শুভ জন্মদিন ‘গুড সিস্টার’ – তোমার প্রকাশ হোক সূর্যের মতন

শুভ জন্মদিন ‘গুড সিস্টার’ – তোমার প্রকাশ হোক সূর্যের মতন

মোনায়েম সরকার: আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সর্বপ্রাচীন রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হই ১৯৭৯ সালের ১০ ডিসেম্বর। ওই সময় আমি, মতিয়া চৌধুরী, স্থপতি মাজহারুল ইসলাম, স্থপতি আলমগীর কবির, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, সরদার দবীরউদ্দিন, ফখরুদ্দিন আহমদসহ ১৭ জন নেতা আওয়ামী লীগে যোগদান করি। আওয়ামী লীগে যোগদানের পূর্বে আমি ছিলাম ন্যাপ (মোজাফফর) সম্পাদনা পরিষদ সদস্য। ন্যাপ কর্মী হিসেবেই মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি এবং সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু ঘাতকদের বুলেটে নিহত হলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি দ্রত পাল্টে যেতে থাকে। বাংলাদেশবিরোধীরা তখন বাংলাদেশের শাসকরূপে আবির্ভূত হয়। সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তানি ভাবধারা প্রতিষ্ঠা করতে সংঘবদ্ধ হয় পাকিস্তানি এজেন্টরা। বাম দলগুলোও জিয়াকে সমর্থন জানিয়ে খালকাটা কর্মসূচি ও ১৯-দফা ছাপতে শুরু করে দেয়। আমি তখন মনেপ্রাণে চেয়েছিলাম গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের ধারা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ন্যাপ আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশে যাক, কিন্তু সেদিন কতিপয় স্বার্থান্বেষী নেতা ন্যাপ-আওয়ামী লীগ মিলনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ঠিক ওই পরিস্থিতিতেই আমি আওয়ামী লীগে যোগদান করি। সুদীর্ঘ ২৫ বছর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে ২০০৪ সালে প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে অবসর নিই। প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে অবসর নিলেও এখনও আমি নিজেকে রাজনৈতিক কর্মীই মনে করি। সুযোগ থাকা সত্তে¡ও রাজনীতির বাইরে জীবনে আর কোনো পেশা গ্রহণ করিনি বলে নিজেকে কখনোই রাজনীতির বাইরে চিন্তা করতে পারি না। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রাজনীতিচর্চা করেই জীবনাবসানের স্বপ্ন দেখি।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেসকল মহান নেতা অসামান্য অবদান রেখেছেন আমার সৌভাগ্য হয়েছে তাদের অনেকেরই সান্নিধ্যে আসার। আমি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে কাছ থেকে দেখেছি, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে দেখেছি, দেখেছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চারনেতা, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে। নিজেকে ঋদ্ধ করেছি তাদের চিন্তা ও আদর্শ দ্বারা। ছোট্ট এই জীবনে ইন্দিরা গান্ধিসহ দেশ-বিদেশের এত এত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের ভালোবাসা পেয়েছি যে, এ কথা স্মরণে এলে আমি নিজেই আবেগে আপ্লুত হই।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবিভর্‚ত হন স্বৈরাচারের উত্থান লগ্নে। ছাত্রজীবনে তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও মূলধারার রাজনীতিতে তার আবির্ভাব বাংলাদেশের ক্রান্তিকালে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে প্রথমে খন্দকার মোশতাক ও পরে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করেন। রাজাকারদের পুনর্বাসন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকরণ, রাজনীতিবিদদের চরিত্রহরণসহ অসংখ্য বিতর্কিত কাজ করেন জিয়া। জিয়া বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের চিরতরে দায় মুক্তির জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মতো কালো আইন পাশ করে এবং বঙ্গবন্ধুর নাম চিরতরে মুছে ফেলার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করে। শুধু তা-ই নয়, হত্যাকারীদের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত বানানোসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে বসায়। জিয়ার নির্মম মৃত্যুর পরে বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসেন স্বৈরাচার হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। তিনিও আওয়ামী লীগের উপর দমন-পীড়ন চালান জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে। বাংলাদেশে আওয়ামী রাজনীতি যখন মৃত্যুর মুখে পতিত, দলীয় কোন্দলে আওয়ামী লীগ যখন দিশেহারা, সেই সময় শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরেন।

