আরদিনার পড়াশোনা এবং শ্যুটিং

Shooter Ardina-2

রুমেল খান : বাংলাদেশ যে গুটিকয়েক খেলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সর্বোচ্চ সাফল্য পেয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শূটিং। নব্বই দশকে সার্ক সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শূটিংয়ে ছিল সবার চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন কারণে শূটিংয়ে অন্য দেশগুলোর চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। গোলা-বারুদের এ খেলাটিতে আবারও এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় দেশীয় শূটিং। রতœা, আসিফ, তৃপ্তি, আরমিন, বাকী, সাদিয়ারা মাঝে-মধ্যেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভাল নৈপুণ্য দেখাচ্ছেন। কিন্তু তাদের পর কে বা কারা? এ শূন্যতা বা সঙ্কট যেন দেখা না দেয়, সেজন্যই জোর তৎপরতা চালাচ্ছে বাংলাদেশ শূটিং ফেডারেশন। ‘পাইপলাইনে’ যেন পর্যাপ্ত ও সম্ভাবনাময় শূটার মজুদ থাকে, সেজন্য প্রথমবারের মতো জাতীয় পর্যায়ে শূটিং প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এমনই এক সম্ভাবনাময় শূটার আরদিনা ফেরদৌস আঁখি। কুষ্টিয়াকে সবাই চেনে সাংস্কৃতিক রাজধানী আর সাঁতারু তৈরির কারখানা হিসেবে। এখান থেকে যে ভাল শূটারও তৈরি হয়, সেটা দেখিয়েছেন কুষ্টিয়ার চৌড়হাসের আরদিনা। এবারের অষ্টম বাংলাদেশ গেমসে অংশ নিয়ে রৌপ্যপদক পাওয়ায় স্বপ্নের পরিধি বেড়ে গেছে ২১ বছর বয়সী এই তরুণীর। কুষ্টিয়া রাইফেল ক্লাবের এ সম্ভাবনাময় শূটার কুষ্টিয়া সরকারী গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর বিবিএ পড়ার জন্য সেখানকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু সমস্যা হয় অন্যখানে। ঢাকায় আসায় (ঈদের আগে শূটিং ক্যাম্পে ট্রায়াল কম্পিটিশনে ৩৭৬ স্কোর গড়ে প্রথম হয়ে আরদিনা সবার নজর কাড়েন) পড়াশোনা এবং কুষ্টিয়া যাতায়াতে ভীষণ সমস্যা হচ্ছিল। এ জন্য পড়েন বিপাকে। বিষয়টি জানান শূটিং ক্যাম্পের মহিলা কোচ লাভলী চৌধুরী আঁখিকে। এদিকে কোচ আঁখি আরদিনার পড়াশোনার সমস্যার বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেন শূটিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইন্তেখাবুল হামিদের সাথে। হামিদ চেষ্টা-চরিত্র করে বনানীর আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে (এআইইউবি) বিবিএ-তে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন আরদিনাকে মঙ্গলবার। আজ প্রথমবারের মতো সেখানে ক্লাস করতে যাবে ২০১০ সালে জাতীয় শূটিং চ্যাম্পিয়নশিপে রৌপ্যপদক জয়ী আরদিনা। চার বছর বিবিএ কোর্স করতে প্রায় সাত লাখ টাকা খরচ হবে। পুরো টাকাটাই ব্যক্তিগতভাবে দিচ্ছেন হামিদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আরদিনা খুবই মেধাবী ও প্রতিশ্রুতিশীল শূটার। ঢাকায় এসে ক্যাম্প শেষে আবার কুষ্টিয়ায় ফিরে গিয়ে পড়াশুনা করা তার জন্য অনেক কষ্টকর। কোচ লাভলী চৌধুরী আঁখি আমাকে বিষয়টি বললে আমি এর সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করি। শেষ পর্যন্ত এআইইউবিতে ওকে ভর্তি করিয়ে দিলাম। আশা করি এবার তার কোন অসুবিধে হবে না।’

হামিদ আরও জানান, এআইইউবির সাথে খুব শিঘ্রীই জাতীয় শূটিং ফেডারেশন একটি চুক্তি করতে যাচ্ছে। এ চুক্তির ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টি জাতীয় শূটিং ক্যাম্পের ৩-৪ জন মেধাবী শূটারকে প্রতিবছর ‘স্কলারশিপ’ বা বৃত্তি প্রদান করবে। এতে শূটাররা আর্থিক লাভবান হবেন।

আরদিনা বলেন, ‘ঢাকায় ভর্তি করিয়ে দেয়ার জন্য ইন্তেখাবুল হামিদ ভাই ও আঁখি আপার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আমার বাবা-মা-ও (গোলাম মহিউদ্দিন ও রেজিনা জেসমিন) খুব খুশি। এখন থেকে ঢাকায় থেকেই আমি নিশ্চিন্তে পড়াশোনা এবং শূটিং ক্যাম্প দুটিই ভালমতো করতে পারব।’

rumelboss@gmail.com

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.