“কাকতাড়ুয়া” – ভৌতিক গল্প

“কাকতাড়ুয়া” – ভৌতিক গল্প

Kobita_thereport24বেশ কয়েকদিনের ছুটি পেয়েছি। ঈদের ছুটি। বেসরকারি চাকুরির জাঁতাকলে পড়ে জীবন পুরোটা তেজপাতা হয়ে গেল। সকালের সূর্যোদয় আর রাতের ঘনকালো অন্ধকার ছাড়া পুরো সপ্তাহে আর কোনকিছুই চোখে পড়েনা। ঢাকাগামী গোধূলী আজ দেড়ঘন্ঠা দেরি করেছে। রাত বারোটা। ঢাকা থেকে গ্রামে পৌঁছুতে পৌছুঁতে কম হলেও দেড়টা-দুটো বাঁজবেই। হুট করে বাড়ি যাচ্ছি, জানিয়ে গেলে অনেক ধরনের উৎটকো সমস্যা। এই যেমন, একটু পর পর বাবা ফোন দিবে,  কোথায় আছি, কি করছি জানতে চাইবে ?অনেকদিন পর বাড়ি ফিরবো বলে মা আবার হাজার রকমের পিঠা বানাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়বে। ফলাফল, ছুটি শেষে শহরে ফিরে আসতে কষ্ট হবে। তার চেয়ে বরং না জানিয়ে চলে আসছি, দু’একদিন থাকবো তারপর ছুটি শেষে ঠিক ঠিক চলে যাবো!

বর্তমানে প্রধান সমস্যা হল, বাজার থেকে বাড়ি ফিরবো কি করে ?
দেড়টা পর্যন্ত বাজার খোলা থাকে এরপর ধীরে ধীরে সব বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে, এক স্টেশন আগেই বাস থেকে নেমে যেতে হবে। বাস থেকে নেমে উত্তরের ধানীক্ষেতটা ধরে দু-তিন মাইল জায়গা হাঁটতে হবে। বাবাকে এই মাঝরাতে ফোন দেয়া ঠিক হবে কিনা একবার ভাবলাম। নাহ, প্রয়োজন নেই বুড়ো মানুষটাকে এত রাত্রে ঘুম থেকে জাগানোর।

মাঝে মাঝে বাস থামছে লোক নামছে। ওঠার কোন প্যাসেঞ্জার নেই। এতো রাতে কে উঠবে। যারা আছে তার সবাই বাস থেকে নেমে বাড়ি যাচ্ছে। আমি ঘড়ির দিকে তাকাই। ঠিক দেড়টা নাগাদ বিরাণভূমির সামনে এসে বাস থামলো। দেখলাম তখন আমরা বাসে মাত্র সাতজন যাত্রী। আমিই একমাত্র এই নির্জন জায়গায় নামলাম। উপায় নাই। আর কেউ নামলো না। আমাকে নামিয়ে দিয়ে বাস ফুস শব্দ করে চলে গেলো। চোখে অন্ধকার দেখছি। চারদিক ঘুট ঘুটে অন্ধকার। একবারে শুনসান। ধারে কাছে কেউ নেই। একটু আলোর চিহ্ন পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি না। বাসের পেছনের লাল লাইটটা ক্রমশঃ অন্ধকারে মুখ ঢাকা দিলো।
স্থানুর মতো কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। মনটা খারাপ হয়ে গেলো।

