দেশীয় ফ্যাশন শিল্প এবং এর বাস্তবতা

দেশীয় ফ্যাশন শিল্প এবং এর বাস্তবতা

ফ্যাশন

আমার এক ফ্যাশনেবল সাংবাদিক বন্ধু প্রতিবছর ঈদ শপিংয়ের আগে আমার পরামর্শ নেয়। জানতে চায় কোন হাউজ ভালো পাঞ্জাবি তৈরি করেছে। বেশিরভাগ সময়েই তাকে দেশীয় পাঞ্জাবি পরতেই দেখেছি।  কিন্তু গেল ঈদের দিন দেখা হল; দেখি সে পরে আছে একটি বিদেশী পাঞ্জাবি। স্বভাবতই আমি জানতে চাই এর কারণ। সে বলে, দেখ, আমি বড় হাউজগুলো ঘুরে দেখেছি। কিন্তু কারো পাঞ্জাবি আমার পছন্দ হয়নি। বৈচিত্র্য নেই। কাপড়ের মান, ডিজাইন এবং ওভারঅল ফিনিশিং আমার কাছে আশাব্যঞ্জক মনে হয়নি। অথচ দাম কিন্তু কম নয়। তাহলে কেন আমি কিনতে যাব। আমার উদ্দেশ্য তো ফ্যাশন করা। যুক্তি অকাট্য। কেবল সে নয়। এই দলে আছেন আরো অনেকেই। যাদের হয়ত আমরা চিনি কিংবা চিনি না। এরা সচ্ছ্বল শ্রেণীর। দেশে বসে বিদেশী পোশাক যেমন কিনতে পারেন তেমনি বিদেশে গিয়েও শপিং করাটা তাদের কাছে কোন বিষয়ই নয়। তা সত্ত্বেও দেশের টানে তারা পুরোটা না হলেও দেশি পোশাকের প্রতি আগ্রহবোধ করেছেন। দিন বা রাতের অনুষ্ঠানে গেলেই দেখা গেছে দেশীয় ফ্যাশন হাউজের সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি বা পাঞ্জাবিতে। কিন্তু কিন্তু তাদের সেই আগ্রহে ভাটা টান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর কারণটা আমার ঐ বন্ধুর বক্তব্যের মধ্যেই রয়েছে। কিন্তু এই পরিস্থিতির জন্য, এই পরিবর্তিত মনোভাবে জন্য তাদের তাদের কি আসলেই দোষ দেয়া যায়?

 

আমরা যারা ফ্যাশন জার্নালিজম করি, দেশীয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নকে একটি আন্দোলন হিসেবে দেখি। এর উন্নয়নে ভূমিকা রাখাকে একটি নৈতিক দায়িত্ব হিসেবেই মনে করি। কিন্তু আমাদের সে প্রত্যাশা পুরণ হয়নি। ক্রমশ মনে হচ্ছে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। আমি যেসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি সেখানে কেবল অন্যদেশের পোশাক বিক্রি হয় এমন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনও ছাপিনি। অর্থনীতির উন্মুক্ত বাজার পরিস্থিতিতে অনেকেই এটাকে বালখিল্য বলেছেন। তা সত্ত্বেও সরে আসিনি এখনো। এই মনোভাব কি আসলেই সম্মান পাচ্ছে?

 

মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিদেশী পণ্য দেশে আসবে এটা নির্জলা বাস্তব। পৃথিবীর সব দেশেই সেটা হচ্ছে। আমরাও এর বাইরে নই। সেখানেও লোকাল ইন্ডাস্ট্রি টিকে আছে কেবল দেশপ্রেম দিয়ে নয়, উন্নত সেবা আর গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য দিয়ে। এই জায়গাতেই আমাদের গলদ। সাধারণভাবে ভারত এবং পাকিস্তান থেকে সারা বছরই পোষাকসহ অন্যান্য পণ্য আমাদের দেশে এসে থাকে। ট্র্র্যাডিশনাল বিদেশী পোশাক অর্থাৎ শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ এবং পাঞ্জাবি আসে দুটো দেশ থেকে। আনস্টিচড থ্রি-পিস এবং ড্রেস মেটেরিয়ালও ঐ দুটো দেশ থেকেই আসে। এদের মান বিভিন্ন। আমাদের দেশে মাননিয়ন্ত্রণের কোন ব্যবস্থা নেই। কাজেই সবধরণের পণ্যই চলে এসে বাজার ভাসিয়ে দেয় বেনো জলের মতো।

