সাকা’র ফাঁসি

সাকা’র ফাঁসি

সসাককা

১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিরুদ্ধে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। সাকার বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ ও নির্যাতনের ৯টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর অভিযোগে তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে।

২, ৪ ও ৭ নম্বর অভিযোগে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে পাঁচ বছর করে সাজা দেয়া হয়েছে। বাকি অভিযোগগুলো থেকে খালাস দেয়া হয়েছে।

১ অক্টোবর বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন।

এদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাকা চৌধুরীকে এজলাসে উঠানো হয়। এরপর ১৭২ পৃষ্ঠার সারসংক্ষেপ পড়া শুরু হয়। বিচারপতি আনোয়ারুল হক রায় পড়া শুরু করেন। এরপর বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং শেষে চেয়ারম্যান এটিএম ফজলে কবীর রায় পড়েন।

রায়ে বিচারক বলেন, ‘সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের অভিযোগগুলোর মধ্যে ২ থেকে ৮, ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে।’

প্রসিকিউশন ১, ১০, ১১, ১২, ১৪, ১৯, ২০ ও ২৩ নম্বর অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

প্রসিকিউশন শুনানির সময় কোনো সাক্ষী হাজির করতে না পারায় ৯, ১৩, ১৫, ১৬, ২১ ও ২২ নম্বর অভিযোগের বিষয়ে রায়ে কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি।

সাকা চৌধুরীর মামলায় উভয়পক্ষের শুনানি ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১৪ আগস্ট রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখা হয়।

মামলার শুনানিতে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে সাকা চৌধুরীর সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করা হয়। গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুট ও দেশান্তরে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ১৭টিতে সাক্ষ্য ও যুক্তি উপস্থাপন করে প্রসিকিউশন।

২০১১ সালের ১৪ নভেম্বর সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। একই বছরের ১৮ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক এ অভিযোগ আমলে নিয়ে ২৩টি অভিযোগে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

২০১২ সালের ১৪ মে প্রসিকিউশনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে গত ২৮ জুলাই তা শেষ হয়। প্রসিকিউশনের ৪১ জন এবং আসামিপক্ষে চার জনের জবানবন্দি নেয়া হয়।

একাত্তরের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে ৪৩৭ ব্যক্তিকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকা ছাড়াও চট্টগ্রামের রাউজানের শাকপুরা, ঊনসত্তরপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চালানোরও অভিযোগ আনা হয় সাকার বিরুদ্ধে। এসব অপরাধ সাকা চৌধুরীর উপস্থিতি ও নির্দেশে এবং পাকিস্তানি সেনাদের মাধ্যমে সংঘটিত হয়।

অত্যাচার-নির্যাতন ও হত্যার ক্ষেত্রে চট্টগ্রামে সাকা চৌধুরীর বাড়িকে ‘গুডস হিল’ টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এখানে মুক্তিযোদ্ধা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও নারীদের ধরে নিয়ে নির্যাতনের পর হত্যা করা হতো বলে প্রসিকিউশনের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

২০১০ সালের ২৬ জুন হরতালের আগের রাতে রাজধানীর মগবাজার এলাকায় গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর সাকা চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে ১৯ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক দেখানো হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে।

ওই বছরের ১৪ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে ১৭ নভেম্বর তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল-১ তার বিরুদ্ধে ২৩টি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন। ওই বছরের ১৪ মে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের জবানবন্দির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। এরপর দীর্ঘ প্রায় ১৫ মাস ধরে চলা সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় চলতি বছরের ২৪ জুলাই। এ সময়ের মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেন ৪১ জন, আসামিপক্ষে চারজন। ২৮ জুলাই থেকে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়ে ১৪ আগস্ট তা শেষ হয়।

-সময়ের কথা ডেস্ক

 

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.