বাংলাদেশের রাজনীতির উত্থান-পতন ও বর্তমান ধারা

বাংলাদেশের রাজনীতির উত্থান-পতন ও বর্তমান ধারা

মোনায়েম সরকার: বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ‘গণতন্ত্র’ই সর্বাধিক প্রিয়। গণতন্ত্র চায় না বা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে না এ রকম দেশের সংখ্যা সারা পৃথিবীতেই নগণ্য। গণতন্ত্র ছাড়া আধুনিক জীবন অকল্পনীয়, মানুষের জীবনকে সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে বিকশিত করার জন্য গণতন্ত্রের বিকল্প নেই। সমাজতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি- যতদিন না সাম্যবাদ পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, ততদিন গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে কোনো রাজনৈতিক মতবাদই রুখতে পারবে না।

আমি বাংলাদেশের বিকাশমান গণতন্ত্রের একটা সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছি। তাই গণতন্ত্রের বৈশ্বিক অবস্থা নিয়ে কথা না বলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসের বৃত্তেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাই। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করে বাংলাদেশের জনগণের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার সঙ্গে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আওয়ামী লীগের মূল প্রোথিত রয়েছে এদেশের স্বাধীনতাপ্রিয়, মুক্তিকামী জনতার মধ্যে, এদেশের উর্বর মাটির পরতে পরতে। আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক ভাবধারার কুপ্রভাব থেকে বাঙালি জাতিকে রক্ষা করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি নতুন ভাবাদর্শ সৃষ্টি করেছিল। সেই ভাবাদর্শের নাম হলো- গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা, দেশপ্রেম, বাঙালি জাতীয়তাবাদ। এ ভাবাদর্শের সাহায্যেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর কবল থেকে উদ্ধার করে বাঙালি জাতিকে গণতান্ত্রিক চেতনায় সমৃদ্ধ ও সমুন্নত করেছেন।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস যারা জানেন, তারা নিশ্চয়ই মনে করতে পারেন পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যা-পরবর্তী জিয়া সরকার ছিল অবৈধ। এই অবৈধ জিয়া সরকার সারাদেশে সৃষ্টি করেন এক দুর্বিষহ আতঙ্ক। তার সীমাহীন নির্যাতনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী দ্বারা জেলখানা ভরে যায়। কেউ কেউ চলে যান আন্ডার গ্রাউন্ডে। আন্ডার গ্রাউন্ডেও যখন সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয়, তখন তারা বাধ্য হয় হাতের মুঠোয় জীবন নিয়ে দেশ ত্যাগ করতে। জিয়ার শাসনামলে প্রতি রাতে দেশে ‘মার্শাল ল’ থাকতো। জনজীবন ছিল চরম অনিরাপত্তার ভেতর। সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে জিয়া বাংলাদেশে যে কালো আইন তৈরি করে এবং মুজিব হত্যাকাণ্ডের বৈধতা দান করে ঘাতকদের পুরস্কৃত করে তাতেই কি জিয়ার নির্দয় একনায়কের পরিচয় বহন করে না?

১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে জনগণের প্রিয় পার্টি আওয়ামী লীগ ২৮৮টি, ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ পায় ২৯৩টি আসন। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে জেনারেল জিয়া প্রতিষ্ঠিত বিএনপি পায় ২০৭টি আসন এবং আওয়ামী লীগ পায় ৩৯টি আসন। এটি বৈধ নির্বাচনের ফলাফলের নমুনা? গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে জিয়া-এরশাদই প্রথম নজিরবিহীন হ্যাঁ/না ভোট প্রচলন করেন আইয়ুব-ইয়াহিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে।

১৯৮৬ সালে স্বৈরশাসক এরশাদের শাসনামলে যে নির্বাচন হয় সেই নির্বাচন বিএনপি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সরে দাঁড়ায় এবং খালেদা জিয়া তথাকথিত আপসহীন নেত্রীতে পরিণত হন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়কে ঠেকাতে ৪৮ ঘন্টা মিডিয়া ক্যু করে জাতীয় পার্টি নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেয়। এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি পায় ১৫৩টি আসন, ভোট পায় ৪২ দশমিক ১৫ শতাংশ। মিডিয়া ক্যু না হলে নির্বাচনের ফলাফল আওয়ামী লীগের পক্ষেই যেতো। ১৯৮৮ সালে আবার এরশাদের অধীনে নীলনকশার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কেউই অংশ নেয়নি। এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ২৫১টি আসন, ফ্রিডম পার্টি তথা কিলার পার্টি পায় ২টি আসন আর আ স ম আবদুর রব ১৯টি আসন পেয়ে বিরোধী দলীয় নেতা হন।