গত দুবছরে বাংলাদেশে ভারতের বাজারে বড় দাঁত বসিয়েছে পাকিস্তান। সেদেশের লন আর অন্যান্য সালোযার-কামিজে সয়লাব বাজার। এবছর তো চিত্রটা ছিল বড়ই হতাশাজনক। এই দু’দেশের উতোরচাপানে দিশেহারা আমাদের ফ্যাশন হাউজগুলো। সম্প্রতি একটি রাউন্ডটেবিল বৈঠকে এমনই হতাশা ফুটে উঠেছে উদ্যোক্তাদের বক্তব্যে। তবে এর জন্য জোরালো কোন পরিকল্পনার কথা তেমন কওে শোনা যায়নি।

ভারত এবং পাকিস্তান থেকে অ্যাকসেসারিও আসে। এই দুই দেশ ছাড়াও থাইল্যান্ড, চীন, কোরিয়াসহ অন্যান্য দেশ থেকেও এ ধরণের পণ্য আসে। যেমন বহুজাতিক জুতো কোম্পানি বাটাও বাংলাদেশে তৈরি জুতোর পাশাপাশি তাদের অন্যান্য দেশের ফ্যাক্টরিতে তৈরি পণ্যও বাংলাদেশে বাজারজাত করছে। এই যুদ্ধে দেশীয় ফ্যাশন হাউজের পাশে সবসময়েই থেকেছে মিডিয়া। কিন্তু এবারের চিত্রটা হতাশা বাড়াচ্ছে। কারণ বাংলাদেশী পোশাকের ব্যানারেই এবারের ঈদে একাধিক ফ্যাশন হাউজ সরাসরি বিদেশী পোশাক বাজারজাত করছে। এখানে আশার কথা এই যে এরা অন্তত মানটা পরখ করেই আনছেন। শ্রেয়তর মানের হওয়ায় কিনছেনও ক্রেতা। তবু মনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। দেখতে হচ্ছে মুক দর্শকের মতো।

