দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃপক্ষের নজরের বাইরে থাকা টেলিটকের ৩টি ভূতুড়ে থ্রিজি প্যাকেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে! ওই প্যাকেজে ১২৮ কেবিপিএস দেওয়ার কথা থাকলেও গ্রাহকরা ২৫৬ থেকে ৫১২ কেবিপিএস স্পিড পেতেন। শনিবার প্যাকেজটি বন্ধ হওয়াতে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা। এটা কি সিস্টেম লস নাকি অন্য কোন উদ্দেশ্যে কেউ ব্যবসা করছিল তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে টেলিটক বাংলাদেশের মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস জেনারেল ম্যানেজার ফারুক আহমেদ বলেছেন, এখন থ্রিজি সেবায় ১২৮ কেবিপিএস স্পিড ব্যবহার করা যায় না বলেই এটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, টেলিটকের থ্রিজি সেবা চালু হওয়ার কিছুদিন পর থেকে একটি সিন্ডিকেট D7, D11 আর D12 নামের ৩টি গোপন কোডে থ্রিজি প্যাকেজ কিনতে পাওয়া যায় বলে মার্কেটিং করতে থাকে। ফেসবুকের “টেলিটক লাইভ” নামের একটি পেজ এই নিয়ে প্রচারণাও চালাতে থাকে। গত মে মাসে খুঁজে পাওয়া একটি প্যাকেজের বিস্তারিত বলতে গিয়ে পেজটি লিখেছে, “১২৮ কেবিপিএস এর থ্রিজি ইন্টারনেট প্যাকসমুহ- ১০ এমবি@৮ টাকা+ভ্যাট (১ দিন) D7, ২ জিবি@৩৫০ টাকা+ভ্যাট (৩০ দিন) D11 এবং আনলিমিটেড@৬৫০ টাকা+ভ্যাট (৩০ দিন, ইউসেজ লিমিট- ৩০ জিবি) D12। এই প্যাক নিতে কোড লিখে ১১১ নম্বরে এসএমএস করুন।” জানা গেছে, ১২৮ কেবিপিএস-এর D12 প্যাকেজটি ব্যবহার করে গ্রাহকরা ২৫৬ থেকে ৫১২ কেবিপিএস স্পিড পেতেন বলেই জানা গেছে।
ভ্যাটসহ মাত্র সাড়ে সাতশ’ টাকায় আনলিমিটেড (ফেয়ার ইউসেজ পলিসিসহ) এই প্যাকেজটি স্বল্প আয়ের ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। একাধিক সূত্রমতে এটিই সাধারণ মানুষের মধ্যে টেলিটকের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্যাকেজ। কিন্তু টেলিটকের কোন প্রকার লিফলেটে বা ওয়েবসাইটে থ্রিজি প্যাকেজ তালিকায় এই নামের কোন প্যাকেজের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ওয়েবসাইট বা লিফলেটের কোথাও উল্লেখ না থাকলেও ফেসবুকের টেলিটক পেজ থেকে D12 সাবস্ক্রিপশন কোডটি একাধিকবার প্রচার করা হয়েছে বলে এখান থেকেই গ্রাহকরা টেলিটকের এই গোপন প্যাকেজটি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃপক্ষের চক্ষু আড়ালেই গ্রাহকরা এই প্যাকেজটি ব্যবহার করে আসছিলেন। এমনকি কম মূল্যে বেশি ডাটা পাওয়া যায় বলে এসব প্যাকেজ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করতেন গ্রাহকরা। কিন্তু হঠাৎ করেই গত শনিবার সন্ধ্যার পর থেকেই D12 প্যাকেজের ব্যবহারকারীদের টেলিটক সিমে একটি এসএমএস আসে। এসএমএসটিতে টেলিটকের ১২৮ কেবিপিএস স্পিডের প্যাকেজটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এর বদলে টেলিটকের ২৫৬ কেবিপিএস এবং তারচেয়েও বেশি গতির ইন্টারনেট প্যাকেজ বেছে নিতে পরামর্শ দেয়া হয়।
