ক্যালগেরি বাংলাদেশ এসোসিয়েশন

ক্যালগেরি বাংলাদেশ এসোসিয়েশন

 

ক্যালগেরি বাংলাদেশ-কানাডা এসোসিয়েশন’- একটি সার্থক এবং সফল সংগঠনের নাম। বিভিন্ন সময়ে তাদের গৃহিত কর্মকান্ড ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। তাদের রয়েছে একটি নিজস্ব ভবন। যদ্দুর জানা যায়, প্রবাসে আর কোনো বাঙ্গালী এসোসিয়েশনের এমন নিজস্ব ভবন নেই। কেমন চলছে এখন ক্যারগেরির বাংলাদেশ এসোসিয়েশন? কিভাবেই বা গড়ে উঠলো এমন একটি চমৎকার সমৃদ্ধ সংগঠন? এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে সময়ের কথা’র মুখোমুখি হয়েছিলেন সংগঠনটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ রফিক চৌধুরী। পাঠক, আসুন তার মুখ থেকেই শোনা যাক সংঘঠনটির আদ্যোপান্ত…..

রফিক

বাংলাদেশ-কানাডা এসোসিয়েশন, ক্যালগেরি’র জন্ম হয় মূলত স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে। কিছু পাইওনি‌য়ার আছেন যারা সত্তুরের আগে ক্যালগেরিকতে এসেছিলেন। তখন এ‌খানে বাঙ্গালী পরিবারের সংখ্যা একেবারেই কম ছিলো। হয়তো হাতে গোনা সাত আটটা পরিবার হবে। সে সময় তারা একটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন একটি এসোসিয়েশন গড়ে তোলার। তাদের মধ্যে ক’জন ভোকালও ছিলেন। যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দেশের বাইরে থেকে দেশকে  সামর্থ অনুযায়ী সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। আসলে সে‌খানেই গোড়া পত্তন হয় বাংলাদেশ সেন্টারের। এটা উনসত্তুর দিকের কথা।

নিজস্ব ভবনে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন.....

নিজস্ব ভবনে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন…..

মূলত বাহাত্তুরের পর থেকে ক্যালগেরিতে বাঙ্গালীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর সাথে সাথে বাংলাদে‍শ এসোসিয়েশনের কার্যক্রমও বাড়তে থাকে। এ সময় যারা উদ্যোক্তা ছিলেন তাদের মধ্যে আনোয়ারুল হক, ড. মিজানুর রহমানের নাম এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি। যদিও সেদিনের অনেকেই এখন ক্যালগেররিতে নেই। আমেরিকা চলে গেছেন কেউ কেউ।

বাহাত্তুরের পর থেকে ক্যালগেরিতে বাঙ্গালীদের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও, গতি ছিলো একেবারে শ্লথ। আসলে মন্ট্রিয়ল এবং টরেন্টো থেকে বিশাল দূরত্বের কারণে সে সময় অনেকেই ক্যালগেরির নাম পর্যন্ত জানতেন না। সে সময় যারা কানাডায় আসতেন তাদের প্রায় সকলেই থেকে যেতেন মন্ট্রিয়ল ও টরেন্টোতে। আর যারা ক্যালগেরিকে ঠান্ডার স্থান বলে জানতেন তারা তো ঠান্ডার ভয়ে এ পথই মাড়াতেন না।

এখানে বাঙ্গালী পপুলেশন গতি পায় নব্বুইযের পর থেকে। ক্যালগেরি সিটিও তখন বর্ধিত হতে থাকে। তখন মন্ট্রিয়ল ও টরেন্টো থেকেও বাঙ্গালীরা এ সিটিতে এসে বাসা বাঁধতে শুরু করেন।

