আকাশ-পাতালের বিস্ময়কর পাঁচ হোটেল!

আকাশ-পাতালের বিস্ময়কর পাঁচ হোটেল!

skywalker-ho-3

‘হোটেল’ শব্দটি উচ্চারিত হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে আলিশান সব ঝলমলে ভবন। কিন্তু এমন কিছু হোটেল রয়েছে যা সত্যিই বিচিত্র ও চোখ ধাঁধানো একাধারে বিস্ময়করও বটে। এগুলোর কোনোটি মহাকাশে আবার কোনোটি পানির তলদেশে। কোনোটি আবার আকাশে উড়ছে। তৈরি হয়েছে বরফ এবং লবণ দিয়েও। বিশ্বের এমন পাঁচটি  বিচিত্র  হোটেলের আদিঅন্ত  সময়ের কথার পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন শামছুল হক রাসেল ও তানভীর আহমেদ

 

ডে   স্টা র  [আজারবাইজান]

ব্ল্যাকহোলের আদলে যদি হোটেলের বুকে বিশাল এক কালো গর্ত বসানো থাকে তাহলে দূর থেকে সেটা দেখতে কতটা ভয়ঙ্কর সুন্দর লাগবে? এই ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ান স্থাপত্যবিদ এমনই নকশা এঁকেছেন ডেথস্টার হোটেলের জন্য। আজারবাইজানের বেকু শহরের ডেথস্টার হোটেলকে দূর থেকে দেখলে মনে হবে বিশালাকায় দুটি ব্ল্যাকহোল যেন ঝুলে আছে বাতাসে। এই বিচিত্র নকশাই আর দশটি হোটেল থেকে আলাদা করে ডেথস্টার হোটেলকে।

ডেথস্টার হোটেল

ডেথস্টার হোটেল

নামে মৃতদের তারকা খ্যাতি রাখলেও রহস্যময় সৌন্দর্যের খাতিরে ব্ল্যাকহোলের মতো মৃত্যুকেই যেন নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করে হোটেলটি। কাস্পিয়ান সমুদ্রের দিকে মুখ ফেরানো এই হোটেলটিকে সমুদ্রের গভীরে পূর্ণিমা চাঁদের মুখ ভেবে ভুল হয় অনেকের। পূর্ণ চাঁদের কলঙ্কের মতোই বিশালাকার কালো গর্তটি ফুটে ওঠে অন্যরকম শূন্যতা নিয়ে। দূর থেকে এই ব্ল্যাকহোল দেখে জাহাজের যাত্রীরা আঁতকে ওঠেন। ব্ল্যাকহোলের মতই দৃশ্যায়মান হয়। ব্ল্যাকহোল যেমন নিজের বুকের দিকে সবকিছুকেই টেনে নিয়ে নিঃশেষ করে দেয় ডেথস্টার হোটেলের বুকের এই কালো গর্তটি ঠিক তেমনই অজানা আতংকের মুগ্ধতায় পাকে যেন সমুদ্রের ভেসে চলা জাহাজীদের।

 

ড়  ন্ত  হো টে ল  [ফ্রান্স]

উড়ন্ত হোটেল

উড়ন্ত হোটেল

ভা সমান হোটেলগুলোর তালিকা করলে সবার আগেই উচ্চারিত হবে ম্যানড ক্লাউড হোটেলের নাম। নামেই বোঝা যায় মানুষকে মেঘের দেশে নিয়ে ভাসমান আনন্দ দেওয়ার জন্যই এই হোটেলের আয়োজন। এমনিতেও ফ্রান্সের ম্যানড ক্লাউড বিশ্বের অন্যতম সেরা হোটেলগুলোর একটি। বিচিত্রতার দিক দিয়েও সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে এটি। মাটি থেকে দেখলে মনে হবে, আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে কোনো নভোযান। দোল খেলছে ভাসমান মেঘের সঙ্গে।