এদিকে প্যাকেজগুলো মার্কেটিং করা ফেসবুকের “টেলিটক লাইভ” নামের পেজটি এই সিদ্ধান্তের ফলে “আমরা দু:খিত, লজ্জিত এবং আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী” নামের একটি পোস্ট দিয়েছে। সেখানে তারা যা বলেছে তা এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো, “সম্মানিত টেলিটক থ্রিজি গ্রাহকবৃন্দ, আমরা সত্যিই অত্যন্ত দু:খিত। D7, D11 আর D12 প্যাক বন্ধ করার সিদ্ধান্ত আমরাও জানতাম না। অলরেডি এখনো আমরা ম্যানেজমেন্ট কে বুঝানোর চেষ্টা করছি। তবে তারা বলছেন, এগুলো টেস্ট থ্রিজির প্যাক। এগুলো তে স্পিড লিমিট ছিলনা, তাই ১২৮ এর প্যাকেও ১ এমবিপিএস পাওয়া যেত। কিন্তু এর কারণে থ্রিজির আসল প্যাকগুলো তে সার্ভার থেকে সমস্যা করছিল। অনেকে বেশি স্পিডের প্যাকে কম স্পিড পাচ্ছিলেন, আবার একই প্যাক একই লোকেশনে সিম টু সিম নেট স্পিড ভ্যারি করছিল।এক কথায় জগাখিচুড়ী অবস্থা। আমরা এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করিনি, কারণ কথাটি সত্য।
তারপরেও আমরা বলেছি, D11 আর D12 প্যাকটি অনেক স্টুডেন্ট ব্যবহার করে। তাই একই রকম প্যাক অতি শীঘ্রই আবার চালু করা হোক। অথবা বর্তমান প্যাক গুলোর মূল্য পুন:নির্ধারিত হোক।তারা বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। তারা আরো বলেছেন, স্পিডের সমস্যা টি তারা ১২৮ এর প্যাকগুলো কে চালু রেখেই সমাধানের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কাজ না করাতে বাধ্য হয়েই সিস্টেমটি তুলে ফেলতে হয়েছে। এখন পুরো সিস্টেম রিফ্রেশ করা সহজ হবে। এটি অনেক গ্রাহকের পছন্দের প্যাক তা তারা জানেন, তাই খুব শীঘ্রই এই অভাব পূরণ করা হবে। এটি নতুন প্যাক এনেও হতেও পারে, বর্তমান প্যাকের মূল্য কমিয়েও হতে পারে। আশার কথা হচ্ছে, থ্রিজি বা টুজি তে ইন্টারনেটের মূল্য পুন:নির্ধারণ খুব শীঘ্রই হতে পারে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আগামী সিম গুলোতে বিশেষ মূল্যে ইন্টারনেট দেয়ার পরবর্তী ধাপ হিসেবে এবার সাধারণ গ্রাহকদের জন্য কিছু আসবে। এত কিছুর পরেও এই অপ্রিয় সিদ্ধান্তটির কারণে আমাদের ক্ষুব্ধ সম্মানিত গ্রাহক দের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। ধন্যবাদ।”
টেলিটকের এই প্যাকেজ থেকে অন্য প্যাকেজগুলো অনেক ব্যয়বহুল। হঠাৎ করে এই প্যাকেজগুলো বন্ধ করাতে ফেসবুকে তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। অনেকেই টেলিটকের থ্রিজি আর ব্যবহার করবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। এসব ব্যাপারে জানতে টেলিটক বাংলাদেশের মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস্ জেনারেল ম্যানেজার ফারুক আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, এখন থ্রিজি সেবায় ১২৮ কেবিপিএস স্পিড যায় না। অনেকেই ধীরগতির স্পিডের ব্যাপারে আমাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। আর তাই এটা আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। বন্ধ করে দেওয়া প্যাকেজগুলো ওয়েবসাইটের তালিকায় ছিলনা কেন আর ফেসবুক পেজেই বা মার্কেটিং করা হলো কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এই প্যাকেজগুলো আমাদের আগে থেকেই ছিল কিন্তু তা ঘোষণা দেওয়া হয়নি। যারা ব্যবহার করতেন তারা নেগেটিভ ফিডব্যাক দিতো। তাছাড়া এটা টুজির জন্য প্রযোজ্য। এখন আমরা একই সেবা টুজিতে দিচ্ছি। সেখানে দামও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর ফেসবুকে “টেলিটক লাইভ” আমাদের অফিসিয়াল পেজ নয়। এখানে কিছু লোক নিজেদের ইচ্ছামত পোস্ট দেয়। তাদের সাথে টেলিটকের কোন সম্পর্ক নেই। আমাদের ফেসবুক পেজের নাম “টেলিটক থ্রিজি”।