বিপুল তরফদার ॥ কিছুক্ষণ পর বিদায় নেবে প্রেমিকা। এ বিদায় সাময়িক কোনো বিদায় নয়। চিরবিদায়। একেবারে দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়া। ফিরবে না আর কোনোদিন এই সুন্দর ধরণীতে। কিন্তু তাই বলে কি তার প্রেম মিথ্যে হয়ে যাবে?
প্রেমিককে ঘিরে মেয়েটি ছোট্ট একটি ঘর বাঁধার যে স্বপ্ন দেখছিলো, তার কি হবে? বিয়ে না করার অতৃপ্ত বাসনা নিয়েই কি বিদায় নিতে হবে? সুবিশাল হৃদয়ের প্রেমিকইবা তা হতে দেবেন কেনো! নাইবা করতে পারলো ঘর-সংসার, অন্তত ‘বিয়ের’ একটা তৃপ্তি নিয়ে তো প্রেমিকা বিদায় নিতে পারবে। আর এই অসামান্য উপলব্ধি থেকেই প্রেমিক হাসপাতালের বেডে মারা যাবার কিছুক্ষণ আগে বিয়ে করলেন প্রাণপ্রিয় প্রেমিকাকে।
না পাঠক, এ কোনো কাব্য-সিনেমার কথা বা কাহিনী নয়। এ হচ্ছে এক নিরেট বাস্তব। নিজের কষ্টকে চেপে রেখে প্রেমিকার স্বপ্ন পূরণ করলেন প্রেমিক।
প্রেমিকের নাম জিংজিং আর প্রেমিকার নাম লু লাই। চীনের দক্ষিণাঞ্চলের অধিবাসী। তারা দুজনই গুয়াংডংয়ের স্থানীয় সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা। পৃথিবীতে এমন বিয়োগান্তক ‘বিয়ে’ দ্বিতীয়টি বোধকরি আর নেই।
একেই বলে প্রেমের প্রগাঢ় টান। নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।
তাদের বুকভরা আশা ছিলো, সফল প্রেমের সার্থক ও সুন্দর পরিনতি টেনে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন। আনন্দময় ঘর-সংসার রচনা করবেন। এমন স্বপ্ন বুকে ধারণ করে সম্প্রতি একটি সুন্দর বাড়িও কিনেছেন। কিন্তু তাদের মিলনে বাধ সাধলো নিয়তি। ২০১১ সালে হঠাৎ একদিন কাজ করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েন লাই। সেদিন থেকেই হাসপাতালে লাই, শুধু তাই নয় কোমায় থাকতে হলো তাকে টানা দুই বছর।
সম্প্রতি কোমাতেই উদযাপন করা হয় লাইয়ের ২৮ তম জন্মবার্ষিকী। এরপর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন জিংজিং ও লাই। বিয়ের স্বপ্ন পূরণের পরেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেন লাই। নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রতিদানস্বরূপ স্ত্রীকে যন্ত্রণামুক্ত করতে লাইয়ের লাইফ সার্পোট খুলে দেন জিংজিং নিজেই।
শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান করে গেছেন লাই। লাইয়ের স্বামী জিংজিং বলেন, ‘আমি খুশি যে সে অন্য মানুষকে বাঁচতে সাহায্য করবে কিন্তু আমি মনে করি না সে অন্যের মধ্যে বেঁচে থাকবে। সে আমার অন্তরে চিরদিনের জন্য থাকবে।’
লাইয়ের বাবা ফাং লু বলেন, ‘সে খুবই চমৎকার ও প্রাণচঞ্চল মেয়ে ছিল। আমি ভাবতে পারিনা সে চলে যাচ্ছে কিন্তু সে সব সময়ই বলত সে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান করতে প্রস্তুত।’
বাবা-মার একমাত্র সন্তান ছিলেন লাই।
এমন প্রেম আর প্রেমিকযুগলের প্রতি কার না শ্রদ্ধায় মস্তক অবনত হয়।