বাংলাদেশ-কানাডা এসোসিয়েশন মূলত ফরমাল সেপে এসেছে দু’হাজারের পর থেকে। এর আগে আপস এন্ড ডাউন অবস্থায় ছিলো। এসোসিয়েশনের কার্যক্রম যখন গতিপ্রাপ্ত হয় তখন থেকেই আমাদের স্বপ্ন ছিলো, একটি নিজস্ব ভবন গড়ে তোলার। ক্যালগেরিতে নিজস্ব ভবন অনেক কমিউনিটিরই রয়েছে। যেমন ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপিনো এসোসিয়েশনের রয়েছে নিজস্ব ভবন। কিন্তু বাংলাদেশীদের ছিলো না‌।

একটি নিজস্ব ভবনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সব থেকে বড় অন্তরায় হচ্ছে, ফান্ড কালেকশন।

আগেও বলেছি, বাংলাদেশ সেন্টারের স্বপ্ন আসলে এখানকার বাঙ্গালীদের অনেকদিনের স্বপ্ন। যদিও আজ সেটা বাস্তবে রূপ পেয়েছে,  কিন্তু এর পেছনে রয়েছে অনেকের অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা, ঐকান্তিক পরিশ্রম এবং কমিউনিটির সকলের আন্তরিক সহযোগিতা।

আজ থেকে আট নয় ব‌ছর, বছরটা আমার ঠিক মনে নেই। তৎকালীন বাংলাদেশ-কানাডা এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ড জামিল সাহেবের বাসায় একটি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়, তখন আমি নিজেও সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম। আমরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম বিশ-বাইশজন সদস্য। সে‌খানে ভবন সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করা হয়, এবং অনস্পট কমিটমেন্ট ছিলো পঁয়ত্রিশ হাজার ডলার।

সে সময় পয়ত্রিশ হাজার ডরারের কথা আমরা চিন্তাও করতে পারিনি। যা হোক যা হোক পরবর্তীতে নানা কারণে সে কমিটি এগুতে পারেনি। যার ফলে কমিটমেন্টের টাকাও আর তোলা হয়নি। এরপর জামিল সাহেব প্রেসিডেন্ট পদ ছেড়ে দিলেন। নতুন কমিটির নতুন প্রেসিডেন্ট হলেন খন্দকার আলম। তিনি ভবনের ব্যাপারটিকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করলেন। মূলত তার একটা বড় কৃতিত্ব আছে আজকের এই বাংলাদেশ-কানাডা এসোসিযেশনের নিজস্ব ভবন নির্মানের পেছনে।

