টিপ

টিপ

৮৮

 

 মা শখ করে নাম রেখেছিল দিলবানু। শৌখিন মায়ের আদুরে কন্যা দিল। মন যা চায় তাই করে। চলে মর্জিমতো। ছোটবেলা থেকে বাবার আদর পায়নি সে। জন্মের পর একবার দেখেছে বাবাকে। মা-ই তাই তার বাবা, মা-ই তার মা। সেই মায়ের কাছে যা বায়না ধরে তাই পূরণ হয়। তারপরও মা আর কতটুকুইবা শখ পূরণ করবে? নয় হাজার টাকা বেতনে গার্মেন্টসে সেলাই মেশিন চালায়। ববিনে সুতো ভরে দুই পায়ে সেলাই করে যে আয় তা দিয়ে মা-মেয়ের ক’টা স্বপ্নই আর পূরণ হয়!

 

মেয়েকেও তাই বয়স পনের হতেই মায়ের হাত ধরে একই কারখানায় কাপড়ে সুতো পরানোর কাজ ধরতে হলো। দিলের মা পারভীন বেগম। মেয়েকে কারখানায় ঢুকিয়ে দেওয়ার সময় নিজের নতুন আইডির জন্য সিঁথি করা চুলে কপালে টিপ দিয়ে নিজেও পাসপোর্ট সাইজের ফটো তোলে। কারখানায় চাকরির প্রয়োজনেই হোক, সেই ছবিতেও সাধ পূরণের ছোট্ট স্বপ্নের বিন্দু এঁকে যায় দুই নারী। বন্দী জীবনের গণ্ডি ডিঙিয়ে স্বপ্ন দেখতে শেখে চার চোখ। মা-মেয়ে জানে কেমন করে নিজেদের ছোটখাটো স্বাধীনতাগুলো মন ভরে উপভোগ করতে হয়। কষ্টের জীবনে ভোগ নেই, তবু উপভোগতো আছে। সেই তাদের ঢের পাওয়া।

 

এমনি করে দিন কাটতে থাকে বেড়ার আগলে ঘেরা আর টিনের ছাদে ঢাকা দুইজনের ছোট সংসার। তবে মা’কে ছাড়াও নিজের স্বপ্ন আছে দিলের। সেই স্বপ্নের জীবনে মাঝে মাঝে ছুটি নিতে মন চায়। ঘুরে বেড়াবে দিলের দিলওয়ালা সুজনের সাথে। বেড়ার ফাঁক গলে আসা সূর্যের হাসি ঝিলিক তোলে সুজনের চোখে। সেই আবিরে রাঙা হয়ে ওঠে অন্য সব না পাওয়ার মলিন দিনগুলো কখনো কখনো রঙিন হয়ে ওঠে দিলবানুর।

 

পনের বছর বয়সের অবাধ্য দিনগুলো শাসনের বেড়া ভেঙে পা বাড়ায় সবুজের হাতছানিতে। ঘাসের উপর পা ফেলে হেঁটে বেড়ায় ঘাস ফড়িঙের পেছন পেছন। কাজের ফাঁকে টিফিনে বের হয়ে দিল দেখে রানা প্লাজার উল্টো দিকের কাঁচে ঘেরা শৌখিন মানুষের শপিংমলের ছোট সংস্করণ। ওর কাছে ওই লাল-নীল রঙের দুনিয়া বড় বেশি আকর্ষণের। নীল শাড়ি পরা ওর চেয়ে বছর দশেক বড় মেয়েটাকে দেখে কাচের দেয়ালে ঘেরা দোকানের কমলা-হলদে চেয়ারে বসে সানগ্লাস কপালে তুলে কোকের বোতলে ঠোঁট রাখতে। দিলবানু ভুলে যায় তার বর্তমান-অতীত-ভবিষ্যৎ। তারও মন চায় অমন নীল শাড়ি পরে চোখে কাজল আঁকার।

 

এই নিয়ে মায়ের সাথে তার মন কষাকষি। কষ্টের টাকায় কতোইবা শখ পূরণ হবে এক কিশোরী আর মধ্যবয়সী নারীর? তবু পারভীন বেগমের চোখ রাঙানো থামাতে পারে না দিলবানুর শখের দুনিয়ার গতি। সে ছোটে। ছুটতে ছুটতে সে ছুঁযে দেয় কাচের দেয়াল।

