ব্যাভিচারীর কোর্টে ফেরা…..

ব্যাভিচারীর কোর্টে ফেরা…..

……..নিউইয়র্কে কদিন আগে আমরা দেখা করা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। মার্টিনা যে হোটেলে ছিল, সেখানে আমি তাকে না জানিয়ে যাই। আমার উদ্দেশ্য ছিল, তাকে চমকে দেয়া। কিন্তু তার রুমে গিয়ে আমি তার সঙ্গে অন্য একজনকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে নিজেই ভীষণভাবে চমকে উঠি!’…………

সময়ের কথা’র পাঠকদের জন্য লিখেছেন  রুমেল খান

হিঙ্গিস কি সত্যিই ব্যাভিচারিনী?

হিঙ্গিস কি সত্যিই ব্যাভিচারিনী?

rumelবোমা ফাটিয়েছেন থিবল্ট হুটিন। ২৬ বছর বয়সী হুটিন সুইস সংবাদপত্র সনটাসব্লিককে বলেছেন, ‘মার্টিনা হিঙ্গিস একজন পুরুষ ব্যাভিচারী ও প্রতারক। আমার আগে তিনি তার আগের প্রেমিকদের সঙ্গেও এমনটা করেছেন বলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস। তিনি সবসময়ই ছিলেন অবিশ্বস্ত!’

২০১০ সালে ‘সুইস মিস’ খ্যাত বিশ্বখ্যাত টেনিস তারকা মার্টিনা হিঙ্গিসকে বিয়ে করেছিলেন থিবল্ট হুটিন। তিনিও একজন ক্রীড়াবিদ, শো জাম্পার। ২৬ বছর বয়সী হুটিন আরও বলেন, ‘আমাদের বিয়েটা যেমন ছিল বিস্ময়কর, এখন আমার স্ত্রী সম্পর্কে যতটা জেনেছি, সেটা তার চেয়েও আরও বিস্ময়কর। নিউইয়র্কে কদিন আগে আমরা দেখা করা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। মার্টিনা যে হোটেলে ছিল, সেখানে আমি তাকে না জানিয়ে যাই। আমার উদ্দেশ্য ছিল, তাকে চমকে দেয়া। কিন্তু তার রুমে গিয়ে আমি তার সঙ্গে অন্য একজনকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে নিজেই ভীষণভাবে চমকে উঠি!’

হুটিনের এমন বিস্ফোরক মন্তব্যে এখনও জানা যায়নি গত মার্চে টেনিসের ‘হল অব ফেমে’ স্থান করে নেয়া ৩২ বছর বয়সী মার্টিনার প্রতিক্রিয়া।

২০১০ সাল। এক সময়ের দুর্দান্ত তারকা খেলোয়াড়, কোর্টে গ্ল্যামারাস বিচরণ ও উদ্ভাসিত নৈপুণ্যে যিনি জয় করেছিলেন অগণিত টেনিসপ্রেমীর হৃদয়, ঠাঁই করে নিয়েছিলেন তাঁদের মনের চিলেকোঠায়; সেই হিঙ্গিস বিয়ে করেন। তাঁর এই শুভ পরিণয়ের সমাচারে অসংখ্য পুরুষ ভক্তের হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে গেলেও হিঙ্গিস কিন্তু ভেসেছিলেন অবারিত সুখের স্রোতে। বিয়ে করেন তাঁর চেয়ে ছয় বছরের ছোট থিবল্ট হুাটিনকে। তিনি একজন ‘শোজাম্পার’ (ঘোড়ার মাধ্যমে বিভিন্ন হার্ডল্স্ টপকানোর খেলাই হচ্ছে শোজাম্পিং)। নিজের বিয়ে সম্পর্কে মার্টিনা বলেছিলেন, ‘বুঝতে পারছি, অনেকের কাছেই আমাদের বিয়ের খবরটি একেবারেই অপ্রত্যাশিত মনে হচ্ছে। সবাই ভাবতে পারেন, আমি বুঝি হুট করে, তড়িঘড়ি করে বিয়েটা করলাম। কিন্তু আসলে তা নয়। আমার এ বিয়ের জন্য ছিল দীর্ঘ সময়ের প্রস্তুতি।’ তাঁদের বিয়েটা হয় একেবারেই অনাড়ম্বরে, নিতান্তই পারিবারিকভাবে ও সামান্য কজন অতিথির উপস্থিতিতে। বিয়ের আগে হিঙ্গিস রেকর্ড সাত জনের সঙ্গে রোমান্স করেন। এরা হলেনÑ স্প্যানিশ গলফার সার্জিও গার্সিয়া, ব্রিটিশ ফুটবলার সোল ক্যাম্পবেল, টেনিস খেলোয়াড় চেক প্রজাতন্ত্রের রাদেক স্তেপানেক, সুইডেনের ম্যাগনুস নরম্যান, নিজ দেশের ইভো হিউবার্গার ও স্পেনের জুলিয়ান এ্যালোনসো। ২০১০ সালের মার্চে হিঙ্গিস তাঁর সুইস আইনজীবী আন্দ্রেয়াস বিয়েরির সঙ্গে প্রেমের পর বাগদান করেও শেষ পর্যন্ত তাকে আর বিয়ে করেননি। সবশেষে হুটিনেই এসে স্থির হন হিঙ্গিস। কিন্তু এখন হুটিন কি হিঙ্গিসে আর কি স্থির থাকবেন? হুটিনের কথা অনুযায়ী আসলেই দেখা যাচ্ছে হিঙ্গিসের প্রণয়কা-ে হিঙ্গিসের অতীত পরিসংখ্যান ভয়াবহ। কখনই এক পুরুষে সন্তষ্ট নন তিনি।

