দলবদলের হাওয়া

দলবদলের হাওয়া

mario-gomez-2

উরোপীয়ান ক্লাব ফুটবলে দলবদলের হিড়িক চলছে। ইতোমধ্যে শুরু হওয়া নতুন মৌসুমকে (২০১৩-১৪) সামনে রেখে বিভিন্ন ক্লাব তাবুতে ভেড়াচ্ছে প্রত্যাশিত ফুটবলারকে। এরই ধারাবাহিকতায় দলবদল করে নতুন ঠিকনায় নাম লিখিয়েছেন ডেভিড ভিয়া, মারিও গোমেজ, এরিক আবিদাল, এডিনসন কাভানি, কার্লোস তেভেজ, গঞ্জালো হিগুয়াইন, রাদামেল ফ্যালকাওরা। তারকা এসব ফুটবলারদের দলবদলের কাহিনী নিয়ে এই প্রতিবেদন।

লিখেছেন জাহিদুল আলম জয়

 

নতুন ঠিকানায় ভিয়া,

গোমেজ, আবিদাল

চলমান বদলবদলের বাজারে স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনা থেকে দুইজন তারকা ফুটবলার অন্য ক্লাব খুঁজে নিয়েছেন। ইনজুরি ও ফর্মহীনতার কারণে তারকা স্ট্রাইকার ডেভিড ভিয়াকে ছেড়ে দিয়েছে কাতালান শিবির। স্পেনের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতাকে দলভুক্ত করেছে আরেক স্প্যানিশ ক্লাব এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। ক্যান্সার জয়ী এরিক আবিদালের সঙ্গে বার্সেলোনা চুক্তি নবায়ন না করায় নতুন ক্লাবে যাওয়া নিশ্চিত ছিল ফরাসী ডিফেন্ডারের। স্বদেশী ও সাবেক ক্লাব মোনাকোতে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে সেটিই করেছেন আবিদাল। জার্মান স্ট্রাইকার মারিও গোমেজের বায়ার্ন মিউনিখ ছেড়ে যোগ দিয়েছেন ইতালিয়ান ক্লাব ফিওরেন্টিনায়।

কলম্বিয়ান তারকা রাদামেল ফ্যালকাওকে হারিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় ছিল এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। অবশেষে ফ্যালকাওয়ের বিকল্প খুঁজে পেয়েছে স্প্যানিশ লা লীগার ক্লাবটি। কলম্বিয়ান সুপারস্টারের পরিবর্তে বার্সেলোনা থেকে ডেভিড ভিয়াকে দলে ভেড়ানো ভিড়িয়েছে এ্যাটলেটিকো। ইতোমধ্যে ৩১ বছর বয়সী ভিয়াকে বরণও করে নিয়েছেন নতুন ক্লাবের ভক্ত-সমর্থকরা। নয়া ক্লাবে এসে ভিয়াও কথা দিয়েছেন, ফ্যালকাওয়ের শূন্যস্থান পূরণ করবেন এবং দলকে শিরোপা জেতাতে অবদান রাখবে। প্রতিশ্রুতি রক্ষার পথে শুরুটা দুর্দান্ত করেছেন সুদর্শন ভিয়া। স্প্যানিশ সুপার কাপের প্রথম লেগের ম্যাচে সাবেক ক্লাব বার্সেলোনার বিরুদ্ধে অসাধারণ খেলেন স্প্যানিশ তারকা। ১-১ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচটিতে এ্যাটলেটিকোর হয়ে গোলটি করেন ভিয়া। এটি নতুন ক্লাবের হয়ে তাঁর প্রথম গোল। সেই সঙ্গে বার্সার অবহেলার জবাবটাও দিয়েছেন দাঁতভাঙ্গা।

