মিজানুর রহমান খানের কলাম

মিজানুর রহমান খানের কলাম

 পোষ্টটি তৈরী হচ্ছে…..পৃথিবী রহস্যময়। রহস্যময় এর প্রাণিজগত্। তবে স্থলভাগের চেয়ে জলভাগের প্রাণিকুল আরও বেশি রহস্যময়। এদের খাদ্য ও আচরণে আছে নানা বৈচিত্র্য। আর এ রহস্য উদ্ঘাটনে যুগ যুগ ধরে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। সফল হয়েছেন। হচ্ছেন। তারপরও থেমে নেই তারা। নিত্যনতুন তথ্য হাজির করছেন, চেষ্টা করছেন এগুলো মানব কল্যাণে ব্যবহার করতে।
সমুদ্রের প্রাণিকুল নিয়ে গবেষণা করছে ওশান সেনসাস নামে একটি সংগঠন। সংগঠনটির ৩৬০ জন বিজ্ঞানী ১০ বছর ধরে বিভিন্ন সমুদ্রের প্রাণিকুল, তাদের খাদ্য, আবাসস্থল ও আচরণ নিয়ে গবেষণা করছেন। সম্প্রতি তারা একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। এটি প্রাণীবিষয়ক জার্নাল ‘প্লস ওয়ান’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
এ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমুদ্রে প্রাণিকুলের বসবাস অঞ্চলভিত্তিক। অর্থাত্ সব জায়গায় সব প্রাণী থাকে না। কোথাও প্রাণীসংখ্যা অনেক বেশি, আবার কোথাও নগণ্য।
অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের সাগরকে বলা হয়েছে সর্বোত্তম জায়গা। সবচেয়ে উন্নত পানি। আর এ কারণে এখানে প্রাণীর সংখ্যাও বেশি। এখানে একই বৈশিষ্ট্যের প্রায় ৩৩ হাজার প্রজাতির জলজ প্রাণী বাস করে। গড়ে একটি অঞ্চলে বাস করে ১০ হাজার ৭৫০ প্রজাতির জলজ প্রাণী। ওশান সেনসাসের বিজ্ঞানীরা এরূপ ২৫টি অঞ্চলের প্রাণী নিয়ে গবেষণা করেছেন। ওশান সেনসাসের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমুদ্রে সবচেয়ে বেশি বাস করে শক্ত খোলস জাতীয় প্রাণী। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কাঁকড়া ও কচ্ছপের নাম। এরাই সাগরে সংখ্যাগরিষ্ঠ। মোট প্রাণীর এক-পঞ্চমাংশ হলো এ প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। নরম শরীরের প্রাণী ১৭ শতাংশ। উদাহরণ হিসেবে শামুকের নাম বলা হয়েছে। তাদের মধ্যে শক্ত খোলস কিন্তু শরীর নরম এ জাতীয় প্রাণী আছে। এ শ্রেণীর প্রাণী হলো ঝিনুক। মাছ আছে ১২ শতাংশ। অ্যালগে, উদ্ভিদ জাতীয় প্রাণী ও এককোষের প্রাণী আছে ১০ শতাংশ। সাগরে মাছের সংখ্যা কত, এরূপ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন অসংখ্য। ওশান সেনসাসের বিজ্ঞানী দলের জ্যেষ্ঠ সহকারী সমন্বয়ক ড. পেট্রিসিয়া মিলোস্লাভিচ বলেন, তাদের গবেষকদের তথ্য-উপাত্ত স্থানীয়ভাবে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে মেলানো হচ্ছে। এছাড়া আগের গবেষকদের দেয়া তথ্য-উপাত্ত বিচার-বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন জার্নাল থেকে এসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।
পেট্রিসিয়া বলেন, ৩৬০ জন বিজ্ঞানী ১০ বছরের বেশি সময় গবেষণা করে যে তথ্য-উপাত্ত পেয়েছেন তা পুরোপুরি এ বছরের অক্টোবরে প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, সাগরের বেশিরভাগ প্রজাতির প্রাণীই রহস্যময়।
ওশান সেনসাসের গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পরিচিত প্রতিটি জলজ প্রাণীরই কমপক্ষে ৪টি করে সমগোত্রীয় প্রজাতি আবিষ্কার করা হয়েছে। ওই বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস ৭০ শতাংশ প্রাণী (মাছ জাতীয়) তারা রেকর্ড করেছেন। সব গোত্রের এক-তৃতীয়াংশের কম প্রাণী তাদের পরিচিত। তারা আরও বিশ্বাস করেন, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় গভীর সাগর ও দক্ষিণাঞ্চলীয় হ্যাম্পশায়ারের বেশিরভাগ জলজ প্রাণী এখনও আবিষ্কৃত হয়নি।
ওশান সেনসাস গবেষক দলের নেতা জীববিজ্ঞানী ড. ন্যান্সি নওলটন বলেন, বেশিরভাগ জলজ প্রাণী এখনও নামহীন। জানা যায়নি তাদের সংখ্যাও। এ কারণে তাদের গবেষণা ব্যর্থ হয়েছে এমনটা ঠিক নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সাগর এত বড় এবং এর প্রাণীর সংখ্যা এত বেশি যে, ১০ বছর কঠোর পরিশ্রম করেও তারা সামান্যই অর্জন করতে পেরেছেন। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের অর্জন বেশ ভালো বলে তিনি দাবি করেন।
ওই গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অনেক প্রজাতির প্রাণী একাধিক অঞ্চলে বাস করে। যেমন ভাইপার ফিশ পৃথিবীর এক-চতুর্থাংশ সাগরে পাওয়া যায়। এদিকে ভূমধ্যসাগরীয়, মেক্সিকোর উপসাগরীয়, চীনের উপকূলীয়, ব্যালটিক ও ক্যারিবিয়ান সাগরের প্রাণী জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করেছেন ওশান সেনসাসের বিজ্ঞানীরা। তবে ভূমধ্যসাগরীয় পানি আবার আগ্রাসী প্রাণীর আবাসস্থল বলে বর্ণনা করা হয়েছে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, এন্ট্রার্কটিকা ও দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক প্রজাতির জলজ প্রাণী রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে।
সমুদ্র উপকূলে বসতি, নির্বিচার মত্স্য আহরণ ও অভ্যাস পরিবর্তন জলজ প্রাণীর জন্য হুমকি বলে ওই গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তবে আশার বাণী হচ্ছে, জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে কাজ করবে ওশান সেনসাস। পেট্রিসিয়া বলেন, তারা অবশ্যই এসব প্রাণী সম্পর্কে জ্ঞান বাড়াবেন এবং বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আগেই সেগুলো আবিষ্কার করবেন।
ড. নওলটন এক বিবৃতিতে বলেছেন, সাগর আজ সঙ্কটাপন্ন। এর প্রাণীরা দুর্ভোগের শিকার। এ বিষয়টি প্রত্যেক নাগরিককে বুঝতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে এ সমস্যা সমাধানে। জাতীয় বা আন্তর্জাতিকভাবেও এ সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। কিছু কিছু এলাকায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে জলজ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আরও পদক্ষেপ নিতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

সিরাজুল ইসলাম

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.