বাচ্চা ভয়ঙ্কর কাচ্চা ভয়ঙ্কর

বাচ্চা ভয়ঙ্কর কাচ্চা ভয়ঙ্কর

bari

 

সা ঈ দ  বা রী  

 

মার নাম সোমা। সোমা রহমান।  আমি একটা কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতা করি। মানে পড়াই। ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে আমার কায়-কারবার। তারা আমাকে মিস্, টিচার, ম্যাম, কেউবা সোমাদি’ নামেও ডাকে। ওদের সঙ্গ আমি খুব পছন্দ করি। আনন্দ পাই ওদের সঙ্গে মিশে। কোনো কারণে একদিন ইশকুলে যেতে না পারলে সেদিন কী যে মন খারাপ হয় আমার! অথচ এই আমি যখন খুউব ছোট ছিলামÑ একদমই ইশকুলে যেতে চাইতাম না। আমার বড় আপু তখন কলেজে পড়ে। আমি বলতাম,  বড় আপু’র মতো একবারেই আমি কলেজে পড়ব। এখন সেসব মনে পড়লে হাসি পায়, আবার লজ্জাও পাই। তো যা বলছিলাম, আমার ক্লাসের পিচ্চিদের আমি খুউব ভালোবাসি। ওরাও আমাকে ভারী ভালোবাসে, পছন্দ করে। কিন্তু মাঝে মাঝে যে কী হয়, ওদের কারো কারো দুষ্টুমিতে আমি একেবারে ‘বোকা’ বনে যাই! এইতো সেদিন ছিল মঙ্গলবার। ক্লাস শুরু হওয়ার পর বুবান হাত তুলে দাঁড়িয়ে জিগ্যেশ করল, মিস্, আপনি কি যে-কাজটা করা হয়নি, তার জন্যে শাস্তি দেন? আমি : না, না বুবান! এবার বুবান বল্ল, আমার হোমওয়ার্ক করা হয়নি!

বোঝো, তাহলে আমি কীরকম ‘দুষ্টুদের’ সঙ্গে দিন পার করি! আর একদিন কী হয়েছে, জানো, অহনা ক্লাসে একটু দুষ্টুমি করছিল। আমি ওর দুষ্টুমি বন্ধ করার জন্যে বললাম, অহনা, তুমি তোমার রাইম্স বই থেকে ‘ঃড়ি ষরঃঃষব নষধপশনরৎফং’, এই রাইম্সটা পড়ে শোনাও তো। সঙ্গে সঙ্গে অহনা রাইম্স বইটা নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল, কিন্তু একটা শব্দও উচ্চারণ করল না। আমি বললাম, সে কী! তুমি পড়ছো না যে! অহনা : পড়ছি তো! আমি : শব্দ পাচ্ছি না যে! অহনা : মিস্, আপনি না বলেছেন, পড়ার সময় কথা বলতে নেই!

আর একদিনের কথা। ইশকুলে অংকের ক্লাস নিচ্ছি। রিশাদকে জিগ্যেশ করলাম, রিশাদ, যদি তোমাকে প্রথম দিন পাঁচটা খরগোশ দিই আর দ্বিতীয় দিন তিনটে, তাহলে তোমার বাড়িতে মোট ক’টা খরগোশ হবে? রিশাদ : ন’টা! আমি : তা কী করে হয়? রিশাদ : বাড়িতে আমার পোষা একটা খরগোশ তো আগেই ছিল। সবাই কী বুঝল জানি না। একসঙ্গে হেসে উঠল ক্লাসশুদ্ধ আমার ছাত্র-ছাত্রীরা। আমিও না হেসে পারলাম না। রিশাদ কিন্তু সে হাসিতে অংশ নিল না।

মাঝে মাঝে কী হয় জানো, ওদের বুদ্ধিদীপ্ত দুষ্টুমি দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। আমার হয়তো রেগে যাবার কথা, কিন্তু আমি ফিক্ করে হেসে ফেলি। সেদিন ক্লাসে টুকুন বসেছে একদম পেছনের বেঞ্চিতে। আমার পড়াবার সময় দুষ্টুমি করছে, ফিসফিস করে কথাও বলছে পাশের জনের সঙ্গে। আমি বললাম, টুকুন তুমি কী করছো? টুকুন কিছু বলল না। ওর পাশে বসা অহী বলল, ‘কিছুই করছে না।’ এবার আমি জিগ্যেশ করলাম, আর তুমি ওর পাশে বসে কী করছো? ওকে একটু সাহায্য করছি, অহী জবাব দিল।

এটা আজকের সকালের গল্প। আমার ক্লাসের সেই বুবানের গল্প। যার কথা একটু আগেই বলেছি। আজ ইশকুল ছুটি হয়েছে। বুবানের বাবা-মা কেউ এখনো আসে নি ওকে নিয়ে যেতে। হয়তো ট্র্যাফিক জ্যামে আটকা পড়েছে। ঢাকা শহরের যানজট বলে কথা। বুবানের যাতে মন খারাপ না হয়, সেজন্যে ওর সঙ্গে ভাব জমাতে চেষ্টা করলাম। আমি জানি, ওর একটা ছোট ভাই আছে, নাম পাপান। ভারী মিষ্টি চেহারা। দু’একবার দেখেছিও ওকে। অনেকদিন হলো আবার দেখা নেই পাপানের। আমি জানতে চাইলাম, বুবান, তোমার ছোট ভাই পাপান কি কথা বলতে শিখেছে? বুবান : সে তো কবেই শিখেছে! এখন আমরা ওকে চুপ থাকা শেখাচ্ছি!

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.