চন্দ্রমুখী, মা তোমার জন্য আমরাও দুখী

niru11

সুন্দর ফুটফুটে, ঐ হৃদয়কাড়া মায়াভরা কচি মুখটার ওপর চোখ পড়লেই তা আঁঠার মতোই আটকে থাকে। এমন একটি চাঁদমুখো মেয়ের নাম, ‘চন্দ্রমুখী’। আর সে দৃষ্টিকোণ থেকেই বুঝি বাবা-মা’ও মেয়ের যথার্থই নামটি বেছে নিয়েছিলেন ‘চন্দ্রমুখী’।

তবে হৃদয়বিদারক বাস্তবতা হচ্ছে, ঐ কচি চাঁদমুখখানা যেদিন প্রথম দেখলাম আমি; আর যখন দেখলাম, তখন চন্দ্রমুখী দুনিয়াকে বিদায় জানিয়ে চলে গেছে সেই চাঁদেরই দেশে। যেখান থেকে আর কেউ ফিরে আসে না কোনোদিন। চন্দ্রমুখীও আর আসবে না ফিরে। চাঁদমুখি চাঁদের পরী চাঁদেই গড়েছে তার চির আবাস।

উল্লেখ্য,  চন্দ্রমুখী ।বয়স ৫ বছর তিন মাস। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ছিলো ঢাকা শিশু হাসপাতালে। শেষ পর্যন্ত যে ঘাতকব্যাধী যাকে আর মুক্তি দেয়নি।

ছবিতে মেয়েটিকে দেখে হৃদয়টা এতোটাই দুমড়ে-মুচড়ে গেলো যে, মেনে নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে, ‘চন্দ্রমুখী আজ আর এ দুনিয়াতে নেই।’553592_10151861976761676_45971146_n[1]

এর পরের অধ্যায় আরো মর্মান্তিক; আরো হৃদয়বিদারক! চন্দ্রমুখীর অকাল বিচ্ছেদ সইতে না পেরে চন্দ্রে’র পথ ধরেই যাত্রা শুরু করেছিলেন ওর দুখিনী মা। কিন্তু না, যেতে পারেননি তিনি তার মেয়ের কা‍ছাকাছি। তার আগেই ডাক্তারদের প্রচেষ্টা তাকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে দুনিয়ার বন্ধনে।

মেয়ের মৃত্যু সংবাদে পাঁচতলা থেকে লাফিয়ে পড়লেও আল্লাহ’র ইচ্ছে আর ডাক্তারদের প্রচেষ্টায় এ যাত্রা বেঁচে গেছেন চাঁদের মা দৈনিক জনকন্ঠের সিনিয়র ষ্টাফ রিপোর্টার নাজনীন আখতার।

মেয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে ব্যাথাতুর মা নাজনীন আখতার যা করেছেন তা মোটেও সমর্থণযোগ্য নয়; তারপরও এ সংক্রান্ত বিষয়ে তাকে সান্ত্বনা দেবার মতো ভাষা অন্তত আমার জানা নেই।

সচেতন বিবেক সম্পন্নরা বলবেন, সমাজবিজ্ঞানীরাও বলবেন, নাজনীন যা করেছেন তা করা ঠিক হয়নি তার। মানবতাও বলবে একই কথা। কিন্তু সন্তানস্নেহে অন্ধ-আবেগকে সবাই তো আর পারেনা প্রশমিত করতে। এখানে কখনো কখনো সব সংস্কারই অন্ধ হয়ে যায়।

তবে এ কথা সত্যি যে, এমনিতেই সন্তানকে হারিয়ে সুস্থ মানসিকতা নিয়ে বেঁচে থাকাটাই তার জন্য ছিলো কষ্টকর; এরপর আবার শারীরীক ইনজুরি তাকে বাকি জীবনে আরো যে কতোটা ভোগান্তির মধ্যে নিপতিত করবে তা এক মাত্র‌ ভবিতব্যই বলতে পারেন। তবে আমরা চাই তার পরিপূর্ণ সুস্থ-সুন্দর একটি জীবন।

চন্দ্রমুখীর বাবা মুকুলও পেশায় একজন সাংবাদিক। কন্যার অকাল বিচ্ছেদে শোকে পাথর। নাজনীন আখতার যা করেছেন, হয়তো তিনি তা পারেননি, কিন্তু বুকে যে কতো বড় পাথরচাপা দিয়ে কন্যার শোক সয়ে যাচ্ছেন সেটা তার মতো করে আর কেউই বলতে পারবে না। তাকে সান্ত্বনা দেবার ভাষাও আমার জানা নেই।

পরিশেষে দৈনিক জনকন্ঠে কর্মরত স্নেহভাজন তরুণ সাংবাদিক জাহিদুল আলম জয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখিত ছোট্ট ক’লাইনের একটি লেখার উদ্ধৃতি দেবো নিচে। জয় লিখেছে,  ‘এমন মৃত্যু মেনে নেয়া যায়না। চন্দ্র, সূর্য যাই বলি না কেন, চন্দ্রমুখীর তুলনা হয় না। আমাদের জনকন্ঠ অফিসে ফুটফুটে মেয়েটি প্রায়ই মা নাজনীন আখতারের সঙ্গে আসতো। আমরা কতো মজা করতাম ওকে নিয়ে। শেষবার যখন চন্দুমুখী আসলো তখন একটা সাদা কাগজ নিয়ে সবার ডেস্কে আসে আর বলে আমাকে অটোগ্রাফ দাও… আমরা সবাই চন্দ্রমুখীকে লিখেছিলাম….। সবার কথারই সারমর্ম ছিল এরকম, ‘আম্মু তুমি অনেক বড় হও’। কিন্তু কেন এমন হলো? কেন অকালে চলে গেল আমাদের চন্দ্র! এই শোক, কষ্ট, ব্যথা আমরাই ভুলতে পারছিনা। মা কিভাবে ভুলবেন! তবু আমরা মনেপ্রাণ চাই নাজনীন আপু পূর্ণ সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক আমাদের মাঝে।’

আমরাও চাই মা নাজনীন, আপনি খুব শিগগিরই সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসুন। হৃদয় ধারণ করুক যতো শোক আর ব্যাথা সহ্য করার ক্ষমতা। একটু চিন্তা করে দেখুন, এমনও তো হতে পারে, হয়তো আপনাদের কোল আলো করে আসার অপেক্ষায় অদৃশ্যলোকে অপেক্ষা করছে আর এক চন্দ্রমুখী।

আমরা চাই আপনাদের ঘরটা আবারো চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠুক। আবারো আপনাদের জীবন-সংসারের সুন্দর বাগানটায় চাঁদমুখি একটা ফুল ফুটুক। নাজনীন, অদূর ভবিষ্যতে আপনি হয়ে উঠুন কন্যাহারা মায়েদের জন্য এক অনন্য প্রেরণা। সেটাই আমাদের চাওয়া। আর আপনাকে মানতেই হবে আপনি একজন সাংবাদিক। আর সাংবাদিক মানেই হচ্ছে বিচিত্র অভিঙ্গতাময় সংগ্রামমুখর এক জীবন। যে জীবন সবকিছুই সহ্য করে; যে জীবনকে সবকিছুই সহ্য করতে হয়। সেটা অন্যের জীবনের জন্যই হাক আর নিজের জন্যই হোক।

আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন।

মাহাবুবুল হাসান নীরু

ক্যালগেরি, কানাডা।

mhniru@gmail.com

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.