‍‍‍কবিতাঃ একুশ টা বছর

‍‍‍কবিতাঃ একুশ টা বছর

কোন এক চিঠির পাতায় লেখা ছিলো, ‘ভালো থাকবো, ভান হলেও।’
একুশ টা বছর অনেক সময়
আজ লুকিয়ে রাখা  আয়নার দিকে কেন যানি খুব তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে
আজ আয়নার দিকে তাকিয়ে আছি আনমনে নিজের দিকে আর ভাবছি  কোথাও যানি রয়ে গেছে সেই কথাটি- ‘ভালো থাকবো, ভান হলেও’।

শিউলি ফুলের গন্ধ যে পথে ছিলো সেই পথটা আজ বড্ড অলস হয়ে গেছে ,  সে পথ এখন ব্যস্ত ভীষণ।
দূরে কোথাও আর যেতে ইচ্ছে করে না
যেখানে আগে সূর্য ডুবতো
এখন আর সেই  আকাশটাই আর নেই।

একুশ টা বছর অনেক সময় অনেক
কত আকাশে লুকোচুরি হলো
কত পাখি সেই আকাশে হারিয়ে গেলো,
সেসব খবর আজ আর কেউ রাখে না,
একটা পাখি আর একটা খাঁচা ছাড়া।
তখন খুব দস্যি ছিলাম  চোখে কাজল দিতাম না হঠাৎ করে কখনো শখ করে চোখে কাজল দিলেও  কাজল লেপ্টে যেতো, লিপস্টিকের রঙটা যেন বেপরোয়া, ঠোঁটে ঠিক  ছাড়িয়ে যেতো বা খেয়ে ফেলতাম একেবারেই 
টিপটাও দস্যি ভীষণ, রোজ বাঁকাবেই

তবুও আশা ছিল আমার  নিজের একটা মানুষ থাকবে বুকের ভেতর।

আজো সেই মানুষটাকে কল্পনা করি ছবির মতন- চেহারা নেই, আদল আছে।

তখন থাকতো জোনাক জ্বলা তারার সন্ধ্যা,
কুপির আলোর আগুনের ধারা
বুকের ভেতর মেঘের মত অনেক  ব্যথা ,
ধরা যায় না, পড়া যায় না, সেই  ব্যথার’ আভাস।
তখন কেবল কান্না পেতো,
একটা নদী উথাল পাথাল ঢেউ তুলতো বুকে যখন তখন
হঠাৎ মনে হলো সেই চিঠিটার কথা  , ‘ভালো থাকবো, ভান হলেও’।

আজ ভান হলেও ভালো আছি, এই শহরে, কোলাহলে ভীড়ের ভেতর, কে কার চোখে চোখ আর রাখে ?
কেউ রাখে না। কেউ দেখে না কার চোখে কী রোজ জমেছে।
হাতের রেখায় কমছে আয়ু,চোখেরও নাকি  আয়ু থাকে, বুঝতে কারো দায় পড়েনি!
তার হিসেব নেয় না কেউ আর  ব্যস্ত যে আজ  সবাই।

একুশ টা  বছর অনেক সময়।
কুপি জ্বালা সন্ধ্যা, বিকেল।
আজ আর কোনো চিঠি আসে না
বুকে বা পাশে ধুকপুকানি আর বাড়ে না
লুকিয়ে আর  মায়ের শাড়ি পরা হয় না
নিজের একটা মানুষ আর থাকে না। কেবল নিজেরো না  ।
সেই মানুষটার সবটা জুড়ে মায়া থাকে না , দুপুর রোদে পুকুর জলে ছায়ার মতন আর কেউ কখনো থাকে না ।

মানুষও এখন মানুষ চিনতে পারে না
তবে  ঠিক রোজ মিলে যায়
কেনা বেচায় ব্যাস্ত সবাই
যে যার মতো দামে কেনে।
নানান রঙের, ঢঙের মানুষ।
বাহিরের রুপ গুনতে ব্যস্ত সবাই
ভিতরের মানুষকে কেউ নেয়না খোঁজ 
যে যার মতো দামে বিকোয়।

আজ নিজের একটা মানুষ থাকতে না বয়েই গেছে! একার মানুষ আর খুঁজি না

অসুখ হলেও  অপেক্ষায় আর কেউ থাকে না, এখন সবাই ওষুধ গেলে।
সবাই বলে ওষুধে যদি অসুখ সারে তবে কেন সবাই এমন একটা মানুষ খোঁজে

কেউ জানে না গভীর রাতে কান্না এলে
অভিমানের ব্যথায় কাতর বুকের গহীনে,
ফিসফিসিয়ে জানিয়ে দেয়, কেউ যে কারো না
এই অসুখে নিজের একটা মানুষ থাকা আজ শুধুই কল্পনা ছাড়া আর কিছুই না
এখন সবাই ভালো থাকে, কারো আর কাউকে লাগে না সবাই আজ ব্যস্ত এই শহরে
আজ ভালো থাকতেও যেন আর ভান লাগে না।
একুশ টা  বছর অনেক সময়, অনেক
আমার তবু কিছুই ভাল্লাগে না
না দুপুর-রাত্রি, না সন্ধ্যা আকাশ- সত্যি আর কিছুই  ভাল্লাগে না …..

অর্পিতা ঐশ্বর্য

কামাল কাছনা , রংপুর ।


সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.