জাতিতে সুইস হলেও হিঙ্গিসের জন্ম তখনকার চেকোসেøাভাকিয়ার (এখন স্নোভাকিয়া) কোসিকে, ১৯৮০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। মা মেলানি মোরোতোরিভা চেক বংশোদ্ভূত। বাবা ক্যারোলি হিঙ্গিস হাঙ্গেরিয়ান। তারা দুজনেই ছিলেন পেশাদার টেনিস প্লেয়ার। এমন টেনিস পরিবারে জন্ম নিলে স্বাভাবিকভাবেই খেলাটির প্রতি আগ্রহ জন্মানোর কথা। মার্টিনার বেলাতেও তাই হয়েছিল। তাঁর ছয় বছর বয়সে মেলানি-ক্যারোলির মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়। মার্টিনা বড় হন মায়ের কাছে। মার্টিনার নামটির পেছনে রয়েছে এক মজার গল্প। সেসময় মহিলা টেনিসের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন চেকোসেøাভাকিয়ার (পরে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন) মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা। তাঁকে মেলানি-ক্যারোলি এতটাই পছন্দ করতেন যে, নিজের মেয়ের নামটাও রাখেন নাভ্রাতিলোভার নামের সঙ্গে মিলিয়ে। আশা করেছিলেন, একদিন তাঁদের মেয়েও এমন সুনাম অর্জন করবে। নাভ্রাতিলোভার কীর্তিকে ছাপিয়ে যেতে না পারলেও হিঙ্গিস পরবর্তীতে বাবা-মাকে নিরাশ করেননি। যা অর্জন করেছেন, তা কোনভাবেই ফেলনা নয়। র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ আসনে আরোহণ করেছেন (৩১ মার্চ, ১৯৯৭) ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়সে (১৭ বছর, মনিকা সেলেসকে বিসকেইন ওপেনে হারিয়ে), সবচেয়ে কম বয়সে (১৫ বছর ২৮২ দিন) ‘টেনিসের বিশ্বকাপ’ উইম্বল্ডন ওপেনের দ্বৈত শিরোপা জিতে (সঙ্গী হেলেনা সুকোভা) বিশ্বরেকর্ডসহ আরও অসংখ্য রেকর্ড গড়েছেন। এত অল্প বয়সে তাঁর মতো কোন প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে এর আগে কখনই দেখেনি টেনিসবিশ্ব। ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি ও ৫৭ কেজির অধিকারী মার্টিনার পেশাদারী টেনিসে আগমন মাত্র ১৪ বছর বয়সে! ডানহাতি (দুহাতে ব্যাকহ্যান্ড) এ খেলোয়াড়টি টেনিস খেলে আয় করেন দুই কোটি ডলারেরও বেশি; যা সর্বোচ্চ আয় করা খেলোয়াড়দের মধ্যে দশম। এককে ৫৪৮ ম্যাচে জেতার বিপরীতে হেরেছেন ১৩৩ ম্যাচে। ক্যারিয়ারে জিতেছেন ৪৫টি ট্রফি, যার ৪৩টিই ডব্লিউটিএ টাইটেল, বাকি ২টি আইটিএফ। গ্র্যান্ডসø্যাম জিতেছেন ৫ বার (১৯৯৭, ৯৮, ৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান; ১৯৯৭ সালে উইম্বল্ডন ও ইউএস ওপেন)। ১৯৯৭ ও ৯৯ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে হেরে না গেলে সবকটি গ্র্যান্ডসø্যাম ট্রফি জেতার বিরল রেকর্ডের অধিকারী হতে পারতেন। ২০০৭ সালে টেনিস থেকে অবসর নেন অপ্রত্যাশিতভাবে। বছরখানেক পর আবারও ফিরে আসেন। কিন্তু ২০০৯ সালে উইম্বল্ডন আসরে খেলতে গিয়ে ডোপ টেস্টে পজেটিভ হয়ে (কোকেন) দুবছরের জন্য টেনিস থেকে নিষিদ্ধ হন। সুযোগ থাকলেও শাস্তি হ্রাসের জন্য আপীল করেননি হিঙ্গিস। পরে আর টেনিসেই ফিরলেন না। তার পরিবর্তে করে ফেললেন বিয়ে।