 

golpoসুজনের সাথে ঘুরতে বেরিয়ে সেদিন সেও ঠোঁট রাখে পেপসির বোতলে। একটুও না কেঁপে চুমুক দেয় অল্প ঝাঁঝালো কোমল পানীয়ে। কি-ই বা এমন দোষ করেছে সে? কালো গ্লাসে ঢাকা গাড়িতে চড়ে আসা জিন্স পরা মেয়েটার মতো সেতো ফেন্সিডিলের বোতলে চুমুক দেয়নি। খুব কাছে, কিন্তু তার কাছে ওই জগৎ অচেনা। পেপসির শখেই দিলবানুর স্বপ্নের আনাগোনা।

 

সেদিন সুজন বললো, চল্ সিনেমা দেখতে যাই। সিনেমাটার নায়িকা বর্ষা। সুজন বলে, বর্ষা নাকি অবিকল দিলবানুর মতো দেখতে। শুনে হাসে দিলবানু। মন তার পাখি হয়ে ডানা মেলে আকাশে।

 

এইসব শুনে পাশের ঘরের পাখি আপা খিলখিল করে হেসে ওঠে। পাখি আপার কতই বা বয়স। পঁচিশ হয়েছে কি হয়নি। দুই মেয়ে তার—

ইয়াসমিন আর জেসমিন। জেসমিনের মাথার ফিতা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে উঠে গিয়ে পাখি আপা ডালে ঘুঁটনি নাড়ায়। ‘দেখিস, সুজনের সাথে আবার বেশিদূর যাবি না। বিয়ের আগে কোনো ছেলেকে ভরসা নেই।’ পাখি আপার নরম শাসনে দিলবানু হাসে। বলে, ‘কি যে কও না আপা, আমিতো সিনেমা দেখতে তোমারে ছাড়া যাবই না। সুজনরেও বলে দিছি।’

 

কথায় কথায় দুজনই হাসে। কেরোসিনের চুলার আগুনে লালচে হয়ে ওঠে মুখ। জেসমিনের কান্নায় পাখি আপা উঠে যায়। বলে, ‘দেখিস। একলা আবার চলে যাস না। নতুন চাকরি। বেশি ছুটি নিলে চাকরিই থাকবে না।’

 

সেই ছুটি চাইতেই বাহানা বানায় দিলবানু। মাকে বলে পেট খারাপ, কাজে যাবে না। মা’র মন পটাতে পারলেও প্রডাকশন ম্যানেজারকে কি বলবে বুঝে পায় না দিল। ওদিকে, সুজন অনেক স্বপ্ন নিয়ে বসে আছে। স্বপ্ন দিলবানুরও। শেষ পর্যন্ত পাখি আপাও ছুটি নেয়নি। একই বিল্ডিংয়ে কাজ করে তারা। তিন তলায় মা আর মেয়ে একসাথে, পাখি আপা পাঁচ তলায়, অন্য গার্মেন্টসে।

 

শেষ পর্যন্ত ছুটি নিয়েই ফেললো দিল। শরীর খারাপের অজুহাতে। দুপুরের শো। সুজন বলেছে, ঠিক একটায় বাসা থেকে বেরিয়ে মোড়ে দাঁড়াতে। হর্সটেইল করে বেগুনি রিবনে। চোখে কাজল দেয়। লজ্জায় ঠোঁটে লিপস্টিক দিতে পারেনি। ভ্যানিটি ব্যাগটার চেইন ছিড়ে গেছে। ওটা নিয়েই বেরোতে যাবে, তখনই দেখে মা আসছে হেঁটে হেঁটে। দেরি করে ফেলেছে দিল। মা’কে কী বলে বের হবে ভাবছে।

 