ভবন নির্মাণ বিষয়ক আগের কমিটিকে বাতিল করে নতুন করে এসোসিয়ে‌মনের ব্যানারে কমিটি গঠন করা হয়। আলম ভাইকে আমরা সকলেই সহযোগিতা করার জন্য এগিযে আসি। তবে সব চাইতে বড় ব্যাপার ছিলো, সে সময় ক্যালগেরিতে একটা অর্থনৈতিক মন্দা যাচ্ছিলো, কিন্তু এর মাঝেও কমিউনিটির লোকজন প্রায়  এক লাখ পঁচিশ হাজার ডলার দিয়েছিলো ভবন তৈরীর জন্য।। অবশ্য টাকাটা খুব সহজে আসেনি। এ জন্য কমিটিকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। দ্বারে দ্বারে যেতে হয়েছে। এক সময় আমরা আলবার্টা গভর্ণমেন্টের সহযোগিতা চাই। তবে আলবার্টা গভর্ণমেন্টের নিয়ম হচ্ছে, আগে আমাদের নিজস্ব একটা ফান্ড শো করতে হবে, তারই প্রেক্ষিতে তারা পরে সাহায্য করেবে। যা হোক, আমরা এক লাখ পঁচিশ হাজার ডলার তুলতে সমর্থ হলে গভর্ণমেন্ট আমাদের প্রদান করে অফেরতযোগ্য আরো এক লাখ পঁচিশ হাজার টাকা। মূলত এর পরেই আমরা এগুতে থাকি একটা ভবন কেনার পথে। এক সময় অনেক দেখাশোনা করে এই ভনটাই পছন্দ হয়। এর দাম ধরা হয় সাড়ে তিন লাখ ডলার। তারপরও আমরা সেটা কেনার সিদ্ধান্ত নেই। যদিও আমাদের কাছে যে অর্থ ছিলো তা দ্বারা এ এ কমপ্লেক্সে ভবন কেনা সম্ভব ছিলোনা। তবে কমপ্লেক্সের মালিক এগিয়ে আসেন আমাদের সহযোগিতায়। তার সাথে আমাদের একটা চুক্তি হয়। সেই মোতাবেক আমরা তাকে আড়াইলাখ  টাকা দেই, এবং বাকি এক লাখ টাকা বিনাসুদে তিন বছরের মধ্যে পরিশোধের কমিটমেন্ট করা হয়। বস্তুত এর ফলেই বাংলাদেশ-কানাডা সেন্টারের এই ভবনটি ক্রয় করা সম্ভব হয়। এ ছাড়া ভবন ক্রয়ের পর এর ভেতোরের কাজ-কর্ম করতেও আরো প্রায় পঁচাত্তর হাজার টাকা খরচ হয়। এরপরও আলম ভাই থেমে থাকেননি। পরবর্তীতে তিনি গভর্ণমেন্টকে ম্যানেজ করে আরো দুটো ফান্ড আনেন। এর একটা ছিলো ডেভেলপমেন্টের জন্য বিরাশি হাজার ডরার, এবং আর একটা সাঁইত্রশ হাজার পাঁচশত ডলার।

আজ আমাদের জন্য স্বস্থিকর ব্যাপারটি হচ্ছে, ভবনের লোনকৃত অর্থ আমরা পরিশোধ করতে পেরেছি। যদিও অন্যখাতে এখনো আমাদের হাজার বিশেক ডরার লোন আছে। আমরা আশা করি এ বছরের মধ্যেই সেটাও শোধ করে দেবো।

বর্তমানে এসোসিয়েশনের কার্যক্রম বেশ সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলছে। এসোসিয়েশন এবং কমিউনিটির কল্যাণে আমরা গ্রহণ করছি নানা কর্মকান্ড। জেনে খুশী হবেন যে, আমাদের এখানে নিজস্ব তত্বাবধানে চলছে একটি বাংলা এবং একটি অ্যারাবিক স্কুল। এ ছাড়া কিছু সংগঠন ভাড়া নিয়ে এখানে তাদের আর্ট, নাচ-গানের স্কুলও চালাচ্ছে। রয়েছে একটি কোচিং সেন্টার। তারাও সপ্তাহে দু’দিন ভাড়া নিয়ে চালায়।

এ ছাড়া সম্প্রতি আমরা একটা লা্ইব্রেরী গড়ে তুলেছি। সম্প্রতি যার উদ্বোধন করেছেন প্রখ্যাত কবি মহাদেব সাহা।

আমরা যারা আজ এই সংগঠনের সাথে জড়িত, তারা সবাই মূলত ভলান্টিয়ার। ফুলটাইম জব করে এসে এখানে সময় দিয়ে থাকি। এটা আমরা করি আসরে হৃদয়ের টানে। আমরা চাই এই প্রবাসে আমাদের দেশীয় সাহিত্য-কৃষ্টি, কালচারের যোগ্য প্রতিনিধিত্ব গড়ে তুলতে। এ দেশীয় মূল ধারার সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে নিজেদের কৃষ্টি-কালচারকে বিকশিত করতে। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্মরণীয় দিবসগুলো উপলক্ষ্যে আমরা নানা আয়োজন করে থাকি। ব্যাপক পরিসরে কিছুদিন আগে আমাদের আয়োজিত পিঠা উৎসব হয়ে গেলো।

সামনের দিনগুলোতে আমাদের আরো সমৃদ্ধ কিছু করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে।

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.