দেশে অনুমোদন পাচ্ছে নতুন ওয়াইম্যাক্স

দেশে অনুমোদন পাচ্ছে নতুন ওয়াইম্যাক্স

wimax

দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা বিস্তৃতি করার লক্ষ্যে নতুন ওয়াইম্যাক্স লাইসেন্স দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি। বিদ্যমান কোম্পানিগুলো লাইসেন্সিং গাইডলাইন অনুযায়ী নেটওয়ার্ক বাড়াতে ব্যর্থ হওয়ায় আরো কয়েকটি অপারেটরকে ওয়াইম্যাক্স লাইসেন্স দেয়া হবে। দেশে হঠাৎ ওয়াইম্যাক্স লাইসেন্স অনুমোদন নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। ২০০৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ওয়াইম্যাক্স লাইসেন্সের প্রকাশ্য নিলামে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। ৯ টি প্রতিষ্ঠান নিলামে অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত ২ টি প্রতিষ্ঠান প্রত্যেকে ২১৫ কোটি টাকা ফি দিয়ে লাইসেন্স নিয়েছিল। এখন দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন ওয়াইম্যাক্সে সম্ভাবনার চেয়ে সমস্যাই বেশি দেখা যাচ্ছে।

এদিকে দেশে মোবাইল অপারেটররা থ্রিজি সেবা দিতে যাচ্ছে। একইসাথে তারা ফোরজি সেবা দেওয়ারও সুযোগ পাচ্ছে। এমন মুহূর্তে নতুন ওয়াইম্যাক্স অপারেটর লাইসেন্স নিতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবে কিনা সে ব্যাপারে সংশয় রয়েছে। বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, বিশেষজ্ঞদের দিয়ে বর্তমানের গাইডলাইন সংশোধনের পর তা চূড়ান্ত করা হবে। এরপরই বিটিআরসি সিদ্ধান্ত নেবে কতগুলো প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়া যায়। নীতিমালা অনুযায়ী ওয়াইম্যাক্স অপারেটরদের লাইসেন্স প্রাপ্তির ৫ বছরের মধ্যে দেশের ৬৪ জেলার উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে সংযোগ পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখতে সক্ষম হয়নি। বেসরকারি খাতে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দেয়ার জন্য ওয়াইম্যাক্স অর্থাৎ ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টার অপারেবিলিটি ফর মাইক্রোওয়েভ অ্যাক্সেস বা ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস অ্যাক্সেস (বিডব্লিউএ) সেবা চালু করা হয়। দেশবাসীকে এতদিন পর্যন্ত সেবাটি দিয়ে আসছিল বাংলালায়ন ও কিউবি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানদ্বয় আশা অনুযায়ী সেবাটি সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আর তাই বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ ক্যাম্পেইন সফল করার লক্ষ্যে নতুন করে লাইসেন্স দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। ওয়াইম্যাক্স সংযোগব্যবস্থা গতিশীল করতে বিডব্লিউএ লাইসেন্সিং গাইডলাইনেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

২০০৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ওয়াইম্যাক্স লাইসেন্সের প্রকাশ্য নিলাম হয়। এতে সর্বোচ্চ ডাক উঠে ২১৫ কোটি টাকা। ৯ টি প্রতিষ্ঠান নিলামে অংশ নেয়। এতে লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলালায়ন কমিউনিকেশনস, ব্র্যাক বিডিমেইল নেটওয়ার্ক লিমিটেড এবং অজের ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড বাংলাদেশ লিমিটেড (কিউবি)। তবে চড়া মূল্যের কারণে ব্র্যাক বিডিমেইল নেটওয়ার্ক লিমিটেড লাইসেন্স গ্রহণে অসম্মতি জানায়। পাশাপাশি নিলামে প্রতিযোগীদের মধ্যে চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে যারা ছিল, তারাও পিছিয়ে যায়। সপ্তম স্থানে থাকা ম্যাংগো টেলিসার্ভিসেস লিমিটেড ওই লাইসেন্স গ্রহণে আগ্রহ দেখায়। এতে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিটিসিএলসহ মোট চারটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশে দ্রুতগতির তারবিহীন ইন্টারনেট ওয়াইম্যাক্স সেবা দেয়ার কথা ছিল। ২০০৮ সালে সরকারি কোম্পানি বিটিসিএল-এর জন্যে একটি লাইসেন্স রেখে বাকি তিনটির জন্যে নিলাম করা হয়। নিলামে দুই নম্বর অবস্থানে থাকা ব্র্যাক বিডি লাইসেন্স নেবে না বলে জানিয়ে দেয়। এরপর বিটিসিএলও ওয়াইম্যাক্স লাইসেন্স নেবে না বলে জানিয়ে দেয়। তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, সেই সময় প্রতিষ্ঠানগুলো যদি এই লাইসেন্স গ্রহণে অনাগ্রহী হয় তাহলে আজ এতদিন পর আর কেউ কি ওয়াইম্যাক্স লাইসেন্স নিতে আগ্রহী হবে?

