বিকৃত রুচির রুমি কাহিনী!

বিকৃত রুচির রুমি কাহিনী!

image_192_7880[1]

সভ্য সমাজ যেনো এটাই চাইছিলো। এই সভ্যতার যুগে অসভ্যতাকে কেইবা প্রাধান্য দেয়। বেশ কিছুদিন যাবৎ আপত্তিকর কর্মকান্ডাদীর নানা সংবাদের প্রেক্ষিতে কন্ঠশিল্পী আরেফিন রুমি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়ে আসছিলেন। এর মাঝে নারীবিষয়ক অনৈতিক কর্মকান্ডই বেশী প্রধান্য পেয়েছে। যার পরিসমাপ্তি ঘটেছে ১২ অক্টোবর ভোরে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাড়ি থেকে এই অতি অহঙ্কারী কন্ঠশিল্পীকে গ্রেপ্তার করা হয়।  জানা যায় প্রথম স্ত্রী লামিয়া ইসলাম অনন্যার দায়ের করা নারী নির্যাতন মামলায় গ্রেপ্তার হন কণ্ঠশিল্পী আরফিন রুমি।

মোহাম্মদপুর থানার ওসি আজিজুল হক বলেছেন, নির্যাতনের অভিযোগ এনে রুমির প্রথম স্ত্রী অনন্যা শুক্রবার রাতে মামলা করেন। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নিয়েই গত বছর রুমি আমেরিকা প্রবাসী ভক্ত কামরুন নেসাকে বিয়ে করেন। রুমি-অনন্যা দম্পতির আরিয়ান নামে একটি ছেলেও রয়েছেন।

মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আজিজুল হক সংবাদমাধ্যমকে আরও বলেন, “রুমির প্রথম স্ত্রী অনন্যা তার বিরুদ্ধে এ মামলা করেছেন। তার অভিযোগ যৌতুক দাবি করে প্রায়ই রুমি তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন।”

উল্লেখ্য দুই বিয়ের পরও আবারো প্রেমে পড়েছেন আরফিন রুমি- এমন গুজব ষড়িয়ে পড়ে বেশ কিছুদিন যাবৎ। প্রেমিকার নাম উল্লেখ না করা হলেও সূত্রটি থেকে বলা হয়, রুমির নতুন প্রেমিকা তার প্রথম স্ত্রী অনন্যার পুরোনো বান্ধবী এবং বর্তমানে তিনি আমেরিকা প্রবাসী! খবরটি এক কান দুই কান করে ছড়িয়ে পড়ে গোটা অনলাইন জগতে।

সূত্রটি আরও জানায়, এই নতুন প্রেমের কারনে রুমি’র দ্বিতীয় স্ত্রী কামরুণ নেসার সঙ্গে বেশ ঝামেলা চলছে এখন।

সচেতন মহলের মতে, আরফিন রুমির আত্ম-অহংকার আর বিকৃত রুচির করুণ পরিণতি আরো ভয়াবহ হতে পারে!

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আরফিন রুমিকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এদিকে অনলাইনে খবরটি প্রকাশের পর ক্রমাগত এ নিয়ে একাধিক পাঠক রুমির এই আচরণের নিন্দা জানিয়েছেন। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলে নিন্দার ঝড়। পাঠকদের এই প্রতিক্রিয়া এবং খামখেয়ালি শিল্পী রুমির ক্রমাগত অন্যায় ও অবিবেচক মানসিকতা নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলো, যা রুমিরই কিছু পূর্ব-ঘনিষ্ঠদের দেওয়া তথ্য—

আরফিন রুমির ক্যারিয়ার শুরু হয় ড্রামার রুমী রহমানের সহকারী হিসেবে। এরপর প্রখ্যাত ড্রামার রুমীর সুরেই তার সলো অ্যালবাম রিলিজের কথা ছিল। কিন্তু গুরু রুমী রহমানকে ডিঙিয়েই একটি নতুন রেকর্ড কোম্পানির সাথে চুক্তি গড়ে আরফিন রুমি। এমন ডিগবাজি দিয়েই ক্যারিয়ারের যাত্রা শুরু করেন তিনি।