এখানে একটি কথা বলে নেওয়া দরকার, আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা যখন নির্বাচিত হন, তখন খুব সহজেই তিনি মনোনীত হয়েছেন বিষয়টি এমন নয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরে অনেকেই আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে চেয়েছেন, আমার জানা মতে প্রায় ডজন খানেক নেতাকর্মী সভাপতি পদের প্রার্থী ছিলেন। আমি আওয়ামী লীগে যোগদান করে ১৯৮০ সালে মাতৃসমা রহিমা চৌধুরানী খালাম্মাকে নিয়ে দেখা করতে যাই ইন্দিরা গান্ধির প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পিএন হাকসারের সঙ্গে। ডিনার খেতে খেতে কথা প্রসঙ্গে তিনি জানতে চান, ‘আমরা কাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করছি। আমি তখন বললাম, সভাপতি পদে অনেক প্রার্থী আছেন। কাকে করব বুঝতে পারছি না। তিনি তখন একজনের নামও আমাকে বলেছিলেন। দেশে ফিরে পিএন হাকসারের এই কথা আমি আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আবদুর রাজ্জাককে বললে তিনিও বলেন, শেখ হাসিনাকে সভাপতি নির্বাচিত না করলে সঙ্কটের সমাধান হবে না। আরেকটি পাল্টা প্যানেল পত্রিকায় চলে যাবে। পরের ইতিহাস সবারই জানা, শেখ হাসিনাই আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন সর্বসম্মতভাবে, তিন দিন সম্মেলন চলার পর।

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন অত্যন্ত বেদনবিধুর ও সংগ্রামের। রাজনীতিতে প্রবেশ করেই তিনি গৃহবন্দীর শিকার হন। রাজপথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই-সংগ্রাম করেন, জেল খাটেন এবং বিরোধী দলের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে অসংখ্যবার নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে জীবন ফিরে পান। বাংলাদেশের আর কোনো রাজনৈতিক নেতা তার মতো জীবনাবিনাশী ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হননি। শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশের যে দুজন নেতার সঙ্গে তুলনা করা চলে, তারা হলেন, ভারতের শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধি এবং পাকিস্তানের বেনজির ভ‚ট্টো। ভারত-পাকিস্তানের এই দুই প্রয়াত নেতা এখন জীবিত থাকলে কি হতেন জানি না, তবে শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে বিশ্ব রাজনীতিতে যে অবস্থানে পৌঁছেছেন সত্যিই তা বিস্ময়কর ঘটনা।

জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার ভাই-বোনের সম্পর্ক। আমার কাছে শেখ হাসিনা ‘গুড সিস্টার’। শেখ হাসিনার কাছে আমি ‘ব্রাদার’ বা ‘পারমানেন্ট সরকার’। কবে তাঁকে প্রথম দেখি, সে কথাও মনে করতে পারি। সম্ভবত সেটা ১৯৬৪ সালের কথা। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। শেখ হাসিনার তখনো বিয়ে হয়নি। এদিকে বঙ্গবন্ধু কারাগারে বন্দি। তাদের বাসায় তখনো টেলিভিশন নেই। বঙ্গবন্ধুর পাশের বাড়িটি আমাদের আত্মীয়া শোভা আপাদের। সেই বাড়িতে টেলিভিশন দেখতে যেতেন ওরা তিন ভাইবোন। শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা আর শেখ জামাল। সেই বাসায় তাদের প্রথম দেখি। সেদিন আমার পরনে ছিল খদ্দরের সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি। তবে শেখ হাসিনার সঙ্গে সেদিন আমার বেশি কথা না হলেও কথা হয়েছিল শেখ রেহানার সঙ্গে। সেদিনের ছোট্ট রেহানা বেশ চটপটে, প্রগলভা ছিল। সে আমার পোশাক দেখে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘আপনি কি রাজনীতি করেন?’ আমি বলেছিলাম, ‘তোমার কী মনে হয়?’ সে বলল, ‘মনে হয় করেন, তবে ছাত্রলীগ করেন না।’ অসম্ভব বুদ্ধিমতী রেহানা আমার পোশাক দেখেই বুঝে নিয়েছে আমি ছাত্র ইউনিয়ন করি।