পারভীন বেগম ঘরে ঢুকে বলে, ‘দেয়ালের ফাটলটা বাড়ছেরে দিল। আজ ছুটি দিয়ে দিলো।’ ধড়াস করে ওঠে দিলের বুকটা। মা বলে, ‘এক গেলাস পানি দেতো মা।’ ব্যাগটা রেখে চৌকির ওপর বসে ঘাম মুছে পারভীন বেগম। দিলও ব্যাগ রেখে পানি এনে দাঁড়ায় মায়ের পাশে। ‘ও কি মা! ছুটি দিয়ে দিলো!’ মা বলে, ‘হ রে মা। কইলো এঞ্জিনিয়ার আইয়া দেখছে। কইছে বিল্ডিংটায় মেশিন চালানো যাবে না। কি নাকি পরীক্ষা করতে হইবো। কালতো হরতাল। মনে হয় যাইতে হইবো না।’ দিলের বুক কাঁপে। ‘কালও কি ছুটি দিয়া দিছে মা?’ এতাক্ষণে মেয়ের মুখের দিকে তাকায় মা। সাজলেতো মেয়েটারে সুন্দর লাগে ভারী! ভাবে, এইবার অর বাপরে বইলা বিয়ার সম্বন্ধ দেখতে হইবো। লোকটা যে কেমন! সেকেন্ড বিয়া কইরা এই ঘরের মাইয়াটারেও দেখতে আসে না। পুরুষ মানুষ কি পাত্থর! দীর্ঘশ্বাস ফেলে পারভীন বেগম। মেয়ের হাত থেকে গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পানি শেষ করে।

 

দিলবানু জিজ্ঞেস করে, ‘শরীরটা খারাপ লাগতাছে মা?’ পারভীন বেগম গ্লাস রেখে উঠে বলে, ‘না রে শরীর খারাপ না। তর অবস্থা কী? পেট ব্যথা কমছে?’ মাথা নাড়ায় দিল। পারভীন বেগম ব্যস্ত হয়ে উঠে, ‘তাইলে শুইয়া থাক। আমি বাজারে যাই। কাঁচকলা আইন্না ভর্তা কইরা দেই। খাইয়া দেখবি সব ঠিক।’ দিল বাধা দেয়। ‘থাক মা, লাগবো না। তুমি আমার কাছেই থাকো, সব ঠিক হইয়া যাইবো।’

 

মা-মেয়ে একসাথে বসে উঠানে। দিল দেখে মোড় ছেড়ে মোল্লাবাড়ির কলে মুখ ধুচ্ছে সুজন। চোখের ইশারায় মা’কে দেখায়। বোঝায়, আজ হবে না। গল্পে-গল্পে বিকাল কাটে মা-মেয়ের। দুপুরের ভাত খেয়েছে উঠানে বসেই। আলুভর্তা আর পুঁইশাকের ঝোল।

 

সন্ধ্যায় মা বেরোয়। ফেরে কাঁচকলা আর ভেণ্ডি নিয়ে। পারভীন বেগম রান্না বসায়। একশ পাওয়ারের আলোয় মুখে চিকচিক করে ঘাম। দিলবানু ভাবে, সামনের মাসে বেতন পাইয়া একটা টেবিল ফ্যান কিনবে। আগেরটা থেমে থেমে চলে। ওর জন্মের সময় বাবা নাকি কিনে দিয়েছিলো ওইটা। বাবার মুখটা ঝাপসা লাগে দিলের চোখে। চকচকে রঙের চোখে সুজনকে দেখে। এক ফাঁকে বেরিয়ে পাশের দোকান থেকে সুজনকে মোবাইল করে দিল।

 

‘হ্যালো, কি করেন আপনে?’ দিলের ফোন পেয়ে সুজন হালকা রাগ দেখায়।

‘সিনেমা দেখি আর বর্ষার লগে বৃষ্টিতে ভিজি।’

হেসে ওঠে দিল, ‘বৃষ্টি পাইলেন কই? খটখটা গরমতো।’

সুজন হাসে। ‘তুমি ফোন দিছো, আর বৃষ্টি নামলো যে।’

দিল আবার হাসে, ‘কাইল যামুনে। ফেক্টরি থাইকা ছুটি নিয়া আসুম, ঠিক ঠিক দেইখেন।’

 

সুজন বলে, ‘আবার রোজ ছুটি নিলে আমারতো চাকরি নাই।‘

দিল কপট রাগ দেখায়, ‘চাকরি গেলে আমি কাঁথা সেলামু, আর আপনে বিড়ি টাইনেন।’