খেলোয়াড় হিসেবে না ফিরলেও ২০১৩ সারে তিনি টেনিস অঙ্গনে ফেরেন কোচ হিসেবে। প্রথম এ্যাসাইনমেন্টেই কোচ হিসেবে শিরোপা জেতেন গত ৪ মে। ‘পর্তুগাল ওপেন’-এ স্পেনের কার্লা সুয়ারেজ নাভারোকে হারিয়ে শিরোপা নিজের করে নিয়ে রাশিয়ার আনাস্তাসিয়া পাভলিউচেঙ্কোভা শিরোপা উপহার দেন তাঁর নতুন কোচ হিঙ্গিসকে। কিন্তু স্বামী হুটিনের দাবি অনুযায়ী হিঙ্গিস এখন যে স্ক্যান্ডাল উপহার দিলেন তাঁর ভক্তদের, সেটা কতটা সত্য বা মিথ্যাÑ সেটা সময়ই বলে দেবে।

আবার কোর্টে ফিরছেন হিঙ্গিস ॥  মাত্র ১৬ বছর বয়সে যা করেছিলেন সেটা সত্যিই বিস্ময়ের। ১৯৯৭ সালে বছরের চারটি গ্র্যান্ডসøামেরই ফাইনালে উঠেছিলেন, শুধু ফ্রেঞ্চ ওপেন ছাড়া জিতেছিলেন বাকি তিনটির শিরোপা। র‌্যাঙ্কিংয়ে উঠে গিয়েছিলেন এক নম্বরে। টানা ২০৯ সপ্তাহ থেকেছেন শীর্ষে। সবমিলিয়ে ৫টি গ্র্যান্ডসøাম একক এবং ৯টি দ্বৈত শিরোপা ঘরে তুলেছেন সুইজারল্যান্ডের মোহিনী সুন্দরী মার্টিনা হিঙ্গিস। তবে এ দুরন্ত গতি মাত্র ২২ বছর বয়সেই থেমে গিয়েছিল দু’পায়েরই লিগামেন্ট ইনজুরির কারণে। চার বছর পর ফিরেছিলেন ২০০৬ সালে। কিন্তু আর আগের রূপ-লাবণ্য থাকলেও কোর্টে পারফর্মেন্সের গ্ল্যামার ধরে রাখতে পারেননি। ২০০৭ উইম্বলডনে ডোপ টেস্টে রক্তে নিষিদ্ধ কোকেন ধরা পড়ার পর অবসর নিয়ে নিয়েছিলেন। তবে আবারও অবসর ভেঙ্গে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন ৩২ বছর বয়সী হিঙ্গিস। অবশ্য এবার শুধু দ্বৈতেই ফিরবেন তিনি। ২৭ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ওপেনে অংশ নেবেন তিনি।

সম্প্রতিই টেনিসের হল অব ফেমে অভিষিক্ত হয়েছেন হিঙ্গিস। এছাড়াও তাঁকে বিশেষভাবে সম্মানিত করা হয় ‘মহিলা টেনিসের ৩০ কিংবদন্তি : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত’ তালিকায়। সম্প্রতি খেলছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব দলগত টেনিসে। সেজন্যই হয়ত আবার মূল প্রতিযোগিতায় ফেরার আকাক্সক্ষা তৈরি হয়েছে হিঙ্গিসের। ২০০৭ সালে নেয়া অবসর ভেঙ্গে ফের টেনিস কোর্টে নামছেন সাবেক এক নম্বর হিঙ্গিস। কার্লসব্যাডে ২৭ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ওপেনের দ্বৈতে সেøাভাকিয়ান ড্যানিয়েলা হান্টুচোভার সঙ্গে জুটি গড়বেন এ সুইস তারকা। ৯ বারের দ্বৈত গ্র্যান্ডসøাম জয়ী সুইস তারকা পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী ভাল খেলার ক্ষেত্রে। এ বিষয়ে হিঙ্গিস বলেন, ‘আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো মানসিকতা এখনও অনেক প্রাণবন্ত। ওয়ার্ল্ড টিম টেনিস খেলে এই মুহূর্তে বেশ ভাল বোধ করছি। কোর্টে খেলতে আমি ভালবাসি। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ওপেনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য মুখিয়ে আছি আমি। ১৯৯৭ সালে কোর্টে একক ও দ্বৈত জিতেছিলাম এবং ১৯৯৯ সালে ফের এককে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম।’ এখন দেখার বিষয়, অবসর ভেঙ্গে ফিরে এসে কতটা সফল হন হিঙ্গিস।

ৎঁসবষনড়ংং@মসধরষ.পড়স

 

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.