তার প্রথম অ্যালবামটি যথারীতি সুপার ফ্লপ হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন দরজায় ঘুরে লেজার ভিশনের কাছে একটি মিক্সড অ্যালবামের কাজ করলে সেটি বাজারে কিছুটা সাফল্য পায়। ততদিনে দুরবিন নামের একটি গানের দলে কণ্ঠশিল্পী শহীদের আশ্রয়ে চলে যান রুমি। কিন্তু যার স্বভাব গুরুজনদের প্রতি অবজ্ঞা করা সে যেন ঠিক হওয়ার নয়। তাই আরফিন রুমি একইভাবে দুরবিন ব্যান্ডের মুখে চুনকালি মাখায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে একটি গান যখন চ্যানেল আই ফিলার হিসেবে প্রচারের উদ্যোগ নেয় তখন। লক্ষ টাকার ভিডিও তৈরির পর চ্যানেলে প্রচার হলে জানা যায় তাদের গানটি হুবহু তামিল গানের নকল।

গান নিয়ে এ ধরনের চৌর্যবৃত্তি আগে থেকেই করে আসছিলেন রুমি। কিন্তু বাংলাদেশে ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফিলার নিয়ে এ ধরনের চুরি সবাইকে লজ্জায় ফেলে। তরুণ মিউজিশিয়ানদের ওপরও কালিমা লেপন করেন রুমি। চ্যানেল আই সেই গানের প্রচার বন্ধ করে দেয় বিতর্কের ভয়ে। সস্তা ও দ্রুত খ্যাতির লোভে যেন ক্রমেই অন্ধ হতে থাকেন আরফিন রুমি। ঘটতে থাকে রুচির বিকৃতি।

কিছুদিনের ভেতরে শোনা যায় লেজার ভিশনের সাথে রুমির চুক্তিভঙ্গের কথা। অর্থাৎ এখানেও ডিগবাজি দিয়ে খানিক বেশি টাকার লোভে সঙ্গীতার কাছে নিজের সলো অ্যালবাম বিক্রি করে দেন। বিভিন্ন স্টেজে যখন তার সমবয়সী শিল্পীরা খানিক সুনাম করছিলেন, যা কিনা রুমিরই হয়তো সুর বা সঙ্গীতে তৈরি। তাতেও আপত্তি ছিল রুমির। একপর্যায়ে রুমির আশ্রয়দাতা শহীদকে নানা প্রলোভন দেখিয়েই রুমি শহীদের দেওয়া অর্থে নিজস্ব স্টুডিও ও গাড়ি ব্যবহার শুরু করেন। যা কিনা শহীদ একাধিক ইন্টারভিউতেও বলেছেন।

শহীদের প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা লগ্নি হয়ে যায় রুমির পেছনে। যে হিসাব আজ পর্যন্ত বুঝিয়ে দেয়নি রুমি তার ত্রাণকর্তা শহীদের কাছে। এরপরই যেন শহীদের সাথে সেই পুরোনো অভ্যাসমতো ডিগবাজি খেলাটা শুরু করেন। দুরবিন ব্যান্ড দলে ভাঙনের সুর বেজে ওঠে। বিভিন্ন জায়গায় নিজের অহংকারসুলভ উচ্চারণ হতবাক করে দেয় সবাইকে। রুমির ভাষ্য ছিল, ‘আমার জন্যই আজ সবাই আলোচিত। আমিই দুরবিনের সবার ক্যারিয়ার গড়ে দিয়েছি। আমি যা বলব তাই মানতে হবে।’

এভাবে দুরবিনের ম্যানেজমেন্টে ভাঙনের সুর বাজলে দুরবিন থেকে বহিষ্কার করা হয় রুমিকে। এর পর পরই নিজের ক্যারিয়ার আর অহংকারে বেসামাল হয়ে পড়েন তিনি। তার ঔদ্ধত্য আচরণ যেন ক্রমেই বাড়তে থাকে। এর ভেতরে তার আরও কিছু তামিল ও হিন্দি নকল সুরও ধরা পড়ে। যা সংগীতমহলে নিন্দিত হয়।

ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে যখন খানিক পরিচিতি বা বিভিন্ন চ্যানেলে লাইভ প্রোগ্রামের ডাক আসা শুরু করে ঠিক তখনই গেল বছরের এ সময়টাতেই রুমি খবরের শিরোনাম হন দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে। না, প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে নয়। আমেরিকায় শো করতে গিয়ে এক ভক্ত কামরুন্নেসা যার কিনা আগেও একটি সংসার ছিল, তেমনই এক মেয়ের সাথে এক সপ্তাহের প্রেমে বিয়ে করে ফেলেন রুমি। এ নিয়ে আমেরিকার আয়োজক তানভীর শাহিনের সাথেও রুমির একটা দূরত্ব তৈরি হয়। রুমির উঠতি ক্যারিয়ারে ক্রমশ ধস নামতে থাকে। দেশে ফিরেই নিজের প্রথম স্ত্রী অনন্যাকে দিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় জোর করে বলানোর চেষ্টা করেন যে তিনি তার স্বামীর দ্বিতীয় বিয়েতে সম্মতি দিয়েছেন।

প্রথম ঘরের সন্তান আরিয়ানের প্রতিও বাবা হিসেবে রুমির দায়িত্বহীনতা যেন প্রকটভাবে চোখে পড়ে। পরবর্তীতে বিভিন্ন আড্ডা-আলাপে রুমির প্রথম স্ত্রী স্বীকার করেন, তাকে ব্ল্যাকমেইল করে বলানো হয় যে তিনি দ্বিতীয় বিয়েতে সম্মতি দিয়েছেন। এমনকি রুমি তার প্রথম স্ত্রীকে এই বলে প্রলোভন দেখায় যে, আমেরিকা প্রবাসী কামরুন্নেসাকে সে বিয়ে করছে মূলত তাদের আমেরিকা স্যাটেল হওয়ার স্বার্থেই। নিজের প্রথম সংসার আমেরিকায় স্থায়ী করার স্বার্থেই নাকি কামরুন্নেসাকে বিয়ে করছেন তিনি। এই বলে এদেশের শোবিজে নির্লজ্জতার চরম উদাহরণ তৈরি করেন আরফিন রুমি।

প্রথম স্ত্রীর বর্তমানেই ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ঢাকায় দ্বিতীয় বিয়ের আসরে দুই স্ত্রী বগলদাবা করে পত্রিকার উদ্দেশ্যে ফটোশুট করে যেন বিনোদন জগতে এক লজ্জার বিকৃত উদাহরণ তৈরি করেন এই নকলবাজ মিউজিশিয়ান। তার সাথে এই সব কাজে সব সময় সহযোগিতা করেন চিত্রপরিচালক মোস্তফা কামাল রাজ ও সিডি চয়েজের কর্ণধারসহ গুটি কয়েকজন। অধিকাংশ শোবিজ-কর্মী রুমির এই দ্বিতীয় বিয়ের ঢাক-ঢোলের অনুষ্ঠান বয়কট করেন। কিন্তু অনেকটা আয়োজক আর একান্ত সহচরের ভূমিকাতেই যেন আবির্ভূত হন মোস্তফা কামাল রাজ। এরপর দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে আমেরিকা পাড়ি দিলেন রুমি। কোনো রকম যোগাযোগ রাখলেন না প্রথম স্ত্রীর সাথে। এমনকি খোঁজ নেননি তার একমাত্র সন্তান আরিয়ানেরও। এদিকে নকলবাজ রুমিকে অনুসরণ করে সুর আর মিউজিক নকলের পথ ধরেই দেশে রুমির এই ঈষত্ জনপ্রিয়তা দখলের চেষ্টা করেন আরও দুই নকলবাজ সুরকার ইমরান ও বেলাল খান। একপর্যায়ে রুমির এই অনুপস্থিতিতে রুমির কাজগুলো একেবারে কম মূল্যে করে দেওয়ার উত্সবে নামেন একই পথের পথিক এই দুজন। রুমি দেশের বাইরে থাকার কারণে পড়শীর সলো অ্যালবামেও রুমির জায়গা হয় অবহেলায়। এ নিয়ে উঠতি গায়িকা পড়শীকেও শাসিয়ে দেন রুমি। একই সাথে তার দুই নকলবাজ অনুসারী বেলাল খান ও ইমরানের বিরুদ্ধে চড়াও হয়ে রুমি ফেসবুকে এক ঔদ্ধত্যপূর্ণ স্ট্যাটাস দেন, ‘দেশে এবার বাপ আসছে তাই পুত্ররা সাবধান।’