প্রসঙ্গত, ওয়াইম্যাক্স হচ্ছে ওয়ার্লডওয়াইড ইন্টারঅপারেবিলিটি ফর মাইক্রোওয়েভ অ্যাকসেস-এর সংক্ষিপ্তরূপ। এটি একটি টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি, যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট থেকে শুরু করে পূর্ণাঙ্গ মোবাইল সেলুলার ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের তারবিহীন তথ্য আদানপ্রদান করা। মূলত আইইইই ৮০২.১৬ স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী এটি প্রণীত হচ্ছে, যার অপর নাম ওয়ারলেসম্যান। ওয়াইম্যাক্স নামটি দিয়েছে ওয়াইম্যাক্স ফোরাম। ২০০১ সালে স্টান্ডার্ড অনুযায়ী প্রযুক্তিটির বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে ওয়াইম্যাক্স ফোরাম প্রতিষ্ঠিত হয়। ফোরামের ভাষ্যমতে ওয়াইম্যাক্স হচ্ছে শেষ মাইল পর্যন্ত তারহীন ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের ব্যবস্থা, যা প্রচলিত কেবল বা ডিএসএল এর একটি বিকল্প প্রযুক্তি। বর্তমানে প্রচলিত ইন্টারনেট কানেকশনের বিকল্পগুলোর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ডায়াল আপ এক্সেস-এ সাধারণত স্পীড স্লো হয়ে থাকে। পিক আওয়ারে অনলাইনে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে। মডেম বা ডিএসএল এর মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড এক্সেস সার্ভিস দেয়া হয় বলে এই পদ্ধতিতে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড এক্সেস পেতে খরচ বেশি হয়।

টেলিফোনের ল্যান্ডলাইন ছাড়া এধরণের সংযোগ সম্ভব নয়। এছাড়া মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক অর্থাৎ জিএসএম প্রযুক্তি তৈরী হয়েছিলো টেলিফোনের জন্য। পরে কিছু নতুন টেকনিক্যাল অপশন যুক্ত করার মাধ্যমে ইন্টারনেট সার্ভিসের সুবিধা প্রদান করা হয়। ভবিষ্যতের নেট ব্যবহারের মাত্রা যে হারে বাড়ছে, তাতে এই কম্পাটিবল অপশন দিয়ে কাজ চলবে না। ব্যান্ডউইথের সীমাবদ্ধতা ছাড়াও অন্যান্য টেকনিক্যাল কারণে জিএসএম পদ্ধতিতেও উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ সম্ভব নয়। চেষ্টা করলে মিডিয়াম স্পীডের সংযোগ দেয়া যায়। কিন্তু তাতে খরচ অত্যন্ত বেশি। ওয়াইফাই হচ্ছে একটি সীমিত এলাকায় ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক জোন তৈরী করে ওয়াইফাই রয়টারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সংখ্যক গ্রাহককে নেট সুবিধা প্রদান করার একটি ব্যবস্থা। নানা ধরণের সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে সমাজের উচ্চ শ্রেণী থেকে নিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিকট সহজে এবং কম খরচে ইন্টারনেটকে সহজলভ্য করার লক্ষে যাত্রা করা উচ্চগতির বিশেষ ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক হচ্ছে এই ওয়াইম্যাক্স।

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.