চমকে যাওয়ার মতো সবকিছুতেই ঠাসা এই উড়ন্ত হোটেল। মেরি মাসউড সর্বপ্রথম এই হোটেলের নকশা নিয়ে ভাবেন এবং তিনিই মূল পরিকল্পনাকারীদের একজন। সাধারণ মানুষকে অবাক করে দেওয়ার মতো নকশা বানাতে গিয়েই এই হোটেলের ভাবনা আসে তার মাথায়। তিনি ভাবতেন কেমন হবে একটি পুরো হোটেল যদি উড়ে বেড়ায় খোলা বাতাসে? হয়েছেও তাই।

ম্যানড ক্লাউড ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার বেগে উড়ে আকাশে। একটি গোটা হোটেল আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে দেখতেই অবাক হয়ে যান অনেকেই। প্রায় ৪০ জন যাত্রী নিয়ে আকাশে বিচরণকারী এই হোটেলে আছে একটি প্রকাণ্ড জিমনেসিয়াম, সুপরিসর লাইব্রেরি, বড় ডাইনিং রুম, মিনি বারান্দা এবং একটি স্পা সেন্টার।

 

 

সাগর তলের হোটেল

সাগর তলের হোটেল

সা গ র    লে র  হো টে ল  ( ফিজি )

বি জ্ঞানের কল্প-কাহিনীকেও হার মানিয়ে বিভিন্ন হোটেল তৈরি হয়েছে পানির তলদেশে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে এসব আন্ডার ওয়াটার হোটেল তৈরি হয়েছে। তবে বৈচিত্র্যে ও বিলাসিতার দিক দিয়ে ফিজির পসাইডন আন্ডার ওয়াটার রিসোর্ট অন্য সবগুলোকে ছাপিয়ে গেছে। সমুদ্রের নিচে বিছানায় শুয়ে উপভোগ করতে পারবেন বিভিন্ন জলজপ্রাণীর খেলা। খুব কাছে থেকে অনুভব করতে পারবেন হাঙর, ডলপিন, হর্সফিস ও জেলিফিসের আনাগোনা। যেখানে রাত আর দিনের মধ্যে পার্থক্য নেই।

গ্রাহকের জন্যই তৈরি করা হয়েছে নির্জন ও গোপনীয় এই হোটেল। যেখানে গিয়ে আপনি উপভোগ করতে পারবেন নির্ঝঞ্ঝাট এক অনাবিল জীবন। হোক না তা ক্ষণিকের জন্য। আলো ঝলমলে হোটেলে গিয়ে তো আর নির্জনতা নামক অলংকার পাওয়া সম্ভব নয়। ফিজির এই হোটেলে এক রাত কাটাতে খরচ পড়বে, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১০ লাখ টাকা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, এখানে থাকার জন্য দুই মাস আগে থেকে বুকিং দিতে হয়। কারণ সারা বছরই থাকে গ্রাহকদের চাপ। বিশেষ করে ইউরোপের গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে উপচেপড়া ভিড় দেখা যায় এখানে। প্রত্যেকটি কক্ষের আয়তন ১২ বর্গমিটার। আর উচ্চতা মাত্র আট ফুট। অর্থাৎ যখন কেউ বিছানায় ঘুমিয়ে থাকেন তার আট ফুট উপর দিয়ে পানিতে ভেসে বেড়ায় বিভিন্ন মাছ ও জলজ প্রাণী।

সাগর তলের বিলাশবহুল হোটেলটির একাংশ

সাগর তলের বিলাশবহুল হোটেলটির একাংশ

সম্প্রতি মালদ্বীপে এরকম একটি হোটেল নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। এ বিষয়ে পোলিশ আর্কিটেকচারাল এবং ডিপ্লসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ডিপ ওসেন টেকনোলজি সম্প্রতি চুক্তি করেছে রিজউড হোটেল অ্যান্ড স্যুট প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে। পানির নিচে অনেক হোটেল নির্মাণ করা হলেও মালদ্বীপে নির্মিত হোটেলটি হবে সবচেয়ে বড় আন্ডারওয়াটার হোটেল বা পানির তলদেশে হোটেল। হোটেলটির আকৃতি হবে স্পেসশিপের ন্যায়। অনেকটা ফ্লাইং সসার বা ইউএফও আকৃতির। সায়েন্স ফিকশন ঘরানার মুভিগুলোতে আমরা যেমনটি দেখতে পাই। চাকতি আকৃতির হোটেল ডিজাইন দেখলে ভবিষ্যৎ কল্পকাহিনীর বিলাসবহুল হোটেল মনে হতে পারে।

