সামান্য কলঙ্কে অসামান্য জয় ও শেখ হাসিনার দায়

সামান্য কলঙ্কে অসামান্য জয় ও শেখ হাসিনার দায়

সৈয়দ জাহিদ হাসান: বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়েছে। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে অনেকগুলো বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যেগুলো হওয়া দরকার ছিল। একটি সম্ভাবনাময় জাতিকে এগিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে অনেক সময়েই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। নেতৃত্ব কঠিন না হলে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। বিশঙ্খলায় নিপতিত জাতি কখনোই সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না। পদে পদে দুর্ভোগ ভোগ করাই হয় এদের ভাগ্যলিখন। বাংলাদেশ নিকট অতীতে বিশৃঙ্খল জাতি ছিল। শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্বে রাষ্ট্রিক, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিশৃঙ্খলা দুরীভূত হয়ে সুশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হতে শুরু করেছে। এটি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য যেমন সুনাম বয়ে আনছে, তেমনি বাংলাদেশিরাও উপভোগ করছেন কাক্সিক্ষত জীবনমান। নোংরা-আবর্জনা বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরে যেমন সুলভ, নোংরামি তেমনি সুলভ বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রায়, চলনে-বলনে, আয়-উপার্জনে। আমাদের জীবনে ও পরিবেশে এত নোংরামি কি করে প্রবেশ করেছে সেই ইতর-ইতিহাসের পটভূমি ব্যাখ্যা করতে গেলে অনেক কথা বলা দরকার। এই মুহূর্তে এত কথা না বলে শুধু এটুকু বলতে চাই বাংলাদেশ অন্ধকার ভেদ করে আলোর দিকে যাত্রা শুরু করেছে। আলোক পিয়াসী বাংলাদেশ শুদ্ধ হোক, সমৃদ্ধিশালী হোক, খ্রিস্টীয় নতুন বছরে এটাই হোক দেশপ্রেমিক বাঙালির প্রার্থনা।

শুরুতেই বলছিলাম ‘কঠিন নেতৃত্বের’ কথা। ‘কঠিন’ কথার সঙ্গে কলঙ্ক কথাটিও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিছু কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটেছে। যদিও দেশ-বিদেশের নির্বাচন-পর্যবেক্ষকগণ সকলেই সমস্বরে ‘অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ’ নির্বাচনের ছাড়পত্র দিয়েছেন। তবুও বলব নির্বাচন সর্বাংশে অবাধ, সুষ্ঠু হয়নি। নির্বাচনের দিন প্রার্থীদের উপর হামলা, পোলিং এজেন্ট মারধর করে ভোট কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দেওয়া, নির্বাচনপূর্ব সামান্য সহিংসতা একটু হলেও নির্বাচনের গায়ে কলঙ্ক লেপন করেছে। এই কলঙ্কটুকু না থাকলে এবারের নির্বাচন একটি অসামান্য নির্বাচন হতে পারতো। উদাহরণ হতে পারতো দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু ভোট সম্পন্ন করার।

মানুষ এমনিতেই শেখ হাসিনাকে ভোট দেওয়ার জন্য উদ্গ্রীব ছিলেন। বাংলাদেশে যে কিছু দেশবিরোধী কুলাঙ্গার নেই তা নয়, তবে তাদের অবস্থা এখন জলহীন মাছের মতো। বদ্ধ জলাশয়ের জল শুকাতে শুরু করলে মীনসন্তানগণ যেমন দুশ্চিন্তায় ছটফট করে, তেমনি করেই এখন বাংলাদেশবিরোধীরা আতঙ্কে ছটফট করছে। এই মুহূর্তে ছটফটানি করা ছাড়া তাদের আর কোনো গতি নেই।
একটি বিষয় মনে রাখা দরকার, ‘বিজয়’ খুবই চঞ্চল শব্দ। সে বেশিদিন এক জায়গায় স্থির থাকতে চায় না। আওয়ামী লীগের মতো জনপ্রিয় দলও ’৭৫-পরবর্তী সময়ে ২১ বছর গর্তে পড়েছিল। এবার আওয়ামী লীগ বিস্ময়কর বিজয় পেয়ে আবেগে অন্ধ হলে সামনে বিপদে পড়বে। ইতোমধ্যেই সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে পরাজিতরা গণঅভ্যুত্থানের গুঞ্জন তুলছে। গণঅভ্যুত্থানের মতো ঘটনা বাংলাদেশে যে কোনো সময়েই সংঘটিত হতে পারে। পৃথিবীর অনেক দেশই আকস্মিকভাবে গণঅভ্যুত্থানের মুখোমুখি হয়েছে। তবে গণঅভ্যুত্থান এমনি এমনি হবে না, হবে নীতি বিসর্জন দিয়ে দুর্নীতির পথে হাঁটলে। বড় বিজয় শেখ হাসিনার জন্য বড় দুশ্চিন্তারও কারণ হলো। দলীয় নেতাকর্মীদের এবার দলীয় শৃঙ্খলে বব্ধ রাখাই আগামী দিনে শেখ হাসিনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে অনেকে মনে করছেন। ইতঃপূর্বে কেউ কেউ শেখ হাসিনার সরকারকে ‘স্বৈরশাসক’ বলার চেষ্টা করেছেন, পত্রপত্রিকায় সেসব আমরা লক্ষ্য করেছি। দেশের স্বার্থে শেখ হাসিনার ‘কর্তৃত্ববাদী আচরণ’ যেন কিছুতেই ‘স্বৈরতান্ত্রিক আচরণে’ রূপ না নেয়, সে বিষয়ে অবশ্যই দৃষ্টি দিতে হবে। বাংলাদেশে এখন আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক দল নেই, এটাকে যারা ভালো চোখে দেখে দেখুক, আমি দেখি না।
এক দলীয় শাসন একটি দেশের জন্য দীর্ঘদিন শুভকর নয়। এখন যদিও দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রচলিত রয়েছে বলে মনে করা হয়, আসলেই কি ব্যাপারটা তাই? দেশে দৃশ্যত বহুদল থাকলেও দল মূলত একটাই, সেটা আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের এখন দেশ গড়ার পাশাপাশি এমন একটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল গড়ে তোলা দরকার, যার চরিত্র হবে প্রগতিশীল, উদার ও উন্নয়নমুখী। এই কাজটি আওয়ামী লীগকেই করে দিতে হবে। আওয়ামী লীগ যত কথাই বলুক, যত উন্নয়নই করুক, বাহাত্তরের সংবিধান কার্যকর করাই হবে আওয়ামী লীগের সর্বাপেক্ষা অর্জন। এবারের নির্বাচনের সামান্য কলঙ্ক, আগামী দিনের অবিস্মরণীয় কার্যকলাপের মাধ্যমে ঢাকা পড়ে যাক, নতুন সরকারের কাছে এটাই চাই। ক্ষমতা মানুষকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে, অপরিমাণ ক্ষমতা মানুষকে করে সীমাহীন দুর্নীতিবাজ, এ কথা ভুল প্রমাণ করে ইতিহাসের পাতায় নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করার সুযোগ এসেছে শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবেন। আমরা চাই তিনি এই সুযোগটি সঠিকভাবে কাজে লাগাবেন।

লেখক : কবি ও কথাশিল্পী

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.