david-villa-2

২০১০ সালে ৪০ মিলিয়ন ইউরোতে ভ্যালেন্সিয়া থেকে বার্সায় যোগ দেওয়া ভিয়াকে এবার লোকসান করে বদলি হতে হয়েছে। মাত্র ৫১ লাখ ইউরোর বিনিময়ে এ্যাটলেটিকো চুক্তি করছে এই সুদর্শন তারকার সঙ্গে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৫১ কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি মৌসুমেই ২১ লাখ ইউরো পাবে ন্যূক্যাম্পের দল্িট। ভিয় যদি আগামী বছর এ্যাটলেটিকোতে থাকেন, তাহলে বার্সা পাবে আরও ২০ লাখ ইউরো। ভিয়া এর পরের বছরটাও থাকলে বাকি ১০ লাখ ইউরো পাবে বার্সা। আর এ সময়ের মধ্যে এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ যদি ভিয়াকে বিক্রি করে দেয়, তাহলে বিক্রীত অর্থের শতকরা ৫০ ভাগ দিতে হবে বার্সিলোনাকে। আসছে মৌসুমে এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে ভিয়ার অভিষেক হতে পারে বার্সেলোনার বিরুদ্ধেই। ২০১০ সালে ভ্যালেন্সিয়া ছেড়ে বার্সয় যোগ দেন ডেভিড ভিয়া। স্প্যানিশ জায়ান্টদের হয়ে তিনি ১১৯ ম্যাচে করেন ৪৮ গোল। গত মৌসুমে বার্সার জার্সি গায়ে তেমন আলো ছড়াতে পারেননি। দুর্দান্ত সব স্ট্রাইকারদের ভিড়ে পাত্তাই পাচ্ছিলেন না এই স্প্যানিশ। স্পোর্টিং গিজনে ক্যারিয়ার শুরু করা এই তারকা তাই ন্যু ক্যাম্প ছাড়াটাই উপযুক্ত মনে করেছেন।

ইতালিয়ান ক্লাব ফিওরেন্টিনা মারিও গোমেজের নতুন ঠিকানা। গোমেজকে পেতে ইতালিয়ান ক্লাবকে  ঠিক কত টাকা খরচ করতে হয়েছে সেটা জানা যায়নি। দেশটির এক পত্রিকার দাবি, অঙ্কটা ১ কোটি ৫০ লাখ ইউরো।

পেশাদার ফুটবলের শুরুটা হয়েছিল মোনাকোতে, ২০০০ সালে। প্রায় এক যুগ পর স্বদেশি ক্লাব মোনাকোতেই ফিরে এসেছেন সাবেক ফরাসি ডিফেন্ডার এরিক আবিদাল। প্রথমবার দুই বছর মোনাকোতে ছিলেন। বার্সেলোনার সাবেক ডিফেন্ডার আবিদাল এবার ফিরেছেন এক বছরের চুক্তিতে। ৩৩ বছর বয়সী এই লেফট ব্যাক ২০০২ সালে মোনাকো ছাড়ার পর ফ্রান্সের আরও দুটো ক্লাব লিল ও লিওঁতে খেলে ২০০৭ সালে বার্সেলোনায় যোগ দেন। জুন মাসে বার্সার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় তার। শুরু থেকে বার্সার প্রথম একাদশে নিয়মিত সুযোগ পেলেও ২০১১ সালের শুরুর দিকে যকৃৎ সমস্যা আবিদালের ফুটবল-জীবনকে প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। গত বছরের এপ্রিলে যকৃৎ প্রতিস্থাপন করে মাঠে ফিরলেও কাতালান শিবিরে আর নিয়মিত হতে পারেননি। স্প্যানিশ জায়ান্টরা তাই আর আগ্রহ দেখাননি আবিদালকে দলে রাখতে। এ কারণেই ফিরে গেছেন পুরনো ঠিকানায়।

 