বিলাসবহুল হোটেলটি দুটি বিশাল ডিস্ক আকৃতির লাউঞ্জ নিয়ে গঠিত হবে। এর একটি পানি থেকে সাত মিটার উপরে পাঁচটি পিলারের উপরে থাকবে। ব্যবস্থা থাকবে গ্লাস টানেল দিয়ে পানির তলদেশে অপরটিতে যাওয়ার । উপরের ভাগে রেস্টুরেন্ট, স্পা করার ব্যবস্থা, হেলিকপ্টার ল্যান্ডিং প্যাড, বাগান রাখা হয়েছে। অতিথিরা উপর থেকে ভৌগোলিক আবহাওয়ার স্বাদ নিতে পারবেন আবার একই সঙ্গে পানির তলদেশের বিচিত্র অভিজ্ঞতাও উপভোগ করতে পারবেন। গভীর সমুদ্রে বেড়ানোর জন্য বা অনুসন্ধানের জন্য থাকছে তিনযাত্রী বিশিষ্ট বিশেষ যান। এ ছাড়া মোটর বোট, ওয়াটার স্কিইং, জেট স্কিস এবং আন্ডার ওয়াটার স্কুটার থাকবে।

 

  নে র  তৈ রি  হো টে ল   [বলিভিয়া]

লবনের তৈরি হোটেল

লবনের তৈরি হোটেল

বিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, বলিভিয়ায় এমন একটি হোটেল রয়েছে যা পরিপূর্ণভাবে লবণ দিয়ে বানানো। যার নাম ‘হোটেল ডি সাল’। রাজধানী লা পাজ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিশ্বের বৃহৎ সমতল লবণ ক্ষেত্রে এটি অবস্থিত। অবশ্য প্রথম দেখাতে এটিকে হোটেল বলে মেনে নিতে কষ্ট হতে পারে অনেকের। কিন্তু ভেতরে গেলেই ভড়কে যেতে হয়। এর ভেতরের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে বিছানা, দরজা জানালাগুলোও তৈরি জমাট লবণ ব্লকে।

পুরো হোটেল ভবনটি বানাতে ৩৫ সেন্টিমিটার পুরু ১০ লাখ লবণের ব্লক লেগেছে। আসল কথা হলো_ বলিভিয়ায় রয়েছে লবণের মরুভূমি। যা ‘সালার ডি ইয়লুনি’ নামে পরিচিত। মোট ১০ হাজার ৫৮২ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে এই পুরু লবণের ভাণ্ডার। বলিভিয়ায় কেউ বেড়াতে এলেই তারা প্রথমে এই লবণ মরুভূমি দেখতে যান। সেখানে মূলত ওইসব পর্যটকের জন্যই তৈরি হয়েছে ‘হোটেল ডি সাল’। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৬৫০ মিটার উপরে অবস্থিত এই হোটেলটি। যার দেয়ালগুলো বানানো হয়েছে লবণ আর পানির মিশ্রণ দিয়ে।

মোট ১৫টি কক্ষ  আছে এই হোটেলে। এ ছাড়া স্টাইল রুম, রেস্তোরাঁ, বারসহ সব রকমের আধুনিক সুযোগ-সুবিধাও আছে হোটেলটিতে। ২০০৭ সালে এটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। হোটেল ডি সাল প্লায়া, বলিভিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের উইউনি লবণ পলিতে অবস্থিত। এটি ১৯৯৩ সালে নির্মিত। হোটেলটি লবণের তৈরি ব্লক দিয়ে নির্মিত। যদিও বর্ষাকালে নতুন ব্লক দিয়ে দেয়ালগুলোর শক্তি বৃদ্ধি করা হয়। এতে ১৫টি বেডরুম, একটি ডাইনিং রুম, একটি লিভিং রুম ও একটি বার রয়েছে। শুধু যে হোটেলটি লবণ দিয়ে নির্মিত তা নয়, হোটেলটির চেয়ার, টেবিল, খাট এমনকি বার পর্যন্ত লবণ দিয়ে নির্মিত।

 