 

এবার সুজন হাসে, ‘ঠিক আছে দিলজান। আপনের জন্য চাকরি বাদ। ঘরে বইসা দুইজন সিনেমা করুম। আমি অনন্ত, তুমি বর্ষা।’

‘আইচ্ছা, এখন রাখি তাইলে, মা বইসা আছে।’

 

গ্রামের মতো পাখির ডাকে এখানে ভোর আসে না। সাভার বাজারের ভেতরের বস্তিতে সকাল আসে কলতলার চেঁচামেচিতে। দিলবানু উঠে। মা রেডি হইতেছে।

 

‘কই যাও মা?’ মা তাড়া দেয়, ‘ওঠ। আইজকা না গেলে পি.এম স্যার খুব গাইল দিবো। একটু আগে ফোন দিছে।’ দিল উঠে বসে, ‘কও কি! ছুটি না দিছে কাল।’ মা পারভীন বেগম শাড়ি ঠিক করে, ‘না রে। আবার যাইতে কইছে। সব নাকি ঠিক আছে। সবাই যাইতেছে।’ দিলও উঠে পড়ে। আজ গিয়েই পি.এম স্যারকে বলে ছুটি নিতে হবে।

 

বস্তি ছেড়ে ঘাসের মাঠ। তার ওপারে পিচ ঢালা রাস্তা। রাস্তার দুই পাশে গাছ  কেটে কেটে বিল্ডিং উঠছে। সাততলা-আটতলা-নয়তলা। ভবনে কাচের দেয়াল। চকচকে নিয়নবোর্ড-সাইনবোর্ড-নেইমবোর্ড। শহরতলী সাভার বাজারে রাজধানীর মেকি লেবাস।

 

রাস্তা ধরে এগোয় মা-মেয়ে। দিলবানু হাঁটে ধীরে। মা পারভীন বেগম জোরে ছোটে। বলে, ‘পা চালা দিল। বারবার ফোন দিতাছে পি.এম রমজাইন্যা। জলদি চল মা।’ পনেরো বছরের দিলবানুর মুখ গোমড়া। ওর ভালো লাগছে না। চলার গতি একটু বাড়ায়। ঝাঁঝিয়েও উঠে একটু, ‘আমার শরীরটা ভাল্লাগতাছে না কইলাম না। এরচেয়ে জোরে হাঁটতে পারুম না।’

 

দশ মিনিটের রাস্তা। রানা প্লাজার সামনে এসে মা-মেয়ে ভিড় দেখে। অপারেটরদের ভিড়। ভিড় ঠেলে সামনে এগোয় দুইজন। দিলবানু দেখে পাখি আপাকে। মুখের ঘাম মুছতেছে সে। দিলকে দেখে হাসে, ‘কি রে সুন্দরী! যাইস কই?’ দিলবানু চোখ রাঙায়, ‘কি যে কও না আপা! পেছনে মা।’

 

পারভীন বেগম চেঁচায়, কি হইছেরে? তরা ভিড় করতাছছ কেন এইখানে?’ পাখি বলে, ‘কইয়েন না খালা। এইখানে ফাটল বাড়ছে। কেউ ঢুকতে চাইতেছে না। ঢুইকা কি মরুম নাকি?’

 

হঠাৎই সামনের ভিড়টা ঢেউয়ের মতো রানা প্লাজায় ঢুকতে শুরু করে। ঢেউয়ের সাথে দুলে দুলে দিলবানু আর তার মা-ও ঢুকে পড়ে। রঙিন সুতোয় সেলাই তোলা ঢেউয়ের মতো গার্মেন্টসগুলোর তিনতলা, চারতলা আর পাঁচতলায় দিলবানু, পাখি আর পারভীনরা বসে পড়ে। মেশিনের শব্দ উঠে। দেয়াল কাঁপে। পায়ের তলে মাটি কাঁপে থর থর। বয়লারের শব্দে কেউ কারো কথা শুনতে পায় না। সেলাই মেশিনের শব্দও ঢেকে দেয় পাখি-পারভীনদের হৃদস্পন্দন।

 

