অলিম্পিকের সাফল্য। ২০১০ সালে ভারত কমনওয়েলথ গেমস আয়োজন করে ক্রীড়াক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছে। মোট কথা ভারতের ক্রীড়াঙ্গন এখন চলছে পরিকল্পনা অনুযায়ী। বিশেষজ্ঞরা দ্বারা প্রণীত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়। কিছুটা মন্থও হলেও তারা ফল পাচ্ছে আশাব্যঞ্জকভাবেই।

 

ভারত এমনিতেই এশিয়ান গেমসে বরাবরই ভালো করে আসছে। অনেকেই হয়তো বলবেন ভারতে ক্রীড়াঙ্গনকে অনেক বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়, সেখানে স্পন্সর সহজেই পাওয়া যায়। এসবই সঠিক। যেহেতু তারা বড় বাজার। তবে আমরাও যে ষোল কোটির বাজার সেটা তুলে ধরার ব্যর্থতা তো আমাদের। উপরন্তু দেশকে ব্র্যান্ডিংটাই ঠিকমতো করতে পারছি না আমরা। আমাদের অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন কিংবা ক্রীড়া পরিষদ কোথাও একটা কর্মার্শিয়াল কমিটি নেই। সেখানে স্পন্সর আশা করাই তো বৃথা। ফেডারেশনগুলোর অবস্থাও তথৈবচ। ২০১৩ সালে এসে রয়েছে অন্তত ৫০ বছর পিছনে।

আবার ব্যতিক্রমও তো আছে। যেমন ১৯৯৮ সালে এশিয়াডে অ্যাথলেটিক্সে ¯¦র্ণ জয়ী জ্যোতির্ময় ঠাকুর পশ্চিম বাংলার অতি দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছিলেন। তার ছিলোনা কোন স্পন্সর, তেমন কোন সুযোগ সুবিধাও পাননি। এশিয়াডে ভালো করার পরই ইন্ডিয়ান রেলওয়েতে চাকরি পেয়েছেন। এমন অনেক উদাহরণ ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ক্রীড়াঙ্গনে আছে। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে সত্যি ব্যতিক্রম। এখানে ফেডারেশন কর্মকর্তাদের কাছে চেয়ারের মূল্য সবচেয়ে বেশী। অন্যদিকে ক্রীড়াবিদরাও নিজের চেষ্টার চেয়ে ফেডারেশন ও বিওএ’র দিকে তাকিয়ে থাকতে বেশি  পছন্দ করে।

 

ভারত, গুয়েতেমালা, ডমিনিকান রিপাবলিক বা ভেনিজুয়েলার মত দেশগুলোর ক্রীড়াবিদদের সাথে আমাদের ক্রীড়াবিদদের শারিরীক পার্থক্য খুব বেশী নয়। তাহলে তারা পারলে আমরা কেন পারি না, সেই কারণগুলো বিশেষজ্ঞদের দ্ধারা চিহ্নিত হওয়া উচিত।  আর সেভাবেই উন্নত প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

 

চল্লিশ বছর একটি দেশের জন্য কম সময় নয়। কিন্তু দূখের বিষয় আমরা এতদিনেও ক্রীড়াক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারছিনা। অন্যদিকে বিকেএসপির মতো একটি প্রতিষ্ঠান থেকে গেছে শ্বেত হস্তি হয়েছে। উপরন্তু সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে ফেডারেশনগুলোতেও ক্ষমতার পরিবর্তন হয়। কিন্তু সেই পরিবর্তনে যোগ্যতা সবসময়ই উপেক্ষিত থাকে। সেখানে দলীয় আনুগত্যই প্রধান বিষয় হয়ে উঠে। যে কারণে একটি বৃত্তের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন। ২০১৬ অলিম্পিক গেমসকে সামনে রেখে এখনই যদি একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে এগিয়ে যাবার রূপরেখা তৈরি করা হয়, নিশ্চয় হতাশা থেকে বের হয়ে আশার পথ খুঁজে পাবে বাংলাদেশর ক্রীড়াঙ্গন।

লেখক: সিনিয়র রিপোর্টার, বাংলাভিশন

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.