প্রীতির টেনিসময় স্মৃতি

প্রীতির টেনিসময় স্মৃতি

Afrana Islam Prity-3

২৮ সেপ্টেম্বর, শনিবার। দিনটা ছিল আফরানা ইসলাম প্রীতির জন্য ‘বৃহস্পতি তুঙ্গে’র মতোই। একই দিনে দুটো শিরোপা জয়, এমনটা তো আর রোজ রোজ ঘটে না। বিকেএসপির নবম শ্রেণীর সুদর্শনা লাস্যময়ী এ কিশোরী ‘এটিএফ অনুর্ধ-১৪ টেনিস প্রতিযোগিতা’য় একক এবং দ্বৈতে দুই বিভাগেই ‘ডাবল ক্রাউন’ জেতেন। এককের ফাইনালে হারান একই প্রতিষ্ঠানের রেবেকা সুলতানা জয়াকে। ম্যাচের স্কোরলাইন ছিল ৬-৩, ৬-৩। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই দ্বৈতের ফাইনালে সঙ্গী শাহ সাফিনাকে নিয়ে আবারও পরাভূত করেন রেবেকাকে (রেবেকার পার্টনার ছিলেন সুমা খানম লক্ষ্মী)। ম্যাচের স্কোরলাইন ছিল ৬-৩, ৬-২।

কিভাবে জিতলেন? ‘রেবেকার বিরুদ্ধে এর আগেও খেলেছি অনেকবার। ওর সাথে আমার সবসময়ই ফাইট হয়। কখনও ও জিততো, কখনও বা আমি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আমিই টানা জিতছি। আমরা দুজনেই সমমানের প্লেয়ার। পরস্পরের বিরুদ্ধে একাধিকবার খেলার সুবাদে দুজনেই দুজনের শক্তিমত্তা-দুর্বলতাগুলো জানি।’ প্রীতির উত্তর।

এর আগে অনেকবার রানার্সআপ হলেও এ প্রথম সিঙ্গেলসে চ্যাম্পিয়ন হলেন তিনি, ‘আমি যে কতটা খুশি হয়েছি, তা বলে বোঝাতে পারব না। এ স্মৃতি অনেকদিন মনে থাকবে।’ টুর্নামেন্ট শুরুর আগে প্রীতির টার্গেট ছিল একটাই, যেভাবেই হোক চ্যাম্পিয়ন হতে হবে, ‘আমার সমস্যা হচ্ছে ম্যাচের আগে আমি প্রায়ই নাভার্স হয়ে পড়ি। ফলে শরীরে এনার্জি থাকলেও ঠিকমতো খেলতে পারি না। আজও তাই হয়েছিল। তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করি, এনার্জিটাকে কাজে লাগিয়ে স্বাভাবিক খেলাটাই খেলতে সক্ষম হই।’ নিজের খেলার একটি দিক নিয়ে মাঝেমধ্যেই সমস্যায় ভোগেন প্রীতি। সেটা হচ্ছে ‘ভলি।’

সামনের মাসেই বিকেএসপিতে আবারও অনুষ্ঠিত হবে ‘এটিএফ অনুর্ধ-১৪ টেনিস প্রতিযোগিতা’। এ আসরেও খেলবেন প্রীতি। টার্গেট কি থাকবে? ‘অবশ্যই চ্যাম্পিয়ন হওয়া।’ কিন্তু এ আসরে বিদেশী প্লেয়ার না খেললেও বিকেএসপির আসরে খেলবে, সেক্ষেত্রে শিরোপা জেতাটা কি কঠিন হয়ে যাবে না? ‘কঠিন হলেও যথাসম্ভব চেষ্টা করব।’

২০১১ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়া প্রীতি এত খেলা থাকতে টেনিসকে বেছে নিলেন কেন? খুলনার বাগেরহাটের মেয়ে প্রীতির ব্যাখ্যা, ‘টেনিস অনেক স্মার্ট খেলা। আমাদের দেশে হয়তো এ খেলাটির কোন মূল্য নেই, কিন্তু পাশ্চাত্যে খেলাটির অনেক মূল্য। টেনিসই আমার লাইফ পার্টনার, আমার সবকিছু।’

নিজের স্বপ্নের কথা জানান প্রীতি, ‘আমার স্বপ্নÑ টেনিস খেলে বাংলাদেশকে টেনিসবিশ্বে সুপরিচিত করব। বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে একদিন নিজের অবস্থান করে নেব।’

এর জন্য টেনিস ফেডারেশনের সাহায্য, নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও স্পন্সরদের এগিয়ে আসা ব্যাপারগুলোও যে সম্পৃক্ত, সেটিও জানান প্রীতি।

বাবা জাহিদুল ইসলাম (বাগেরহাটের পৌরসভায় চাকুরিরত) এবং মা শামীমা আক্তার (গৃহিণী) যথেষ্ট উৎসাহ জোগান প্রীতিকে টেনিস খেলতে। বিকেএসপির কোচ রোকনউদ্দিন আহমেদের অবদানের কথাও উল্লেখ করেন দুই বোনের মধ্যে বড় প্রীতি।

টেনিস স্মরণীয় ঘটনা? ‘২০১০ সাল। তখনও আমি বিকেএসপিতে ভর্তি হইনি। বাগেরহাটের একটি ক্লাবে টেনিস অনুশীলন করতে গিয়ে পড়ে গিয়ে হাতে ভীষণ ব্যথা পাই। পাঁচ মাস লেগেছিল সারতে।’

এর আগে দ্বৈতে প্রীতি ২০১৩ বাংলাদেশ গেমসে রৌপ্যপদক, ২০১২ সালে বিকেএসপিতে অনুষ্ঠিত এটিএফ অ-১৪ টুর্নামেন্টে রানার্সআপ, ২০১১ ও ১২ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্সআপ হন। এককে অ-১৪ ও ১৬ আসরে রানার্সআপ হয়েছেন। আর এবার তো চ্যাম্পিয়নই হয়ে গেলেন!

সারদা, ঋতু আর ঈশিতাকে কঠিন প্রতিপক্ষ মনে করেন প্রীতি। জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত টেনিস আসরগুলোতে খেলোয়াড়দের যদি প্রাইজমানি দেয়া হয়, তাহলে তারা বেশি করে এ খেলায় আসতে আগ্রহী হবে বলে মনে করেন তিনি।

২০০০ সালের ২৪ জানুয়ারিতে পৃথিবীতে বুকে ভূমিষ্ঠ হওয়া প্রীতির ক্যারিয়ারের স্মৃতিময় আরেকটি দিন হচ্ছে ২০১৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। হৃদয়ের মণিকোঠায় চির জাগুরুক হয়ে থাকা দিনটির সাফল্যের ধারাবাহিকতা যেন আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকে, সেটাই টেনিসপ্রেমীদের নিগুঢ় প্রত্যাশা।

rumelboss@gmail.com

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.