কলাম- ‘আয়না’ ছাড়া নিজেকে দেখা

কলাম- ‘আয়না’ ছাড়া নিজেকে দেখা

সাফাত জামিল: জাপানের সবচেয়ে গোপনীয় এবং পবিত্র যায়গা ইসিগান মন্দির। ধারনা করা হয় খৃস্টপূর্ব চার সালে ইসিগান মন্দিরটি তৈরি করা হয়। সূর্যের দেবী আমাতে রাফকে উৎসর্গ করে বানানো এই মন্দিরে আজপর্জন্ত জাপানের রাজ পরিবারের সদস্য এবং ধর্ম যাজক ছাড়া কেও প্রবেশ করতে পারেনি। প্রতি বিশ বছর পরপর মন্দিরটি নতুন করে নির্মান করা হয়। ইতিহাসবিদদের ধারনা এখানে জাপানি সাম্রাজ্যের মূল্যবান এবং হাজার হাজার বছরের পুরাতন নথিপত্র সংরক্ষিত আছে যা বিশ্ববাসীর কাছে একেবারেই অজানা। জাপানের রূপকথায় বহুল প্রচলিত পবিত্র আয়না এখানেই লুকানো আছে বলেও জনশ্রুতি আছে। কিন্তু এই মন্দিরে কারো প্রবেশাধিকার না থাকায় এর সত্যতা জাচায়করা সম্ভব হয়নি। জাপানের রাজপরিবার থেকেও কখনো এই পবিত্র আয়না সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। আর তাই আজো অমীমাংসিত রয়ে গেছে পবিত্র আয়নার রহস্য।


২০০ বছর আগের কথা- ‘জাস্টিস ভন লাইবিগ’ নামে একজন জার্মান রসায়নবিদ ১৮৩৫ সালে স্বচ্ছ কাঁচের এক পাশে টিন ও পারদের এক ধরণের প্রলেপ দেওয়ার একটি কৌশল আবিস্কার করেন। এই কৌশলটিই ছিল আয়না আবিষ্কারের মূল বিষয়। পরবর্তীতে আরও বড় পরিসরে এবং বাণিজ্যিকভাবে আয়না উৎপাদনের জন্য এই পদ্ধতিটিকে অবলম্বন করা হয়। ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে আজকের আধুনিক আয়নার রূপ আমরা দেখতে পাই।


তবে ১৮৩৫ এর সময়কালকে আধুনিক আয়নার জন্মলগ্ন বলা হলেও গবেষকরা সাম্প্রতিক সময়ে দেখেছেন যে, আয়না উৎপত্তির ইতিহাস নাকি আরও অনেক পুরোনো। প্রায় ৮০০০ বছর আগে বর্তমান তুরস্কে প্রাচীনতম আয়না তৈরির প্রচেষ্টা চালানো হয়।


এখন যে ধরণের আয়না আমরা দেখতে পাই, মধ্যযুগ থেকে এ ধরনের আয়নার চল শুরু হয় এবং রেনেসাঁস এর অল্প কিছু পরেই আয়না তৈরির কিছু কৌশলগত পরিবর্তন আসে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তখনও এটি অসম্ভব দামী হওয়াতে অভিজাত ও অবস্থাসম্পন্ন পরিবার এবং কিছু শিল্পকর্ম তৈরির কাজেই এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল। যেহেতু আয়নায় নিজের অবয়ব একদম স্পষ্ট দেখা যেত, এ কারণে অনেক চিত্রশিল্পী নিজ চেহারা রংতুলিতে ফুটিয়ে তুলতেন এই আয়নার সাহায্য নিয়ে।
বর্তমানে আয়না তৈরিতে এলুমিনিয়ামের গুঁড়ো ব্যবহার করা হয়। কিন্তু প্রাচীন মিসরীয়রা ব্যবহার কতো তাম্র চূর্ণ। আয়নাকে ঘিরে প্রাচীনকালের যত অভিশাপ এবং মজার কিছু তথ্য আয়না চিরকালই মানুষকে কৌতূহলী করেছে, এজন্যই এই আয়না নিয়ে প্রচলিত আছে নান রূপকথা, অভিশাপ এবং কুসংস্কারের কাহিনী, আছে চমকপ্রদ কিছু কথাও। আসুন জেনে নেই এমনই কিছু তথ্যঃ


★ প্রাচীন রোমে এই বিশ্বাস প্রচলিত ছিল যে, আপনি যদি বাড়ির পুরনো কোনো আয়না ভেঙ্গে ফেলেন তাহলে পরবর্তী অন্তত ৭ বছর পর্যন্ত আপনার দুর্ভাগ্য কাটবে না।
★ রোমানরা এটাও বিশ্বাস করতো পুরনো কোনো আয়না ভেঙ্গে যাওয়া মানে আপনি আপনার ভেতরে থাকা পবিত্র আত্মাকেই নষ্ট করে ফেলেছেন।
★ তামার সাথে দেবী ‘হাথোর’ এর সম্পর্ক ছিল বলে ধারণা করতো মিসরীয়রা। হাথোর ছিলেন সৌন্দর্য, প্রেম, কাম, সমৃদ্ধি ও জাদুর দেবী।
★ জার্মানদের স্নো হোয়াইট রূপকথায় কথা বলা এক আয়নার কথা আছে। সেই আয়না সবসময় সত্য কথা বলতো।
★ জার্মানির বাভারিয়া অঞ্চলের লোর এলাকার জনগণ একসময় বিশ্বাস করতো যে, আয়না সর্বদা সত্য কথা বলে।
আয়না আপনাকে নিয়ে যেতে পারে হ্যালুসিনেশনের দুনিয়ায়। একটা ছোট্ট পরীক্ষা করে দেখা যাক। একটা অন্ধকার ঘরে বড় আয়নার সামনে দাঁড়ান, তবে শুধুমাত্র হাতে একটা মোমবাতি এমনভাবে ধরে রাখুন যেন আপনার মুখের ওপর পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো পড়ে। এবার আয়না থেকে ১ মিটারের ব্যবধানে দাঁড়ান এবং একটানা অন্তত মিনিট দশেক নিজের চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকুন! নিজেকে ছাড়া আর কিছু কি দেখতে পেলেন?


আয়না নিয়ে ‘ব্লাডি মেরি’ নামের একটি খেলার কথা পুরোনো ডাকিনীবিদ্যা বিষয়ক লেখায় পাওয়া যায় কখনো খেলেছেন এই খেলা? এটি খুবই ভয়-ধরানো। বুকের পাটা না থাকলে এই খেলার নামটাও নেয়া ঠিক না।


কোনো এক গভীর অন্ধকার রাতে, হাতে একটা মোমবাতি নিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে আপনি তিনবার বলবেন ‘ব্লাডি মেরি।’ নির্দিষ্ট কিছু আচারও পালন করবেন। তারপর চোখ বন্ধ করবেন।যখন চোখ খুলবেন তখন বুঝবেন যে ঠিক আপনার পেছনেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন ব্লাডি মেরি।
মনের এই ট্রিকটা বা ট্রিকের ধাক্কাটা নিতে পারলে, ব্লাডি মেরিকে দেখে চিৎকার দিয়ে আপনি হয়তো ওখানেই অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন।


বলা হয়ে থাকে, আয়না কখনো মিথ্যা কথা বলে না..

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.