পকেট থেকে তের মেগাপিস্কেলের ফ্ল্যাসওয়ালা মোবাইলটা বের করলাম। হায় কপাল লো ব্যাটারি দেখিয়ে বন্ধ হয়ে গেল। আকাশের দিকে তাকালাম। আকাশটা কেমন লাল। এতো অন্ধকার হাত পনেরো দুরের রাস্তাটুকু খালি দেখতে পাচ্ছি তারপর ঘুটঘুটে অন্ধকার সব কিছু গ্রাস করে নিয়েছে। জোনাকী পোকাগুলোর ইতি উতি আলোটুকু পর্যন্ত নেই। ঝিঁঝিঁপোঁকাগুলো অনবরত ডেকে চলেছে । ভীষণ বিরক্ত লাগলো। ভাবলাম একবার সামনের বাজারেই পুরো রাতটা কাটিয়ে দিই। ভোরসকালে গাঁয়ের লোকেরা আমায় ওভাবে পড়ে থাকতে দেখে আবার কি ভাববে। তাছাড়া এতোরাতে বাজারেও কেউ জেগে থাকে না। বুঝলাম আজ কপালে আমার অশেষ দুর্গতি। যদি এখান থেকে একটা রিক্সাও থাকতো তবে বিশ টাকার ভাড়া দেড়শটাকা দিয়ে বাড়ি চলে যেতাম। খুব তাড়াতাড়ি হাঁটলেও আমার আড়াই ঘন্টা লাগবে এই অভিশপ্ত রাস্তাটুকু পার হতে। যতই আমি গ্রামের ছেলে হই। আজ প্রায় দশ বছর গ্রামের বাইরে। বছরে একবার কিংবা দু’বার আসি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মনের সঙ্গে যুদ্ধ করলাম। পকেট থেকে সিগারেট বার করে ধরালাম। পকেটে টর্চ নেই তবে ছাতাটা আছে। মা বার বার বলতেন, শীতের কাঁথা আর বর্ষার ছাতা সবসময় সঙ্গে রাখবি। দেখবি পথে ঘাটে কখনো অসুবিধে হবে না।

আলো বলতে , লাইটারের পেছনে ছোট্ট লাইট , আর মোবাইলের টর্চ। ভেবে কোন লাভ নেই। হাঁটতে যখন হবেই এখানে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। হাতে লাইটার আর ছাতা। শুরু করলাম হাঁটা। তিন কিলোমিটার ফাঁকা মাঠ জনবসতি শূন্য নিশুত পুরি।

ভাবতেই বুকের ভেতরটা হিম হয়ে গেলো। কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা,  কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ভাবছি।

করিম মিঞ্চার পরিত্যক্ত ভিটে। এ ভিটে নিয়ে গ্রামে অনেক লোকের অনেক ককথা প্রচলিত আছে। সন্ধ্যে হলেই এ পথ কেউ মাড়াতে সাহস করেনা। বাঁশবাগানের ভেতর দিয়ে হাঁটছি। সামান্য হাওয়া দিচ্ছে। বাঁশ গাছ গুলো নড়ছে। ক্যাঁচর ক্যাঁচর একটা আওয়াজ। সঙ্গে সঙ্গে সব দোয়া-দূরুদ পড়া আরম্ভ করলাম। আকাশের দিকে তাকালাম। মুখটা কেমন ভার ভার , বুঝলাম বাড়ি পৌঁছুবার আগে ঝড় উঠতে পারে। হেরে গলায় গান গাওয়া শুরু করলাম , যতো তাল দিয়েই গান গাইছি না কেন ম্লান লাগছে। চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ইংরেজিতে বে – সুরে গান গাইতে আরম্ভ করলাম। কোন গানই পুরো গাইতে পারি না। সব কেমন যেন ছোট ছোট হয়ে যাচ্ছে। তিতিক্ষার শেষ। করিম মিঞার ভিটে পাড় হলাম। এবার চাঁনপুকুর। এ পুকুর নিয়ে শোনা ঘটনাগুলো চোখের সামনে ভাসমান হতে লাগল। হঠাৎ, কালো রঙের একটা কুকুর পাশ কাটানোর জন্য উতলা হয়ে গেল। নিজের ভবিষ্যৎ পরিণতি বুঝতে আর বাকি রইলোনা। দ্রুত পা চালানোর চেষ্টা করছি কিন্তু তবুও কেন যানি পথের দূরুত্বটা অনেক মনে হচ্ছে। মা-দাদীর কাছে শুনেছিলাম, মাঝরাত্তিরে নাকি পুকুরের পানি ফুঁড়ে একদল মানুষ বের হয়ে আসে। কাফনের কাপড় পরা লাশ কাঁধে পুরো পুকুর প্রদক্ষিণ করে। ফজরের আযানের আগে আবার নাকি বাতাসে মিলিয়ে যায়। গাঁয়ের অনেকেই ব্যাপারটা চাক্ষুষ দেখেনি তবে পূর্বসূরি অনুসারে শুনে শুনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।