স্কাইওয়াকার হোটের

স্কাইওয়াকার হোটের

 

স্কা ই   য়া কা র  হো টে ল   [মহাশূন্য]

পৃ থিবীর ভেতরে তো নানান রকম হোটেলের দেখা মেলে। কেমন হবে যদি মেঘফুঁড়ে আকাশের ওপরে দেখা মেলে বিশাল এক হোটেলের। যেখানে নাগরিক সুযোগ-সুবিধার সব কিছুই রয়েছে। অবাক হলেও সত্য যে, এমন হোটেল কিন্তু আছে। মহাকাশে ঘূর্ণায়মান এই হোটেল বানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি তার নিজস্ব অরবিটালে ঘুরছে যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসের উপরে। পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের অরবিটালে ঘূর্ণায়মান মানুুষের তৈরি প্রথম হোটেল এটি। বলা বাহুল্য, এর সব আয়োজনই দর্শক ও যাত্রীদের রোমাঞ্চিত করে।

এখানকার প্রত্যেক গ্রাহককেই যেতে হয় নভোচারীর প্রস্তুতি নিয়ে। হোটেলের সঙ্গে সঙ্গে ঘুরতে হয় সব গ্রাহককেও। ঘণ্টায় প্রায় ২৮ হাজার কিলোমিটার বেগে নিজ অরবিটারে ঘূর্ণায়মান এই স্কাইওয়াকার হোটেল। পৃথিবী থেকে ৫১৫ কিলোমিটার উঁচুতে, মহাকাশে ছুটে চলেছে এই হোটেল। পৃথিবীর হোটেলে যেসব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বিরাজমান তার সবকিছুই রয়েছে এখানে। তবে পার্থক্য শুধু এটাই, এখানকার সব বস্তুই বাতাসে ভেসে বেড়ায়। ঘুরপাক খায় শূন্যে। এই কারণে কম্পিউটার, টেলিভিশন, নৃত্য প্রয়োজনীয় বস্তু স্ব স্ব অবস্থানে আটকানো থাকে।

সম্প্রতি রাশিয়াও মহাশূন্যে হোটেল বানানোর ঘোষণা দিয়েছে। দ্য কমার্শিয়াল স্পেস স্টেশন নামের এই হোটেল চালু হবে ২০১৬ সাল নাগাদ। নভোযান আকৃতির হোটেল তৈরির পরিকল্পনা করেছে রাশিয়ান কোম্পানি অরবিটাল টেকনোলজিস! পরিকল্পনা অনুসারে চারটি কেবিন থাকবে এই হোটেলে এবং সাতজন পর্যটক থাকতে পারবেন। তিন লাখ পাউন্ডে এই হোটেলে করে মহাশূন্যে পাঁচদিন থাকার সুযোগ মিলবে বলে জানা গেছে। আর খাবার ব্যবস্থা পৃথিবী থেকে নিয়ে যেতে হবে। তবে অ্যালকোহল ও নেশাজাতীয় দ্রব্য এই হোটেলে সম্পূর্ণ নিষেধ।

লবনের তৈরী হোটেলের ভেতোরে আলিশান সব ব্যবস্থা

লবনের তৈরী হোটেলের ভেতোরে আলিশান সব ব্যবস্থা

 

স্কাইওয়াকার হোটেলের একটি কক্ষ। কার না সাধ হয় অন্তত এক রাত থাকার.......

স্কাইওয়াকার হোটেলের একটি কক্ষ। কার না সাধ হয় অন্তত এক রাত থাকার…….

উড়ন্ত হোটেলের একটি কক্ষের আলিশান আয়োজন! একরাত থাকতে পারলে জীবনটাই যেনো ধন্য হতো....

উড়ন্ত হোটেলের একটি কক্ষের আলিশান আয়োজন! একরাত থাকতে পারলে জীবনটাই যেনো ধন্য হতো….

ডেথস্টার হোটেলের একটি সুদৃশ্য কক্ষ। এমন একটি হোটেলে অন্তত একরাত থাকতে কার না মন চায়.....

ডেথস্টার হোটেলের একটি সুদৃশ্য কক্ষ। এমন একটি হোটেলে অন্তত একরাত থাকতে কার না মন চায়…..

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.