রেকর্ড গড়ে নাপোলি ছেড়ে পিএসজিতে কাভানিEdinson-Cavani-2

গত মৌসুম ইতালিয়ান সিরি এ লীগে দুর্দান্ত পারফরমেন্স প্রদর্শন করে লাইমলাইটে চলে আসেন এডিনসন কাভানি। উরুগুইয়ান এই স্ট্রাইকার নাপোলির হয়ে ধারাবাহিক সাফল্য দেখান। বিশেষ করে প্রতিপক্ষের জাল খুঁজে পেতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। ২০১০ সালে ইতালির আরেক ক্লাব পালের্মো থেকে নাপোলিতে যোগ দিয়েছিলেন। নাপোলিতে তিন মৌসুমে ৭৮ গোল করেন তিনি। ২০১২-১৩ মৌমুমে সিরি এ’র সর্বোচ্চ গোলদাতার গৌরব অর্জন করেন। করেন সর্বোচ্চ ২৯ গোল। চ্যাম্পিয়ন জুভেন্টাসের থেকে নয় পয়েন্ট কম পেয়ে নিজ ক্লাব নাপোলিকে রানার্সআপ করতে অবদান রাখেন। এরপর ফিফা কনফেডারেশন্স কাপে নিজ দেশ উরুগুয়ের হয়েও নজরকাড়া পারফরমেন্স প্রদর্শন করেন ২৬ বছর বয়সী এই তারকা। যে কারণে চলমান দলবদলের মৌসুমে কাভানির দিকে দৃষ্টি পড়ে বিশ্বের বাঘা বাঘা ক্লাবের। এ তালিকায় ছিল স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ, দুই ইংলিশ পরাশক্তি ম্যানচেস্টার সিটি ও চেলসি। সবমিলিয়ে দলবদলের বাজারে কাভানিকে নিয়ে রীতিমতো রশি টানাটানি চলছিল। তবে শুরু থেকেই ফরাসী ক্লাব প্যারিস সেইন্ট-জার্মেইন (পিএসজি) এগিয়ে ছিল কাভানিকে দলভুক্ত করার ব্যাপারে। অবশেষে ধারণাই সত্য হয়েছে। জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে আনুষ্ঠানিকভাবে পিএসজিতে নাম লিখিয়েছেন কাভানি।

ফরাসী লীগ ওয়ান চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে উরুগুয়ের ফরোয়ার্ডের চুক্তির মেয়াদ পাঁচ বছর। কাভানিকে দলভুক্ত করতে পিএসজি খরচ করেছে রেকর্ড ৬৪ মিলিয়ন ইউরো। এর ফলে ফ্রেঞ্চ লীগের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড় এখন কাভানি। এর আগে লীগ ওয়ানের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড় হওয়ার রেকর্ড গড়েন চলমান দববদলেই এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ছেড়ে মোনাকোতে যোগ দেয়া রাদামেল ফ্যালকাও। কলম্বিয়ান তারকা মোনাকোতে এসেছেন ৬০ মিলিয়ন ইউরোর কাছাকাছি মূল্যে। পিএসজিতে যোগ দেয়ার পর ২৬ বছর বয়সী কাভানি সবার আগে জানিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ের স্বপ্নের কথা। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব। আর চ্যাম্পিয়ন্স লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ জানাতেও সক্ষম। আমি এখানে আসতে পেরে খুশি। এই লীগে অনেক ভাল ভাল ফুটবলার খেলে থাকেন। পিএসজিতেও অনেক বিখ্যাত ফুটবলার আছেন। আমার লক্ষ্য থাকবে দলকে সেরা সাফল্য উপহার দেয়া।’ ইউরোপের সেরা ক্লাব টুর্নামেন্টের শিরোপা পরের কথা। আপাতত পিএসজি সমর্থকরা সুইডিশ স্ট্রইকার জ¬াতান ইব্রাহিমোভিচের সঙ্গে কাভানির জুটি দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেণ। গত মৌসুমে ইব্রাহিমোভিচের ৩০ গোলের সুবাদে দেড় যুগ পর পিএসজি লীগ শিরোপা জয় করে। কাভানি নিজেও ইব্রার সঙ্গে খেলার জন্য উন্মুখ। অবশ্য গুঞ্জন আছে, কাভানি আসায় পিএসজি ছাড়তে চাচ্ছেন ইব্রাহিমোভিচ। কিন্তু এসব নিয়ে ভাবছেন না কাভানি। তিনি সাবেক বার্সেলোনার তারকাকে প্রশংসার ভাসিয়েছেন, ‘ইব্রা বিশ্বখ্যাত ফুটবলার। তার পাশে খেলে শিরোপার জন্য চেষ্টা করা আমার জন্য হেব দারুণ ব্যাপার। আমার লক্ষ্য থাকবে সবসময় সেরাটা দেয়ার। ইব্রা বিশ্বমানের ফুটবলার। তাঁর সতীর্থ হতে পেরে আমি গর্বিত। আশা করছি তাঁর সঙ্গে ভাল একটি জুটি গড়তে পারবো।’ পিএসজি প্রেসিডেন্ট নাসের আল-খেলাফিও কাভানিকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, ‘আমরা তাঁর (কাভানি) সামাথ্য সম্পর্কে জানি। আশা করছি আমাদের প্রত্যাশার প্রতিদান সে দিতে পারবে। আমরা আত্মবিশ্বাসী কাভানি ভাল করবে।’