সে সময় রাত আটটা কি নটায় টেলিভিশন বন্ধ হয়ে যেত। আমরা একসঙ্গে শোভা আপার বাসা থেকে বেরিয়ে আসি। ওরা তিন ভাইবোন পশ্চিম দিকে বাসায় যাবে, আমি ফিরব পূর্ব দিকে ঢাকা হলে। বাসা থেকে বেরিয়ে সেদিন শেখ রেহানা পূর্বের কথার রেশ ধরে আমাকে আরো বলল, ‘ওসব ছাড়েন, ছাত্রলীগ করেন, ছাত্রলীগ করেন।’

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু নিহত হলেন। আমি রাজনৈতিক আশ্রয়ে ভারতে। ১৯৭৬ সালে আমি দিল্লি যাই ১৫ আগস্ট পালন উপলক্ষে। ১৯৭৬ সালে অবশ্য লন্ডনে ১৫ আগস্ট শোকসভা হয়েছিল। কলকাতা থেকে স্থপতি মাজহারুল ইসলাম লন্ডনে গিয়েছিলেন। আনোয়ার চৌধুরী, ইসমত কাদের গামা ও আমারও লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল। প্রথম দুজনের পাসপোর্ট না থাকায় এবং আমার পাসপোর্ট থাকা সত্তে¡ও পার্টির নির্দেশে লন্ডনে যাওয়া হয়নি। দিল্লিতে ১৯৭৬ সালে শোকসভা হয়েছিল গান্ধী মেমোরিয়াল হলে। সভাপতিত্ব করেছিলেন বিপ্লবী মন্মথ নাথ গুপ্ত। ব্রিটিশ আমলে ২০ বছর তিনি জেল খেটেছেন, পরে লেখক হয়েছেন। বক্তৃতা করেছিলেন কংগ্রেসের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ভি ভি রাজু, জনতা পার্টির কৃষ্ণ কান্ত (পরে উপ-রাষ্ট্রপতি), সিপিআই-এর এন. কে. কৃষ্ণনান ও সিপিআই (এম)-এর বাসব পুন্নাইয়া, রাজ্যসভার সদস্য আর কে মিশ্র, লোকসভার সদস্য কে আর গণেশ, চন্দ্রজিৎ যাদব, বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন পি এন হাকসার আর বিশ্বশান্তি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রমেশ চন্দ্র। শোকসভা আয়োজনে সহযোগিতা করেছিলেন শশীভূষণ এমপি।

শোকসভা শেষে আমি এ এল খতিবের সঙ্গে শেখ হাসিনার ফ্ল্যাটে গেলাম। ‘হু কিলড মুজিব’ গ্রন্থের রচয়িতা এ এল খতিবও বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ভারতে চলে যান।  তিনি সেদিন শোকসভা শেষে পান্ডারা রোডে শেখ হাসিনার ফ্ল্যাটে আমাকে নিয়ে যান। এরপর বিএসএস (বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা)-এর সাবেক প্রধান জাওয়াদুল করিমসহ আমরা তিনজন বেশ কয়েকবার দেখা করতে গেছি শেখ হাসিনার সঙ্গে পান্ডারা রোডে। এ এল খতিব তখন ‘হু কিলড মুজিব’ বইটি লিখছেন। পরে সে বইয়ে ব্যবহারের জন্য বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ঘেরা বঙ্গবন্ধুর অবহেলিত কবর ও বাড়ির ছবি পাঠাই আমি। বঙ্গবন্ধুর জরাজীর্ণ তৎকালীন কবরের ছবি আমিও আমার বেশ কয়েকটি গ্রন্থে ব্যবহার করেছি।

ভারতে স্বেচ্ছা নির্বাসন মুহূর্তে একদিন খালাম্মা রহিমা চৌধুরানী গেছেন ভারতে। তাঁকে নিয়ে গেলাম শেখ হাসিনার বাসায়। গিয়ে দেখি পুতুলের (শেখ হাসিনার মেয়ে) গায়ে জলবসন্ত দেখা দিয়েছে। খালাম্মা বললেন, ‘নিমপাতা দিয়ে গোসল করাও।’ পুতুল যে বিছানার চাদরের ওপর শুয়ে ছিল, সেটা দেখে জানতে চাইলাম, ‘চাদর এত ময়লা কেন?’ শেখ হাসিনা বললেন, ‘ময়লা না তো! কালই এটা ধুয়েছি।’ আসলে চাদরটা পুরনো রংচটা ছিল, আমি বুঝতে পারিনি। সে কথা ভেবে এখনো আমার কষ্ট হয়। এরপর যাওয়া-আসা করতে করতে সম্পর্ক অনেক সহজ হয়েছে তার সঙ্গে।