শরীরে হালকা কাঁপুনি অনুভব করলাম।
গ্রামের ঘরে ছয়টা-সাতটা মানে খেয়েদেয়ে ঘুমবার সময় হয়ে গেছে। এখন রাত দুইটা নাগাদ হবে। এখনো প্রায় আধা কিলোমিটার ! মাঠের শেষ প্রান্তে একটা হাল্কা রেখা দেখা যাচ্ছে। আলোর চিহ্নমাত্র নেই। কুয়াশামতন একটা জিনিষ বাতাসে ভর করে আমার দিকে ভেসে আসছে। পিলে চমকে উঠার মত অবস্থা। মনে মনে রাতের প্রতি বিতৃষ্ণা আসলো। আলোই ভালো। রাত্রিবেলার এই অদ্ভুত ভয়ংকর জিনিষ থেকে তো অন্তত দিনের বেলাতে বাঁচা যায়। এই এতোবড়ো ফাঁকা মাঠে দু – তিনটে বট অশ্বত্থ গাছ ছাড়া আর কিছু নেই। গলা ছেড়ে আবার গান ধরলাম।

চাঁনপুকুর ছেড়ে কিছুটা যাওয়ার পরই দেখলাম হাওয়ার গতিবেগ বাড়লো। মাটিতে ধুপধুপ শব্দ হচ্ছে। একদল লোক মনে হল জীবন বাঁচানোর জন্য দৌঁড়ে পালাচ্ছে।
একটা শোঁ শোঁ আওয়াজ। সঙ্গে বিদ্যুতের ঝিলিক। মেঘের কড় কড় সেই আল্ট্রাভায়োনিক তরঙ্গ। বুকের ভেতরে কাঁপন ধরালো। হায় এ কি করলাম , এতো জীবন হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়া। দু ’ এক ফোঁটা বৃষ্টি গায়ে লাগলো। ছাতাটা শক্ত করে ধরলাম। তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলাম, কে শোনে কার কথা। বুকের কাঁপন বেরে গেলো। একটা দমকা হাওয়ায় ধানীক্ষেতে আছাড় খেয়ে পরলাম। কাঁদাপানিতে পড়ে লেজে-গোবড়ে অবস্থা। তাড়াতাড়ি বাচ্চা মোবাইল (নোকিয়া ১৭০০ সাইজের মোবাইল) জ্বালিয়ে দেখলাম ঠিক আছি কিনা। না বহাল তবিয়েতেই আছি। গা – হাত – পা ঝেড়ে ঝুড়ে উঠে দাঁড়ালাম। বৃষ্টির বেগটা বাড়ল। কেউ যেনো আমাকে ঢিল ছুঁড়ে মারছে। ছাতা খুললাম। হাওয়ার চোটে দু ’ তিনবার ছাতা উল্টে গেলো , তাকে সোজা করতে বেশ সময় লাগলো। নিজের ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছে। কেনো মরতে এই মাঝরাতে এলাম। তার থেকে কাল রাতের ট্রেনে এলেই ভালো হতো। বৃষ্টির বেগ আরো
বেড়ে গেলো। প্রাণ পণে ছুটছি। সামনে একটা অশ্বথ গাছ দেখতে পাচ্ছি।

উসাইন বোল্ট তুমি কি ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করেছো , এই মুহূর্তে তুমি আমার সঙ্গে দৌড়লে হলফ করে বলতে পারি , তুমি নিশ্চই আমার পেছনে থাকতে। ভিঁজে স্নান করে গেছি। অশ্বথ গাছের তলায় এসে কুত্তার মতো এক হাত জিভ বের করে পাগলা কুকুরের মত হাঁপাতে আরম্ভ করলাম। বিড়ি খাওয়া দম এতোটা দৌড়তে পেরেছে বাবার ভাগ্য ভালো। অশ্বথগাছের তলায় একটা মোটা সোঁটা শেকড়ে একটু বসলাম। অঝোড়ে বৃষ্টি হয়ে চলেছে। পেছনদিকে একটা পচাঁ মাইটাল ছিলো খেয়াল করিনি। বেশি উঁবু হয়ে বসলেই সোজা পচাঁ মাইলে গিয়ে পড়তাম। পনেরোটা লাক্স কিংবা লাইফ-বয় দিয়ে গোসল করালেও এ গন্ধ দূর হতোনা। ভাগ্য ভালো। সামনের রাস্তাটায় ধোঁয়ার মতো ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। তেমনি হাওয়া সঙ্গে বিদ্যুতের চমক আর মেঘের গর্জন। মাথার ওপর টপ টপ করে জল পরতে শুরু করলো , বুঝলাম গাছের পাতা বেয়ে জল পরছে। ছাতা খুলে গুঁটি-সুটি মেরে বসলাম। শীত শীত করছে। সঙ্গে সঙ্গে সিগারেটের কথা মনে পরে গেলো। শরীর থেকে ভেঁজা কাঁদামাটির একটা সোদা গন্ধও আমার তালগাছওয়ালা নাঁক এড়ালোনা।