 08.Walker.Utd20455914

 তেভেজ জুভেন্টাসে,

নাপোলিতে হিগুয়াইন

২০১৩-১৪ মৌসুমে পুরনো ঠিকানা বদলে নতুন ক্লাবে আস্তানা গেড়েছেন কার্লোস তেভেজ ও গঞ্জালো হিগুয়াইন। এই দুই আর্জেন্টাইন তারকাই বেছে নিয়েছেন ইতালিয়ান সিরি এ লীগ। ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি থেকে ফরোয়ার্ড তেভেজ এসেছেন জুভেন্টাসে আর স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে স্ট্রাইকার হিগুয়াইন নোঙর ফেলেছেন নাপোলিতে।

নতুন ক্লাবে যোগ দেয়ায় এই দুই তারকা নতুন মৌসুমে অনেকটাই চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নামছেন। ইতোমধ্যে দু’জনেরই নতুন ক্লাবের হয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে। তবে আসল লড়াই শুরু হয়েছে শনিবার (২৪ আগস্ট) থেকে। কেননা ওইদিন শুরু হয়েছে ২০১৩-১৪ মৌসুমের ইতালিয়ান সিরি এ লীগ। মর্যাদাপূর্ণ ও জমজমাট এই আসরে খেলার জন্য মুখিয়ে আছেন তেভেজ, হিগুয়াইন ও গোমেজ। নতুন মৌসুম শুরুর দিনে মুখোমুখি হয় ভেরোনা-এসি মিলান ও স্যাম্পডোরিয়া-জুভেন্টাস। সঙ্গতকারণেই গত শনিবার সিরি এ লীগে অভিষেক হয়েছে ২৯ বছর বয়সী তেভেজের। আজ রবিবার (২৫ আগস্ট) অভিষেক হবে হিগুয়াইনের। এদিন আর্জেন্টাইন তারকার দল নাপোলি খেলবে বোলোগ্নার বিপক্ষে। সোমবার (২৬ আগস্ট) অভিষেক হবে জার্মান তারকা মারিও গোমেজের। এদিন গোমেজের ক্লাব ফিওরেন্টিনা লড়বে ক্যাটানিয়ার বিরুদ্ধে।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ, স্প্যানিশ লা লীগা ও জার্মান বুন্দেসলীগায় খেলা হলেও ফুটবল ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ইতালিয়ান লীগে খেলেননি তেভেজ, হিগুয়াইন ও গোমেজ। তবে এবার সেই বন্ধ্যাত্ব ঘুচঁতে যাচ্ছে তিন ত্রয়ীর। ২০০৯ সালে ম্যানচেষ্টার সিটি ছেড়ে ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেডে যোগ দেন তেভেজ। সেখানে চার বছর কাটানোর পর শুরু হওয়া মৌসুমের জন্য ইতালিয়ান ক্লাব জুভেন্টাসের সাথে তিন বছরের চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এজন্য জুভেন্টাসকে গুনতে হয়েছে ১০ মিলিয়ন পাউন্ড। ইতোমধ্যে জুভেন্টাসের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন তেভেজ। ইতালিয়ান সুপার কাপে ল্যাজিওকে ৪-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জয় করে জুভেন্টাস। ওই ম্যাচে নতুন ক্লাবের হয়ে প্রথম গোল করেন তেভেজ। তবে ইতালিয়ান সিরি এর লীগের দিনেই অভিষেক হওয়ার কথা তেভেজের। তাই নিজের শুরুটা স্মরনীয় করতে চান আর্জে›আইন তারকা, ‘এই প্রথম ইতালিয়ান লীগে খেলতে নামবো। তাই আমি বেশ রোমাঞ্চিত। নতুন পরিবেশ, নতুন ড্রেসিংরুম। সবকিছুই নতুন। অবশ্য সবকিছুর সাথে মানিয়েও নিয়েছি আমি। তাই লীগে ভালো শুরুর অপেক্ষায় আছি। সবকিছু ঠিকঠাক মত হলে ভালোই লাগবে।’ ম্যানসিটির হয়ে গেল চার বছরে ১০৭ ম্যাচে ৫৮ গোল করেন তেভেজ।