তারপরও একঘেঁয়ে গলায় বলে যায় দিলবানু। পি.এম রমজানের রক্তচক্ষু তাকে কসুর করে না। দিলের দিলে অনেক সাহস। সব মেয়ে কি এমন সাহসী হয়? হয়তো হয়, হয়তো না। রমজান নিজেও চিন্তিত। ফাটলটা যেমন বাড়ছে তাতে কি যে হয় না হয় তা বুঝতে পারছে না সে নিজেও। দিলের ঘ্যান ঘ্যান তার কানে ঢুকছে, কিন্ত জবাব দিচ্ছে না রমজান।

 

‘স্যার, আমার শরীর ভালো না। ছুটি লাগবে আমার।’ ‘যা, বস যাইয়া। কিছুক্ষণ কাজ কর, তারপর ছুটি লইস। এখন হরতাল। কাজ করতে হবে। হরতালে কাজ বন্ধ করা যাবে না।’

 

দিল অনিচ্ছায় উঠে আসে সেলাই মেশিনের কাছে। ববিনে সুতো পরাতে যাবে, তখনই শোনে বজ্রপাতের মতো বড় আওয়াজ। সামনে ভিড় করছে সেলাই মেশিন ছেড়ে উঠে যাওয়া মেয়েরা। ছেলেরাও। দিলবানু দৌড়ে যায় মায়ের কাছে। বলে, ‘মা ওঠ। জলদি ওঠ। সবাই বাইর হইতাছে।’ মা পারভীন বেগমের হঠাৎ কোমরের ব্যথাটা বাড়ে। উঠার শক্তি কেমন যেনো কমে আসতেছে। মেশিন না ছেড়ে সে একহাতে দিলকে ধাক্কা দেয় জানালার দিকে। চেঁচায়, ‘তুই যা, ভাগ। আমি আসতেছি, তুই পালা দিল।’

 

দিলবানু হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। শক্ত, সাহসী বুকটা ওর ঢিপঢিপ করে কাঁপছে। মায়ের ধাক্কায় জানালার কাছে চলে এসেছে সে। পেছনে মায়ের চিৎকার। অন্য সবার চিৎকার ভেদ করে মায়ের চিৎকার এসে ধাক্কা দেয় দিলের বুকে, ‘পালা দিলবানু, পালা।’

 

দিলবানু জানালার থাই গ্লাস ভাঙে। হাতের কাছের রডটা দিয়ে যতো জোরে সম্ভব গ্লাসটা ভাঙে সে। সামনে অনেকে দৌড়াচ্ছে, চেঁচাচ্ছে। ওদিকে না গিয়ে দিলবানু পাখির মতো ওড়াল দেয়, জানালা দিয়ে লাফায়। কোথায় পড়েছে সে জানে না, চোখে শুধু অন্ধকার।

 

অনেক গোঙানির শব্দ। কান্নার ভেজা শব্দ। ব্যথায় কাতরানির শব্দ। শব্দে শব্দে বজ্রপাতের শব্দটা আবারো কানে লাগে। দিলবানু চোখ খোলে। এ কোথায় সে? সাদা বিছানা। এটাতো হাসপাতাল! চারদিকে গার্মেন্টসের আরো অনেক ছেলে-মেয়ে। মা কোথায়? দিলবানু উঠতে চায়। হাতে কি যেনো বাধে। তাকিয়ে দেখে স্যালাইনের নল। চিকন পাইপ ফুটো করেছে তার ডান হাত। মা’কে খোঁজে দিলবানু। অস্ফূট গলায় ডাকে, মা-মা। মা, তুমি কই?’

 

মা আসে না। আসে একজন নীল কাপড়ের জামা পরা লোক। বলে, ‘কেমন আছো তুমি এখন?’ দিলবানু জোরে বলে, ‘আমার মা কই?’

 

মায়ের ছবি হাতে দিলবানু দাঁড়িয়ে আছে ভেঙে পড়া রানা প্লাজার সামনে। টিভি চ্যানেলের মাইক্রোফোন ধরা মেয়েটাকে দেখে মায়ের আইডিকার্ডের ফটোকপিটা তুলে ধরে। ছবির ফটোকপিতেও সিঁথি করা চুলের নীচে মায়ের টিপটা কি সুন্দর!

 

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.