মেঘের এফোঁড়-এফোঁড় করে বিভৎস একটা বিদ্যুৎ চমকালো সঙ্গে সঙ্গে বুক হিম করা মেঘের গর্জন। কিছুটা দূরে সামনের ঝোপটায় চোখ গেলো। স্পষ্ট দেখতে পেলাম। একজন ভদ্রমহিলা এক হাত লম্বা ঘোমটা মাথায় দিয়ে দাঁড়িয়ে। ধবধবে সাদা কাপড় পরহিত। আমি যেখানে বসে আছি। সেখান থেকে ওই ঝোপটার দূরত্ব খুব বেশি হলে বিশ থেকে পঁচিশ গজ দূরে। এতো রাতে ভদ্রমহিলা ! আমি খুব ভালো করে জানি। খুব কম করে এই সামনের আধা কিলোমিটারের মধ্যে কোন বসতি নেই। মাঠের পর মাঠ খালি ধানীক্ষেত। বুকের ভেতরটা মৃদু কম্পন অনুভব করলাম। গলা টিপে কিংবা রক্ত চেঁটে যদি আমাকে এই মাঝরাতে মেরেও ফেলে, কাল সকালের আগে কেউ টের পাবে না। বিদ্যুৎ চমকেই চলেছে আর আমার চোখ ইচ্ছে না করলেও বার বার ওদিকে চলে যাচ্ছে। হ্যাঁ বিদ্যুতের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ভদ্রমহিলা মাথা নীচু করে বসে আছেন। কতোক্ষণ বসে ছিলাম জানি না। বৃষ্টি থামার কোন লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না। মেঘের ওপর খুব রাগ হচ্ছিল। সময় পেলি না আর , বাড়ি পৌঁছবার পর যতখুশি হতে পারতিস, কে বারণ করতে যেতো। শুনেছি লোহা কাছে থাকলে ভূতে ধরে না। লোহা নাকি ভূতের যম। আমার ছাতার ডান্ডিটাতো লোহার। ধুর! লোহা তোকে কে বললো , ওটা তো স্টেইনলেস স্টিলের। তাতে কি হয়েছে। স্টেইনলেসস্টিল কি সোনা দিয়ে তৈরি হয়। ওর মধ্যে লোহা আছে। সিলভার আছে। ভ্যাম্পায়ার হলে নিশ্চিত মরবে। আচ্ছা, চাঁনপুকুরের সাথে ভদ্রমহিলার কি কোনো যোগ-সূত্র আছে ?

অনেকক্ষণ বসে থাকার পর সিদ্ধান্ত নিলাম, ঢের হয়েছে!  আর নয়।  মুখের বুলিতে সাহস আসলেও সামনে আগানোর সাহস পেলাম না। বৃষ্টির রাত। চারদিকে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামছে। অশ্বথগাছের নিচ থেকে উত্তরদিকের শ্বশানটা দেখা যাচ্ছে। আজ মনে হয় চিতা পুড়িয়েছে, ধোঁয়ার কুন্ডলী আকাশের দিকে উড়ে উড়ে যাচ্ছে। শ্বশানের ভয়টুকু আরো মনে আঘাত হানলো। হঠাৎ মনে হলো, ধবধবে সাদা কাপড় পরা মহিলা আমার দিকেই এগিয়ে আসছে। গাছের উপর থেকে একজোঁড়া বাঁদুড় চিৎকার করে উঠলো। বাঁদুড়ের আওয়াজে যেনো, আমার হৃদপিন্ডটা এখনি বুকের খাঁচা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। নিজেকে শান্ত রাখার ব্যর্থ চেষ্টা চালালাম। ঝিঁঝিঁপোকার আওয়াজ থেমে গেছে, বৃষ্টি তখনও বর্তমান।

