পিলু শুধুই একটি বিড়াল নয়

পিলু শুধুই একটি বিড়াল নয়


পিলু আমার একমাত্র পোষা বিড়াল, ও দেখতে খুবই সরল মনের 

আর হ্যাঁ, পিলু কিন্তু প্যারালাইজড‌ , 

বেশ কিছু বছর আগে আমরা কক্সবাজার ঘুরতে যাওয়ার সময় একটা কার এক্সিডেন্টে আমি একটা পা হারিয়ে ফেলি আর পিলু 

প্যারালাইজড‌ হয়ে গেলো । 

পা না থাকার যন্ত্রণাটা মনে হয় যে কেউ সহজে বুঝতে পারে না ।

সেদিন সহ্য করতে না পেরে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে আমি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলাম ।

আদনান কিছুটা অবাক হয়ে আমার কথা শুনছিলো 

তবে আত্মহত্যা করতে গিয়ে ফিরে এসেছি শুধু পিলুর কথা ভেবে।

আদনান জিজ্ঞেস করে বসালো বুঝলাম না কী ভেবে ফিরে এসেছেন?

আমি খুব জোর গলায় বলে উঠলাম পিলুর কথা ভেবে 

আদনান অবাক হয়ে বলে উঠলো আপনার মা-বাবা-ভাই-বোন কেউই আপনাকে ফেরাতে পারেনি, কিন্তু বেড়ালটা তো মানুষই নয়, তবে ফিরলেন যে?তা-ও আবার মুক্তির পথ থেকে?

পিলুর গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে আদনান কে বললাম

আমাকে ছাড়া বাঁচতে পৃথিবীর কারুরই কোনও অসুবিধে হবে না, সেদিন থেকে নিজেকে মুক্ত ভেবেছি; মনে হয়েছিল, এটাই সুবর্ণ সুযোগ মরে যাবার। যার থাকা না থাকায় কারুর‌ই কিছু এসে যায় না, তার থাকার দরকার‌ই-বা কী!

কিন্তু সেদিন যখন গভীর রাতে ছাদে গিয়েছিলাম তখন আনুমানিক রাত দুটো বাঁজে, ছাদে গিয়ে যেই-না লাফ দেবো, তখনই মনে পড়ল, পিলুর কথা 

বিশ্বাস করবে না ঠিক তখনি পিলুর চেহারা টা চোখে সামনে ভেসে উঠল, তখনি মনে হলো আরে…পিলুটা তো আমি ছাড়া কিছু খায় না। হাফ-প্যারালাইজড ওর শব্দ করার ক্ষমতাটুকুও নেই। 

আমি না থাকলে ওকে কে খাওয়াবে, কে পরাবে, কে গোসল করাবে, 

 আমি চলে গেলে বেচারা বাঁচবে কীভাবে?!

রুমের ভিতর একটা সুইসাইড নোট লিখে রেখে আসছিলাম হয়তো এতোক্ষনে সবাই পড়ে নিয়েছে কিংবা পড়ে নি কারণ আমার রুমে কেউ যায় না খুব সহজে 

 পড়লে সবাই জেনে যাবে আমার মৃত্যুর কারণ,

 কিন্তু কেউ না খুঁজলেও পিলু আমাকে খুঁজবে আর খুঁজতেই থাকবে; ক্ষুধা পেলে কেউই ওকে খেতে দেবে না, 

আমার মৃত্যুতে এই বেচারারও মৃত্যুর কারণ হবে। আমি কী করে মারব আমার ভালোবাসার পিলুকে ! ভালোবাসি যে, মারি কী করে!না, সেদিন আর লাফ দিইনি এসব ভেবে। এখন ভাবি 

এই প্যারালাইজড পিলু কী অনায়াসে আমার প্রাণ বাঁচিয়ে দিল? সকালে ঘুম থেকে সময়ের আগেই উঠি । আমি বসে থাকলে পিলু ঘাড়ে, কোলে, বা পায়ের কাছে এসে গুটিসুটি মেরে বসে থাকে। এখন আমি আর আত্মহত্যার কথা ভাবি না। পিলুকে নিয়ে এতই ব্যস্ত থাকি যে ভাবার সময়ই তো পাই না। পিলু এখন বেশ সেরে উঠেছে। ইদানীং আমার বরং আরও অনেককাল বাঁচতে ইচ্ছে করে। পিলুকে চারপায়ে দৌড়োতে দেখলে বড়ো সাধ জাগে,

ভরসা পাই আমিও একদিন দু পায়ে হেঁটে বিশ্ব জয় করতে পারবো , এক দৌরে আকাশের নীল আর সাদা মেঘের ভেলা দেখবো ।

পিলু আমাকে ছাড়া খাওয়া-দাওয়া করতে শিখে যাবে একসময়। এই সাধ আমাকে আরও কয়েকটা বছর বাঁচতে ইচ্ছে জাগায়।না, থাক! পিলু বরং হাঁটতে না শিখুক, ও আমাকে ছাড়া বাঁচতে না শিখুক! ও আমাকে ছাড়া বাঁচতে শিখে গেলে…

তাহলে যে আমারো খুব ইচ্ছে জাগবে হাঁটতে শিখার । 

ঠিক তখনি আমার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়তে লাগল, পিলু আমার দিকে তাকিয়ে ম্যাও ম্যাও করে উঠলো বুঝতে পারলাম পিলু আমাকে চোখের পানি মুছতে বলছে , আমার যে কষ্ট হচ্ছে সেও কষ্ট পাচ্ছে,  

হয়তো আমাকে বলছে আমি হাঁটতে শিখতে চাই না আমি আর তুমি সারাজীবন এভাবে বসে বসে গল্প করবো , 

আমি চোখের পানি মুছে পিলুকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম

আহা কি যেন একটা শান্তি অনুভব হচ্ছে ।

পিলু আমাকে হাসাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো আমার সাথে খেলতে চাইল আমি তখন পিলুর সাথে খেলতে ব্যস্ত ।

দেখলাম আদনান আমার আর পিলুর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর বলছে বেঁচে থাকুক এমন ভালোবাসা যুগ যুগ ধরে ।। 

● কবি ও লেখক:

অর্পিতা ঐশ্বর্য কামাল কাছনা রংপুর ।

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.