১৯৯১ সালে সর্বদলীয় রাজনৈতিক পার্টির অংশগ্রহণের মাধ্যমে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাতে বিএনপি পায় ১৪০টি আসন, আওয়ামী লীগ ৮৮টি আসন এবং জাতীয় পার্টি পায় ৩৫টি আসন। এই নির্বাচনের ভোটের সংখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় বিএনপির বাক্সে পড়ে ৩০ দশমিক ৮১ শতাংশ ভোট আর আওয়ামী লীগ পায় ৩৩ শতাংশ ভোট, জাতীয় পার্টি পায় ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ ভোট। জামায়াত পায় ১৮টি আসন। জামায়াত-বিএনপির সিট এলাইন্সের ফলে বিএনপি ১৯৯১ সালে অপ্রত্যাশিতভাবে সরকার গঠন করে।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আবার গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নিজের অধীনে আয়োজন করে ষড়যন্ত্রের নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিএনপি পায় ২৭৮টি আসন, ফ্রিডম পার্টি পায় ১টি এবং স্বতন্ত্র পার্টি পায় ১০টি আসন। কিন্তু খালেদা জিয়া গণ-আন্দোলনের মুখে শেষ রক্ষা করতে পারলেন না। ১৯৯৬ সালের জুন মাসে তিনি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে বাধ্য হন। এই নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসন পেয়ে একুশ বছর পরে অর্থাৎ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পরে ক্ষমতায় আসীন হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি পায় ১৯৩টি আসন এবং ৪০ দশমিক ৮৬ শতাংশ ভোট, আওয়ামী লীগ পায় ৬২টি আসন এবং ৪০ দশমিক ২১ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ এই নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ প্রায় সমসংখ্যক ভোট পেলেও আসন সংখ্যায় বিএনপি এগিয়ে থাকে। এবারও জামায়াতকে সাথে নিয়ে জামায়াতের ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ ভোট নিয়ে এবং ১৭টি আসন নিয়ে বিএনপি এগিয়ে যায়। ২০০১ সালের নির্বাচনে জয় লাভ করে বিএনপি আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার নানামুখী ষড়যন্ত্র করে, রাজাকারদের মন্ত্রী বানায়, বাংলা ভাই সৃষ্টি করে এবং দেশজুড়ে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটায়। বিএনপির রক্তলোলুপ চক্রান্তে নিহত হতে থাকে আওয়ামী লীগের শত শত নেতাকর্মী।

বিএনপি ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে যেমন ক্ষমতা ছাড়তে চায়নি তেমনি ২০০১ সালে ক্ষমতা পেয়েও তারা মেয়াদ পূর্ণ করে ক্ষমতা ছাড়তে টালবাহনা শুরু করে। এরপর আবির্ভূত হয় আর্মি সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারাও দুই ডক্টর ও দুই সম্পাদকের কূটকৌশলে দুই বছর গণতন্ত্রকে জিম্মি করে রাখে। চেষ্টা চালাতে থাকে দুই নেত্রীকে মাইনাস করার। কিন্তু গণ-আন্দোলনের মুখে তারাও বাধ্য হয় ২০০৮ সালে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করে এবং মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার কাজে মনোনিবেশ করে। দেশে এখন সেই ধারাই অব্যাহত আছে। উপরের বিশ্লেষণ থেকে একটি বিষয় প্রতীয়মান হয়েছে যে, যখনই বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে তখনই আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে। এ ধারা ১৯৭০ থেকে শুরু হয়ে আজো পর্যন্ত বিদ্যমান।

একটি কথা মনে রাখা দরকার- জেনারেল জিয়া এবং জেনারেল এরশাদ উভয়েই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। উভয়েই নানাপ্রকার চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগকে তথা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চেয়েছেন। আজ এদের পক্ষে কথা বলা মানে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে কথা বলা, গণতন্ত্রের বিপক্ষেই কথা বলা। দেশে অনেক জঞ্জাল জমেছে। সেই জঞ্জাল পরিষ্কার করতে হলে, দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে আওয়ামী লীগকে সময় ও সমর্থন দেওয়া দরকার। আজকাল অনেকেই বলেন বাংলাদেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্রের নামে এখানে বিরাজ করছে ছদ্ম একনায়কতন্ত্র। এসব কথা যারা বলছেন, তাদের উচিত আয়নায় নিজের মুখ দেখা। আমরা যদি একটু পিছন ফিরে তাকাই, তাহলে দেখবো বাংলাদেশ এখন যে সময় পার করছে এই সময়টাই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর আর নিরাপদ বলে বিবেচনাযোগ্য।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে দেশে নেমে আসে পাকিস্তানি কায়দায় সামরিক শাসনের ভয়াল দুর্যোগ। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ নামক এগিয়ে চলা ট্রেনটি ডিরেইলড করে দেওয়া হয়। ২১ বছর খাদের কিনারে লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে থাকে ট্রেনটি। জিয়াউর রহমান যিনি ছিলেন শেখ মুজিব হত্যার অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী ও মদদদানকারী তিনি দখল করে নেন স্বাধীন বাংলার ক্ষমতা। জেলের অন্ধকার প্রকোষ্টে নির্মমভাবে একে একে হত্যা করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানের মতো জাতীয় চার নেতাকে। হত্যা করা হয় প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ, মুজিবপ্রেমী বুদ্ধিজীবী, দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারসহ অসংখ্যক বেসামরিক মানুষ। বাকশাল গঠনের পর একটি জানাজায় জিয়া আমার কাছে বাকশালে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। যেই জিয়া বঙ্গবন্ধুর জীবিত অবস্থায় বঙ্গবন্ধুকে ‘বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা’ বলে মুখে ফেনা তুলতো সেই জিয়ার আমলেই দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুর কথা লেখা যায় না, তার জন্য সভা করা যায় না, তাঁর নামটা পর্যন্ত উচ্চারণ করা যায় না। অথচ কী অবাক কা- জিয়াউর রহমানই নাকি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা? জিয়ার আমলে বাংলাদেশ হয়ে ওঠে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান। জিয়া চিহ্নিত রাজাকারদের জেল থেকে মুক্ত করে, দেশ পলাতক রাজাকারদের নাগিরকত্ব দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনে, তাদের রাজনীতি করার অধিকার ফিরিয়ে দেয়, বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে এবং বাংলাদেশের মাটি থেকে আওয়ামী লীগকে চিরতরে ধ্বংস করার জন্য সকল রকমের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে। একজন ঘাতক যখন হয়ে উঠেন গণতন্ত্রের মুক্তিদাতা তখন বুঝতে কারো বাকি থাকে নাÑ তার প্রবর্তিত গণতন্ত্র কোনো গণতন্ত্রই নয়।