তেভেজ ইংলিশ লীগ থেকে আসলেও স্প্যানিশ ক্লাব ছেড়ে এসেছেন হিগুয়াইন। রিয়াল মাদিদের সঙ্গে ছয় বছরের সর্ম্পকের ইতি টানেন তিনি। এই ছয় বছরে ১৯০ ম্যাচে ১০৭ গোল করেন আর্জেন্টাইন এই স্ট্রাইকার। হিগুয়াইনের এমন দুর্দান্ত পারফরমেন্সে মুগ্ধ হয়েই তাকে দলে ভিড়িয়েছে ডিয়েগো ম্যারাডোনার সাবেক ক্লাবে নাপোলি। ৩৪.৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে পাঁচ বছরের জন্য নাপোলিতে নোঙর ফেলেছেন হিগুয়াইন। তেভেজর মত হিগুয়াইনও ইতোমধ্যে নাপোলির হয়ে ম্যাচ খেলেছেন। চলতি মাসের ১০ আগষ্ট বেনফিকার বিরুদ্ধে নতুন ক্লাবের হয়ে মাঠে নামেন সাবেক রিয়াল তারকা। ম্যাচে ২-০ গোলে জয় পায় নাপোলি। ম্যাচের দ্বিতীয় গোলটি আসে হিগুয়াইনের পা থেকে।  নতুন ক্লাবের হয়ে শুরুটা ভাল করতে পেরে বেজায় খুশি হিগুয়াইন। এই সফলতা ধরে রেখে লীগে ভাল করার কথা জানিয়েছেন তিনি, ‘নেপোলির হয়ে ইতোমধ্যে একটি ম্যাচ খেলেছি। খুব ভালো লাগছে যে, প্রথম ম্যাচটা জিততে পেরেছি। তবে আসল লড়াইটা হবে লীগ ও চ্যাম্পিয়ন্স লীগে। এই দু’টি টুর্নামেন্টে ভালো করতে চাই। তার আগে লীগের শুরুটা ভালো করতে হবে।’

ফুটবল ক্যারিয়ারে এই প্রথম জার্মান ক্লাব ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছেন গোমেজ। ২০০৩ সালে জার্মান ক্লাব ভিএফবি স্টুটগার্টের হয়ে পথম খেলতে নামেন গোমেজ। এরপর ২০০৯ সালে নাম লেখান বেয়ার্ন মিউনিখে। সেখানে চার বছরে ১১৫ ম্যাচে ৭৫ গোলও করেন তিনি। তবে আসন্ন মৌসুমে নতুন জার্সিতে দেখা যাবে গোমেজকে। চার বছরের জন্য ২০ মিলিয়ন ইউরোতে ইতালিয়ান ক্লাব ফিওরেন্টিনায় যোগ দিয়েছেন তিনি। তেভেজ ও হিগুয়াইনের মতো নতুন জার্সিতে শুভ সূচনাই করতে চান জার্মান এই স্ট্রাইকার, ‘এটি নতুন একটি চ্যালেঞ্জে। এতদিন পরিচিত ক্লাবের হয়ে খেলেছি। এবার নতুন দলের হয়ে খেলবো। নিজের সর্বোচ্চ পারফরমেন্সই উজার করে দিবো। ভালো খেলার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’