এক দিনের কথা বলি। সেদিন ‘নিউ ওয়েভ’ পত্রিকার সম্পাদক গণেশ শুক্লাকে নিয়ে গেছি শেখ হাসিনার পান্ডারা রোডের ফ্ল্যাটে। গিয়ে দেখি তিনি মাংস রাঁধছেন। কাজের ছেলে রহমান গেছে বাজারে মসলা আনতে। পরিস্থিতি এমন যে চুলার মাংসটা ছেড়ে তিনি বের হতে পারছেন না। তবু তাঁকে বললাম, ‘একজন সম্পাদক এসে বসে আছেন। দেরি হলে খারাপ দেখায়। গুড সিস্টার একটু যাও।’ শেখ হাসিনা বিনা বাক্যব্যয়ে আমার হাতে মাংস রাঁধার খুন্তি ধরিয়ে দিয়ে নিজে গেলেন সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করতে। আমাকে মাংস কষাতে মন দিতে হল।

১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফেরেন। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনে এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকার পথে পথে যে সড়কসজ্জা ও মঞ্চসজ্জা হয়েছিল সেটার নেপথ্যেও কাজ করেছিলাম স্থপতি আলমগীর কবীর ও আমি। ১৯৮৩ সালের শেষের দিকে দিল্লিতে আফসো (অঋঝঙ) সম্মেলন হয়। তাতে বাংলাদেশ থেকেও প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। বাংলাদেশ ‘আফসো’র সভাপতি ছিলেন ড. আনিসুজ্জামান, সম্পাদক ড. সাইদুর রহমান। সম্মেলনের গেস্ট অব অনার হচ্ছেন শেখ হাসিনা। ডেলিগেটদের মধ্যে আমিও ছিলাম। শেখ হাসিনা ও আমাকে রাখা হয়েছিল অশোকা হোটেলে। জয়ও আসে তার স্কুল কোদাইক্যানেল থেকে। সেখানে কমরেড রমেশ চন্দ্রকে বললাম, ‘আপনার কথা শেখ হাসিনা শোনেন, আপনি তাঁকে বলেন আওয়ামী লীগ-বাকশাল ঐক্য করা দরকার।’ তিনি বললেন, ‘সম্মেলনের ভেতর কী করে বলি। ওকে খাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করব, তখন বলব।’ পরদিন যখন নাশতা খাওয়ার মুহূর্তে শেখ হাসিনা বললেন, ‘রমেশ কাকু আমাকে খেতে ডেকেছেন, আপনাকে কি বলেছেন?’ আমি বিষয়টি না-জানার ভান করে বললাম, ‘না তো। হয়তো পরে বলবেন।’ ‘তাহলে একসঙ্গে যাওয়া যাবে’ বলে প্রসঙ্গ পাল্টালেন।

রমেশ চন্দ্রের ডিনার ছিল ইন্ডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে (আইআইসি)। খাবারের অর্ডার দেয়ার পর আমি বললাম, আমি একটু ঘুরে আসছি বাইরে থেকে। শেখ হাসিনা সিগারেটের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘বুঝছি, সিগারেট খাবেন, তাই না?’

‘না, এই এক-আধটা খাই।’ আসলে আমি রমেশ চন্দ্রের কথার ভেতর থাকতে চাইছিলাম না। রমেশ চন্দ্রকে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমি তো কখনো ভাঙার পক্ষে ছিলাম না।’ শেখ হাসিনা মিলের দিকেই এগিয়েছিলেন। কিন্তু রাজ্জাক সাহেবের জন্যই মিলটা দেরি হলো।