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে নিজের অনুগত সেনা অফিসারের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন জেনারেল জিয়া। জিয়া হত্যার পরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় বসেন জিয়ারই যোগ্য উত্তরসূরী হোসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। তিনি জারি করেন সামরিক আইন। এরশাদ তার কর্মকাণ্ডের জন্য খেতাব পান ‘স্বৈরাচার’। এরশাদের পতনের পর আবার ক্ষমতায় আসে জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। বিএনপি এসে আবার দেশে কায়েম করে হত্যা আর ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। বিএনপির শাসনামলেই বাংলাদেশে রাজাকারের গাড়িতে জাতীয় পতাকা পতপত করে উড়তে থাকে ত্রিশ লক্ষ  শহিদ আর দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমকে বিদ্রূপ করে। সভা-সমাবেশে বোমা মেরে হত্যা করা হয় আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীকে। কেবল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায়-ই শহিদ হন আইভি রহমানসহ ৩২ জন নেতাকর্মী। এমনকি জননেত্রী শেখ হাসিনাকেও ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গন, দুর্নীতির কালো থাবায় পিছিয়ে পড়তে থাকে দেশের অর্থনীতি। মৌলবাদী শক্তি টার্গেট করে গোপনে হত্যা করতে তাকে বুদ্ধিজীবীদের।

প্রকৃতপক্ষেই আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আস্থাবান। তার প্রমাণ- ২০০৮ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ নির্ধারিত সময়ে ক্ষমতা শেষ করে সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বিএনপি নেত্রীকে টেলিফোনে আহ্বান জানালে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। দেশকে সাংবিধানিক সঙ্কট থেকে মুক্ত করতে অন্যান্য দল নিয়ে নির্বাচন করে আবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় আরোহণের এই বিষয়টিকে অনেকেই আজ বাঁকা চোখে দেখার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা কি হিসেব করে দেখেছেন বাংলাদেশ আজ সার্বিকভাবে উন্নতির কোন শিখরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে?

বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল হলেও কয়েকটি বিষয়ে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে নজর দেওয়া দরকার। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে রচিত ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃপ্রবর্তন করা। বাহাত্তরের সংবিধান প্রবর্তিত হলে ধর্মকে অপব্যবহার করে মৌলবাদী গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারবে না। সেই সাথে দলের মধ্যে যেসব দুর্বৃত্ত আছে, তাদের দল থেকে বহিষ্কার করে সৎ ও যোগ্য নেতাদের মূল্যায়ন করা দরকার। ব্যবসায়ীদের বেশি প্রাধান্য না দিয়ে রাজনীতিতে রাজনীতিবিদদের সুযোগ সৃষ্টি করা দরকার। দুর্নীতিবাজদের দমন করে প্রজ্ঞাবান নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত করা এখন সময়ের দাবি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সর্বত্র গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চলমান রাখতে হবে। যাতে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল গড়ে ওঠে সেই বিষয়েও লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে একসময় কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল। যুগের পর যুগ ক্ষমতায় থেকেও আজ তারা ক্ষমতার অনেক দূরে সরে গেছে। দল বেশি দিন ক্ষমতায় থাকলে দুর্নীতির দায়ে দল একসময় মুখ তুবড়ে পড়ে। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ দেশের নেতৃত্ব দিবে এটাই সবার প্রত্যাশা।

মোনায়েম সরকার : রাজনীতিবিদ, লেখক, কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক, গীতিকার ও মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ।

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.