Radamel_Falcao-1

 মোনাকোতে এসে ভুল

করিনি- ফ্যালকাও

দলবদলের মাসখানেক আগেও রাদামেল ফ্যালকাও বলেছিলেন, ‘আমি এ্যাটলেটিকোকে ভালবাসি’। সে সময় স্প্যানিশ ক্লাবে থাকার প্রত্যয়ও ছিল তাঁর কন্ঠে। কিন্তু কলম্বিয়ান স্ট্রাইকার কথা রাখতে পারেননি! অর্থের ঝনঝনানির শব্দে তিনি খুঁজে নিয়েছেন নতুন ঠিকানা। এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ নয়, এখন ফ্যালকাওয়ারের ক্লাবের নাম মোনাকো। ফরাসী এই ক্লাবে ২০১৩-১৪ মৌসুম থেকে যাত্রা শুরু করবেন ২৭ বছর বয়সী স্ট্রাইকার। অনেকেই বলছেন, দলবদলের ঠিকানা সঠিক হয়নি ফ্যালকাওয়ের। তবে এমন মনে করছেন না কলম্বিয়ার সুপারস্টার। সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন, ‘মোনাকোতে এসে আমি ভুল করিনি।’

প্রায় ছয় কোটি ইউরোতে রুশ ধনকুবের দিমিত্রি রাইবোলভলেভের মালিকানায় নতুন রুপে গড়া ওঠা মোনাকোতে যোগ দিয়ে ফুটবল বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন ফ্যালকাও। কারণ ইউরোপের বড় কোনো দলে তাকে আশা করছিলেন ভক্ত-সমর্থকরা। গেল মৌসুমে এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে চোখ ধাঁধানো নৈপূণ্যই এর প্রধান কারণ। তাছাড়া জাতীয় দলের হয়েও ফ্যালকাও স্বমহিমায় উজ্জ্বল। এ কারণে প্রায় সবার ধারণা ছিল, বড় কোনো ক্লাবে নোঙর ফেলবেন বর্তমান কলম্বিয়ার আশা-ভরসার প্রতীক। কিছুদিন গুঞ্জনও ছিল, রিয়াল মাদ্রিদে যাচ্ছেন। কিন্তু সবার ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে তিনি মোনাকোতে নাম লিখিয়েছেন। অনেকেই তাই বিস্মিত হয়েছেন। কিন্তু ফ্যালকাও নিজেই বলছেন, তার সিদ্ধান্ত সঠিক, তিনি কোনো ভুল করেন নি। সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ বছরের জন্য মোনাকোতে যোগ দেয়া ফ্যালকাও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য পরিষ্কার, তা হলো সবগুলো টুর্নামেন্ট জেতা।’ ফরাসী ক্লাবে আসার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি খেলোয়াড়ই চায় মোনাকোর মতো একটা ইনস্টিটিউটে আসতে। যখন জানবেন আপনি একটি প্রকল্পের মূল অংশ, তখন আপনি আস্থা আর শান্তি পাবেন। আমার বিশ্বাস আমি এখানে এসে ভুল করিনি।’

ফ্যালকাও আরও বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন আমি মোনাকোতে এসে ভুল করেছি। কিন্তু আমি নিশ্চিত আমি কোনো ভুল করিনি। আমার এখন একটাই লক্ষ্য, দলকে ট্রফি জয়ে সহায়তা করা। আমি সবসময় বলি, আমার মূল লক্ষ্য গোল করা  ও দলের জয়ে সাহায্য করা। এখন আমি নতুন লীগে দলকে চ্যাম্পিয়ন করাতে চাই। এখানে আসতে পেরে আমি খুশি।’ ২০১১ সালে এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে যোগ দিয়েই ইউরোপা লীগ জয়ের মধুর স্বাদ পেয়েছিলেন ফ্যালকাও। ১২ গোল করে প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ গোলদাতাও হন তিনি। এরপর জয় করেন উয়েফা সুপার কাপও। এ্যাটলেটিকোর হয়ে ৬৭ ম্যাচে ৫২ গোল করা ফ্যালকাওকে বর্তমানে অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে ধরা হয়।

ই-মেইলঃ zajoy1@gmail.com

 

 

 

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.