মিসেস জাকিয়া ফেরদৌস রুমি। একজন বিউটিশিয়ান। কানাডার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী নগরী মন্ট্রিয়লে বর্তমানে যে ক’জন স্বনামধন্য বিউটিশিয়ান মিসেস রুমি তাদের মধ্যে অন্যতম। এটা তার পেশাও বটে। মন্ট্রিয়লের প্লামন্ডন এলাকায় তার রয়েছে ‘রুমিস প্যারাডাইস’ নামের একটি পারলার হাউস। এই ফল সিজনে সৌন্দর্য সচেতন কানাডার বাঙ্গালি নারীদের চুলের পরিচর্য্যা সম্পর্কে সময়ের কথা’র কাছে তিনি যে পরামর্শ দিয়েছেন নিচে তা তুলে ধরা হলো। মতামতটি গ্রহণ করেছেন সায়লা পারভীন-
সায়লা॥ কোনো ভূমিকা নয়। আমরা সরাসরি আলোচনায় যাবো। দেখতে দেখতেই সামার পেরিয়ে চলে এলো ফল সিজন। আমরা জানি ঋতুর পরিবর্তনের সাথে পাল্টে যায় নারীর সাজ-ফ্যাশনের ব্যাপারটিও। পাল্টে যায় বায়ুমন্ডলের গতি-প্রকৃতি। চুল, ত্বক সবকিছুরই মেজাজ। আর সে প্রয়োজনের তাগিদ থেকেই পাল্টে যায় আমাদেরও সৌন্দর্য সচেতন নারীদের সাজ-সজ্জা ও বিভিন্ন অঙ্গের যত্ন-আর্ত্তি। তবে একটি নারীদেহের সব অঙ্গের পরিচর্য্যা নিয়ে কথা বলার অবকাশ বা পরিসর এখানে আমাদের নেই আর তাই আমরা আজ আলোচনা করবো একটি বিষয়ের ওপর। আর তা হচ্ছে, চুল। মিসেস রুমি আপনি কি আমাদের বলবেন, ফল সিজনে কেমন হওয়া উচিত চুলের পরিচর্য্যা?
রুমি॥ অবশ্যই। একটি সৌন্দর্য সচেতন নারীর জন্য মূলত চুলের নিয়মিত যত্ন নেয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও অন্য দৃষ্টকোণ থেকে নারীদেহের প্রতিটি অঙ্গই সাজ-সজ্জা, যত্ন আর্তির প্রশ্নে সমান গুরুত্বেরই দাবী রাখে। কোনোটাকে বাদ দিয়ে কোনোটার যত্ন নেয়াটা মোটেও সমীচিন নয়।
কানাডা মূলত ঠান্ডার দেশ। ফল সিজন থেকেই আসলে শুরু হয় ঠান্ডার ভাবটা। দিনে দিনে এর প্রকোপ বাড়ে। আসে উইন্টার। তখন আবার বরফ ঝরে। এই যে ঠান্ডার সময়কালটা এতে চুলের ওপর বিশেষ চাপ পড়ে। চুলটা ড্রাই হয়ে যায়। এর সাথে যে সাংঘাতিক ব্যপারটা জড়িত তা হচ্ছে, কম-বেশী সবাইরই চুল পড়তে শুরু করে। মূলত এই ফল সিজনেই চুলের পতনটা আমরা বেশী লক্ষ্য করে থাকি। সামারে এই সমস্যাটা এদেশে তেমন একটা নেই। আর সে কারণেই আপনাকে এ সময়টাতে চুলের ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন থাকতে হবে; নিতে হবে বাড়তি যত্ন।
যা করতে হবে-
এ সময়টাতে ড্রাইনেসের কারণে আমাদের অনেকেরই চুলের আগা ফেটে যায়। আর এ জন্য অবশ্যই দু’একমাস অন্তর কিলিং করতে হবে।
আর চুলের ড্রাইনেস দূর করার জন্য আমার পরামর্শ হচ্ছে, প্রতি সপ্তাহে অন্তত: দু’বার চুলে শ্যাম্পু করতে হবে। এখন বাজারে অনেক ধরণেরই শ্যাম্পু পাওয়া যায়। চুলের ধরণ বুঝে বেছে নিতে হবে কোনো শ্যাম্পুটি আপনার চুলের জন্য প্রয়োজন।
সায়লা ॥ এ ব্যাপারে আপনি স্পেসিফিক কোনো ব্র্যান্ডের নাম বলবেন কি?