হাতের মুঠোয় ব্যাগটা শক্ত করে ধরলাম। ঝুট এক দৌড় লাগালাম। জমির ছোট্ট আইলে উষ্ঠা খেয়ে আবার বামপাশের আমনদানের ক্ষেতে গিয়ে পরলাম। ব্যাগটা একটু দূরে ছিঁটকে পড়লো। হাতের ছাতাটা বাতাসের বেগে ডানপাশের জমিতে উল্টো হয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ চুপচাপ ওভাবেই থাকলাম। কানের কাছে হঠাৎ মিনমিনে সুরে কে যেনো বলে উঠলো,
“কি রে মিনসে থাকবি আমার সাথে, তোর একদলা মাংস আমার খুব পছন্দ হয়েছে !! “

শরীর যেন অবশ হয়ে আসছিলো। আধ-শোয়া হয়ে উঠে বসলাম, চাঁনপুকুরের দিকে সাদা আলোর ছটা দেখা যাচ্ছে। পেছনদিকে এবার ব্যাগ নেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালাম। কাঁদাপানিতে সাদা শার্ট বাদামী রঙের হয়ে গেছে। ব্লু জিন্সের কথা নাইবা বললাম। পাম-সু এর ভেতরে চিংড়ীর হ্যাচারি করা যাবে। ব্যাগটা হাঁতড়াতে হাঁতড়াতে খুঁজে নিলাম। মেঘের বর্জ্রপাতের আলোয় অনেক কষ্টে ছাতাটাও বের করলাম। সাদা কাপড় পড়া ভদ্রমহিলা তখনও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। ছাতাটা শক্ত হাতে ধরে এবার মহিলা বরাবর ছুট লাগালাম। অনেক সহ্য করেছি আর নয়। চক-পাতিলা দৌড়ে বেগুন ক্ষেতে ঢুকে পড়লাম। ছাতিটার ডান্ডা উঁচু করে ধরে একদম বুক বরাবর সেঁধিয়ে দিলাম। ঠুস করে একটা শব্দ হলো। বেগুন ক্ষেতে আবার পিছলা খেয়ে পড়ে গেলাম। সোজা বাঁশের চিকন কঞ্চি দেয়া বেড়ার উপর। অল্পের জন্য চোখটা বেঁচে গেল। পেঁছন ফিরে তাঁকালাম,  ভদ্রমহিলা তখনও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। আকাশের বুক চিড়ে বিদ্যুৎ চমকে উঠলো। বিদ্যুত চমকানোর আলোয় যা দেখলাম তাতে শরীরে আগুন জ্বলে উঠলো। কাকতাড়ুয়া, সাদা কাপড় পড়ানো। মাথার দিকটায় সিলভারের প্রলেপ দেয়া বিস্কুটের কাগজ দিয়ে বাঁধানো। পাটের জটা দিয়ে চুলের মত করে বানানো।

রাগে গজগজ করতে করতে চোখ মেলে সামনে তাকালাম। মেঘটাও রাগে গর্জন করে উঠে। সারাটা শরীর কাঁদায় মাখামাখি। হাতের ব্যাগটা দূরে কোথাও ছিটকে পরেছে। ছাতাটা তখনো আমার হাতের মুঠোয়। আবার বিদ্যুৎ চমকে উঠলো। ব্যাগটাকে কোনরকমে খুঁজে পেলাম। হামাগুড়ি দিয়ে ব্যাগটাকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। ভিঁজে চপচপে হয়ে গেছে। ব্যাগটা হাতে নিয়ে বীরদর্পে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। ঐ দূর টিনের চালায় একটা হলুদ বাতি জ্বলছে। গন্তব্যস্থান সোডিয়ামের ঐ হলুদ বাতিওয়ালা বাড়ি। চারপাশে তখনো অবিরাম ধারায় বৃষ্টি ঝরছে। এই মুহূর্তে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির জল গায়ে মাখতে  ভীষণ ভালোই লাগছে।

(সমাপ্ত)

-মোঃ জাহিদুল ইসলাম:

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.