রম্যঃ চক্ষু দান

রম্যঃ চক্ষু দান

কোন এক অপরাহ্ণে জন্যক চিত্রশিল্পী রংতুলিতে আঁকি-বুকিতে মত্ত। ওদিকে গিন্নী মহা আড়ম্ভরে ডাব দিয়ে চিংড়ি তৈরিতে ব্যতিব্যস্ত, রীতিমত ছুরি-চাকু, হাতুড়ি কোন উপকরনই বাদ যাচেছনা ডাবের মস্তকটি কর্তনে। অনেক ডাকাডাকি সত্ত্বেও ডাব কর্তনে কর্তাবাবুর নুন্যতম সাড়া শব্দ নেই দেখে গিন্নি রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখার চেষ্টা করছেন, হচ্ছে টা কি? ভদ্রলোকের সাড়া নেই কেন?

গিন্নিঃ কি গো সেই কখন থেকে গলা আমার সাত আসমানে উঠেছে সাড়া দিচ্ছনা যে?

কর্তাঃ কিছু তো করারও নেই, সে একটু পরে বাতাসে মিলিয়ে যাবে…!

গিন্নীঃ  ঢং দেখে বাচি না… ওদিকে আমি ডাব নিয়ে রীতিমত কুস্তি করে ডাব্লিউ- ডাব্লিউ- এফ চ্যাম্পিয়ান হওয়ার সামিল, পারত একটু কেটে দাও, অনেক বেলা হয়ে গেছে…ডাব-চিংড়ি ভাপে বসালেও সময় লাগবে।

কর্তাঃ আরে দেখো পার কিনা, আমি এখন উঠলে মনটা অন্যত্র চলে গেলে আর আকাবুকি হবেনা। তাছাড়া এই সুযোগে যদি ট্রফিটা পেয়ে যাও, মন্দ কি!

গিন্নীঃ জ্বালা!  তা কি অত মনোযোগ দিয়ে আঁকা হচ্ছে শুনি?

কর্তাঃ কি আর আঁকবো বল, ঘরে আমার উর্বশীর বাস, যেখানে তাকাই শুধু উর্বশী আর উর্বশী!

গিন্নিঃ মুখ বিকৃত হাসি দেখে নেহাত ধরে নেয়া যায় তুমি কাকে উদ্দেশ্য করছ?

কর্তা অট্টহাসিতে গিন্নির মুখ কাল হতে থাকে, তবে গিন্নী অসব কথায় কান না দিয়ে রান্না ঘরে ছুটলে…

গিন্নী তরিঘরি করে দুপুরের খাবারে বেশ আয়োজন করলে, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে একটু আয়েশ না করে খেলে হয়।কর্তা রীতিমত পেট পূজাতে ব্যস্ত, খেয়ে নিয়ে উঠে ভাত ঘুমের আয়োজনে ব্যস্ত।ওদিকে গিন্নী খেয়ে রান্নাঘর গুছিয়ে যেই না শোবার ঘরে যাবে, মনে একটা খটকা বাঁধল, লোকটা আসলেই কি আমাকে এঁকেছে? একটু দেখিতো?

গিন্নিঃ ছবি দেখে আতঁকে উঠেছেন, কি এঁকেছে, মানলাম আমি উর্বশী, তাই বলে এত সুন্দর চক্ষুকে ঘুনাক্ষরেও তাকে দেয়ার প্রয়োজন বোধ হয়নি। নিশ্চিত চক্ষু ব্যামো হয়েছে। নয়তো চোখ আকবে না কেন?

পরক্ষনে, গিন্নী রাগ সামলে ভাবলে, এমনিতে ভালই আঁকে, হয়তো কাজে চাপে চক্ষু দান করতে ভুলে গেছে। তা যাই হোক, যে ভাবা সেই কাজ, হন্তদন্ত হয়ে সাজসজ্জার উপকরণের কৌটা নিয়ে বসে, তা থেকে কাজল বের করে চোখ একে দিয়ে বললে, যাও উর্বশী চক্ষু দান করলাম।

ওদিকে কর্তা ঘুম থেকে উঠে ছবি দেখে রেগে গিয়ে- আরে করলে টা কি?

গিন্নিঃ তেমন কিছু না চক্ষুদান করলাম মাত্র।

কর্তাঃ আহ মোর মরন! কর্তা মনে মনে, ডাব না কেটে কি ভুল না করেছি, দিলো আমার চিত্রকর্মের বারোটা বাজিয়ে… ( চলবে)

শর্মিতা পাল

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.