উল্লেখ্য, আচরণগতভাবে রুমি তার আরেক গুরু হাবিবের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিলেন। হাবিব তার খ্যাতি পাওয়ার সাথে সাথে যেমন প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীকে ঘরে তুলেছিলেন। কিন্তু এক্ষেত্রে রুমি নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন। আর মিডিয়ায় এ প্রজন্মের তারকাদের এই খামখেয়ালি নিয়ে দেশ বরেণ্য মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেত গত বছরের ইত্তেফাক ঈদ সংখ্যাতেই আরফিন রুমি ও হাবিবদের আচরণ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তারই যেন প্রতিফলন দেখা গেল এই অবক্ষয়ে! এ নিয়ে একটি ট্যাবলয়েড ও অনলাইন দৈনিকে খবরও প্রকাশ হয়। গেল ঈদে রুমি আমেরিকা থাকাকালীন তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহচর মোস্তফা কামাল রাজ ও সিডি চয়েজ নিজ উদ্যোগে রুমির সলো অ্যালবামের বিশাল লঞ্চিং অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, অবশ্য সেখানে ঠাঁই হয়নি তার প্রথম স্ত্রীর। অবাক আর বিস্ময়ে ক্রমশ যেন হতবাক হতে থাকেন রুমির প্রথম স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সকলে। আর এত কিছুর প্রকৃত ফলাফল দিয়েছে যেন মূলত দেশের অগণিত শ্রোতা। রুমির সলো অ্যালবাম বাজারে সুপার ফ্লপ হয়। শুধু তাই নয়, দুর্ব্যবহার ও অসভ্যতা করার দায়ে আয়োজকরা রুমিকে মারধর করে এক মঞ্চ থেকে বের করে দেন। সে খবরও একাধিক মিডিয়ায় প্রকাশ পায়।

মাত্র দুই থেকে তিন বছরের ক্যারিয়ারে ক্রমাগত নোংরামি আর অসভ্যতার বিকৃত উদাহরণই শুধু তৈরি করেছেন আরফিন রুমি। রুমির একসময়ের ঘনিষ্ঠ সহশিল্পী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘এতটা নোংরা মনের আর অহংকারী শিল্পী কমই দেখেছি। অহংকার আর অসদাচরণের তার আজকের এই পরিণতি হয়েছে। ভয় হয়, আবারও কোনো প্রলোভন দেখিয়ে সে তার প্রথম স্ত্রীকে বশ করে ফেলে কি না।’ এদিকে রুমির ঘনিষ্ঠ অডিও প্রকাশক মারফত প্রথম স্ত্রী অনন্যাকে চাপ ও ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে বলে তার প্রথম স্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা জানান। এ ঘটনায় আপসের ব্যাপারে আরফিন রুমির প্রথম স্ত্রী অনন্যা একাধিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটা শর্তেই রুমির সাথে আপস করতে পারি, তা হলো, তাকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী কামরুন্নেসাকে ডিভোর্স দিতে হবে।’

এদিকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী কামরুন্নেসা এবার রুমির সাথে আমেরিকা থেকে দেশে এসে ঈদের আগে এই পরিস্থিতি দেখে হতবাক। তাই তার দ্বিতীয় স্ত্রী দ্রুত বাংলাদেশ ছাড়ার পরিকল্পনা নিচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

এই অপরিনামদর্শী অনৈতিক পথে ধাবমান শিল্পী আর কতো বাজে কর্মকান্ড করবেন সেটাই দেখার বিষয়।

সুত্র, দৈনিক ইত্তেফাক অবলম্বনে, গ্রন্থণা : মানমুর তৈয়ব।

 

 

 

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.