সম্মেলনের ভেতর একদিন ইরাকি অ্যাম্বাসাডরের বাসায় খাওয়ার নিমন্ত্রণ ছিল। সেখানে না গিয়ে ‘আকবর দি গ্রেট’-এর রচয়িতা ছিলেন আমার দোভাষী, তাকে ডেকে ঘরেই কয়েকজনকে নিয়ে আড্ডা বসালাম আমি। এরকম বারকয়েক হলো। আর সম্মেলন যখন শেষ হলো, শেখ হাসিনার তখন মন ছুটে গেছে। কন্যা পুতুল পড়ছে নৈনিতালে। তিনি ঠিক করলেন মেয়েকে দেখতে সেখানে যাবেন। সকালে তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন ‘চেক আউট’ করতে। সেখানে গিয়ে দেখলাম আমার নামে ১০০ ডলার আর শেখ হাসিনার নামে ২০০ ডলারের বিল হয়ে আছে। মাথায় যেন বাজ পড়ল। কারণ হাত আমার একেবারেই শূন্য। তড়িঘড়ি ফিরে এলাম শেখ হাসিনার কাছে। আমাকে দেখেই তিনি বুঝতে পেরেছেন কিছু একটা ঘটেছে। জানতে চাইলেন, ‘কী হয়েছে?’ ‘সর্বনাশ হয়েছে গুড সিস্টার, এই যে বিল!’

ঘটনা হচ্ছে, সম্মেলনে খাওয়ার আয়োজনটা এরকম ছিল যে প্রাতরাশ খাওয়া হবে হোটেলে। দুপুর আর রাতের খাওয়ার আয়োজন হবে বাইরে বিভিন্ন বিশিষ্টজনের দেওয়া পার্টিতে। সেখানে না গিয়ে কেউ যদি হোটেলে খান তাহলে হোটেলের খাবারের বিল তাকে দিতে হবে। সে কারণে আমাদের নামে বিল হয়ে আছে। শেখ হাসিনা বললেন, ‘তা এত ঘাবড়াবার কী হলো?’ তিনি ব্যাগ ঘেঁটে ৩০০ ডলার বের করে আমার হাতে দিয়ে ছুটলেন নৈনিতালে মেয়ের কাছে।

আরেক দিনের ঘটনা। যেটাতে শেখ হাসিনার রসবোধের দুর্দান্ত প্রকাশ আছে। ১৯৮২ সাল। সেদিন তিনি নিমন্ত্রণ খেতে আসবেন আমাদের বাসায়। মতিয়া চৌধুরী ও মো. ইসহাক আর তার স্ত্রীও আসবেন। এদিকে খালাম্মা বাসায় নেই। প্রতিবেশী মিনুকে বলে আমি রান্নাবান্নার ব্যবস্থা করেছি। মতিয়া চৌধুরীও সঙ্গে করে এনেছেন কয়েক পদ। মাছ-মাংস-সবজি-আচারে টেবিল ভরে উঠেছে একেবারে। শেখ হাসিনা টেবিলে বসে প্রথমে পদগুলো গুনে দেখলেন। ২২ পদ। তারপর  বললেন, ‘ভাই, কালকে খেয়েছি এক বুর্জোয়ার বাড়িতে, পদ ছিল দুটি, কাচ্চি বিরিয়ানি আর রোস্ট। আজ খাচ্ছি একজন প্রলেতারিয়েতের বাড়ি, পদ হচ্ছে ২২টা। এ রকম খেতে পারলে আমি প্রলেতারিয়েত হতে রাজি।’ আগের দিন খেয়েছিলেন তিনি তাঁর উকিল-বাপ মতিউর রহমানের বাসায়। তিনি বঙ্গবন্ধু ক্যাবিনেটের মন্ত্রী ছিলেন।

