সবার আগে মেসির আর্জেন্টিনা

সবার আগে মেসির আর্জেন্টিনা

নূরুল আলম

ArgentinaFootball1[1]

ঠিক এই মুহূর্তে তাবৎ বিশ্বের ম্যারাডোনা, মেসি ও আর্জেন্টিনার ভক্ত-সমর্থকদের জন্য সুখ সংবাদটি হচ্ছে, দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল থেকে সবার আগে ব্রাজিল বিশ্বকাপের টিকেট নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা।

গত ১১ সেপ্টেম্বর এ অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে স্বাগতিক প্যারাগুয়েকে ৫-২ গোলের বড় ব্যবধান হারিয়ে ২০১৪ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার  যোগ্যতা অর্জন করেছে দেশটি।

অন্যদিকে আর্জেন্টাইন সুপার স্টার মেসি ভক্তরা এই দেখে আরো বেশী উদ্বেলিত যে, মূলত মেসির ওপর ভর করেই আর্জেন্টিনা পৌঁছে গেছে তাদের স্বপ্নের সীমানায়। প্যারাগুয়ের রাজধানী অসানসিওনে অনুষ্ঠিত ম্যাচে পেনাল্টি থেকে দুই অর্ধে দুটি গোল করেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হয়ে অপর তিনটি গোল করেন সার্জিও এ্যাগুয়েরো, এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া ও ম্যাক্সি রদ্রিগুয়েজ। এ ম্যাচে নিষেধাজ্ঞার কারণে আলেসান্দ্রো সাবেলা তাঁর প্রথম একাদশের চারজন খেলোয়াড় ছাড়া দল সাজিয়েছিলেন।

বিশ্বকাপের মূলপর্বে যেতে হলে প্যারাগুয়ের বিরুদ্ধে এক পয়েন্টই যথেষ্ট ছিল আর্জেন্টিনার। কিন্তু পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়েই বিশ্বকাপে পা রেখেছে মেসিবাহিনী। এ জয়ে ১৪ ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে সবার আগে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল থেকে ব্রাজিলের টিকেট নিশ্চিত করেছে মেসি বাহিনী।

অন্যদিকে প্রতিপক্ষ প্যারাগুয়ের বেজেছে বিদায়ী ঘন্টা। নিজেদের মাঠে পরাজয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা প্যারাগুয়ের স্বপ্নের কবর রচিত হয়েছে। এ অঞ্চলে বর্তমানে ১৪ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার দুই নম্বরে আছে কলম্বিয়া। সমান খেলায় ২৪ পয়েন্ট নিয়ে চিলি আছে তিন নম্বরে। বলিভিয়া থেকে ১-১ গোলের ড্র নিয়ে ফেরা ইকুয়েডরের পয়েন্ট উরুগুয়ের সমান হলেও গোল গড়ে এগিয়ে চতুর্থ স্থানে আছে তাঁরা। পেরুকে হারিয়ে কাগজে-কলমে সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রেখেছে ভেনিজুয়েলা। ১৫ খেলায় ১৯ পয়েন্ট নিয়ে ছয় নম্বরে রয়েছে দলটি। আর ইতোমধ্যে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে পেরু, প্যারাগুয়ে ও বলিভিয়ার।

massi

উল্লেখ করা যেতে পারে যে, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে পয়েন্ট তালিকার প্রথম চারটি দল সরাসরি ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাবে। পঞ্চম দল প্লে-অফে খেলবে এশিয়া অঞ্চলে পঞ্চম হওয়া জর্ডানের বিরুদ্ধে।

এদিকে, আর্জেন্টিনার সঙ্গে ব্রাজিলের যাত্রী হতে পারত কলম্বিয়াও। কিন্তু উরুগুয়ের কাছে ২-০ গোলে হেরে তাদের ব্রাজিলযাত্রা আপাতত বিলম্বিত হয়েছে। আর ঘরের মাঠে দারুণ জয়ে বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল করেছে গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালিস্ট উরুগুয়ে। আরেক ম্যাচে ভেনিজুয়েলা ৩-২ গোলে পরাজিত করে পেরুকে।

দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্যারাগুয়ের বিরুদ্ধে খেলতে পারেননি দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা গঞ্জালো হিগুয়াইন। ছিলেন না বার্সিলোনা ডিফেন্ডার জ্যাভিয়ের মাচেরানো, ডিফেন্ডার এজেকুইয়েল গ্যারে ও ফেদেরিকো ফার্নান্ডেস। তবুও প্রতিপক্ষের মাঠ অসানসিওনের স্তাদিও ডিফেনসোরেস ডেল চাকোয় প্যারাগুয়েকে হারাতে কোন সমস্যা হয়নি আর্জেন্টিনার। ম্যাচের ১২ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন প্রাণভোমরা মেসি। প্যারাগুয়ে গোলরক্ষক সার্জিও এ্যাগুয়েরোকে ফাউল করলে পেনাল্টি বাঁশি বাজান চিলির রেফারি ইনরিকুয়ে ওসেস। ম্যাচে সমতা ফেরাতে খুব বেশি সময় নেয়নি স্বাগতিক শিবির। ১৭ মিনিটে হোসে নুইনেসের লক্ষ্যভেদে সমতা ফেরে প্যারাগুয়ে। ৩২ মিনিটে মেসির এগিয়ে দেয়া বল থেকে এ্যাগুয়েরো প্রতিপক্ষের জাল খুঁজে পেলে প্রথমার্ধে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা।

বিরতির পর ৫০ মিনিটে ফার্নান্ডো গ্যাগোর এগিয়ে দেয়া বল থেকে গোল করে ব্যবধান ৩-১ করেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ডি মারিয়া। ৫৩ মিনিটে রেকর্ড টানা চারবারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার লিওনেল মেসিকে ফাউল করলে ফের পেনাল্টি পায় সাবেলার দল। স্পট কিক থেকে নিজের দ্বিতীয় ও দলের চতুর্থ গোল করেন বার্সিলোনা ডায়মন্ড। এ গোলটি করে বাছাইপর্বে যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন মেসি। ১০ গোল করে তাঁর সঙ্গে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে আছেন উরুগুয়ের লুইস সুয়ারেজ। ৮৬ মিনিটে অধিনায়ক রাকা সান্তা ক্রুজের গোলে ব্যবধান (৪-২) কমায় প্যারাগুয়ে। কিন্তু শেষ বাঁশি বাজার মুহূর্তে আগে ডি মারিয়ার পাস থেকে গোল করে প্যারাগুয়ের বিশ্বকাপ স্বপ্নের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠোকেন বদলি হিসেবে নামা ম্যাক্সি রদিগুয়েজ (৫-২)। ম্যাচ শেষে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মেসি বলেন, আমরা জানি বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া কতটা কঠিন। ভাল খেলার পুরস্কারই আমরা পেয়েছি এ ম্যাচে।

প্যারাগুয়ের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে আরও একটি গৌরবময় অর্জন ঝুলিতে ভরেছেন মেসি। এর আগে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন বর্তমান আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। এবার সাবেক স্ট্রাইকার হার্নান ক্রেসপোকে টপকে দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন মেসি। প্রাপ্ত দুটি পেনাল্টি কাজে লাগিয়ে মেসি নিজেকে নিয়ে গেছেন দারুণ অনন্য উচ্চতায়। আর্জেন্টিনার পক্ষে গোল করায় তিনি এখন কেবল গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার পরেই। প্যারাগুয়ের বিরুদ্ধে দুই গোলের সুবাদে আর্জেন্টিনার পক্ষে মেসির গোলসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭। বাতিস্তুতার চেয়ে বেশ খানিকটা (৫৬) পিছিয়ে থাকলেও তিনি পেছনে ফেলেছেন ক্রেসপোকে (৩৫)। আর্জেন্টিনার হয়ে নিজের ৮৩তম ম্যাচে এই গোল করেছেন মেসি।

যেহেতু এবারের বিশ্বকাপের আসর বসছে ব্রাজিলে, স্বাভাবিকভাবেই আর্জেন্টিনা ও তাদের ভক্তরা আরো বেশী স্নায়ু টানে ভুগবে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে, পেলের দেশ থেকে ম্যারাডোনার দেশে কাপ জিতে নিয়ে যাওয়া। বলার অপেক্সা রাখে না যে, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের এ ইস্যুটিই প্রতিবারের চাইতে এবারে আরো বেশী টান টান উত্তজনায় সমৃদ্ধ থাকবে।

 

 

 

 

 

 

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.