ফ্যাশন১

আশির দশকের শেষার্ধে বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির ভিত তৈরি হয়। সাপ্তাহিক বিচিত্রার উদ্যোগে। এই ইন্ডাস্ট্রির পালে সুবাতাস পায় বস্তুত নব্বই দশকে। মধ্য নব্বই থেকে নতুক শতকের শতকের প্রথম পাঁচ বছরে উন্নয়ন ছিল আশাব্যঞ্জক। পরবর্তীতে শীর্ষ হাউজগুলো সম্পৃক্ত পরিস্থিতি উপভোগ করতে থাকায় এবং সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে ধরণের ভ্যালু অ্যাডিশন প্রয়োজন ছিল তা হয়নি। ফলে এক ধরণের স্থবিরতা বিরাজ করছে। উপরন্তু নেতিবাচক একাধিক অনুঘটকও এর সঙ্গে যোগ হয়েছে। প্রথমত. ব্যবসায়িক সাফল্য। এটাকে নেতিবাচক বলা হচ্ছে। কারণ, ব্যবসায়িক সাফল্যকে কাজে লাগিয়ে হাউজের অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন প্রয়োজন সেটা হয়নি এবং হচ্ছে না। আশাও সুদূরপরাহত বলে মনে হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে বলা যেতে পারে সেদিকে মনোযোগ দেয়ার প্রয়োজন উদ্যাক্তারা অনুভব করছেন না। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমরা ধর্তব্যের মধ্যে নয়। দ্বিতীয়ত. ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ফ্যাশন হাউজ। আগে তবু ঈদ আসলে নতুন নতুন হাউজের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা শোনা যেত। এখন তো সারা বছরই সেটা হচ্ছে। যাকে বলে গণবুটিক। বাঙালির সমস্যা একটা। একজন কোন একটা কিছুতে সাফল্য পেলেই হলো। অমনি শুরু হয়ে যায় ইঁদুর দৌড়। এর ফলে পোশাক উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু ফ্যাশনেবল প্রডাক্ট বলতে যা বোঝায় তা হচ্ছে না। নান্দনিকতার শর্তগুলো যেমন, তেমনি ডিজাইনের শর্তগুলোও পূরণ হচ্ছে। মানা হচ্ছে না মান নিয়ন্ত্রণের ন্যূনতম ব্যকরণ। এর জন্য বস্তুত যে অবকাঠামো প্রয়োজন পড়ে থাকছে না কারো। নির্দিষ্ট কিছু জমিন অলঙ্করণ মাধ্যমের ব্যবহারে পোশাক তৈরি হচ্ছে। এখানে হাউজগুলোর বেশির ভাগই নিজেরা উৎপাদক নয়। বরং কিছু প্রডাকশন হাউজরা এই কাজটা করে দেয়। এরাই বেশিরভাগ হাউজের জন্য কাপড় তৈরি করে দিচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের ডিজাইন করা পোশাকও হাউজগুলো নিয়ে নিচ্ছে। ফলে লেবেল আর ট্যাগ ছাড়া দশটা হাউজের পোশাক পাশাপাশি রাখলে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে যায় কোনটা কোন হাউজের। এছাড়া জমিন অলংকরণে যে ধরণের কাঁচামাল ব্যবহার করা হয় তার মানও নিয়ন্ত্রিত নয়। এমনকি এসর উপকরণ শরীরের জন্য, ত্বকের জন্য এবং এমনকি পরিবেশের জন্য বান্ধব কিনা তাও দেখা হয় না। সেই সচেতনতাও অনুপস্থিত। খাদ্যের ভেজাল রোধে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে মাঝে মাঝে সচল হতে দেখি। কিন্তু পোশাকের বেলায় সেটা হয় না। এজন্য সার্বিক কাঠামোই দায়ী। এটা কেবল আমার অবজারভেশন তা নয়। কয়েকদিন আগে এক অনুষ্ঠান শেষে একই গাড়িতে ফিরতে ফিরতে শীর্ষসারির এক ডিজাইনারের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির নানা বিষয়ের আলোচনায় তিনিও স্বীকার করে নিলেন বর্তমানের বাস্তবতা।

 

ইন্ডাস্ট্রিতে বর্তমানে ডিজাইনারের সংখ্যা প্রচুর। যদিও প্রকৃত ডিজাইনারের অভাব প্রকট। তাছাড়া এখনও ফ্যাশন হাউজগুলো চারুকলা থেকে পাশ করাদেরই প্রাধান্য দিচ্ছে। ফলে ফ্যাশন স্কুল থেকে আসা ডিজাইনাররা ঠিকমত কাজের সুযোগ পাচ্ছে না। এরা বেশিরভাই চলে যাচ্ছে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে। কিংবা বায়িং হাউজে। যা শিখেছে তার সামান্য হলেও সেখানে তারা কাজে লাগাতে পারছে। বেতনও সময়োপযোগী এবং বাস্তবসম্মত। যেটা নেই ফ্যাশন হাউজে। এখানে পার্টটাইমারদের ভীড়। একজন ডিজাইনার অনেকগুলো হাউজে কাজ করেন।

অন্যদিকে ফ্যাশন স্কুল থেকে যারা বেরোচ্ছে তারা সবাই অসাধারণ এমনটাও ভেবে নেয়ার কারণ নেই। এজন্য এখানে স্কুলগুলোর দায়ও স্বীকার করে নিতে হবে। তবে পরিতাপের বিষয়। পাশ করে আসা ডিজাইনারদের অন্যান্য দেশে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিই হয় তাদের সৃজনজগত। আমাদের এখানেই তার ব্যতিক্রম। এখানে তারাও যেমন এই ইন্ডাস্ট্রিতে অনধাবণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে তেমনি উদ্যোক্তারাও তাদের আত্মীকরণে অনিহা দেখাচ্ছেন।

