পর্দার শেষ নবাব, বিদায় জনাব….

niru11

অবশেষে চলে গেলেন বড় পর্দার শেষ নবাব আনোয়ার হোসেন।

তিনি চলে গেলেন অব্যক্ত বোবা কান্না আর বুকভরা অভিমান নিয়ে। আমাদের মতো দেশের প্রকৃত গূণী মানুষেরা যেভাবে বিদায় নিয়ে চলে যান; তিনিও সেভাবে গেলেন।

এ কথা সত্যি যে, যে দেশে গুণী মানুষদের প্রকৃত মূল্যায়ন হয় না, প্রাপ্য স্বীকৃতি মেলে না; পরবর্তীতে সে দেশে গুণীদের জন্মহার হ্রাস পেতে থাকে। বর্তমানে আমেদর দেশে সে বাস্তবতাই পরিলক্ষিত হচ্ছে।

যে গুণি, মেধাবী মানুষটি চলে যাচ্ছেন; সেই শূণ্যতা তো পূরণ হচ্ছেই না, বরং দিনে দিনে বাড়ছে আবর্জনা। ভীড় বাড়ছে মেধাশূণ্যদের।

কিসে আসে দেশের উন্নতি? কিসে হয় জাতির উন্নয়ন?anwar hossain

দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, সৃজনশীল, গুণী, মেধাবী মানুষের হাত ধরেই একটি জাতি, একটি দেশ এগোয় সামনের দিকে। পৌঁছায় সুনির্দৃষ্ট লক্ষ্যে; অনেকটা বাবাদের মতোই। সন্তানরা যার হাত ধরে জীবন গড়ে, উন্নত জীবনের সোনার হরিণটি ধরে। একের পর এক সাফল্যের সিঁড়ি ভাঙ্গে।

বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা এতোটাই অপদার্থ যে, ভুলে যাই সেই পিতৃ্ঋণের সুবিশাল সেই দায়বদ্ধতা!

আনোয়ার হোসেন মারা যাবার পর পত্রিকায় প্রকাশিত একটা শিরোনামের ওপর বিশেষভাবে চোখ আটকে গেলো, ‘শেষ নবাবের দায়সারা গোছের বিদায়’। এটা যে কতোটা দুঃখজনক তা বলে-কয়ে বোঝানো যাবে না।

দীর্ঘ অর্ধশত বছরের অভিনয় জীবন কেটেছে যে এফডিসির চত্বরে সেখানেই নাকি তাঁর মরদেহের প্রতি যথার্থ সন্মান জানানো হয়নি! এফডিসির অনেক কর্মকর্তা, অনেক শিল্পী তাঁকে শেষবারের মতোন এক নজর দেখতেও নাকি যাননি! জানা যায়, এসব আগাম ভাবনার প্রেক্ষিতে তাঁর পরিবারের সদস্যরাও চাননি, তাঁর মরদেহ এফডিসিতে নিয়ে যাওয়া হোক।

সে যাই হোক; হয়তো তাঁকে আরো একটু বেশী অসন্মান করার জন্যই সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো।

সুদীর্ঘ পেশাগত জীবনে নানাভাবে অনেকবারই তাঁকে দেখেছি; সান্নিধ্য পেয়েছি। সব সময়ই তাঁর মাঝে একটা বিরাট চরিত্রের প্রকাশ লক্ষ্য করেছি। তিনি ছিলেন সব সময় প্রচন্ড আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন একজন মানুষ।

আনোয়ার হোসেন মানেই গোটা দেশের আপামোর মানুষের বুকের ভেতোর সযত্নে লালিত্য বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব সিরাজুদ্দৌলার প্রতিচ্ছবি। আনোয়ার আর সিরাজ মিলেমিশে একাকার!

আনোয়ার হোসেন মানেই একজন অভিনয় শিল্পী, যার অভিনয়ে সারাদেশের মানুষ এককথায় ছিলো মন্ত্রমুগ্ধ। যিনি আজীবন বেঁচে ছিলেন, এবং বেঁচে থাকবেন সাধারণ মানুষের প্রিয় মুখ হিসেবে। প্রিয় মানুষ হিসেবে। বোধকরি এই সুখটুকুই শেষাবধী থাকে চলে যাওয়া গুণীদের বুকের গভীরে। আর কিছু নয়।

প্রিয় নবাব, জনাব, আপনার জন্য আমাদের মতো গোটা দেশের সাধারণ মানুষের উদার চিত্তের অফুরাণ ভালোবাসা কালও যেমন ছিলো অমলিণ, আজও তেমনই আছে উজ্জ্বল। আপনার বিদেহী আত্মা এটা ভেবে সান্ত্বণা পেলে তাতে আমরাও শান্তি পাবো।

পরম করুণাময় আপনার বেহেশত নসীব করুন।

মাহাবুবুল হাসান নীরু

ক্যালগেরি, কানাডা

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.