রুমি ॥ আগেও বলেছি, চুলের ধরণ বুঝে ব্যবহার করতে হবে শ্যাম্পু। আজকাল কনেটইনারের গায়েও লেখাই থাকে কোনো ধরণের চুলের জন্য কোন জাতীয় শ্যাম্পু প্রযোজ্য। কোনটা ড্রাই চুলে জন্য; আবার কোনটা অয়েলি চুরের জন্য।
ড্রাই হেয়ারের জন্য সপ্তাহে দু’দিন শ্যাম্পু করতেই হবে। আর এক্ষেত্রে কন্ডিশনারের ব্যবহারটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবং সেটা হতে হবে হাইডেটেট কন্ডিশনার। সপ্তাহে দু’দিন তা ব্যবহার করলে চুলের গোড়া শক্ত হবে, চুল ফাটা রোধ হবে এবং চুলের সাইনিভাবটা বজায় থাকবে।
আর যাদের চুল পড়ে যাচ্ছে তারা যদি কন্ডিশনার দেয়ার পর টাওয়ালটা হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে তা পাঁচমিনিট চুলের ওপর রেখে দেন তাতে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
অন্যদিকে চুলের বেশী ড্রাইনেসে আমি প্রাকৃতিক উপায় থেকে প্রাপ্ত হারবালের ব্যাবহারকে পরামর্শ দিয়ে থাকি।
বেশী ড্রাইনেস থেকে চুলকে রক্ষা করতে আমরা হেনা মেহেদীর সাথে একটু টকদই, তার সাথে একটা ডিমের সাদা অংশ ও লেবুর রস দিয়ে আধঘন্টা রেখে দেবার পর এর ব্যাবহার করতে পারি। বিশেষ করে আমরা যারা সব সময় কর্মব্যস্ততার মধ্যে থাকি তাদের জন্য এটা অনেকটা সহায়ক পদ্ধতি।
সায়লা ॥ আমার জানামতে, যারা চুল হাইলাইট করে তাদের জন্য হেনাটা ব্যবহার ঠিক না।
রুমি ॥ হ্যাঁ। এ ক্ষেত্রে আমি তাদের হেনা না ব্যবহার করারই পরামর্শ দেবো। কেননা হেনার ব্যবহারে চুলের কালারটা পরিবর্তন হয়ে যায়। অন্যদিকে যারা হেয়ার কালার করেন না তাদের জন্য হেনা এবং এর সাথে হারবালের মিশ্রন ফলদায়ক। এটা অনেকটা হাইডেটেট ট্রিটমেন্ট কন্ডিশনারেরও কাজ করে। এতে চুল পড়া বন্ধ হবে এবং চুলের সাইনিভাবটা থাকবে।
আর একটা ব্যাপার মনে রাখা দরকার যে, সপ্তাহে অন্তত একবার রাতের বেলা আপনাকে তেল ব্যবহার করতেই হবে। এটা হতে হবে কাস্টারড অয়েল অথবা আমাদের দেশের নারকেল তেল। ব্যাবহারের আগে সেটাকে হালকা একটু গরম করে নিতে হবে। এবং চুলের গোঢ়া ধরে ধরে ভালো করে ম্যাসাজ করতে হবে। এতে চুলের আয়ু বাড়বে, গোড়া শক্ত হবে এবং সাইনিভাবটা অটুট থাকবে। বিশেষ করে এটা ফল সিজনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সায়লা ॥ ধন্যবাদ আপনাকে সময়ের কথার সৌন্দর্য সচেতন পাঠকদের জন্য সময় এবং গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দানের জন্য।
রুমি ॥ আপনাকেও ধন্যবাদ। ধন্যবাদ সময়ের কথার পাঠকদের।