আরো একটি বিষয় উল্লেখ করতেই হয়, ইন্টারনেট আমাদের অনেক সুবিধা করে দিয়েছে। সেখান থেকে ডিজাইন নিয়ে হুবহু অথবা একটু-আধটু পরিবর্তন করে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। কারণ আমরা বিশ্বাস করি শর্টকার্ট সাফল্যে। তাছাড়া আমাদের  ইন্ডাস্ট্রিতে নিরীক্ষা প্রবণতা কম। তা করতে গেলে যে ঝক্কি সামলাতে হয় এবং বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়ে তা করতে নারাজ উদ্যোক্তারা। বরং একই সময়ে কতো সহজে বেশি পোশাক তৈরি করা যায় সেদিকেই আগ্রহী তারা। এ কারণেই বলাই বাহুল্য, আরএনডি’র বালাই নেই কোন। ঝুঁকি নেয়ার ব্যাপারে ভীষণই সংযমী। আর কাট আর প্যাটার্ন বেজড কাজও তেমন একটা হয় না। এখানকার রীতি গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিব্যি টিকে থাকা। আর তাতে তো সাফল্য আসছে। চৌদ্দ কোটির বিশাল বাজারের একটা বড় অংশ দেশী ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি থেকে পোশাক কিনে থাকেন। বিদেশে যেখানে উচ্চ মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্তরাই এর ভোক্তা আমাদের দেশে তা নয়। বরং যে কেউই কিনতে পারে। সেজন্য এসব নীতিকথার ধার ধারার প্রয়োজনও কেউ বোধ করে না। এখানে সমালোচনাকে নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখা হয়।

 

এক সময় দেশীয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি আন্দোলনের রূপরেখা ছিলই আমাদের দেশীয় তাঁতশিল্পের উন্নয়ন। মরা গাঙে জোয়ারও এসেছে এই দীর্ঘ তিন দশকে। কিন্তু সেখানে কেমন যেন পরস্পরবিরোধী ছবিই স্পষ্ট। মধ্যবর্তী সময়ে শাড়ির বাজার বেড়েছে। দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও ঘটেছে বিস্তার। বর্তমানে দেদারসে শাড়ি রপ্তানী হচ্ছে। মূল বাজার ভারত। তবে সেখানে খুব একটা ভ্যালু অ্যাডেড প্রডাক্ট যাচ্ছে না। কারণ তারা নিয়ে যাচ্ছে তাদের নির্দিষ্ট একটা ভোক্তাশ্রেনীর জন্য। যারা নিন্ম মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত। ফলে বেশি যাচ্ছে কমদামী শাড়ি। যে শাড়ি তাদের দেশে উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক বেশি। উপরন্তু টাকার বাটা হিসেবেও তারা লাভবান হচ্ছে। তবে এই জোয়ারকে ঋণাত্মক বিবেচনার সুযোগ নেই। কারণ তাঁতিরা কাজ পাচ্ছে। কয়েকটি তাঁত এলাকা সরগরম হয়েছে এজন্যই। বৃহত্তর অর্থে বাংলাদেশ পাচ্ছে বিদেশী মুদ্রা। পাবনার শাড়িই সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হচ্ছে। এরপর টাঙ্গাইল। তারপরে রয়েছে জামদানী।

শাড়ির পাশাপাশি যেসব মেটেরিয়াল দেশে হচ্ছে তা সব যে মানসম্পন্ন তা বলা যাবে না। ফলে দেশীয় পোশাক শিল্পে পোশাক ডিজাইনের জন্য প্রয়োজনীয় ফ্যাব্রিকের অভাব প্রকট হচ্ছে দিনকে দিন। এজন্যই ইসলামপুরের কাপড়ের ওপর ভরসা করতেই হচ্ছে টিকে থাকার জন্য। তাই হলফ করে বলা যাচ্ছে না যে দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলো যে পোশাক তৈরি করছে তার সবটাই দেশীয় তাঁতের কাপড়ে তৈরি।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ যে নেই তা নয়। তবে সেজন্যও আমাদের ভাবতে হবে। সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতাই হতে পারে সমস্যা সমাধানের প্রধান পদক্ষেপ।

sksaifurrahman@gmail.com

 

লেখক: ফ্যাশন ও বিউটি বিষয়ক লাইফস্টাইল ম্যাগ্যাজিন ক্যানভাসের নির্বাহী সম্পাদক ও ফ্যাশন কলামিস্ট। জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। এসএমই ফাউন্ডেশনের রিসোর্স পারসন।

 

 

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.