অনেকেই তখন আমার কাছে আসতেন আমার মাধ্যমে শেখ হাসিনার কাছে যাওয়া সহজ হবে এই বিবেচনায় অথবা খবর পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব দিতে। তার ফলও যে সব সময় সুখকর হয়েছে, তাও না। যেমন ড. কামাল হোসেনের ব্যাপারটা। একদিন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক এসেছেন। তাঁর লেখা একটা বই দিতে চান শেখ হাসিনাকে। বললাম, ‘বেশ তো, আপনি গিয়ে দিয়ে আসেন।’ সৈয়দ হক বললেন, ‘আপনি নিয়ে চলেন।’ তাকে নিয়ে চললাম। শান্তিনগর মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছি স্কুুটারের জন্য। একটা গাড়ি এসে থামল। অ্যাডভোকেট গাজীউল হকের গাড়ি। তিনি বললেন, ‘মোনায়েম, ড. কামাল বার কাউন্সিলের নির্বাচনে দাঁড়াবে না বলায় আমি দাঁড়িয়েছি। এখন সেও দাঁড়িয়েছে। আমি  শেখ হাসিনার কাছে বিচার চাই।’ বলে তিনি চলে গেলেন। শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে দেখি সেখানে আমু সাহেবও আছেন। আমি শেখ হাসিনাকে জানালাম গাজীউল হক ভাই এ কথা বলেছেন। তিনি বললেন, ‘আপনার প্রিয় লোক ড. কামাল, আপনি দেখেন।’ তখন ঠিক হলো, সৈয়দ হক ব্যারিস্টার ইশতিয়াকের পাশের বাড়িতে থাকেন, তিনি তার কাছ থেকে ব্যাপারটা জানবেন। সেই মতো সৈয়দ শামসুল হক কথা বললেন ব্যারিস্টার ইশতিয়াকের সঙ্গে। পরদিন ড. কামাল হোসেন আমাকে ফোন করে বললেন, ‘আমি আসছি।’ বললাম, ‘আপনি কেন আসবেন? আমি আসছি।’ ড. কামাল অভিযোগ করে বললেন, ‘লোকে বলছে আপনি নাকি আমার বিরুদ্ধাচরণ করছেন।’ বললাম, ‘বিচার দিয়েছেন গাজী ভাই। আমি কি হাইকোর্ট বারের ভোটার?’

শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পরও ১৯৮৩ সালে দল ভাঙল। সেবার দল ভাঙল রক্তের উত্তরাধিকার এবং আদর্শের উত্তরাধিকারের নামে। একদল বাকশাল নামে মহিউদ্দিন-আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে নতুন দল গঠন করল। আমি আর মতিয়া চৌধুরী অনেক চেষ্টা করলাম ভাঙন ঠেকাতে। ১৯৮৩ সালের ৩০ জুলাই খালাম্মার ২৩ নম্বর চামেলীবাগের বাসায় শেখ হাসিনা আর আবদুর রাজ্জাকের একটা গোপন বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। সেদিন শেখ হাসিনা এবং আবদুর রাজ্জাকের আমাদের বাসায় দুপুরে খাওয়ার কথাও ছিল। শেখ হাসিনার চাচাতো ভাইয়ের গায়ে হলুদের কারণে আসতে অনেক দেরি হয়ে গেল তাঁর। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় শেখ হাসিনাকে নিয়ে মতিয়া চৌধুরী এলেন আবদুল জলিলের গাড়িতে। আলোচনার শুরুতেই আমি শেখ হাসিনা ও আবদুর রাজ্জাকের হাতে ইংরেজিতে টাইপ করা একটি নোট দিলাম, যা আমি ছোট-ভাই চন্দনের পোর্টেবল টাইপরাইটারে এক আঙুলে টিপে টিপে তৈরি করেছিলাম।

শেখ হাসিনা বৈঠকে বললেন, ‘আমি তো রাজনীতিতে আসতে চাইনি। আপনারা আমাকে জোর করে রাজনীতিতে এনেছেন। এখন দলাদলি করছেন। জামালপুরে ছাত্রলীগের কর্মীরা ঢিল মেরে আমার গাড়ির কাচ ভেঙে ফেলেছে। এই দেখেন আমার কপালে কাটা দাগ।’ শেখ হাসিনা আলোচনার বিভিন্ন পর্বে তিনবার আবেগ-আপ্লুত হন।

এখানে বলে রাখা ভালো, আওয়ামী লীগে ভাঙন ধরাতে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ৪০ লাখ টাকা খরচ করে আওয়ামী লীগকে ভাগ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। জিয়াউর রহমানও একবার ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনকালে মিজান লীগ গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বাংলাদেশে এই ভাঙাভাঙির রাজনীতি একটা ভয়ানক ব্যাপার। এর সঙ্গে থাকে টাকার খেলাও। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে এই খেলাটা হয়েছে। সব দল থেকে ন্যূনতম একজন করে পাস করানো হয় সে সময়। অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, রাশেদ খান মেনন, শাজাহান সিরাজ, আওয়ামী লীগকে ৩৯টি আর মিজান লীগকে দুটি সিট দেয়া হয়। কোনো দলকে ভাঙতে পারা মানে হচ্ছে তার শক্তি খর্ব করা।

কিন্তু শত চেষ্টা করেও কিছু করা গেল না। আদর্শিক এই বিরোধকে সরকার কাজে লাগাল। বাকশাল-আওয়ামী লীগ আলাদা পার্টি হয়ে গেল। সে সময় বাম ধারার এক মতিয়া চৌধুরী ছাড়া আর সবাই গেলেন বাকশাল ধারায় আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে। মতিয়া চৌধুরী বললেন, ‘আমি বড় দল করতে এসেছি। সে জন্য আমি আওয়ামী লীগে থাকব। কাউকে আমার সঙ্গে আসতে বলব না। ছোট দল করলে তো ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টিতেই থাকতে পারতাম।’

শেখ হাসিনা আমাকে অভিযোগ করে বললেন, ‘আপনি তো বেইমানি করলেন। আপনার কথামতো আমি চামেলীবাগের গোপন বৈঠকে গেলাম আর আপনি গেলেন আবদুর রাজ্জাকের বাকশালে।’ আমি তাকে বলেছিলাম, ‘একদিন আমি সবাইকে নিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিব’। আসলে আমরা আবদুর রাজ্জাকের বাম ধারার প্রীতি দেখেই বাকশালে গিয়েছিলাম। তাই বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল গড়ার লক্ষ্যে আমরা বাকশাল সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু আমার মনে হয়েছিলÑ এই দুই ধারার রাজনীতির কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। আমি বিশ্বাস করতাম, দেশের প্রকৃত উন্নয়নের জন্য সত্যিকার অর্থে ঐক্যের বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগ এবং বাকশালের ভেতরের আদর্শিক দূরত্বও অনতিক্রম্য নয়। সে দূরত্ব ঘোচাতে একবার ব্যর্থ হয়েছি বলে যে বারবার হব সে কথা বলা যায় না। আমি বাকশালে থেকে গেলাম মনে মনে এই জিদ নিয়ে যে একদিন না একদিন আওয়ামী লীগ এবং বাকশালকে এক হতেই হবে, না হলে চলবে না। পরে আমি সফলও হই। যেদিন বাকশাল আওয়ামী লীগের সঙ্গে একীভ‚ত হয়, সেদিন শেখ হাসিনাকে তাঁর প্রিয় কদমফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাই।

জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশ দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার। বঙ্গবন্ধুর আমলে যেমন বাংলাদেশ অনেক শক্তিশালী রাষ্ট্রের ও প্রতিষ্ঠানের বিষ দৃষ্টিতে ছিল এখনও তাই আছে। তবে আশার কথা এই যে, শেখ হাসিনার কটনৈতিক দূরদর্শিতার কারণে বিরুদ্ধবাদী সেই শক্তিমান রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন, আমেরিকা, চীন, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ওআইসি, এখন বাংলাদেশের সঙ্গে সখ্য গড়তে তৎপর হয়ে উঠছে। এটা বর্তমানের বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় সুখবর।

নিন্দুকের দৃষ্টি কখনোই ভালো কিছু দেখে না। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা যে সকল দুঃসাধ্য কাজ সাধন করেছেন তা কারো পক্ষে সম্ভব হতো কিনা জানি না। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছেন, বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন (যেমন, জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ, আনসারউল্লাহ বাংলা টিম, হিজবুত তাহরীর)-এর মূলোৎপাটন করেছেনÑ এগুলোকে যারা ছোট করে দেখতে চায়, তারা প্রকারান্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেই অস্বীকার করতে চায়। বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও অগ্রগতির সঙ্গে একাকার হয়ে আছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, এটা যতদিন বাংলাদেশের মানুষ বুঝতে না পারবে ততদিন বাংলাদেশের কোনো উন্নয়নই, কোনো পরিকল্পনাই টেকসই হবে না, আর সেইখানেই অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে হাত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার ফল এখন আমরা সর্বক্ষেত্রে পাচ্ছি।

শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আজ বঙ্গবন্ধুর নাম আকাশে-বাতাসে সসম্মানে উচ্চারিত হচ্ছে। ২০২০-’২১ সালে (মুজিব বর্ষে) নানামুখী কর্মকার মাধ্যমে উদ্যাপিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। মুজিববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে দুই-একটি কথা উল্লেখ করতে চাই। আমাদের বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ২০১৮ সালেই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বেশ কিছু কর্মকাÐ হাতে নেয়। এর মধ্যে আছে বঙ্গবন্ধু-সম্পর্কিত গ্রন্থ প্রকাশ, সভা-সেমিনার, একাধিক অডিও-ভিডিও গান ও লিফলেট-পোস্টার। আমরা ২০১৯-২০২০ সালকে টার্গেট করে এগুতে থাকি। একদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথোপকথন মুহূর্তে আমাদের ফাউন্ডেশন কর্তৃক গৃহীত কর্মকার কথা অবগত করলে তিনি জানান ২০১৯-২০২০ সাল নয়, ২০২০-২০২১ সালকে মুজিববর্ষ হিসেবে পালন করলে দুটি ঐতিহাসিক ঘটনা একসঙ্গে উদ্যাপন করা যেতে পারে। এই দুটি বিষয় হলোÑ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। আমি তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতামত সমর্থন করে আমাদের ফাউন্ডেশনের শ্রদ্ধাভাজন চেয়ারম্যান জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী জাতীয় উদ্যাপন কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে প্রস্তাব করলে তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করে আমাদের বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেন। এ পর্যন্ত আমি ১০৮টির মতো গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা করেছি। এগুলোর বেশির ভাগই বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত। আমার সম্পাদনায়ই বাংলা একাডেমি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমান : জীবন ও রাজনীতি’ শীর্ষক প্রথম প্রামাণ্য গ্রন্থ ২০০৮ সালে প্রকাশ করে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষেও তিন বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হিসেবে ১৫টির মতো গ্রন্থ প্রকাশ করি।  

বঙ্গবন্ধুর নামে আজ ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে সমুন্নত রাখতে শেখ হাসিনাকেই ভ‚মিকা নিতে হবে এবং তিনি অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবেই সেই দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ বিশ্বসভায় সুনাম অর্জন করছে। অর্থনীতি ও সামাজিক জীবন কাক্সিক্ষত স্তরে উপনীত হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত ও কার্যকলাপ পরিহার করতে হবে। দুর্বৃত্ত ও দুর্নীতিবাজ নেতাকর্মীদের দল থেকে বহিষ্কার করতে হবে এবং জনমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সাংগঠনিক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে হবে। সজাগ থাকতে হবে দলের প্রত্যেকটি নেতাকর্মীকে। আওয়ামী লীগের কাছেই বাংলাদেশ আশা করে, কেননা আশার স্বপ্ন আওয়ামী লীগই বাস্তবায়ন করার সামর্থ্য রাখে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে উচ্চতম স্থানে নিয়ে গেছেন। এখন মানুষের মনে অনেক আশা জন্ম নিচ্ছে। মানুষ বুঝতে পারছে আসলেই দেশের উন্নতি হচ্ছে। এখন সবদিক সামাল দিয়ে সরকার ও দল পরিচালনা করতে হবে। বাংলাদেশের এখন বড় বাধা দুর্নীতি। সব সেক্টরে দুর্নীতি যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। আগামী দিনের উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে রাষ্ট্রের প্রতিটি জায়গায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখন শেখ হাসিনার চোখের দিকে তাকিয়েই স্বপ্ন দেখছে। শেখ হাসিনার স্বপ্ন আর সাধারণ মানুষের স্বপ্ন মিশে একাকার হয়ে গেছে। যে অনন্য উচ্চতায় শেখ হাসিনা নিজেকে এবং বাংলাদেশকে স্থাপন করেছেন সঙ্গত কারণেই তার কাছে মানুষের প্রত্যাশা সীমাহীন। চলমান করোনা মহামারী দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করে বাংলার নিরন্ন-দুঃখী মানুষের প্রত্যাশা তিনি পূরণ করবেন এমনটাই আশা করে এদেশের জনগণ। সূর্য নিজে জ্বলে যেমন করে পৃথিবীকে আলোকিত করে রাখে, শেখ হাসিনাও তেমনি করে শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র পৃথিবীকেই আলোকিত করেছেন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্থপতি বটে, তবে শেখ হাসিনাই আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামমুখর চুয়াত্তরটি বসন্ত পেরিয়ে তিনি পঁচাত্তরতম বছরে পদার্পণ করলেন। তাঁর অপ্রতিরোধ্য জয়যাত্রা অব্যাহত থাকুক। শুভ জন্মদিন ‘গুড সিস্টার’।

-মোনায়েম সরকার : রাজনীতিবিদ, লেখক, কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক, গীতিকার ও মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ।

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.